একজন মানুষ যখন ভাবতে পারে- আমি পারি আমি করব তখন সে করতে পারে এবং যখন সে ভাবে না হবে না পারব না তখন হয়ও না পারেও না।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!আপনি সফল হবেন না ব্যর্থ হবেন, আলোকোজ্জ্বল দীপ্যমান হবেন নাকি নিষ্প্রভ হবেন, প্রদীপের দীপশিখার মতো জ্বলজ্বল করবেন না টিমটিম টিমটিম করতে করতে নিভে যাবেন, যেমন অনেক বাতি আছে না এই টিমটিম একটু একটু জ্বলে তারপরে নিভে যায়। তো নিভে যাবেন এটা নির্ভর করে আপনার ভাবনার ওপরে।
আসলে খেলাধুলা, পড়াশোনা, জীবনযুদ্ধ বা বাস্তব রণক্ষেত্র বলেন, (খেলাধুলাও অনেকটা রণক্ষেত্র) এখানে দুইপক্ষ যখন নামে জানপ্রাণ দিয়ে নামে, কিন্তু জানপ্রাণ দিয়ে নামুক বা যেভাবে নামুক জয় পরাজয়টা কিন্তু নির্ধারিত হয়ে যায় ভাবনার ওপরে। যে টিম ভাবতে পারে যে আমরা জিতব, সে টিম জিতে। তার খেলা একরকম হয় আর যে টিম মনে করে যে হেরে যাব, পারি কি না পারি ইস কী জানি কী হয়! তারা হেরে যায়।
তো আসলে জয় বা পরাজয় সাফল্য বা ব্যর্থতা, আপনি সফল হবেন না ব্যর্থ হবেন, নক্ষত্র/স্টার হবেন না উল্কাপিণ্ড হবেন, (উল্কাপিণ্ড কী হয়? নিভে যায় আর স্টার নক্ষত্র জ্বলজ্বল করে আলো ছড়ায়), জ্বলজ্বল করবেন না নিভে যাবেন এটা নির্ভর করে আপনার ভাবনার ওপরে।
যদি ভাবতে পারেন যে, আমি জ্বলজ্বল করব আপনি জ্বলজ্বল করবেন। যদি ভাবতে না পারেন তাহলে আপনি নিভে যাবেন, ছাই হয়ে শেষ হয়ে যাবেন, আপনি জ্বলজ্বল আর করতে পারবেন না।
আমাদের ভাবনাটাই সবসময় বাস্তবতা নির্মাণ করে এবং ভাবনাটা হচ্ছে একটা বিশাল শক্তি।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা যদি আমরা ধরি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন বললেন যে, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। উনি যখন স্বাধীনতার কথা ভাবলেন, ভাবনাটাকে প্রকাশ করলেন এটা কিন্তু ভাবনাই ছিল।
একটা সুসজ্জিত নির্মম বাহিনীকে মোকাবেলা করার জন্যে যে প্রস্তুতি দরকার যে অস্ত্রশস্ত্র দরকার যে গোলাবারুদ দরকার, যে রসদ দরকার তার কিছুই আমাদের ছিল না, কিন্তু ভাবনা ছিল যে, স্বাধীনতা মুক্তি। এবং এই ভাবনাটা সর্বত্র ছড়িয়ে গেল।
অস্ত্র নাই ঠিক আছে। শত্রুর অস্ত্র আমার অস্ত্র, রসদ নাই ঠিক আছে শত্রুর রসদ আমার রসদ এবং যেহেতু আমরা বিশ্বাস করতাম যে, আমরা স্বাধীন হবো আমরা জয়ী হবো। আমরা স্বাধীন হয়েছি জয়ী হয়েছি।
আর আমাদের জাতি পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান জাতি, পৃথিবীর সবচেয়ে দক্ষ জাতি। আমাদের জাতি যখন কোনোকিছু ভাবে যে এটা সে করবে তখন তার ব্রেন সে লক্ষ্যে কাজ করতে শুরু করে এবং সে সেটা অর্জন করে।
