রাজধানীর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচল আরম্ভ করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। পরীক্ষামূলক চলাচলের তিনটি ধাপের মধ্যে এটি প্রথম। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে পরীক্ষামূলকভাবে মেট্রোরেল চলাচলের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এসময় ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিকসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। শুক্রবার যাতে করে কোনো ধরনের সমস্যা না হয় এ জন্য গত বুধবার মধ্যরাতে এ রুটে মেট্রোরেল চলাচল করেছে। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে পরীক্ষামূলক চলাচল সম্পন্ন হওয়ার পর যাত্রী নিয়ে চলাচলের দিন-তারিখ ঠিক করা হবে। উদ্বোধনের দিন ঠিক করা হবে প্রধানমন্ত্রীর শিডিউল পাওয়া সাপেক্ষে।
ডিএমটিসিএল জানায়, পরীক্ষামূলক চলাচলের প্রথম ধাপ পারদর্শিতা পরীক্ষা বা পারফরম্যান্স টেস্ট। এর পরের ধাপে হবে ‘সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন টেস্ট’। চূড়ান্ত পর্যায়ে হবে ‘ট্রায়াল রান’ বা পরীক্ষামূলক চলাচল। এ তিন ধরনের চলাচলকেই পরীক্ষামূলক চলাচল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।পরীক্ষামূলক চলাচল শুরুর আগে মেট্রোরেলের পথ যাচাই (ভেরিফিকেশন) করতে হয়। এর আগে প্রকৌশলীরা কয়েকভাগে বিভক্ত হয়ে হেঁটে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রেলপথ যাচাই করেছেন। এ সময় পরীক্ষামূলক মেট্রোরেল চলাচল শুরুর ক্ষেত্রে কোনো বাধা, চ্যালেঞ্জ কিংবা কারিগরি ত্রুটি আছে কি না, তা দেখেছেন কর্মকর্তারা। ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা বলছেন, মেট্রোরেলের চলাচলের পথে বাধা নেই। যাচাই করা একধরনের আনুষ্ঠানিকতা। কারিগরি কমিটিও আনুষ্ঠানিকতা মেনে বৈঠক করে পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হয়। শুরুতে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার পথে মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। পরে তা কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৯৫ শতাংশের কিছু বেশি।
এদিকে মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। শুরুতে এ প্রকল্পের ব্যয় ছিল প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। মূলত মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার বাড়তি অংশ নির্মাণ, প্রতিটি স্টেশনের জন্য নতুন করে জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন নতুন অনুষঙ্গ যুক্ত হওয়ায় খরচ বেড়েছে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা। মেট্রোরেল প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১২ সালে। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার (জাইকা) সঙ্গে ঋণচুক্তি হয় পরের বছর। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের পথের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এ পথে ৯টি স্টেশন রয়েছে। উত্তরা উত্তর (দিয়াবাড়ি), উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও। এসব স্টেশন থেকে এখন যাত্রীরা মেট্রোরেলে চড়তে পারছেন। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত স্টেশন রয়েছে সাতটি- বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব ও মতিঝিল। আজ এ পথে মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হয়েছে।
উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী: রাজধানীর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। পরীক্ষামূলক চলাচলের তিনটি ধাপের মধ্যে এটি প্রথম। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের বাণিজ্যিক যাত্রার (যাত্রী নিয়ে চলাচল) উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতুমন্ত্রী বলেন, শুরুতে ফার্মগেট, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল এ তিনটি স্টেশনে মেট্রোরেল যাত্রার পরিকল্পনা রয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে বাস্তবতার ভিত্তিতে স্টেশনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। তখন থেকে ঢাকা মহানগরবাসী নিরবচ্ছিন্নভাবে উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল মেট্রোরেল স্টেশন পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারবেন বলে আশা করছি। সেই লক্ষ্যে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ডিএমটিসিএল। ওবায়দুল কাদের বলেন, মেট্রোরেল এখন আর স্বপ্ন নয় বাস্তবতা। বর্তমানে দৈনিক গড়ে ৭০ হাজার দেশি-বিদেশি যাত্রী মেট্রোরেলে যাতায়াত করছেন। এ সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এতে এখন দৈনিক গড়ে আয় হচ্ছে প্রায় ২৬ লাখ টাকা মাত্র। সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা ২০৩০ এর আওতায় এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার চারটি মেট্রোরেল লাইন বাস্তবায়ন করছে। মেট্রোরেল প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা মহানগরী ও তৎসংলগ্ন পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসনে ও পরিবেশ উন্নয়নে অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসেবে ডিএমটিসিএলের আওতায় ছয়টি মেট্রোরেল সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছে। এ লক্ষ্যে শেখ হাসিনার সরকার সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা-২০৩০ গ্রহণ করেছে। এ কর্মপরিকল্পনা অনুসরণে দ্রুতগামী, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, সময় সাশ্রয়ী, বিদ্যুৎচালিত, পরিবেশবান্ধব ও দূরনিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৭টি স্টেশন বিশিষ্ট বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেল। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী জনসম্মুখে উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন করেছেন। এখন শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত নিয়মিত চলাচল করছে মেট্রো ট্রেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে মেট্রোরেল পরীক্ষামূলকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে। এখন থেকে এ অংশে আপনারা মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচল নিয়মিত প্রত্যক্ষ করতে পারবেন। আগামী অক্টোবরের শেষ প্রধানমন্ত্রী এ অংশের উদ্বোধন করবেন বলে আশা করছি। এ লক্ষ্যে আজ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে সব টেস্ট চলতে থাকবে। এ টেস্টগুলো শুক্রবার দিনে এবং অন্যান্য দিন রাতে করা হবে। টেস্টগুলো চলাকালীন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এরই মধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডিএমটিসিএল জানায়, এমআরটি লাইন-৬ এর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের সাতটি মেট্রোরেল স্টেশনের কাজের অগ্রগতি ভালো। বিজয় সরণি মেট্রোরেল স্টেশনের কাজের অগ্রগতি ৯৭ শতাংশ, ফার্মগেট স্টেশনের অগ্রগতি ৯৮ শতাংশ, কারওয়ান বাজার স্টেশনের কাজের অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ। শাহবাগ স্টেশনের কাজের অগ্রগতি ৯৪ শতাংশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনের কাজের অগ্রগতি ৯৭ শতাংশ, বাংলাদেশ সচিবালয় স্টেশনের কাজের অগ্রগতি ৯৬ শতাংশ এবং মতিঝিল স্টেশনের কাজের অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ। এমআরটি লাইন-৬ এর ৩০ জুন পর্যন্ত গড় অগ্রগতি ৯৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও অংশের অগ্রগতি শতভাগ।