1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৫:২৭ অপরাহ্ন

ইতিহাসে অক্টোবর ২৮ বাংলায় প্রথম লোককাহিনী সংগ্রাহক রেভারেন্ড লালবিহারী মৃত্যুবরণ করেন।

  • সময় বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২১
  • ৮৭৫ বার দেখা হয়েছে

বাংলায় প্রথম লোককাহিনী সংগ্রাহক রেভারেন্ড লালবিহারী মৃত্যুবরণ করেন।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ৩০১তম (অধিবর্ষে ৩০২তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।

ঘটনাবলি

১৮৩১ : মাইকেল ফ্যারাডে প্রথম ডাইনামো প্রস্তুত করেন।
১৮৮৬ : ফ্রান্স যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে স্ট্যাচু অব লিবার্টি উৎসর্গ করে।
১৯০৪ : সেন্ট লুইস পুলিশ তদন্তে নতুন পদ্ধতি ফিঙ্গার প্রিন্টের প্রচলন করে।

জন্ম

১৮৬৭ : ভগিনী নিবেদিতা, অ্যালো-আইরিশ বংশোদভূত সমাজকর্মী, লেখিকা, শিক্ষিকা এবং স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্যা।
১৯১৪ : রিচার্ড লরেন্স মিলিংটন সিঞ্জ, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ব্রিটিশ প্রাণরসায়নবিদ।
১৯১৪ : জোনাস সল্ক, পোলিও প্রতিরোধক ওষুধের মার্কিন উদ্ভাবক।

মৃত্যু

১৭০৪ : প্রভাবশালী ইংরেজ দার্শনিক জন লক
১৮৯৪ : বাংলায় প্রথম লোককাহিনী সংগ্রাহক রেভারেন্ড লালবিহারী
১৯০০ : বিখ্যাত ভারত বিদ্যাবিশারদ, সংস্কৃত ভাষার সুপ্রসিদ্ধ পণ্ডিত ও অনুবাদক ম্যাক্স মুলার
১৯৭১ : বাংলাদেশি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বীর শ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান
১৯৭৩ : মিশরীয় ইতিহাসবিদ, লেখক ও অধ্যাপক তাহা হুসাইন
১৯৯৮ : টেড হিউজস, নোবেলজয়ী ব্রিটিশ কবি।
২০০২ : স্বনামধন্য বাঙালি কবি, ছড়াকার, কথাসাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায়

রেভারেন্ড লালবিহারী দে

রেভারেন্ড লালবিহারী দে ছিলেন এক ভারতীয় বাঙালি লেখক, খ্রিস্টান পণ্ডিত। তিনি ছাত্রজীবনে ধর্মান্তিরত হয়ে খ্রিস্টান ধর্মযাজক হন। বাঙালি হিসেবে শিক্ষাক্ষেত্রে লালবিহারী দে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

জন্মগ্রহণ করেন ১৮২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর বর্ধমান জেলার সোনাপলাশী গ্রামের এক সুবর্ণবণিক পরিবারে। বাবা রাধাকান্ত দে ছিলেন কলকাতার একজন সাধারণ বিল ব্রোকার।

গ্রামের স্কুলের পাঠ শেষ করে বাবার সাথে কলকাতায় যান এবং ভর্তি হন রেভারেন্ড আলেকজান্ডার ডাফের জেনারাল অ্যাসেমব্লিজ ইন্সটিটিউশনে। ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সেখানে পড়াশোনা করেন। সেখানে প্রথম পাঁচ জন ছাত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে আলেকজান্ডার ডাফের পৌরহিত্যে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন।

১৮৫১ সালে তিনি চার্চের ধর্মযাজকরূপে কর্মজীবন শুরু করেন। তার ধর্মপ্রচারের ক্ষেত্র ছিল বর্ধমান জেলা। ১৮৫৫ সালে তিনি কলকাতার Free Church Presbytery কর্তৃক ‘রেভারেন্ড’ পদে উন্নীত হন।

বর্ধমানে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করেন এবং Bengal Peasant Life (১৮৭৪) ও Folk Tales of Bengal (১৮৭৫) নামে দুটি গ্রন্থ রচনা করেন। দুটি গ্রন্থই দেশীয় এবং ইউরোপীয় শিক্ষিত সমাজের সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