এবং পৃথিবীর ইতিহাসে এত কম সময় কোনো জাতি রক্তাক্ত যুদ্ধ করে এরকম একটা নৃশংস হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীন হতে পারে নি। কিন্তু আমরা পেরেছি। কেন? আমরা ভাবতে পেরেছি তাই।
আর আমরা যেহেতু সবচেয়ে বুদ্ধিমান জাতি এবং যে-কোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় সবচেয়ে দক্ষ তো আমাদের ভাবনাটাও বিশ্বাসে রূপান্তরিত হয়েছে প্রথম। তারপরে সেটা কর্মে রূপান্তরিত হয়েছে। এবং সারাদেশের মানুষ মুক্তির সেনানী হিসেবে কাজ করেছে, সৈনিক হিসেবে কাজ করেছে- কেউ অস্ত্র নিয়ে, কেউ রসদ সরবরাহ করে, কেউ খাবার সরবরাহ করে।
একটা ছোটো মেয়ে তার একটা পোষা ছাগল, সেটাও নিয়ে আসছে মুক্তিযোদ্ধাদের খাওয়ানোর জন্যে যে, আমার এই ছাগলটাই আছে। খুব যত্নের ছাগল এটা মুক্তিযোদ্ধারা খাবে। মেয়েটি গরিব কিন্তু কোনো পয়সা নেয় নি।
কারণ যখন ভাবনাটা সৎ ভাবনা হয়, ভাবনাটা সুন্দর ভাবনা হয় তখন কী হয়? তখন স্রষ্টার রহমত তার ওপর নাজিল হয় এবং স্রষ্টা আমাদের সহায় ছিলেন তাঁর রহমত আমাদের ওপর নাজিল হয়েছে। যে-কারণে সবচেয়ে স্বল্পতম সময় আমরা স্বাধীন হয়েছি।
এবং আমাদেরকে বলা হতো যে, স্বাধীন হয়েছে তাতে কী হয়েছে? তোমরা কখনো নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে না। তোমরা ফকিরই থাকবে।
গ্রামে একটা গল্প আছে না যে, যারা সাফল্য দেখতে পারে না তারা বলে, অমুকের ছেলে এসএসসি পাশ করতে পারবে না, আচ্ছা পাশ করল। তো কলেজ পাশ করতে পারবে না, কলেজ পাশ করল। বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করতে পারবে না, বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করল। বলে যে, না চাকরি পাবে না, চাকরি পেল। যে চাকরি করলে কী হবে, বেতন পাবে না। বেতন পেলে বলে যে, বেতন পেলে কী হবে, এই টাকায় চলবে না।
তো এরকম আমরা স্বাধীন হলাম। আমাদের সম্পর্কে অনেকে বলল যে, এটা তলাবিহীন ঝুড়ি, এটা চলতে পারবে না। কিন্তু আমরা সবসময় বিশ্বাস করতাম যে, আমাদের দেশ হচ্ছে স্বর্গভূমি। আমাদের মানুষগুলো হচ্ছে সবচেয়ে বুদ্ধিমান সবচেয়ে দক্ষ। আমরা যদি চাই লক্ষ্যস্থির করি, আমরা যে-কোনো কিছু অর্জন করতে পারি।
এবং আমরা কী করলাম? কোয়ান্টাম এখন থেকে ৩০ বছর আগে লক্ষ্যস্থির করল। কী লক্ষ্যস্থির করল? যে পৃথিবীর সেরা দশের মধ্যে আমরা থাকতে চাই। তো এখন অনেককিছুতেই আমরা পৃথিবীর সেরা দশের মধ্যে।
