1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:৪১ অপরাহ্ন

মায়ের ভুল খাদ্যাভ্যাসে বাড়ে গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি

  • সময় মঙ্গলবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ৮৩৯ বার দেখা হয়েছে

আট পেরোনো দুরন্ত বালক জোহান। বাড়ির সবাইকে ব্যতিব্যস্ত রাখতে সে একাই একশ। প্রায় সারাক্ষণই চলছে তার দৌড়ঝাঁপ। কোনো কাজেই নেই একবিন্দু মনোযোগ। জোহানের মা শুরুতে একে বয়সজনিত স্বাভাবিক দুরন্তপনা বলে ধরে নিলেও পরবর্তীতে চিন্তিত হয়ে পড়লেন যখন জোহানের স্কুল থেকে রিপোর্ট এলো।

ক্লাস টিচার জানালেন, গড়পড়তা শিক্ষার্থীদের তুলনায় সে লেখাপড়ায় অনেকটা পিছিয়ে। সহপাঠীদের সাথে খেলতে চায় না। মাঝে মাঝেই অস্বাভাবিকভাবে হাত-পা ছোড়াছুড়ি করে। বাধ্য হয়ে জোহানের মা-বাবা তাকে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে গেলেন। সব দেখেশুনে চিকিৎসক বললেন, জোহান যে রোগে ভুগছে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় তার নাম অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার-একটিভিটি ডিজঅর্ডার (এডিএইচডি)।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

এটি কোনো বিচ্ছিন্ন গল্প নয়। পাশ্চাত্যে তো বটেই, আমাদের মতো দেশগুলোতেও বর্তমানে এই রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। কিন্তু ঠিক কী কারণে এই রোগের উৎপত্তি ঘটে তা জানতে চলছে নানা গবেষণা-অনুসন্ধান। এতদিন বিজ্ঞানীরা জিনগত ত্রুটিকে দায়ী করলেও যুক্তরাজ্যের কিংস কলেজের একদল গবেষক জানিয়েছেন নতুন তথ্য।

দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে তারা দেখেছেন, গর্ভকালীন সময়ে মায়ের ভুল খাদ্যাভ্যাসের সাথে যোগসূত্র রয়েছে সন্তানের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার। সমীক্ষাটি পরিচালনার জন্যে যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টলে বসবাসকারী সাড়ে ১৪ হাজার পরিবার থেকে গবেষকরা বেছে নেন ১৬৪টি শিশুকে। আর এসব পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয় পর্যালোচনা করে আসছে দু-যুগ ধরে।

বাছাইকৃত এ শিশুদেরকে দুটো দলে ভাগ করা হয় তাদের আচরণগত সমস্যার ভিত্তিতে। এসব শিশুর মায়েদের গর্ভকালীন ও পরবর্তী সময়ের খাদ্যাভ্যাস বিশ্লেষণ করেন গবেষকরা। বিস্ময়ের সাথে তারা লক্ষ করেন, গর্ভাবস্থায় মায়ের পুষ্টিবিভ্রাট প্রভাবিত করে আইজিএফ-২ (ইনসুলিন-লাইক গ্রোথ ফ্যাক্টর-২) জিনের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে। জন্মের আগে ও পরে শিশুর মস্তিষ্কের গঠনে এই জিনের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উভয় দলের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যেসব মা গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার খেয়েছেন তাদের সন্তানদের ডিএনএ-তে ঘটেছে উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক পরিবর্তন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সন্তানের মানসিক গঠন। তারা আক্রান্ত হয়েছে হাইপার-একটিভিটি ডিজঅর্ডারে।

সাধারণত সাত থেকে ১৩ বছর বয়সের মধ্যে শিশুদের আচরণে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে। আচরণে বিভিন্ন অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। লেখাপড়ায় খারাপ ফলের পাশাপাশি বাড়তে পারে তাদের অপরাধপ্রবণতা। এমনকি বড় হয়ে তারা অভ্যস্ত হয়ে পড়ে মিথ্যাচার, মারামারি ও চুরি করাসহ নানারকম অপরাধে।

গবেষক দলের প্রধান ড. এডওয়ার্ড বার্কার বলেন, কোনো শিশু যদি সুষম পুষ্টিকর খাবারের পরিবর্তে অধিক পরিমাণে প্যাকেটজাত (কৃত্রিম ও প্রক্রিয়াজাত) খাবার এবং ফাস্টফুড খায়, তাহলে সে শিশুটিও একসময় আক্রান্ত হতে পারে অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার-একটিভিটি ডিজঅর্ডারে।

তাই গবেষকদের পরামর্শ হলো, এ রোগ নিরাময়ে অকুপেশনাল থেরাপির পাশাপাশি বদলাতে হবে শিশুর খাদ্যাভ্যাস। ফাস্টফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করে শিশুকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে দানাদার আঁশযুক্ত ও ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণে, অর্থাৎ প্রাকৃতিক খাদ্যাভ্যাসে।

তাই অতিরিক্ত চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার হোক যতই মনোহর ও সুস্বাদু, এসব খাওয়া থেকে বিরত থাকা প্রসূতি মায়েদের জন্যে অত্যন্ত জরুরি। আর ভবিষ্যতে আপনার শিশুসন্তানকে বার্গার কিংবা পিৎজা পরিবেশনের আগে সচেতন হোন। ভেবে দেখুন, আপনি নিজেই তাকে একটু একটু করে মানসিক প্রতিবন্ধিত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন না তো?

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All rights reserved © RMGBDNEWS24.COM
Translate »