1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:৪৩ অপরাহ্ন

দান ধ্যান পরে। নিজে বাঁচলে বাপের নাম- দানের ব্যাপারে এই দৃষ্টিভঙ্গি কি ঠিক?

  • সময় রবিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ৯৭৭ বার দেখা হয়েছে
করোনাকালে অনেকেরই আয় উপার্জন কমে গেছে। আমার এক পরিচিত নিয়মিত ফাউন্ডেশনে মাটির ব্যাংক জমা দিতেন আমার মাধ্যমে। কিন্তু সেদিন যখন দেখা হলো দানের প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি কেমন যেন বিমর্ষ হয়ে গেলেন। বেশ নিরুৎসাহের ভঙ্গিতে বললেন, দেখেন ভাই, এখন দুর্যোগের সময়। যা আয় করি ছেলেমেয়ে নিয়ে খেয়ে পরে চলতে চাই। দান ধ্যান পরে। নিজে বাঁচলে বাপের নাম। গুরুজী দানের ব্যাপারে এই দৃষ্টিভঙ্গি কি ঠিক? যদি একটু বুঝিয়ে বলেন।
এটাকে কোনোভাবেই সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বলা যায় না। আসলে দান কনসেপ্টটা যদি আমাদের কাছে পরিষ্কার থাকত তাহলে আমরা এভাবে ভাবতাম না।
আয় কমে গেছে বলে দান করব না- এভাবে না ভেবে ভাবা উচিৎ, যে এখন আমার কম সামর্থ্যের মধ্যেই যতটা পারি দান করি যাতে আমাদের রিজিকের পথটা সুপ্রশস্ত হয়।
আসলে আমাদের বিশ্বাসের স্তর আরো গভীর হওয়া দরকার। আমরা সবসময় এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি, যে যদি আমার উপার্জন বন্ধ হয়ে যায় তাহলে কী হবে?
আমরা মুখে বলি রিজিকের মালিক আল্লাহ্ আবার হাতে টাকা-পয়সা কমে গেলে মনে মনে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, যে টাকা না থাকলে খাব কী?
দানও তাই করি কমফোর্ট জোনে থেকে। যে, হাতে যদি অনেক থাকে তাহলে সেখান থেকে নিজে সিকিউর থেকে তারপর যদি হয় তো দেব।
অথচ সূরা তালাকে আল্লাহ্ বলছেন “যারা আল্লাহ-সচেতন থাকে, আল্লাহই তাদের ঝামেলা ও অশান্তি থেকে বেরোনোর পথ করে দেন। আর অপ্রত্যাশিত উৎস থেকে জীবনোপকরণ দান করেন। যে আল্লাহর ওপর নির্ভর করে আল্লাহই তার জন্যে যথেষ্ট।”
এখন নির্ভর করলাম আল্লাহ্‌র ওপর, আবার সাময়িক অসচ্ছলতায় অস্থির হয়ে পড়লাম- তাহলে তো আর তাঁর উপর নির্ভর করা হলো না!
যদি আপনি সত্যি সত্যিই তাঁর উপর নির্ভর করে থাকেন তাহলে আর্থিক টানাপোড়েন আপনাকে অস্থির করবে না।
আর তা-ছাড়া দান করা এখনই বেশি জরুরি।
রিজিকে প্রবৃদ্ধি ও বরকতের জন্যেই কিন্তু দান জারি রাখতে হবে। আসলে যারা এখন দান বন্ধ বা কমাবার কথা ভাবছেন তাদের ধারণা, যে দান করলে সম্পদ কমে যায়। এটা ভুল!
প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও মনীষী হযরত ইমাম জাফর সাদেকের একটি ঘটনা।
সংসার খরচ বাবদ ছেলের হাতে আছে সাকুল্যে ৪০ দিরহাম, মানে রৌপ্যমুদ্রা। ইমাম সাহেব সেগুলো দান করে দিতে বললেন।
পুত্র বিস্মিত! “আব্বা, আপনি ভেবে বলছেন তো? এগুলো দিয়ে দিলে কাল থেকে খরচ করার মতো থাকবে না কিছুই”!
বাবা অভয় দিলেন, “তুমি কি জান না যে, প্রত্যেক জিনিসের যেমন একটি চাবিকাঠি থাকে, তেমনি সমৃদ্ধির চাবিকাঠি হচ্ছে দান? তুমি দিয়ে দাও। দেখো আল্লাহই সম্পদে বরকত দেবেন”।