আমরা এখন ধান উৎপাদনে চতুর্থ। ইলিশ নম্বর ওয়ান। কাঁঠাল দ্বিতীয় এবং ইনশাআল্লাহ আগামী দশ বছরের মধ্যে কাঁঠালে আমরা কী হবো? প্রথম। তো সবজিতে তৃতীয়। আলু ছয় নম্বর। আমে অষ্টম, পেয়ারায় অষ্টম, ছাগলের দুধে দ্বিতীয়। মিঠা পানির মাছে তৃতীয়।
অর্থাৎ যেখানে আমরা ধরেছি, যেখানে আমরা আমাদের ভাবনাতে মনোযোগ দিয়েছি, ভাবনাকে প্রাধান্য দিয়েছি যা নিয়ে আমরা ভেবেছি সেখানে আমরা সবসময় টপ অব দ্যা লিস্টে অর্থাৎ দশের মধ্যে চলে আসছি।
তো এজন্যে আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি যে, যত নেতিবাচক কথা বলুক আমরা সবসময় ইতিবাচক থেকেছি, সবসময় ভেবেছি এবং আমরা জাতিগতভাবেই এগিয়েছি।
এবং পৃথিবীতে যারাই বড় হয়েছে তারা আগে ভেবেছে, ভাবনাটাকে তারা বড় করেছে।
এখন থেকে ১১০/১১১ বছর আগে ফ্রান্সের প্যারিস শহরের একটা রেস্টুরেন্টে লেখকদের আড্ডা হতো। তো লেখক কবি সাহিত্যিক চিত্রকর এরা সবসময়ই আড্ডা দিতে সেইসময় পছন্দ করত।
তো এক আড্ডাতে তরুণ সব, যাদের পরবর্তী সময়ে অনেক নামডাক হয়েছে। ওখানে নিয়মিত যারা আড্ডা দিতেন তাদের মধ্যে ছিলেন, চিত্রকর পাবলো পিকাসো, কবি নাট্যকার জাঁ ককতো, কবি এপোলিনিয়ার এবং আরও অনেকে। তো সবাই বয়সে তরুণ কেউ তখনও বিখ্যাত হয় নাই।
একদিন চিত্র পরিচালক জাঁ ককতো লক্ষ্য করলেন যে, এদের পাশের টেবিলে এক ভদ্রলোক রোজ বসেন। চুপচাপ বসে তাদের কথা শোনেন। দেখলেই বোঝা যায় যে, লোকটা তেমন কোনো টাকা-পয়সা নাই।
একদিন ককতোর কৌতূহল হলো। জিজ্ঞেস করল যে, মশাই কী করেন? ছবি আঁকেন না গল্প কবিতা লেখেন?
তো তিনি বললেন, আঁকিও না লিখিও না। তবে লেখা বা আঁকা নিয়ে আপনারা কী ভাবেন তা জানার আমার খুব ইচ্ছে। তাই বসে বসে আপনাদের কথা শুনি।
জ্যঁ ককতো তখন আবার পাল্টা প্রশ্ন করল- তাহলে করেনটা কী?
ভদ্রলোক বললেন, আসলে আমার কাজ হলো ভাবা, বসে বসে আমি ভাবি।
ককতোর একটু বিরক্তিই হলো! মশাই কী নিয়ে ভাবেন?
তখন সে ভদ্রলোক বললেন, জানেন তো আমার দেশের সম্রাট অত্যাচারী। অত্যাচারী সম্রাটের শাসনে আমার দেশ। আমি ভাবি, কীভাবে এই অত্যাচার উচ্ছেদ করে আমার দেশের মানুষ সুখ স্বাচ্ছন্দ্যকে নিশ্চিত করে থাকার ব্যবস্থা করবে।
ককতো ভাবলেন যে, লোকটার কি স্ক্রু ঢিলা, মাথা খারাপ। নইলে এমন ভাবনা আসতে পারে মাথায়? কারণ যে দেশ সে দেশের সম্রাট অত্যন্ত ক্ষমতাবান, অত্যন্ত ক্ষমতাশালী দেশ। তারপরে এটা হচ্ছে ১৯১০-১১ সাল!
সাত বছর পরে তখন ককতো, পিকাসো এদের একটু নামডাক হয়েছে। এমন সময় একদিন ককতো খবরের কাগজ নিয়ে পিকাসোর কাছে ছুটে আসলেন। বললেন, ঐ লোকটার কথা মনে আছে, যে লোকটা রেস্টুরেন্টে আমাদের পাশের টেবিলে বসে আমাদের তর্ক-আলোচনা শুনতো, আর অত্যাচারী সম্রাটের শাসন উচ্ছেদ করার কথা ভাবত?
