1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০২:৩৩ পূর্বাহ্ন

বই পড়বেন, নেবেন শুধু নির্যাসটুকু

  • সময় বৃহস্পতিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২২
  • ৬৭৫ বার দেখা হয়েছে
‘হেরম্যান হেজ’। একজন জার্মান লেখক। জন্ম ২রা জুলাই।
তার লেখা একটি বইয়ের নাম ‘সিদ্ধার্থ’। আরেকটি বই পড়তে গিয়ে তার এই বইয়ের খোঁজ পেলাম। লাফ দিয়ে উঠলাম। বিস্মিত হলাম। ভাবলাম হেরম্যান হেজ জার্মান, কিন্তু তার বইয়ের নায়ক হচ্ছে সিদ্ধার্থ। কীজন্যে।
‘সিদ্ধার্থ’ যোগাড় করলাম। তখনকার দিনে বই যোগাড় করা খুব কঠিন ব্যাপার ছিল! খুঁজতে হতো কার কাছে আছে। আবার যার কাছে থাকত তাকে অনেক তেল দিতে হতো।
একজন বলল যে, বাংলা একাডেমিতে আছে।
সেখানে গিয়ে পেলাম না। আবার খোঁজ পেলাম। আরেকজনের কাছে আছে। তার কাছ থেকে নিলাম।
সিদ্ধার্থ বইটা কিন্তু ইটস এ উপন্যাস, ছোট উপন্যাস। এটাও কাহিনী। তিনি গৌতম বুদ্ধের দর্শন অবলম্বনে লিখেছেন।
নায়ক ‘সিদ্ধার্থ’ বড় ব্যবসায়ীর ছেলে। বড় ব্যবসায়ী হলে যা হয়, টাকাপয়সা এগুলো সব তো আছে। তাকে সেটা টানল না।
এক রাতে বাবার বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি ঘর ছেড়ে পালিয়ে গেলেন।
পালিয়ে গিয়ে ‘শ্রমণ’ হলেন। ‘শ্রমণ’ হওয়া মানে হচ্ছে ন্যাড়া-ট্যাড়া হয়ে ভিক্ষু হয়ে যাওয়া। ভিক্ষুর প্রথম স্টেজ হচ্ছে শ্রমণ।
এবং কিছু সময় শ্রমণদের সাথে কাটালেন। কিছু অর্জন করলেন, কিছু উপলব্ধি হলো।
উপলব্ধি হওয়ার পরে আবার যেটা হয় যে, আমরা আসলে একটা জায়গায় থাকতে পারি না। আবার বৈষয়িক জীবনের মধ্যে জড়িয়ে পড়লেন।
পরে অবশ্য আবার বৈষয়িক জীবনের অসারত্ব দেখে আবার তিনি নির্জনে-নীরবে চলে গেলেন। সহজ সাধারণ জীবন অবলম্বন করলেন।
পড়তে পড়তে কয়েকটা পয়েন্ট খুব মনে দাগ কাটল।
সিদ্ধার্থ যখন বৈষয়িক জীবনে আবার প্রবেশ করবেন, তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে যে, তোমার কী আছে? তুমি কী করতে পারো?
তিনি বললেন যে, আমি তিনটা কাজ করতে পারি। আই ক্যান ওয়েট। আই ক্যান থিঙ্ক। আই ক্যান ফাস্ট।
খুব ভাল্লাগলো! আরে মজা তো খুব! ফাস্ট করতে পারি, চিন্তা করতে পারি এবং অপেক্ষা করতে পারি।
এবং আমাদের একটা অটোসাজেশন আছে-
“আমি হাসিমুখে ক্ষুধার কষ্ট সইতে পারি। পারি নীরবে চিন্তা করতে। পারি অপেক্ষা করতে।”
কোয়ান্টামে এই তিনটা লাইনের মর্মার্থ থেকে আমরা আসলে অটোসাজেশন করেছি যে, আমি আমি হাসিমুখে ক্ষুধার কষ্ট সইতে পারি। পারি নীরবে চিন্তা করতে। আর পারি অপেক্ষা করতে।
ওখানে আমরা পরবর্তী সময় যাকে বলি ‘মনছবি’, মনছবির যে মূল পয়েন্ট খুব সুন্দরভাবে তিনি এত সিম্পলি এত সহজভাবে বলেছেন, এখনো ভাবলে অবাক হই যে এত সহজভাবে বলা যায়!
আমি আগেই বলেছি, এইখানে সিদ্ধার্থ হচ্ছে উপন্যাসের নায়ক। এবং নায়িকার নাম হচ্ছে কমলা।
