1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৩:৫২ অপরাহ্ন

অনিন্দ্যর গল্পটাও সিনেমার মতোই

  • সময় বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর, ২০২১
  • ৫৮৫ বার দেখা হয়েছে

আমাজন প্রাইমের সিনড্রেলা ছবিতে অ্যানিমেটর হিসেবে কাজ করেছেন বাংলাদেশের অনিন্দ্য মকসুদ। অথচ একসময় ডিপ্রেশন ও অ্যাংজাইটিতে ভুগে তার পড়ালেখা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কেমন করে বাধা পেরিয়ে সামনে এগিয়েছেন এই তরুণ? ৩ অক্টোবর ২০২১ প্রথম আলো প্র স্বপ্ন নিয়ে বিভাগে এ বিষয়ে লিখেছেন জিনাত শারমিন।

আরো একবার মুক্তি পেল সিনড্রেলা। এবার আমাজন প্রাইমে, লাইভ অ্যাকশন সিনেমারূপে। সিনেমা শেষে ক্রেডিট লাইনে ‘অ্যানিমেটরস’ বিভাগে দেখা গেল অনিন্দ্য মকসুদের নাম। ছবির দীর্ঘ ওপেনিং শট (হিরো শট) থেকে শুরু করে আটটি শট অনিন্দ্যর করা। যদিও শুরুতেই কোনো অ্যানিমেটরকে সাধারণত হিরো শট দেওয়া হয় না। কিন্তু অনিন্দ্য ক্যারিয়ারের একেবারে প্রথম দিনেই সুযোগটা পেয়েছিলেন। আর প্রথম বলেই হাঁকিয়েছেন ছক্কা। শোনা যাক হলিউডের ছবিতে জায়গা করে নেওয়া এই বাংলাদেশি অ্যানিমেটরের কথা।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

অনিন্দ্যর দুঃসাহসিক অভিযান

ছোটবেলা থেকেই মন্টু মিয়া, মিনা, বিদেশি নানা কার্টুন আর অ্যানিমেশন সিনেমা দেখে বড় হওয়া অনিন্দ্য আঁকতে ভালোবাসতেন। তা ছাড়া কিশোর ক্ল্যাসিক তো ছিলই। মনে মনে ভাবতেন, মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা টুকি ও ঝায়ের (প্রায়) দুঃসাহসিক অভিযান নিয়ে চমৎকার একটা অ্যানিমেশন তো দেশেই হতে পারে! এসব ভাবনা থেকেই অনিন্দ্য চেয়েছিলেন অ্যানিমেশন নিয়ে পড়বেন। মা-বাবার পূর্ণ সমর্থন পেয়ে ভর্তি হন মালয়েশিয়ার মাল্টিমিডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে।

ক্যাম্পাসে প্রথম রাতের কথা এখনো নাকি তার স্পষ্ট মনে পড়ে, ‘এর আগে কখনো মা-বাবাকে ছেড়ে থাকিনি। বিদেশ বিভুঁইয়ে হোস্টেলের বিছানায় মাথা রেখে প্রথম যে কথাটা মনে হয়েছিল, সেটা অ্যানিমেশন নিয়ে নয়। মনে হয়েছিল, এখন যদি আমার জ্বর হয়, কে দেখবে?’ শুরু হলো নতুন দেশে নতুন যাত্রা। ‘অ্যানিমেশন অ্যান্ড ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট’কে মেজর সাবজেক্ট, আর ‘ফিল্ম স্টাডিজ’কে মাইনর হিসেবে বেছে নিয়ে চলল পড়াশোনা।

থমকে গেল পথচলা

ছোটবেলা থেকেই ছবি, কার্টুন আঁকতেন অনিন্দ্য। পরিবার-স্বজনেরা সেসব দেখে পিঠ চাপড়ে বলত, ‘বেশ, বেশ।’ সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ভেবেছিলেন, স্বচ্ছন্দে উতরে যাবেন। কিন্তু পড়তে গিয়ে দেখলেন, খুবই কঠিন। আর বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে যারা পড়তে এসেছেন, তাদের আঁকা ছবি দেখে নিজের ছবিগুলোকে ম্লান মনে হতে লাগল। অনিন্দ্য বলছিলেন, ‘অ্যানিমেশন যে এত কঠিন একটা বিষয়, কল্পনাও করিনি। নিউ ইয়ারের রাতে আমরা হয়তো কয়েক মিনিটের জন্যে বারান্দায় দাঁড়াতাম। অন্যান্য বিভাগের ছাত্ররা উদ্‌যাপন করত। আমরা আর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্ররা একটু ফায়ারওয়ার্ক দেখে আবার টেবিলে বসে পড়তাম।’ পড়ার চাপ, পরিবার ছাড়া একা থাকা আর রেস্টুরেন্টের খাবার খেতে খেতে তৃতীয় বর্ষে এসে আর পারলেন না। ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন ও অ্যাংজাইটিতে ভুগতে শুরু করলেন। মানসিক অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছাল যে একসময় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো।

