চলতি বছরের ১৫-ই জানুয়ারি রাজধানীর গুলশানে একটি বিকাশের দোকানে টাকা লেনদেনকে কেন্দ্র করে গুলির ঘটনা ঘটে। পুলিশ গুলিবর্ষণকারী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মিন্টুকে আটক করে জানতে পারে আগ্নেয়াস্ত্রটি তার নামে লাইসেন্স করা হলেও মেয়াদোত্তীর্ণ। গত বছরের প্রথম দিকে শাহজাহানপুরে আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুসহ জোড়া খুনের ঘটনায় গুলি সরবরাহ করেছিলেন একজন বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী। পল্টনের আর্মস মিউজিয়াম নামে একটি বৈধ অস্ত্রের দোকানের মালিক ইমরান হোসেন জিতু সেই গুলি সরবরাহ করেছিলেন। এর আগেও বহু জায়গায় বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকেই সরকারবিরোধী চ‚ড়ান্ত আন্দোলনে নেমেছে বিরোধীদলগুলো। ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এমন প্রেক্ষাপটে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে কেউ যাতে বৈধ অস্ত্র দিয়ে কোনো অবৈধ কর্মকাণ্ড করতে না পারে, সেজন্য আগে থেকেই অস্ত্র ও গুলির হিসাব ও অস্ত্রধারীদের তালিকা হালনাগাদ করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এর আগে গত মাসে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। একই সঙ্গে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের দোকানে যেসব অস্ত্র ও গুলি রয়েছে, তা আমদানির কাগজপত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার নির্দেশনাও দেয়া হয় বলে জানা গেছে।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন সময়ে বৈধ অস্ত্রধারীদের অস্ত্র ভাড়ায় দেয়া বা বৈধ অস্ত্র দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়েরও অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে এই প্রবণতা আরও বাড়তে পারে। এজন্য বৈধ অস্ত্রধারীদের তালিকা হালনাগাদ করে যাতে তাদের নজরদারি করা যায়, এ জন্যই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ডিবির একজন কর্মকর্তা জানান, ঢাকায় বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া সন্ত্রাসীরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তারা অনেক বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বিভিন্ন সময় গুলি কিনেছেন। বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার আড়ালে অবৈধ গুলি সংগ্রহ করে সেটা বিক্রি করেন। তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘এটা আমাদের নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে করা হচ্ছে। যাদের কাছে বৈধ অস্ত্র ও গুলি রয়েছে, তাদের তালিকাটা হালনাগাদ করা হচ্ছে। এর পেছনে রাজনৈতিক বা বিশেষ কোন উদ্দেশ্য নেই।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গত দুই মাসের ক্রাইম কনফারেন্সেও বৈধ অস্ত্রধারীদের তালিকা নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে বৈধ অস্ত্র দিয়ে কোন অবৈধ কর্মকাণ্ড করতে না পারে, সেজন্য আগে থেকেই অস্ত্র ও গুলির হিসাব ও অস্ত্রধারীদের তালিকা হালনাগাদ করার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়।
সূত্রমতে, লাইসেন্স দেয়া বৈধ অস্ত্র ও গুলির তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু হয়। ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনা অনুযায়ী, অস্ত্র ব্যবসায়ীদের অস্ত্র ও গুলি আমদানি এবং কী কী অস্ত্র থাকার কথা, সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডিসিদের ইনভয়েসের সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখা হয়। কার কাছ থেকে অস্ত্র ও গুলি আমদানি করা হয় এবং কার কাছে বিক্রি করা হচ্ছে, সেসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন থেকে তালিকা সংগ্রহ করে এবং যেসব বৈধ অস্ত্রের
লাইসেন্সধারী ব্যবহারকারীরা ডিএমপির বিভিন্ন থানায় জিডির মাধ্যমে তথ্য দিয়েছেন, তা যাচাই-বাছাই করে ডিএমপিতে কত সংখ্যক বৈধ অস্ত্র লাইসেন্সধারী অস্ত্র ও গুলি আছে, তার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যারা অস্ত্রের নিবন্ধন নিয়ে থাকেন তারা অনেকেই সঠিক নিয়ম মানেন না। অনেক ক্ষেত্রেই অনৈতিক কাজে ব্যবহার করছে লাইসেন্সধারীরা। পুলিশ সদর দপ্তরে এ সংক্রান্ত যেসব অভিযোগ জমা পড়েছে সেগুলো খতিয়ে দেখছে পুলিশ। কারণ এই সব অবৈধ অস্ত্র দিয়ে চাঁদাবাজি, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ভয়ভীতি দেখানো, জমিজমার বিরোধ, আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব-শত্রæতার জেরে ব্যবহার করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, সারা দেশে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার ৩১২টি অস্ত্রের নিবন্ধন দেয়া আছে। এর মধ্যে এক লাখেরও কম অস্ত্রের হালনাগাদ তথ্য পুলিশ সদর দপ্তর, পুলিশের বিশেষ শাখা এসবি এবং সিআইডি’র কাছে রয়েছে। দীর্ঘদিন সেই অস্ত্রগুলোর হালনাগাদ তথ্য না থাকায় হাতবদল হতে পারে। কেউবা আবার কাউকে ভাড়া হিসেবে ব্যবহার করতে দিতে পারেন। এমন নানা কারণে দ্রুত হালনাগাদের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয় পুলিশ।
সূত্র জানায়, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য সরকারের কিছু শর্ত পরিপূর্ণভাবে মানতে হয়। কারও জীবন শঙ্কার মধ্যে থাকলে কেউ আবেদন করতে পারেন। আবেদনকারীর বয়স ৩০ বছর হতে হবে। প্রত্যেক বছরে তাকে ৩ লাখ টাকা সরকারকে রাজস্ব দিতে হবে। এরপর পুলিশের বিশেষ শাখার ভেরিফিকেশন হওয়ার পর তাকে কর্তৃপক্ষ অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে থাকেন। পুলিশের বিশেষ শাখা ফায়ার আর্মস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সূত্র বলছে, অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয় জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে পুলিশের কাছে একটি তদন্ত চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। ঐ চিঠিতে মূল আবেদনকারীর স্থায়ী ঠিকানা সঠিক কি না এবং তিনি লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন কিনা- তা তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেয়ার নির্দেশনা আসে।