1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
  2. [email protected] : Azmul : Azmul Aziz
  3. [email protected] : musa :
বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১১:১২ অপরাহ্ন

ঙ্ঘবদ্ধ দান : নওয়াব ফয়জুন্নেসা বনাম বেগম রোকেয়া.

  • সময় বৃহস্পতিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ৬৭৬ বার দেখা হয়েছে
দান কেন সঙ্ঘবদ্ধভাবে করতে হবে? যে কারো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে– আমি যে কোন জায়গায় দিয়ে দিলেই তো হলো। কিন্তু সঙ্ঘবদ্ধভাবে কেন দান করব? কেন সবাই মিলে দান করব? কেন এক জায়গায় দান করব? আমি দিলেই তো আমার কাজ হয়ে গেল। আমি তো দিলাম, দাতা হয়ে গেলাম।
আপনি দিলে ‘দাতা’ হয়ে গেলেন– এটা ঠিক আছে। কিন্তু দানের যে অনন্ত কল্যাণ, দান করে যে অনন্ত কল্যাণ পেতে পারেন সেই পাওয়া থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন। যদি বিচ্ছিন্নভাবে একা একা দান করেন।
অনেকে আছেন– যারা অনেক দান করতে পারেন তাদের অবস্থা এক রকম।
যারা অল্প অল্প দান করেন অর্থাৎ আমরা যেরকম অনেক দান করতে পারি না, অল্প অল্প দান করি।
আর যাদেরকে আমরা ধনী ভাবি, বড়লোক ভাবি, তারা আসলে দেয় সবচেয়ে কম। তারা ৯৯ ভাগ হচ্ছে কঞ্জুস। কৃপণ।
তারা আসলে গরীব। তাদের আত্মাটা খুব ছোট। তাদের আল্লাহতায়ালা দিয়েছেন অনেক। কিন্তু বড় মন দেয় নাই। মনটা ছোট।
সাধারণ মানুষ যারা আমরা আসলে দান করি বেশি কিন্তু অধিকাংশ সাধারণ মানুষের দান বড় কাজে লাগে না। কারণটা কিন্তু খুব সহজ, একার যে দান এই দানটা স্থায়িত্ব পায় না কখনো।
বেশ কয়েকজন প্রফেসরের কথা জানি, তারা গ্রামে বিশাল হাসপাতাল করেছেন। করার পরে এখন চিন্তায় আছেন যে তিনি মারা গেলে পরে হাসপাতালের কী অবস্থা হবে।
কারণ হাসপাতাল চালানোর জন্যে দানের যে প্রবাহ – উনি মারা গেলে উনিও নাই, টাকাও নাই। দানের প্রবাহ থাকবে না। হাসপাতালটা কিছুদিন পরে পরিত্যক্ত একটা বাড়ি হয়ে যাবে। এবং তারপরে এটা বদমায়েশদের একটা আখড়া হয়ে যাবে। কারণ পরিত্যক্ত বাড়ি পেলে ওখানে কারা গিয়ে জড়ো হয়? ইয়াবাখোর অথবা আরো মাদকসেবীরা। অতএব তাদের আখড়া হবে সেখানে।
হাসপাতাল যিনি করেছিলেন, তিনি করেছিলেন কিন্তু ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে। কিন্তু এটা স্থায়ী হলো না। কারণ সেটা দেখার জন্যে যে দানের প্রবাহ দরকার এবং লোকবল দরকার, সেই লোকবল বা দানের প্রবাহ তার নেই। তিনি শেষ, সব শেষ।
একজন বলে যে আমি পাঁচজন এতিমকে লালন করছি। ছোট্ট এতিমখানা করে ৫ জন এতিম রেখে খাওয়া দাওয়া সমস্ত ব্যবস্থা করতে লাগলেন তিনি। এতিমরা একটু বড় হলো – কেউ ফাইভে, কেউ সিক্সে, কেউ সেভেনে, কেউ এইটে উঠেছে কেউ নাইনে।
এর মধ্যে উনি মারা গেলেন। এতিমখানা যেহেতু তার টাকা দিয়ে হয়েছে, একার টাকায়। তিনি নেই। এতিমখানা বন্ধ হয়ে গেল। যে ফাইভ পর্যন্ত পড়েছিল তার ফাইভ পর্যন্ত পড়া শেষ, যে সেভেনে ছিল সে সেভেনে শেষ, যে নাইনে ছিল নাইনে শেষ!