২০১৪ সালে ক্লিনিক্যালি ডায়াগনসিস শুরু হলো। পরিবারের সবাই ভেবেছিল, পড়ালেখা বুঝি আর শেষ হবে না। প্রতি সেমিস্টারের খরচ প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। এতগুলো টাকা খরচ করে এত দূর এসে হাল ছেড়ে দিতে হবে, সেটাও অনিন্দ্য মানতে পারছিলেন না।

মালয়েশিয়ার সাইকোথেরাপিস্ট অধ্যাপক ফিলিপ জর্জের অধীনে চিকিৎসা নিয়ে খানিকটা সুস্থ হয়ে দেশে ফেরেন তিনি। এখানে দীর্ঘ এক বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও থেরাপিস্ট ড. শাহানূর হোসেইনের অধীনে কাউন্সেলিং করেন। এরপর আবার ফেরেন মালয়েশিয়ায়, যাত্রা সম্পূর্ণ করতে। পরিবার, শিক্ষক, চিকিৎসকদের সহায়তায় পড়াশোনা শেষ করেই দেশে ফেরেন তিনি।

ঢাকার স্টুডিও থেকে কানাডার স্টুডিও, ভায়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

দেশে ফিরে শুরুতে কাজ করেছেন অগ্নিরথ স্টুডিওতে। সেখানেই পরিচয় হলো আরেক অ্যানিমেটর সরফরাজ ইয়াসিনের সঙ্গে। কাজের ফাঁকে তারা দুজন মিলে যারা অ্যানিমেশনে আগ্রহী, তাদের জন্যে একটা পাঠ্যক্রম বানানোর চেষ্টা করছিলেন। এমন সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমন্ত্রণ এলো। স্টুডিও ছেড়ে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যানিমেশনের ওপর একটি এক বছর মেয়াদি কোর্স করানো শুরু করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বছর তিনেক শিক্ষকতা করার পর অ্যানিমেটর হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পাড়ি দেন কানাডার টরন্টোতে। হন্যে হয়ে চাকরি খুঁজছিলেন। একদিকে কোভিডের ধাক্কা, তার ওপর ‘ইন্ডাস্ট্রি এক্সপেরিয়েন্স’ নেই। নানা জায়গায় সিভি দিয়েও কাজ হচ্ছিল না।

অবশেষে সোহো স্টুডিওতে সিভি দেওয়ার দুদিন পর ইন্টারভিউয়ের ডাক পড়ল। এই স্টুডিওতে অ্যাভেঞ্জার্স–এর মতো বড় ছবির কাজও হয়েছে। তাই অনিন্দ্য যে খুব আশাবাদী ছিলেন, তা নয়। দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত দীর্ঘ ইন্টারভিউ হলো। বেলা দুইটায় তাকে ফোন করে বলা হলো, ‘আপনি কাজে যোগ দিন।’

প্রথম ছবিতেই দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে চাকরিতে স্থায়ী হয়ে গেছেন অনিন্দ্য মকসুদ। সোহোতে এখন বেশ আছেন। আরো যারা অ্যানিমেশনে আগ্রহী, তাদের জন্যে অনিন্দ্যর পরামর্শ, ‘যতই ইউটিউবে বা অনলাইনে কোর্স করে অ্যানিমেশন শেখা হোক না কেন, একটা একাডেমিক শিক্ষা লাগেই। একাডেমিক শিক্ষার জন্যে প্রফেসরদের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। আর আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, প্রফেসররা সাধারণত কেউ নক করলে খুব আগ্রহ নিয়ে শেখান।’

সূত্র : প্রথম আলো (৩ অক্টোবর, ২০২১)

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All rights reserved © RMGBDNEWS24.COM
Translate »