1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
  2. [email protected] : adminbackup :
বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০১:০১ পূর্বাহ্ন

অনলাইন শপিং – আশীর্বাদ না অভিশাপ

  • সময় শনিবার, ১০ মে, ২০২৫
  • ৫৫ বার দেখা হয়েছে

অনলাইন শপিং আধুনিক জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে, কিন্তু এটি আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ—এই বিতর্কের দুটি দিকই রয়েছে। নিচে বিষয়টির সুবিধা ও অসুবিধাগুলো বিশ্লেষণ করা হলো:
স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে অনলাইন শপিং এখন আমাদের অনেকের জীবনেই নিত্যদিনের অভিজ্ঞতায় রূপান্তরিত হয়েছে। বাচ্চার ফিডার বোতল থেকে শুরু করে মাইক্রোওয়েভ ওভেন, চাল-ডাল থেকে শুরু করে মেকাপ বক্স- সবকিছুই এখন অনলাইনে কিনতে পাওয়া যায়। স্ট্যাটাস সিম্বল মনে করে সাধ্য থাকুক না থাকুক অনেকে আমরা তা কিনছিও হাতভরে। ক্যাশ অন ডেলিভারি বা জিনিস হাতে পেয়ে তারপর দাম দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে বিক্রেতারাও আকর্ষণীয় করার সুযোগ নিয়েছেন এসব ক্ষেত্রে। আর জ্যাম পেরিয়ে মার্কেটে যেতে হয় না, সময় বাঁচে, দাম কম হয়- ইত্যাদি অজুহাতে ক্রেতারাও ভিড় করছেন তা কেনার জন্যে। মোট কথা- মার্কেট এখন আক্ষরিক অর্থেই হাতের মুঠোয়।

কিন্তু আদপে কি তা আমাদের জন্যে কল্যাণকর হয়েছে? আগে যখন বাজারে গিয়ে আমাদের কিনতে হতো তার চেয়ে বেশি তৃপ্তি কি এখন আমরা পাই? বা তার চেয়ে আসলেই কি আমরা খরচ কমাতে পেরেছি?

অনলাইন শপিংয়ের আশীর্বাদ (সুবিধা)
১. সুবিধা ও সময় সাশ্রয়:
– বাসা থেকে সহজেই পণ্য কেনা যায়, যানজট বা দোকানে ভিড় এড়ানো যায় ।
– দ্রুত ডেলিভারি এবং ক্যাশ অন ডেলিভারি (COD) অপশন ক্রেতাদের জন্য সুবিধাজনক ।

২. দাম ও অফারের সুবিধা:
– অনলাইনে প্রায়শই ডিসকাউন্ট, অফার এবং তুলনামূলকভাবে কম দামে পণ্য পাওয়া যায় ।
– বিভিন্ন বিক্রেতার পণ্য একই প্ল্যাটফর্মে তুলনা করা সহজ ।

৩. বিস্তৃত পছন্দ:
– স্থানীয় বাজারে না পাওয়া পণ্যও অনলাইনে সহজলভ্য ।

৪. *ডিজিটাল লেনদেনের নিরাপত্তা*:
– মোবাইল ব্যাংকিং ও ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে নিরাপদে লেনদেন করা যায় ।

অনলাইন শপিংয়ের অভিশাপ (অসুবিধা)
১. পণ্যের গুণগত মানের অনিশ্চয়তা:
– পণ্য হাতে না দেখে শুধু ছবি ও বিবরণের উপর ভিত্তি করে কিনতে হয়, যা অনেক সময় প্রতারণার শিকার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায় ।
– কারচুপি বা নিম্নমানের পণ্য ডেলিভারির সম্ভাবনা থাকে ।

২. অপ্রয়োজনীয় খরচ ও অতিরিক্ত কেনাকাটা:
– বিজ্ঞাপন ও অফারের প্রলোভনে পড়ে মানুষ প্রায়শই অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে ফেলে ।
– EMI বা কিস্তিতে কেনার সুবিধা মানুষকে তার সাধ্যের বাইরে খরচ করতে উৎসাহিত করে, যা ঋণের ফাঁদে ফেলতে পারে ।

৩. ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা ঝুঁকি:
– অনলাইন শপিং সাইটগুলো ব্যবহারকারীর সার্চ হিস্ট্রি ও ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করে, যা পরবর্তীতে স্প্যাম মেইল বা টার্গেটেড বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে ।

৪. সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাব:
– দোকানে গিয়ে কেনাকাটার সামাজিক আনন্দ ও বিক্রয়কর্মীদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের অভাব হয় ।
– অতিরিক্ত প্যাকেজিং বর্জ্য এবং পরিবহন-জনিত কার্বন নিঃসরণ পরিবেশের ক্ষতি করে ।

বাস্তব বাজারে গিয়ে কেনাকাটার মধ্য দিয়ে পরিবেশের সাথে একাত্মায়নের যে সুযোগ আপনি পান, অনলাইনে কখনো তা হয় না। সুন্দর একটা দোকানে গিয়ে বিক্রয়কর্মীদের সাথে কথা বলে, জিনিস দেখে নেয়ার যে তৃপ্তি, তা অনলাইনে নেই। যদি থাকতোই তাহলে ব্যবসায়ীরা অনলাইন বিক্রি করেই সন্তুষ্ট থাকত। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি, অনলাইনে কিছুটা পরিচিতি হয়ে যাওয়ার পরই ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত হয়ে যায় বাস্তবে দোকান খোলার জন্যে। কেন? কারণ এই পরিবেশ।