এখন এরা না পড়াশোনা করতে পারল। না ক্ষেত-খামারি করতে পারল। কোনোটারই উপযুক্ত সে হলো না। কারণ যিনি এ প্রতিষ্ঠান গড়েছিলেন তিনি একা ছিলেন। তিনি নাই, এতিমখানা নাই।
অর্থাৎ, একা যখন কেউ কোনো কাজ করে, দানই করুক, ভালো কাজই করুক – সেই কাজ কখনো স্থায়ী হয় না। তিনি মারা গেলে সাথে সাথে সব শেষ।
যেমন নওয়াব ফয়জুন্নেসা। তিনি কুমিল্লার অনেক বড় জমিদার ছিলেন। অনেক ধনসম্পত্তির মালিক ছিলেন। তার বাবা অনেক ধনসম্পত্তি রেখে যান। এবং তিনি তার জমিদারি অনেক বাড়ান।
তিনি অনেক ভালো কাজ করেছেন। মহিলাদের জন্য স্কুল করেছেন। বিভিন্ন দাতব্য কাজে দান করেছেন।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, রামপুরার পুরো এলাকা– এই পুরো এলাকা নওয়াব ফয়জুন্নেসার ছিল।
এবং নওয়াব ফয়জুন্নেসা এটা ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যে।
কিন্তু যেহেতু তার কোনো সঙ্ঘ ছিল না, তিনি কোনো সঙ্ঘে ছিলেন না– মোতাওয়াল্লি যাকে করেছিলেন, মোতাওয়াল্লি সব জায়গা বিক্রি করে দিয়েছে। ২ হাজার একর জায়গা। ১০০ শতাংশে এক একর।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে শুরু করে বাড্ডা এলাকা–এই যে পুরো এলাকা ২ হাজার একর জমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যে নবাব ফয়জুন্নেসা ওয়াকফ করে গিয়েছিলেন। আর মোতাওয়াল্লি এটাকে শুধু সাইন করেছে আর বিক্রি করেছে।
মানে ঐ এলাকায় এখন এক শতাংশ জমির দাম হচ্ছে ৫ থেকে ১০ কোটি টাকা। ধরেন, এক শতাংশ জমি ১ কোটি টাকা যদি হয়, তাহলে ২ হাজার একর মানে ২ লক্ষ কোটি টাকা।
কোন জমি আর অবশিষ্ট নাই। কেন নাই? উনি একা ছিলেন, সম্পত্তি ছিল, দান করেছেন। আর অন্যরা এটাকে কী অপব্যবহার করেছে। কারন ফ্রি পেয়েছেন তো। কোম্পানিকা মাল দরিয়া মে ঢাল। যা পেয়েছে মোতাওয়াল্লি সব বিক্রি করে দিয়েছে।
এত সম্পত্তি দান করার পরেও তিনি কিন্তু অমর হতে পারলেন না। খুব কম মানুষই তার নাম জানে।
কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয়, বেগম রোকেয়ার নাম কয়জন শুনেছেন? খুব কম লোকই পাওয়া যাবে যারা তার নাম শোনেন নি।
বেগম রোকেয়ার কিন্তু কোনো সম্পত্তি ছিল না। বেগম রোকেয়া, পায়রাবন্দে জন্ম। অভিজাত পরিবারের মহিলা, জমিদার পরিবারের মহিলা ছিলেন।
তখনকার দিনে মুসলমান মহিলাদের লেখাপড়ার কোনো সুযোগ ছিল না। আরবি এবং ফারসি এটা তিনি বাসায় শিখেছিলেন। কিন্তু তার বড় ভাই জ্ঞানী ছিলেন, শিক্ষিত ছিলেন। রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ত মোমবাতি জ্বালিয়ে বড় ভাই তাকে ইংরেজী-বাংলা পড়াতেন।
যেহেতু জমিদার পরিবারের মহিলা ছিলেন, যখন তিনি কিশোরী হয়ে উঠলেন, তার বিয়ের প্রস্তাবের কোনো অভাব ছিল না। কিন্তু তাকে তার ভাই এমন একজনের সাথে বিয়ে দিলেন যিনি জ্ঞান অনুরাগী, যিনি বেগম রোকেয়াকে জ্ঞান অর্জনে সহযোগিতা করবেন।