পিকাসো বলে যে, হ্যাঁ মানে আছে। কী হয়েছে?
বলে যে, ঐ লোকটা তো সত্যি সত্যি রাশিয়ায় বিপ্লব করে ফেলেছে। জারের শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। এবং রাশিয়ার নতুন নাম হয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং সোভিয়েত রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে গেছে।
এবং এই লোকটির নাম হচ্ছে ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেলিন। লেলিনের নাম শোনেন নাই এরকম মানুষ খুব কম আছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের জাতির পিতা লেলিন।
আসলে মানুষ যখন একটা জিনিস ভাবতে থাকে, ভাবতে ভাবতে সেটা বিশ্বাসে রূপান্তরিত হয় এবং এই বিশ্বাস দৃঢ় হয়, মস্তিষ্ক সেভাবে কাজ করতে শুরু করে এবং বিশ্বাস কর্মে রূপান্তরিত হয় এবং কর্ম নতুন বাস্তবতা নির্মাণ করে।
তো আসলে ভাবনার যে শক্তি এটা আপনাদেরকে বোঝানোর জন্যে অন্য কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নাই। কোয়ান্টামমে এলেই আপনারা বুঝতে পারেন যে, ভাবনার শক্তিটা কত!
আমরা যখন প্রথম আসছিলাম এখন যেটা রহমাতান বাংলো এই বাংলোটা করতে দুই বছর লেগেছিল। পাঁচটা মিস্ত্রির টিম তাদের যন্ত্রপাতি রেখে পালিয়ে গিয়েছিল মশার কামড়ে। ছয় নম্বর টিম এসে ঘরটা করেছে। দুই বছর লেগেছিল একটা বাংলো করতে।
আজকে ধরুন, যে হলে আছেন বসছেন, এখানে পাইপ ছয় ইঞ্চি বিশ ফিট। তো ইঞ্জিনিয়াররা বলল যে, এটা তো ক্রেন ছাড়া উঠবে না। আমি বললাম যে না, এটা উঠাতে হবে। তো বাংলা ক্রেন বানানো হলো। এখানে ক্রেন তো ঢুকবে না, ক্রেন আসবে কোত্থেকে!
তো জিপ একটা এনে জিপের মধ্যে বালুর বস্তা দিয়ে জিপটার ওজন করে এটা উঠানোর চেষ্টা করা হলো, এটা উঠাতে গিয়ে জিপ উল্টে গেল, ক্রেন উল্টে গেল। তারপরে ক্রেন যাতে না উল্টায় সেটার ব্যবস্থা করা হলো। তারপরে প্রত্যেকটা পাইপ তোলা হলো।
আমি বললাম যে, এখন থেকে চার হাজার বছর আগে পিরামিড গড়ার জন্যে যদি এরকম পাথরের টুকরা দেড়শ মাইল দুইশ মাইল দূর থেকে আনা যায় তো আমরা এই বাংলাদেশে আমাদের এত বুদ্ধি থাকার পরে পাইপ সোজা করতে পারব না এটা কি হয়?