লালবিহারীর আগে আর কোনো বাঙালি লেখক গ্রামীণ জনগণ এবং তাদের জীবনধারা সম্পর্কে এমন পূর্ণাঙ্গ ও প্রামাণিক চিত্র তুলে ধরতে পারেননি। সেসময় জমিদার-প্রজা সম্পর্কের অবনতি ঘটছিল এবং তা বিদ্রোহের রূপ ধারণ করছিল। তার Bengal Peasant Life গ্রন্থে ওই বিক্ষুব্ধ গ্রামীণ জীবনেরই এক বাস্তব চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকরা কেন বিদ্রোহী আচরণ করছিল তার কারণও চমৎকারভাবে প্রতিফলিত হয়েছে ওই বইয়ে।

লালবিহারী দে’র দুটি বিখ্যাত উপন্যাস চন্দ্রমুখী (১৮৫৯) এবং গোবিন্দ সামন্ত Bengal Peasant Life থেকে বিষয়বস্তু নিয়ে রচিত। এতে জমিদার কর্তৃক কৃষক-অত্যাচারের নির্মম কাহিনী যথার্থভাবে চিত্রিত হয়েছে। লালবিহারীর পাণ্ডিত্যপূর্ণ সংকলন Folk Tales of Bengal গ্রামীণ সমাজের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংগ্রহে পথিকৃতের কৃতিত্ব দাবি করে। বাস্তবিকপক্ষে এর মাধ্যমে তিনি লোকসাহিত্যের আধুনিক অধ্যয়নের পথ সুগম করেন, যা আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল।

শিক্ষাক্ষেত্রে লালবিহারী দে’র গুরুত্বপূর্ণ অবদান হলো দেশীয় ভাষায় শিক্ষাদান এবং বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করার প্রস্তাব উত্থাপন। তার এই প্রস্তাব অধিকাংশ শিক্ষিত বাঙালির জোরালো সমর্থন লাভ করে। তিনি অরুণোদয় নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকা প্রকাশ করেন যার একটি নীতিই ছিল দেশীয় ভাষায় শিক্ষাদানের গুরুত্ব সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করা।

শিক্ষা সম্পর্কে তার এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি ১৮৮২ সালের শিক্ষা কমিশন (হান্টার কমিশন)-এর দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। সমাজের নিম্ন শ্রেণির লোকজনদের মধ্যে শিক্ষাকে জনপ্রিয় করার উদ্দেশ্যে একটি যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়নের দায়িত্ব সরকার কর্তৃক এই কমিশনের ওপর অর্পিত হয়। আধুনিকমনস্ক লালবিহারী দে প্রথম এই নির্যাতিত শ্রেণির মূল সমস্যার কারণ অনুসন্ধান করেন এবং তার সমাধানেরও পথ নির্দেশ করেন।

লালবিহারী ছিলেন জমিদারি প্রথার বিরোধী। কৃষকদের দুর্দশা সম্পর্কে তার রচনাবলি তারই সমকালীন দুই প্রতিভাধর লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং কিশোরীচাঁদ মিত্রের চিন্তাজগতকে প্রভাবিত করেছিল। তারা দুজনেই কৃষকদের সমস্যা সম্পর্কে ক্ষুরধার লেখা প্রকাশ করেন। তাদের মতামত ১৮৮০ সালের রেন্ট কমিশনের রিপোর্টকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। ফলে ১৮৮৫ সালের বেঙ্গল ল্যান্ড টেন্যানসি অ্যাক্ট কার্যকর হয়, যা বাংলার কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার ‘ম্যাগনা কার্টা’ নামে পরিচিত।

সবকিছু ছাপিয়ে মনেপ্রাণে লালবিহারী ছিলেন একজন বাঙালি। তার মতে, বাঙালিরা অন্য ভারতীয়দের তুলনায় অনেক এগিয়ে ছিলেন। ধর্ম থেকে শুরু করে বিনোদন—সব বিষয়কে কেন্দ্র করেই তিনি বই লিখেছিলেন। যেমন ‘বেঙ্গলি ফেস্টিভ্যাল অ্যান্ড হলিডে’, ‘স্পোর্টস অ্যান্ড গেমস অব বেঙ্গল’, ‘চৈতন্য অ্যান্ড বৈষ্ণব অব বেঙ্গল’ ইত্যাদি। কোনো কোনো ইংরেজ অধ্যাপক যখন বাঙালির ইংরেজি ভাষার ভুলত্রুটি চিহ্ণিত করে ‘বাবুর ইংরেজি’ বলে উপহাস করতেন তখন লালবিহারী তাদের প্রতিহত করতে ইংরেজি ভাষার দুর্বলতা তুলে ধরতেন।

১৮৯৪ সালের ২৮ অক্টোবর লালবিহারী মৃত্যুবরণ করেন।

 

সূত্র: সংগৃহীত

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All rights reserved © RMGBDNEWS24.COM
Translate »