তিনি উর্দুভাষী ছিলেন, বিপত্নীক ছিলেন এবং বেগম রোকেয়ার সাথে তার বয়সের ব্যবধান ছিল ২০ বছর।
কিন্তু তার স্বামী সাখাওয়াত হোসেইন তাকে লেখাপড়ার জন্যে সুযোগ দিয়েছেন। তিনি নিজেও ইংরেজি পড়িয়েছেন তাকে। বেগম রোকেয়া স্বামী যখন মারা যান, তখন একটা স্কুল করেন।
স্বামী মারা যাওয়ার সময় তার জন্যে কিছু টাকা দিয়ে গিয়েছিলেন। বিহারের ভাগলপুরে। যে স্কুল করেন তাতে একটা বেঞ্চি। ৫ জন ছাত্র।
এবং স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। তখনকার দিনে মুসলমান মহিলাদের শিক্ষার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। মুসলমান অভিজাত পরিবারগুলো মহিলাদের শিক্ষার জন্যে কোনো ব্যবস্থা করে নি। শিক্ষাকে তারা বলত যে–বেগানা হয়ে যাবে সব।
বেগম রোকেয়া বোরকা পরে, বাড়ি বাড়ি যেতেন ছাত্রী যোগাড় করার জন্যে। এবং বাড়ি গেলে অভিজাত বাড়ির মহিলারা পুরুষরা দরজা বন্ধ করে দিত। বলত আমাদের বাড়িতে আপনি আসবেন না।
ভাগলপুরে স্কুল চলল না, স্কুল বন্ধ হয়ে গেল।
ওখান থেকে কলকাতা চলে এলেন। কলকাতায় ওনার কোনো আত্মীয়স্বজন কেউ ছিল না। স্বামীর দেয়া ৩০ হাজার টাকা সম্বল করে তিনি চলে এলেন কলকাতায়। কলকাতায় তিনি দেখলেন যে, একা পারবেন না। একটা স্কুল শুরু করলেন। এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলাদের সাথে যোগাযোগ করে তিনি আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম গঠন করলেন। আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম মানে মুসলিম মহিলা সমিতি।
দুইটা বেঞ্চ, এবার ৮ জন ছাত্রী। এবং তখনকার দিনে মহিলারা প্রকাশ্যে মুখ দেখিয়ে কথা বলতে পারতেন না। এজন্যে তিনি মিটিং করতেন পর্দার আড়াল থেকে।
মিটিং হতো। যদি পুরুষ থাকত, তাহলে ওখানে মাঝখানে পর্দা দেয়া থাকত, পর্দার আড়াল থেকে মিটিং করতেন।
এবং তার বাইরে কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না এবং কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। কিন্তু তার স্কুলে যে মেয়েরা শিক্ষিত হওয়া শুরু করল, তারা পরবর্তী সময়ে মহিলা সমিতি করল এখন ঢাকার বেইলি রোডে যেটা মহিলা সমিতি নামে পরিচিত। এখন মহিলা সমিতির দোর্দন্ড প্রতাপ।
এবং বেগম রোকেয়া সেই সময়ে সুলতানার স্বপ্ন দেখেছেন। যে মেয়েরা সব রাজত্ব করছেন, নারী রাজত্ব। বেগম রোকেয়া যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, এখন তো এটা বাস্তব।
এবং বেগম রোকেয়া মারা যান রাত্রিবেলা। লিখছিলেন। সারাদিন কাজ করে রাতে তিনি লিখতেন। টেবিলে বসে লিখছিলেন এবং লিখতে লিখতে ঐ টেবিলেই মারা যান। সকালবেলা দেখা গেল যে তিনি মারা গেছেন। এবং তার শেষ অসমাপ্ত লেখাটির নাম ছিল ‘নারী অধিকার’।
তো বেগম রোকেয়া কিন্তু কোনো জায়গা সম্পত্তি রেখে যান নাই। বেগম রোকেয়া কী রেখে গিয়েছিলেন?