৫. আসক্তি ও সময় নষ্ট:
– অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনলাইন শপিং সাইটে ব্রাউজ করে সময় নষ্ট করেন, যা উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয় ।
আগেই বলা হয়েছে অনলাইন শপিং আমাদের হাতের মুঠোয় কেনার সুযোগ এনে দিয়েছে। ফলে প্রয়োজন না থাকলেও আমরা আজকাল ঢু মারি অনলাইনের বিভিন্ন সাইটে এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা নষ্ট করি এসব অপ্রয়োজনীয় জিনিস দেখে। হয়তো কখনো কখনো কিনি। কিন্তু কারো কারো এক ধরনের আসক্তি হয়ে যায় এসব সাইট ঘাঁটাঘাঁটির। অর্থ, সময় এবং মানসিক শান্তির এক বিরাট ক্ষতি হয় এর ফলে।

৬. বেশি কেনা:
অনলাইনে আপনি সাধারণত বেশি কেনেন। এটা আপনি স্বীকার করুন আর নাই করুন। ধরুন, আপনি যশোর স্টিচের একটা সালোয়ার কামিজ কিনতে চান। বাস্তবে যখন আপনি কিনবেন, আপনি বাজার থেকে একটা সেটই কিনবেন। কিন্তু যখন অনলাইনে কিনছেন দেখা গেল দাম কম বা পরে অন্য কালারগুলো পাই কি না এসব চিন্তা করে আপনি একের বেশি কিনে ফেলছেন।

৭. গুণগত মান
বাস্তবে পণ্য দেখেশুনে কেনার যে তৃপ্তি অনলাইনে তা কখনো হয় না। ধরুন আপনি কারচুপির কাজ করা একটা শাড়ি কিনতে চাচ্ছেন। অনলাইনে আপনাকে স্রেফ দুবাক্যের একটি বিবরণ দেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে বা সাধারণ দুয়েকটা ছবি। কিন্তু বাস্তবে যখন আপনি যাবেন, আসলেই কাজটা কারচুপি কি না, ধরে দেখতে কেমন লাগছে, কাপড়ের ওজ্জ্বল্য যেমনটা দেখাচ্ছে, আসলেই তা কি না -এহেন সব ধরনের যাচাইয়ের সুযোগ আপনি নিতে পারছেন। তাছাড়া অনলাইনে আপনাকে আপনার দেয়া বিবরণ অনুযায়ী সার্চ রেজাল্ট যা আসছে তা দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। কিন্তু বাস্তবে যখন বাজারে যাবেন, তখন আপনার বিবরণ ছাড়াও আরো যেসব পণ্য আছে, তা দেখার সুযোগও আপনি নিতে পারবেন।

৮. পরে দেখা :
আপনি একটা প্যান্ট কিনবেন। আপনি জানেন, আপনার ডাবল এক্সএল লাগে। কিন্তু এমন হতে পারে, যে ডিজাইনটা আপনি পছন্দ করেছেন পরে দেখলেন তার এক্সএলটা আপনাকে ততটা ফিট করছে না। আপনাকে বরং আরেকটা ডিজাইনের এক্সএল বেশি ফিট করছে।
তো এটা ট্রায়াল রুমে পরে দেখেই কিন্তু আপনি অনুভব করতে পারলেন। অনলাইনে এটা করার সুযোগ আপনি কখনোই পেতেন না।

৯. স্প্যাম মেইল :
আপনি যখন অনলাইনে কিনছেন, সার্চ ইঞ্জিনে আপনার সার্চ হিস্টরিগুলো খুব ভালোভাবেই থাকে। সেটা দিয়ে আপনাকে প্রতিনিয়তই এ জাতীয় পণ্যের বিজ্ঞাপন পাঠানোর ব্যাপারটা ঘটতে পারে। তাছাড়া আপনার ইমেইল আইডিও তাদের কাছে থাকছে। আর তা থেকে অনবরত আপনার কাছে আসতে পারে স্প্যাম মেইল। মেইলগুলো আপনাকে বিরক্ত করে শুধু নয়, অনেক সময় আপনি প্রভাবিতও হয়ে যেতে পারেন।

উপসংহার
অনলাইন শপিং নিঃসন্দেহে আধুনিক জীবনের একটি বড় সুবিধা, তবে এর সঠিক ব্যবহার না করলে এটি অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানসিক সমস্যা তৈরি করতে পারে। ব্যবহারকারীদের উচিত সচেতনভাবে কেনাকাটা করা, প্রয়োজনীয় জিনিসই কেনা এবং ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখা। বিজ্ঞানের মতোই অনলাইন শপিংও একটি টুল—এটি কিভাবে ব্যবহার করা হবে, তা নির্ভর করে ব্যবহারকারীর উপর ।

সতর্কতা:
EMI বা কিস্তিতে কেনার আগে নিজের আর্থিক সক্ষমতা যাচাই করুন ।
পণ্যের রিভিউ ও রেটিং ভালোভাবে পড়ুন ।
প্রয়োজন না হলে অপ্রয়োজনীয় কেনা এড়িয়ে চলুন।
নিজেকে প্রস্ন করুন –
১.এটা কি আমার দরকার
২.আসলেই কি এটা আমার দরকার।
৩.এটা না হলে কি আমার জীবন চলবে না ।
তিনটি প্রস্নের উত্তর হ্যাঁ হলেই আপনি ক্রয় করবেন।

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com