হলোও তা-ই! দানের পর ১০ দিনও যায় নি, তার আগেই অন্য একটা কার্যোপলক্ষে তারা পেলেন ৪০০০ দিনার, মানে স্বর্ণমুদ্রা!
আসলে আমরা বুঝতে চাই না, যে দান জরুরি নিজের কল্যাণের জন্যেই।
ইমাম রাইদা তার এক সহকারীকে একবার জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি আজ আল্লাহর পথে কিছু দিয়েছ?”
সে বলল, না তো!
ইমাম রাইদা বললেন, “তাহলে তুমি কী করে আশা কর যে, আল্লাহ তোমাকে দেবেন?”
তাই স্রষ্টার সাহায্য পেতে প্রতিদিনই সামর্থ্যের মধ্যে সাধ্যমত দান করুন।
কারণ পরিমাণ নয়, আল্লাহ সবসময় দেখেন দাতার আন্তরিকতা আর গ্রহীতার প্রতি মমত্ববোধ।
খেজুর বাগানের পাহারাদার এক হাবশি ক্রীতদাস। খেজুর গাছের ছায়ায় বসেছে দুপুরের খাবার খেতে।
খাবার বলতে তিনটি শুকনো রুটি।
রুটির টুকরো ছিঁড়ে মুখে দেবে, এমন সময় একটা কুকুর হাঁপাতে হাঁপাতে তার সামনে এসে বসল। ক্রীতদাস রুটির টুকরোটা নিজে না খেয়ে কুকুরটাকে দিল। কুকুর সেটা তৃপ্তির সাথে খেল।
ক্রীতদাস রুটির বাকি অংশটুকুও কুকুরকে দিল। কুকুর তাও খেয়ে ফেলল।
এভাবে একে একে তিনটি রুটিই সে ক্ষুধার্ত কুকুরটিকে দিয়ে দিল।
পাশের খেজুর গাছের ছায়ায় বসে সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে জাফর দেখছিলেন সবকিছুই। ক্রীতদাসের দানশীলতায় মুগ্ধ হলেন তিনি।
তিনি নিজে দানশীল ছিলেন। কিন্তু এবারে তিনি অনুভব করলেন, এই ক্রীতদাস তার চেয়েও দানশীল!
কতটা দানশীল হলে কেউ নিজের ভাগের সবটুকু খাবার একটি কুকুরকে দিয়ে দিতে পারে, আর নিজে দিন কাটাতে পারে শুধু পানি খেয়ে!
তিনি সেই ক্রীতদাসসহ খেজুর বাগানটা কিনে ফেললেন।তারপর ক্রীতদাসকে আজাদ করে দিলেন এবং উপহার হিসেবে বাগানটি তাকে দিয়ে দিলেন।
ক্রীতদাসের সামর্থ্য ছিল মাত্র তিনটি রুটি। কিন্তু সেটাই যখন উজাড় করে দিলেন, বিনিময়ে নিজে তো মুক্ত হলেনই, সেই সাথে মালিক হলেন একটি খেজুর বাগানেরও।
দানের বিস্ময়কর প্রতিদানের এই কাহিনীগুলো কিন্তু বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং কোরআনে আল্লাহ্ প্রদত্ত অঙ্গীকারেরই ফলিতরূপ।
সূরা বাকারায় আল্লাহ বলেন, তোমাদের মধ্যে কে আল্লাহকে ‘কর্জে হাসানা’ (অর্থাৎ উত্তম ঋণ) দেবে? আল্লাহ বহুগুণ প্রবৃদ্ধিসহ তা ফেরত দেবেন। আল্লাহই মানুষের রিজিক বা জীবনোপকরণ কমান এবং বাড়ান। (আয়াত ২৪৫)
এই ‘উত্তম ঋণ’ হলো সৃষ্টির সেবায় ব্যয় করা। যার প্রতিশ্রুত প্রতিদান সম্পদে প্রবৃদ্ধি।
এমন গ্যারান্টি পাওয়ার পরও দানে সঙ্কুচিত থাকার আর কোনো কারণ থাকতে পারে?
আর পবিত্র কোরআনে উদ্বৃত্ত সম্পদ থেকে দান করতে বলা হয় নাই, বলা হয়েছে প্রাপ্ত রিজিক থেকে দান করতে। রিজিক যেহেতু প্রতিদিনই আসছে তাই দানও করতে হবে প্রতিদিনই, যতটুকু সামর্থ্য আছে ততটুকুর মধ্যেই।

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All rights reserved © RMGBDNEWS24.COM
Translate »