আসলে যত নৈতিকতা, শুদ্ধাচার এটার ভিত্তি হচ্ছে পরিবার। এবং পরিবারের শিক্ষাই একজন মানুষকে শুদ্ধাচারী হতে সাহায্য করে।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!যে পরিবারে মা-বাবার মধ্যে মিল রয়েছে সেই পরিবারের ছেলে-মেয়েরাও অত্যন্ত সুখী হয়। মা-বাবার মধ্যে যেখানে অমিল রয়েছে সেখানে অসুখী হয়। এজন্যে পরিবারে শুদ্ধাচার চর্চাটা হচ্ছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
একটা ঘটনা আমরা বলতে পারি।
আমাদের কোয়ান্টাম পরিবারের এক সদস্য। তার তিন ছেলে। অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময় তিনি যদি কোনো ফল বা খাবার কিনতেন, ফিরে বড় ছেলের হাতে দিতেন। দিয়ে বলতেন যে, এটা আগে তোমার মা’কে দাও। তারপর তোমরা নেবে।
এবং বলতেন, ফল আগে টুকরা টুকরা করা হবে। এরপর তোমরা তিনজন নাও। প্রত্যেকে খাবার শেষ করলে তারপরে আবার এক টুকরা করে নেবে। কেউ কেউ তো আছে একটু গপাগপ খেয়ে ফেলে আরকি। তো গপাগপ খেয়ে যেন একজন বেশি একজন কম না হয়।
এবং এই যে সুবিচারের ফলাফল হলো কী? তারা প্রত্যেকে বড় হয়েছে, প্রত্যেকে এস্টাবলিসড। এখন ছোট দুই ভাই যদি কোনো জিনিস কেনে, তো বড় ভাইকে আগে দেয় যে, আগে তুমি নাও। তারপরে আমরা নেব।
কেন? তারাও দেখেছে যে বড় ভাই কিছু কিনলে বলত যে, তোমরা কোনটা নেবে নাও, তারপরে আমি নেব। এখন তার কাছ থেকে শিখেছে ছোট ভাইয়েরা যে, না আগে তুমি নাও তারপরে আমরা নেব।
আসলে সমস্যাটা হয় কখন?
যখন মা-বাবা ভুল করেন। অর্থাৎ পক্ষপাতিত্ব করে ফেলেন কাউকে বেশি কাউকে কম।
এই যে ভাই-বোনদের মধ্যে বা ভাই-ভাইয়ের মধ্যে যত সমস্যা এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে মা-বাবার পক্ষপাতিত্ব। এবং এই পক্ষপাতিত্বটা আমরা খুব বেশি করি।
আল্লাহর রসুল, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (স) সবসময়ই কি ছিলেন? নিরপেক্ষ। সবসময় সুবিচারক ছিলেন।
একবার এক সাহাবী ছেলেকে নিয়ে এসেছেন। ছেলেকে এনে তাকে একজন কর্মচারী দিলেন। একটা দাস উপহার দিলেন।
এবং তিনি বললেন যে, আমার একান্ত ইচ্ছা আপনি এই বিষয়টির সাক্ষী হবেন।
নবীজী তাকে প্রশ্ন করলেন, “তুমি কি তোমার প্রত্যেক সন্তানকে একই উপহার দিয়েছ?”