সঙ্ঘ রেখে গিয়েছিলেন। মহিলা সমিতি। এবং এই মহিলা সমিতি পরবর্তী সময়ে মহিলাদের শিক্ষার ব্যাপারে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। যত শিক্ষিত মহিলারা সব ওই মহিলা সমিতির তত্ত্বাবধানে, মহিলা সমিতির কারণে এবং মহিলা সমিতির কাজের ফলে তারা আজ উচ্চাসনে এসেছেন।
যে কারণে– নওয়াব ফয়জুন্নেসা এত সম্পত্তি দিয়ে গেছেন, লুটেপুটে মানুষ খেয়ে ফেলেছে। কিন্তু বেগম রোকেয়া কোনো সম্পত্তি দিয়ে যান নাই, তিনি কী রেখে গিয়েছিলেন? একটা সঙ্ঘ রেখে গিয়েছিলেন। একটা চেতনা রেখে গিয়েছিলেন। যার লক্ষ্য ছিল নারীকে একদিন নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।
তো এটাই হচ্ছে বিশেষত্ব, সঙ্ঘের বিশেষত্ব। আসলে যখন দানটা সঙ্ঘবদ্ধ হয়, কী হয়?
আপনি মারা যাওয়ার পরেও সেই দান এবং সেই কাজ চলতে থাকবে। যেভাবে মহিলা সমিতি চলছে। মহিলা সমিতির সমস্ত ভালো কাজ চলছে ।
এবং এই কারণেই যত নবী রাসুলরা ছিলেন, যত মহামানবরা এসেছেন, যত সফল মানুষ এসেছেন তারা সবাই সঙ্ঘবদ্ধভাবে কাজ করেছেন।
রাসুলুল্লাহ (স) সঙ্ঘকে গুরুত্ব দিয়েছেন সঙ্ঘবদ্ধ কাজকে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং সঙ্ঘবদ্ধ দানকে বলেছেন যে এটা ৭০ গুণ বেশি সওয়াবের। এমনি দান করলে যে সওয়াব হবে, তার ৭০ গুণ হবে সঙ্ঘবদ্ধভাবে দান করলে।
বুদ্ধমন্ত্রের তৃতীয় বিষয়টা কী সঙ্ঘং শরণং গচ্ছামি, সঙ্ঘং শরণং গচ্ছামি। অর্থাৎ সঙ্ঘের পথে চলতে হবে ।
ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র কী করেছেন? ‘সৎসঙ্গ। স্বামী বিবেকাননন্দ কী করেছেন? রামকৃষ্ণ মিশন। বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু বসু বিজ্ঞানমন্দির করেছেন।
তারা সবাই চলে গেছেন, কিন্তু তাদের সঙ্ঘ টিকে আছে। ফলে ভালো কাজও টিকে আছে। সঙ্ঘবদ্ধভাবে কাজ করলে কী হয়? কাজটা স্থায়ী হয়। যিনি সঙ্ঘ করলেন তিনি চলে যাবেন। কিন্তু তার জায়গায় তার উত্তরসূরি চলে আসবে। তিনি চলে যাবেন। তার উত্তরসূরি চলে আসবে। তিনিও চলে যাবেন, তার উত্তরসূরি চলে আসবে।
এবং শতাব্দীর পর শতাব্দী সেই কাজ চলতে থাকবে। আর যদি সঙ্ঘবদ্ধভাবে করা না হয় একটা ভালো কাজের কাজ সেইখানেই শেষ।

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All rights reserved © RMGBDNEWS24.COM
Translate »