এবং আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা বলে যে, হ্যাঁ ঠিক আছে। যেহেতু আমরা ভাবতে পেরেছি আমরা করতে পারব এবং হয়ে গেল।
এবং এখানে প্রত্যেকটা জিনিস যখন ভাবা হয়েছে তখন এটাকে অসম্ভব মনে করা হয়েছে। কিন্তু আমরা সবসময় বিশ্বাস করেছি, আমাদের ভাবনাটা সবসময় বিশ্বাসে রূপান্তরিত হয়েছে।
এবং এই যে ভাবনা, ভাবনাটা খুব ইম্পর্টেন্ট। ভাবনা থেকে আমরা স্বাধীন হয়েছি, ভাবনা থেকে আমরা অনেকগুলো ক্ষেত্রে দশের মধ্যে ঢুকে গেছি। এবং অনেকগুলো ক্ষেত্রে শুধু ঢুকেছি না, আমাদের এই ভাবনাটাকে আমরা যদি ভাবতে থাকি প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আমরা দশের মধ্যে থাকব ইনশাআল্লাহ।
যদি আমরা দেখি সবক্ষেত্রে যে, আপনি যেভাবে ভাববেন ঘটনা কিন্তু সেভাবেই ঘটবে। যে কারণে মনোবিজ্ঞানীরা এখন বলেন যে, জীবনে আপনি যেখানে যেতে চান বা যা হতে চান, করতে চান সেটার একটা মানসিক চিন্তা মনে মনে ভাবতে হবে অর্থাৎ মনোজগতে সেটা হতে হবে। যেটাকে আমরা বলি মনছবি।
এই যে আমাদের শৈক্য! শৈক্যর ভিডিও কে কে দেখেছে? তো শৈক্য (আমরা পারি ভিডিওতে) যখন ক্লাস এইটে তখন বলে যে আমার মনছবি হচ্ছে, বুয়েটে পড়ব। শৈক্য কি বুয়েটে পড়ছে না পড়ছে না?
আমরা গতবার মিল্টন বমের কথা বলছিলাম। মিল্টন বম আমাকে একটা চিঠি লিখেছে, সে পাঞ্জাবি ইউনিভার্সিটি পাতিয়ালাতে পড়তে চায়। তো সে আমাদের কোয়ান্টাদের মধ্যে প্রথম, যে দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে গিয়েছে।
এবং বিদেশে যাওয়া আমাদের কোয়ান্টাদের জন্যে কিচ্ছু না। এই যে আমাদের জিমন্যাস্ট তারা গিয়েছে এবং তাদের জিমন্যাস্টদের লক্ষ্যটা কী এখন? অলিম্পিকে সোনা। এবং এই যে ভাবনা এই ভাবনাটাই তাকে কী করবে? সোনা নিয়ে আসবে।
তো এই যে আমাদের মিল্টন বম খুব ভালো ছেলে খুব মেধাবী ছেলে খুব বুদ্ধিমান ছেলে। সে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পড়ছে, সবসময় সঙ্ঘের সাথে ছিল ফাউন্ডেশনের সাথে ছিল। এই করোনাকালে পুরো সময়টা সে দাফন কার্যক্রমে কাটিয়েছে।
তো তার চিঠির শেষ প্যারাটা আমি পড়ে শোনাই।
আমি এটা পুরোপুরি বিশ্বাস করছি যে, সঙ্ঘ সবসময় মানুষকে এগিয়ে চলতে সাহায্য করে। তার মধ্যে সৎসঙ্ঘ মানুষের গুণাবলিকে বিকশিত করতে সহযোগিতা করে। আমি পৃথিবীর সকল প্রান্তে চলতে চাই। আমি মাস্টার্স ডিগ্রি নেয়ার পরে, পিএইচডি সম্পন্ন করতে চাই পরিবার সমাজ সঙ্ঘ গুরু ও দেশকে ভালবেসে।
এই যে ভাবনা যে পরিবার সমাজ সঙ্ঘ গুরু ও দেশের প্রতি ভালবাসা। এই ভালবাসা একজন মানুষের শক্তিকে বিকশিত করে। এবং ক্রমাগত এই ভাবনা আপনাকে সবসময় লক্ষ্যের কাছাকাছি নিয়ে যাবে।
