1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:১৪ পূর্বাহ্ন

সৌদি বাদশা ফাহাদ বাংলাদেশের প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীমকে “মুহিব্বুল খায়ের” হিসেবে উপাধিতে ভূষিত

  • সময় শুক্রবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২১
  • ১০১৮ বার দেখা হয়েছে
পবিত্র হজ্জ্ব পালন করতে গিয়ে জামারাতে শয়তানকে পাথর মারার সময় হুড়োহুড়িতে পদদলিত হয়ে অতীতে বহু মুসল্লি মারা গেছেন।
বাংলাদেশের প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম সস্ত্রীক হজ্বে গিয়ে এই দৃশ্য দেখে মর্মাহত হয়ে চিন্তা করতে লাগলেন- কিভাবে তা থামানো যায়?
দেশে ফিরে তিনি একটি সুবিস্তারিত প্রকল্প প্রণয়ন (পরিকল্পনা) করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ে জমা দিলেন।
সেখান থেকে ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাসের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে সৌদি সরকার এই প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
হজের সময় পাথর মারার জন্য প্রত্যেক হাজীকে সৌদি আরবের মিনায় তিনদিন অবস্থান করতে হয়। যে তিনটি স্তম্ভে পাথর মারতে হয়, তাকে বলা হয় জামরা বা পাথরের স্তূপ। এটা শয়তানের প্রতীকী স্তম্ভ। প্রথম জামরার নাম জামরাতুল আকাবা, মধ্যেরটি উস্তা ও শেষেরটি উলা। একটি থেকে অন্যটির দূরত্ব মোটামুটি ৩৩০ মিটার।
পাথর মারার ক্ষেত্রে আগে কোনো নিয়ম ছিল না। যে যেদিক থেকে যেভাবে পারত, পাথর মারা শুরু করত এবং একপর্যায়ে বিশৃঙ্খলায় পদদলিত হয়ে প্রাণ হারাত।
মোহাম্মদ ইব্রাহীম ১৯৯৪ সালে প্রথম সস্ত্রীক হজ্ব করতে গিয়ে লক্ষ করলেন- অদক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে শয়তানকে পাথর মারতে গিয়ে পদদলিত হয়ে প্রতিবছর অনেক প্রাণহানি ঘটছে। একই কারণে সেবার ২৭০ জন হাজী মারা যান।
দেশে ফিরেই মোহাম্মদ ইব্রাহীম শয়তানকে পাথর মারার একটি মডেল (একমুখী বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা) তৈরি করলেন।
তাঁর পরিকল্পনার চারটি ধাপ রয়েছে-
১. প্রতিটি জামরাকে বেড়া দিয়ে পরস্পর সংযুক্ত করতে হবে, যাতে উভয়দিকে দু’টি রাস্তার সৃষ্টি হয়।
২. জামরার দেয়াল মাত্র ছয় ফুট বাই ছয় ফুট ছিল, তা উভয়দিকে অন্তত ৩০ ফুট করে বাড়িয়ে নেওয়া।
৩. একমুখী ট্রাফিক সিগনালের ব্যবস্থা করা।
৪. এরপর মিনার দিকে ‘In’ ও অপর প্রান্তে ‘Out’ বসিয়ে জনতার স্রোত একমুখী চালনা করা- এদিক দিয়ে ঢুকে পাথর মেরে ওদিক দিয়ে বেরিয়ে যাবে; কেউ পেছনে ফিরবে না। এই হলো প্রস্তাবিত প্রকল্পের সংক্ষিপ্তসার।
এই পরিকল্পনা এতটাই নিখুঁত ছিল যে, খোদ সৌদি বাদশা ফাহাদ মোহাম্মদ ইব্রাহীমকে “মুহিব্বুল খায়ের” হিসেবে উপাধিতে ভূষিত করে তাঁর জন্য উপহারসামগ্রী পাঠান। শুধু তাই নয়, পরে তাঁকে পবিত্র মক্কায় প্রকল্প-প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ক্বাবা শরীফের তৎকালীন প্রধান ঈমাম শায়খ আবদুস সুবাইল বলেন, পৃথিবীর ১০ জন সেরা প্রকৌশলীদের মধ্যে ইব্রাহীম একজন। কেননা এর আগে হাজারো প্রকৌশলী হজ্ব করে গেলেও কেউ কখনো এ বিষয়টি নিয়ে ভাবেননি বা সমস্যা নিরসনের উদ্যোগ নেননি।
মোহাম্মদ ইব্রাহীম ১৯৪১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আলহাজ্ব মো. ইদ্রিস ছিলেন স্থানীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ১৯৬২ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বুয়েটে ভর্তি হলেও তৃতীয় বর্ষে ওঠার পর স্বাস্থ্যগত কারণে রাজশাহী বিআইটিতে মাইগ্রেশন নিয়ে তিনি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর জাপানে উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণ করেন।
পেশাগত জীবনে তিনি শিক্ষা বিভাগ, বিআরটিসি, ওয়াপদা এবং সবশেষে বিসিআইসিতে কর্মরত ছিলেন। বিসিআইসি-এর প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে অবসর গ্রহণকারী আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইব্রাহীমের উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে How to build a nice home বুয়েটসহ বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। তাঁর অন্যান্য বইয়ের মধ্যে রাহে মক্কা রাহে মদিনা ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রইং, কোরানিক গাইড, হজ্ব পরিক্রমা, স্বল্পমূল্যে গৃহনির্মাণ, আল কুরআনে আধুনিক বিজ্ঞান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাবুপুর গ্রামে ইসলামিয়া ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর অনুদানে কয়েকটি মাদ্রাসা ও মসজিদ পরিচালিত হয়।
তাঁর নাম এখনো জামারাতে লেখা আছে। মিনায় বর্ধিত প্রকল্পের পাশে রাস্তার ধারে Engineer Ibrahim from Bangladesh লিখে সবুজ গালিচায় সাদা অক্ষরে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুসলিম বিশ্বে ‘আর্কিটেক্ট অব মডিফিকেশন প্লান অব জামরা’ নামে খ্যাতিমান এই মহান প্রকৌশলী ২০১৭ সালের ৮ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।
(সংগৃহীত)

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All rights reserved © RMGBDNEWS24.COM
Translate »