কমলা হচ্ছে সেই সময়কার প্রমোদবালা বলতে পারেন। ধনী ব্যবসায়ীরা তার কাছে আসা-যাওয়া করত।
স্বাভাবিকভাবে ধন তো সবসময় রূপের পেছনে ছোটে। সিদ্ধার্থ কমলাকে বলছেন যে, “আমি তো ব্যবসা করব।”
কমলা বলল, তুমি তো কিছুই পারো না, তুমি ব্যবসা করবে কীভাবে!
তখন সিদ্ধার্থ যে উদাহরণ দিয়েছিলেন, উদাহরণটা চমৎকার।
তিনি বলেছিলেন যে দেখ,‘তুমি যখন পানিতে একটা পাথর নিক্ষেপ করো, তখন তা পুকুরতলে পৌঁছানোর জন্যে সবচেয়ে দ্রুততম পথ করে নেয়। মানে সোজা একদম পড়ে গিয়ে তলে চলে যায়। আঁকেও না, বাঁকেও না। এদিকেও যায় না, সেদিকেও যায় না।
একইভাবে সিদ্ধার্থ যখন তার লক্ষ্য স্থির করে, সিদ্ধার্থ কিছুই করে না। অর্থাৎ মোড়ামুড়ি করে না। কচলা-কচলি করে না, গজরায় না।
কিন্তু আমরা আসলে কি করি। আমরা যখন লক্ষ্য স্থির করি, শুধু গজরা-গজরি করি। মোড়ামুড়ি করি। এবং এই করি, সেই করি।
সিদ্ধার্থ কিছুই করে না। প্রয়োজনীয় কাজের মধ্যে ডুবে যায়।
অর্থাৎ লক্ষ্যের জন্যে যে প্রয়োজনীয় কাজ, কাজে ডুব দেয় এবং তলিয়ে যেতে দেয় নিজেকে। অর্থাৎ সে তার লক্ষ্যের মাঝে ডুবে যায়।
লক্ষ্যের বিপরীত কোনোকিছুকে, সন্দেহ-সংশয়-দ্বিধাদ্বন্দ্ব কোনোকিছুকে মাথায় ঢোকার সুযোগ দেয় না।
এবং সিদ্ধার্থ বলেন যে, এটাই হচ্ছে একজন শ্রমণের শিক্ষা। আমি এটাই শিখেছি।
অতএব যেভাবে তুমি আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছ একইভাবে অর্থ আমাকে আমন্ত্রণ জানাবে।
সিদ্ধার্থের সাথে কমলার পরিচয় হয়। কমলা যে ব্যবসায়ীর রক্ষিতা, সে ব্যবসায়ে সিদ্ধার্থ তখন অলরেডি জয়েন করেছে একজন সাধারণ কর্মচারী হিসেবে।
এবং নায়ক সিদ্ধার্থ ব্যবসা-ট্যবসা করে সফল হয়ে আবার সব ছেড়ে সে নির্জনবাসে চলে যায়।
তাই বই পড়বেন, বই থেকে নির্যাসটুকু নেবেন। কারণ আখের যেমন রস থাকে। ছোবড়াও থাকে। রসটা খাবেন। ছোবড়াটা খেতে যাবেন না। অধিকাংশ মানুষ আখের রস খায়না, ছোবড়া খায়। একইভাবে আমরা যখন দুধ খাই, পানিসহ খেয়ে ফেলি।
কিন্তু ছোট্ট গৃহপালিত প্রাণী হাঁস। তাকে দুধ খেতে দেন। হাঁস দুধটুকু খেয়ে ফেলবে। কিন্তু দুধের ভেতরে যে পানি, সেই পানি পড়ে থাকবে।
আমিও এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিলাম। আমার মাথার মধ্যে ঢুকল যে লক্ষ্যকে কীভাবে অর্জন করতে হবে।
বুঝলাম লক্ষ্য স্থির করে লক্ষ্যে ডুব দিতে হবে। নিজেকে ছেড়ে দিতে হবে।
লক্ষ্যবিরোধী কোনোকিছু, নেতিবাচক কোনোকিছু, দ্বিধাদ্বন্দ্ব, সন্দেহ, সংশয় কোনোকিছু যেন মাথায় ঢুকতে না পারে।
এটা যদি হয়, লক্ষ্য আপনি অর্জন করবেনই। আসলে ‘সিদ্ধার্থ’ নামক পুরো বই থেকে এই শিক্ষাটুকুই চমৎকার। একটা পয়েন্ট, যেটা ইন্সপায়ারিং!

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All rights reserved © RMGBDNEWS24.COM
Translate »