আসলে একটু আগে আমরা বলেছিলাম যে, মনোবিজ্ঞানীরা কী বলেন? এখনকার আধুনিক মনোবিজ্ঞানীরা বলেন যে, আপনি যা হতে চান যেখানে যেতে চান যা অর্জন করতে চান, সেটা মনে মনে চর্চা করতে হবে, মনে মনে ভাবতে হবে, মনে মনে কল্পনা করতে হবে।
এবং যখন আপনি কল্পনা করতে থাকবেন ভাবতে থাকবেন তখন এই ভাবনাটাই আপনাকে লক্ষ্যের কাছাকাছি নিয়ে যাবে।
এই যে ভাবনার শক্তি এটাকে খেলোয়াড়রা খুব চমৎকারভাবে ব্যবহার করছেন। এবং ক্রীড়াঙ্গনে যত সফল খেলোয়াড় রয়েছেন তারা আগে ভাবেন কী করবেন, কীভাবে বলটাকে মারবেন, কীভাবে গোল করবেন, কীভাবে হিট করবেন এবং তারপরে তিনি বাস্তবে খেলেন। অতএব সবসময় ভাবতে হবে।
এবং এই ভাবনার জন্যে কী করতে হবে? ভাবনাটা যেন ঠিক হয়, এলোমেলো যেন না হয়, ভাবনাটা যেন ডাইলুটেড না হয় মানে ভেজাল না হয়, এজন্যে নির্ভেজাল ভালো ও সৎ ভাবনা ভাবতে হবে।
ভাবনার মধ্যে নেতিবাচক কোনোকিছু ঢুকলে কী হবে? দুধের সাথে পানি মিশালে কী হয়? পানি ভালো জিনিস কিন্তু দুধের পানিটা তখন ভেজাল হয়ে যায়। তাই ভাবনাকে ভেজাল করা যাবে না। ভাবনাকে একদম পিওর দুধ পিওর মধুর মতো রাখতে হবে যাতে কোনো ভেজাল না ঢোকে।
তো এই ভাবনা ঠিক করার জন্যে কী করতে হবে? জীবনের একটা লক্ষ্য ঠিক করতে হবে।
আমি যখন তরুণ ছিলাম ফ্রেডরিখ নিটশে আমার খুব প্রিয় দার্শনিক ছিলেন। সুপারম্যানের যে আইডিয়া এটা ফ্রেডরিখ নিটশে থেকে।
তো তার একটি বাক্য খুব সুন্দর ছিল। ফ্রেডরিখ নিটশে বলেন যে, জীবনে যার বেঁচে থাকার একটা কারণ আছে জীবনটা তার জন্যে অনেক সহজ এবং আমি আমার জীবন থেকে উপলব্ধি করেছি যে, জীবনটা কত সহজ হতে পারে। কেন? আমার বেঁচে থাকার একটা কারণ আছে আমি এই কারণে বেঁচে থাকব। এবং এটাই আমার জীবন এটাই আমার মরণ। অতএব জীবনটা আমার জন্যে খুব সহজ।
তো যে-কারো বেঁচে থাকার কারণ জীবনের একটা লক্ষ্য! এই লক্ষ্য সুস্পষ্ট থাকতে হবে। পৃথিবীর কোনো প্রতিকূলতা আপনাকে স্পর্শ করবে না। কোনো বাধা আপনাকে স্পর্শ করবে না। কোনো সমালোচনা আপনাকে স্পর্শ করবে না যদি বেঁচে থাকার কারণটাকে আপনি বের করতে পারেন।
এবং যে বেঁচে থাকার যে কারণ ওটাকেই যদি আপনি জীবন মনে করতে পারেন, কোনোকিছুই আপনার জীবনকে আটকাতে পারবে না।
তো আসলে মনোবিজ্ঞানীরা গত ৭০ বছর ধরে এই গবেষণা করেছেন এবং সুদীর্ঘ এই গবেষণার ফলাফল থেকে তারা বলেন যে, যাদের জীবনের একটা লক্ষ্য আছে তারা লাভ করেন দীর্ঘজীবন এবং যত সুন্দর যত বড় লক্ষ্য হবে তার জীবনটা তত সুন্দর হবে তত দীর্ঘ হবে। তাদের ঘুম ভালো হয়, স্ট্রোক ও বিষন্নতার ঝুঁকি থেকে তারা মুক্ত থাকেন।