সাহাবী বললেন যে, না।
সাহাবী মানে হচ্ছে, নবীজীর (স) সহচর যারা ছিলেন তাদেরকে ‘সাহাবী’ বলা হয়।
তো তখন নবীজী (স) তাকে বললেন, “তাহলে অন্য কোনো সাক্ষী খুঁজে বের করো। আমি অন্যায়-বেইনসাফির সাক্ষী হতে পারি না”। বোখারী ও মুসলিম শরীফ দু-জায়গাতেই এ হাদীসটি রয়েছে।
অর্থাৎ ভাই-বোনের, ভাই-ভাইয়ের মধ্যে পারিবারিক যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় এটার অন্যতম কারণ হচ্ছে সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা। যে কারণে ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম তিনি খুব চমৎকার কথা বলেছিলেন যে, মৃত্যুশয্যায় সম্পদ রেখে যাওয়া মানে হচ্ছে একটি বিবাদমান কলহপূর্ণ সম্পদ রেখে যাওয়া।
এর মধ্যে পত্রিকায় দেখছিলাম যে, বাবা মারা গেছে, বাবার লাশ দুই দিন ধরে দাফন হচ্ছে না। দাফন করতে দেবে না তার সন্তানরা সম্পত্তির ভাগ ঠিকমতো না হওয়া পর্যন্ত। পরে পুলিশ গিয়ে দুইদিন পরে দাফন করে।
চিন্তা করেন! দাফন করতে পারবে না আগে ভাগ-বাটোয়ারা ঠিক করো।
এইজন্যে বুদ্ধিমান মানুষ যারা আছেন সবসময়ই কী করবেন? ভাগ-বাটোয়ারা আগে করে দেবেন এবং নিজের এক তৃতীয়াংশ নিজে নিয়ে যাবেন।
যা ভাগ-বাটোয়ারা করে গেলেন এটা রেখে গেলেন দুনিয়াতে। আর যা ওয়াকফ করে গেলেন, দান করে গেলেন, সেটা আপনি সাথে নিয়ে গেলেন।
তো আসলে, অন্তত এক-তৃতীয়াংশ ওয়াকফ করবেন, বাকি দুই- তৃতীয়াংশ আপনি আপনার ওয়ারিশদের আগেই ভাগ-বাটোয়ারা করে দিয়ে যাবেন যাতে আপনার লাশ আবার জানাজা ছাড়া রেখে না দেয়।
অবশ্য আমাদের কোয়ান্টাম পরিবার, আমরা অনেক ইনসাফপূর্ণ পরিবার। আমাদের ছেলে-মেয়েরা ওরকম করে না। এটা আমাদের একটা আনন্দ। সাধারণ মানুষের জন্য এটা আহ্বান থাকবে যে তারা যাতে এটা করেন।
আসলে আপনি যা করবেন সেটার প্রতিফল, সেটার প্রতিদানই আপনি পাবেন। এবং আমাদের যে পরিবার, মা-বাবার প্রতি আমাদের যে অনুরাগ, মা-বাবার প্রতি আমাদের যে অনুভূতি, আমাদের যে মমতা, আমাদের যে সমমর্মিতা এটা আলাদা।
আমরা পাশ্চাত্য থেকে আলাদা। পাশ্চাত্যে কী হয়? ইউরোপ-আমেরিকাতে মা-বাবাকে নার্সিং হোমে ফেলে রেখে দেয়। ওল্ড এইজ হোমে ফেলে রেখে দেয়। মুমূর্ষু হলে আই.সি.ইউ তে ঢুকিয়ে দেয়। এবং যন্ত্রনির্ভর যে নিঃসঙ্গ মৃত্যু, এই অভিশপ্ত মৃত্যুর সম্মুখীন তারা হয়।
আর আমাদের ঐতিহ্য হলো আমরা মা-বাবাকে ভালবাসি। এবং আমাদের ঐতিহ্য হচ্ছে ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি পরিবেষ্টিত অবস্থায় তিনি মারা যাবেন।
আমাদের একজন বিশেষজ্ঞ, দেশের একজন নামকরা লেখক এবং বিশেষজ্ঞ তিনি। তিনি এসেছিলেন আমাদের এক মুক্ত আলোচনায়। তার মা, এই বিশেষজ্ঞ যিনি তার মা আমাদের প্রো-মাস্টার। তার বাবাও গ্রাজুয়েট ছিলেন।
তো তিনি বলছিলেন যে, বাবা যখন অসুস্থ ছিলেন, শয্যাশায়ী ছিলেন তখন আমিই তার দেখাশুনা করতাম। বিছানা বদলে দিতাম, কাপড় বদলে দিতাম।
একদিন জিজ্ঞেস করলাম যে, বাবা! আমি যে তোমার কাপড় বদলে দিচ্ছি তোমার অস্বস্তি হয় না? খারাপ লাগে না?
বাবা বললেন যে না, খারাপ কেন লাগবে? আমার খুব আনন্দ হয়।
আমিও আমার বাবাকে এইভাবে বিছানা বদলে দিতাম, কাপড় বদলে দিতাম। এখন তুমি দিচ্ছ। এবং আমি দোয়া করি তুমি যেদিন বুড়ো হবে তোমার ছেলেরাও যাতে তোমার বিছানা বদলে দিতে পারে, তোমার কাপড় বদলে দিতে পারে।
তো আসলে বার্ধক্য এবং মৃত্যু সম্পর্কে আমাদের যে ধারণা এটা আলাদা ধারণা। এই ধারণা হচ্ছে মমতার, এই ধারণা হচ্ছে ভালবাসার এবং এই ধারণাই হচ্ছে যথার্থ ধারণা।
[কোয়ান্টামম সাদাকায়ন, ০৮ জানুয়ারি, ২০২১]