শেখ সাদীর কবিতায় লিখেছেন-
পর দোষ তোমার নিকটে যেই কহে
বলে সে তোমার দোষ অপরে নিশ্চয়।
নেতিবাচক কিছু অভ্যাস, আচরণ এবং দৃষ্টিভঙ্গির কারণে মানুষ তার সম্ভাবনা বিকাশের পথটাকে রুদ্ধ করে দেয়। এই রকমই একটি নেতিবাচক আচরণ অভ্যাস- গীবত বা পরনিন্দা। গীবত হলো কারো অনুপস্থিতিতে এমন কিছু কথা বলা যা শুনলে সে মনে কষ্ট পাবে। অন্যের যেকোনো দোষ বা ত্রুটি তার সম্মুখে না বলে পেছনে বলা। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি সম্পর্কে এমন মন্তব্য করা বা কথা বলা যা শুনলে তিনি কষ্ট পান। গীবত হচ্ছে তার মধ্যে যে দোষটা রয়েছে তা-ই তার অসাক্ষাতে অন্যের সাথে আলাপ করা।
বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমরা গীবত করি, গীবতের বিষয়বস্ত্ত বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন: কারো কোনো শারীরিক বৈশিষ্ট্য (কেউ খাটো, চেহারা ভালো না)। হযরত আয়েশা (রা) বলেন, তিনি একবার রসুল্লুাহ (স) এর কাছে একজন সম্পর্কে বললেন, সে তো বেটে। নবীজী (স) বললেন, তুমি এমন দূষিত কথা বলেছো যে তা সমুদ্রে নিক্ষেপ করলে গোটা সমুদ্রই দূষিত হয়ে যাবে। চালচলন (যথা : কেমন করে যেন হাঁটে), কথা বলার ঢং (যথা : বাচ্চাদের মতো করে ঢং করে কথা বলে), পোশাক পরিচ্ছদ (যথা : উদ্ভট পোশাক পরে) ইত্যাদি।
গীবতকারীর প্রতিফল : যে দোষের কারণে গীবত করছেন সেই দোষগুলো আপনার ভেতরে চলে আসবে : আসলে প্রকৃতির শাস্তি বড় করুণ। যার গীবত করছেন সে আপনাকে শাস্তি দিক বা না দিক প্রকৃতি আপনাকে ঠিকই শাস্তি দেবে। কারো অধিকারকে লঙ্ঘন করে আসলে কখনও শান্তিতে থাকা যায় না। প্রকৃতি তার হিসেবের খাতায় ভুল করে না। অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে অপরের যে দোষ নিয়ে আপনি গীবত করছেন সে দোষটি কিছুদিন পরে আপনার মধ্যে চলে আসবে।
শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র বলেছেন, পরনিন্দা করাই পরের দোষ কুড়িয়ে কুড়িয়ে নিয়ে নিজে কলঙ্কিত হওয়া। আর পরের সুখ্যাতি করার অভ্যাসে নিজের স্বভাব অজ্ঞাতসারে ভালো হয়ে পড়ে। আপনার প্রার্থনা কবুল হবে না : গীবতকারীকে আল্লাহও ভালবাসেন না।
যে তিনটি কারণে একজন মানুষের দোয়া কবুল হয় না তার অন্যতম একটি কারণ হলো গীবত করা। গীবতকারীর কোনো দোয়া স্রষ্টা কবুল করেন না। যে কারণে স্রষ্টার রহমত থেকে তিনি সবসময় বঞ্চিত। পবিত্র কোরআনের সুরা (হুজরাতে: ১২) রয়েছে – তোমরা গীবত বা পরনিন্দা করো না। গীবত করা মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ করার সমান অপরাধ।
জীবন থেকে শান্তি বিদায় নেবে : অপরকে কালিমালিপ্ত করে কেউ আসলে শান্তিতে থাকতে পারে না। যিনি সবসময় গীবত করেন তার এটি অভ্যাসে পরিণত হয়। সে কাউকে তা না বলা পর্যন্ত শান্তি পায় না। আর মাথার মধ্যে সবসময় এ ধরনের চিন্তা ঘুরপাক খায় ফলে সে নিজের প্রয়োজনীয় কাজে মনোযোগ দিতে পারে না।
লোকমান হেকিম বলেছেন- যে কথা তোমার শত্রু হতে গোপন রাখতে চাও, তা মিত্র হতে গোপন রাখো। কারণ, মিত্রও একদিন শত্রু হতে পারে। রোগ-ব্যাধি সঙ্গী হবে : আমাদের এই প্রজন্মের পেটের প্রবলেম এত বেশি। গ্যাস্ট্রিক আলসার এত বেশি। আমরা খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করতে পারি না কেন? এর কারণ হচ্ছে খাবার টেবিলে আমরা নিন্দা করি। যে কারণে খাবারটা বিষ হয়ে যায়। খাওয়ার টেবিলে যদি শুধু গীবত বাদ দিতে পারি। তাহলে গীবতের ৯০% শেষ।
কারণ আজকাল সাধারণত খাবার টেবিল ছাড়া একত্র হওয়ার জায়গা কম। করণীয় :
প্রথমত : গীবত থেকে বাঁচার জন্যে অন্যের দোষ ধরার প্রবণতা বাদ দিতে হবে। আসলে নিজের এতো দোষ যে অন্যের দোষ দেখবো কখন! যদি অন্যের দিকে না তাকিয়ে নিজের দিকে তাকাতে পারি তাহলে ৯৫% গীবত কমানো সম্ভব।
দ্বিতীয়ত : যখন কোথাও কারো সম্পর্কে গীবত হবে তখন সেখান থেকে সরে যেতে হবে। আর যদি সরে যাওয়ার সুযোগ না থাকে যার সম্পর্কে গীবত করা হচ্ছে তার সম্পর্কে ইতিবাচক কথা বলুন।
তৃত্বীয়ত : কারো প্রতি ঈর্ষার কারণে যদি গীবত করা হয় তাহলে ঈর্ষা থেকে মুক্ত হতে তার জন্যে প্রভুর কাছে প্রার্থনা করতে হবে। তার কল্যাণ কামনা করতে হবে। গীবতকারীর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন :
হযরত সোলায়মান (আ) বলেছেন- পরছিদ্র অন্বেষণকারীর সঙ্গ ত্যাগ করো, সে তোমার দোষ সকলের আগে প্রকাশ করবে।
মেডিটেশন করুন : মেডিটেশনে মনের কালিমা, ময়লা আবর্জনা দূর করা যায়। যার গীবত করছেন তার প্রতি গভীর মমতা অনুভব করা সম্ভব। অপরের দোষ খোঁজার পরিবর্তে অন্যের গুণগুলো তার চোখে পড়ে। নিয়মিত মেডিটেশনে অন্তর পরিচ্ছন্ন হবে।