এবং যারা নিজ লক্ষ্যের ব্যাপারে যত সচেতন তাদের রোগ এবং অন্যান্য কারণে তাদের মৃত্যু হার তত কম।
এবং একটা গবেষণায় ১৬ হাজার মধ্যবয়সী মার্কিন এবং ব্রিটিশ নাগরিকদের নিয়ে একটা গবেষণা হয়েছিল। সেই গবেষণায় তারা দেখেছেন যে, যাদের জীবনের একটা লক্ষ্য আছে এবং সেই লক্ষ্য নিয়ে যারা বেঁচে আছেন তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি করেছে ২৭ শতাংশ, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমেছে ২২ শতাংশ, বয়সজনিত স্মৃতিভ্রম আলজেইমার্সের ঝুঁকি নেমে আসছে অর্ধেকে। অর্থাৎ তাদের কাছে জীবন অনেক সুন্দর হয় অনেক সহজ থাকে অনেক সুস্থ থাকে অনেক প্রাণবন্ত থাকে।
তো আবারও কমরেড লেলিনের প্রসঙ্গে আসি যে, তার ভাবনাটা খুব সুনির্দিষ্ট ছিল যে, অত্যাচারী সম্রাটের অত্যাচার থেকে জনগণকে মুক্ত করতে হবে। তার ভাবনাটা কিন্তু একটা লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে।
তো আপনি যা হতে চান যে, আমি এই হতে চাই এই জায়গায় পৌঁছে আমি সমাজের কল্যাণ করতে চাই সমাজের মঙ্গল করতে চাই তাহলে আপনিও ভালো থাকবেন। সমাজও আপনার দ্বারা উপকৃত হবে।
এবং একটা বীজ বপন করতে হবে ভাবনার বীজ। সেটা হচ্ছে কাজ। যে কাজকে কেন্দ্র করে আপনার ভাবনাটা আবর্তিত হবে ভাবনাটা ঘুরবে।
এটা নিয়ে একটা গল্প আছে।
একগ্রামে এক লোক তিনি ভাবলেন যে, তার অনেক টাকা হবে খ্যাতি হবে সুনাম হবে এবং অপেক্ষা করতে লাগলেন। কিন্তু নতুন কিছুই তার জীবনে ঘটছে না। মন তার খারাপ হতে লাগল এবং শেষ পর্যন্ত তার ধারণা হলো যে, আমার দ্বারা কিছু হবে না।
তো এর মধ্যে সেই গ্রামে একজন সাধক এলেন। খুব খ্যাতিমান সাধক ছিলেন। দূরদূরান্তে তার খ্যাতি। এই লোক তার কাছে গেল, গিয়ে বলল যে, হুজুর! দেখেন যখনই কোনো কাজ করতে যাই আমার মনে ব্যর্থতার চিন্তা আসে। সফল হতে হলে আমি কী করব?
কারণ এর আগে সে কাজ করে নি, খালি ভেবেছে! এখন কাজ করতে নিলেই তার মনে হয়, যদি ব্যর্থ হই, যদি না পারি।
তো সাধক পুরো ঘটনা শুনে বললেন যে, আজকে তো হবে না, রাত হয়ে গেছে। কালকে সূর্যোদয়ের সময় আমার কাছে আসবে।
সূর্যোদয়ের সময় যখন লোকটি এলো তখন সাধক তাকে নিয়ে হাঁটতে বের হলেন। হাঁটতে হাঁটতে একটা ফসলি জমিতে নিয়ে গেলেন। মাঠভর্তি ফসল।
সাধক বললেন, তুমি কি জানো কীভাবে এই জমিতে ফসল জন্মেছে?
লোকটি বলল যে, জানি। ক্ষেতে নিশ্চয়ই প্রথম লাঙল চালানো হয়েছে, তারপরে বীজবপন করা হয়েছে, তারপরে পানি দিয়েছে অবশেষে ফসল জন্মেছে।
দুজন আরেকটু এগিয়ে গেলেন, একটা জমিতে শুধু ঘাস। সাধক তাকে বললেন, তুমি কি বলতে পারো, ঘাস কীভাবে জন্মেছে?
লোকটা বলল, ঘাস তো এমনিতেই জন্মায়, এমনিতেই বেড়ে ওঠে, কারো সাহায্যের প্রয়োজন নাই।
তখন সাধক তাকে বললেন যে, মানুষের মন এটা ফাঁকা জমির মতো। যদি লাঙল দিয়ে চাষ করো চিন্তার লাঙল ভাবনার লাঙল লক্ষ্যের লাঙল তাহলে এই মন এই ব্রেন উর্বর হয় এবং তারপরে যদি কাজ নামের বীজবপন করো এবং মনোযোগ দাও যত্ন নাও তাহলে সুখ এবং সাফল্য তোমার আসবে।
আর যদি সেটাকে ফাঁকা রাখো অর্থাৎ ভাবনার লাঙল দিলে না, কাজের বীজবপন করলে না তাহলে কী হবে? আগাছা ঘাস জন্মাবে। এবং ঘাসের মতো নেতিবাচকতাও নিজে নিজেই জন্মায়, নেতিবাচকতা এবং ব্যর্থতায় মনের জমি ছেয়ে যাবে এবং নেতিবাচক ও ব্যর্থতার চিন্তার জন্যে কারো সাহায্যের প্রয়োজন হয় না।
তাহলে কী করতে হবে?
লক্ষ্যটাকে সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। আপনি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সমাজ সেবক, শিল্পপতি যা-ই হতে চান আপনার কী আছে এটা মোটেই গুরুত্বপূর্ণ না।
ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার/বিজ্ঞানী হতে চান, ভাবুন হয়ে গেছেন। হয়ে যাওয়ার পর আপনার চারপাশে কারা থাকবে? ডাক্তার থাকবে ইঞ্জিনিয়ার থাকবে, বিসিএস ক্যাডার হলে বিসিএস ক্যাডারেরা থাকবে বা বিচারপতি হলে বিচারপতিরা থাকবে। ভাবুন, দেখুন যে, চারপাশে তারা আছে। তারা কী বলছে সেটা শোনেন!
ডাক্তার হওয়ার পরে, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পরে, বিচারক হওয়ার পরে বা শিল্পপতি হওয়ার পরে লোকজন কী বলছে? কী শুনতে চান আপনি, শোনেন! তারপরে কেমন অনুভূতি হচ্ছে, চারপাশের বাতাস? এখনকার বাতাস না শিল্পপতি হলে যেরকম বাতাস হবে ইঞ্জিনিয়ার হলে যেরকম বাতাস হবে সেই বড় এজলাসে বসলে বিচারক হলে যে চারপাশের বাতাস- এই বাতাসের ঘ্রাণ নিতে হবে এই শব্দগুলো শুনতে হবে।
এবং ইতিবাচক মানুষ ও সৎসঙ্ঘে সবসময় থাকতে হবে, ভালো মানুষের সাথে থাকতে হবে, সৎসঙ্ঘে সঙ্ঘবদ্ধ হতে হবে।
আর আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি কী ভাবনার জন্যে? মেডিটেশন। এবং মেডিটেশনে যখন ভাববেন এটাই হচ্ছে মনছবি, যা একেবারে গাইডেড মিসাইলের মতো গিয়ে লক্ষ্যভেদ করবে। যে চেয়ার আপনি কল্পনা করছেন, যে চেয়ার আপনি মনোজগতে ভাবছেন ঐ চেয়ারে গিয়ে আপনি বসে পড়বেন। ঐ চেয়ারে আপনি বসবেনই।
এবং যখনই সময় পান যখনই কোনো কাজ নাই সবসময় মনে মনে বলবেন, আমি পারি আমি করব। এবং যা হতে চান একটা কাগজে লিখে পকেটে রাখবেন যে, এই হতে চাই, আমার চারপাশে এরকম পরিবেশ দেখতে চাই। মাঝে-মাঝে কাগজটা বের করে দেখবেন, ভাববেন যে, হয়ে গেছি। এবং ইনশাআল্লাহ হয়ে যাবেন।