ফিটনেস হচ্ছে এখনকার সময়ের সবচেয়ে বড় ক্রেজ।
আর আমরা যা মনে করি যে ইউটিউবে দেখিয়েছে, ভিডিওতে দেখিয়েছে।
আরে কে কী বলেছে! কী যেন খাবারের পদ্ধতির নাম বললেন ‘কিটো’। তো ভিডিওতে দেখলাম আর কিটো হয়ে গেলাম! হরিবল! মেডিকেল রিপোর্ট যেটা গবেষণা রিপোর্ট– এগুলো হরিবল রিপোর্ট!
আসলে এই ইন্টারনেট ওখানে কিছু দেখলেই এটা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নাই।
মানে এটা হচ্ছে মূর্খতা। যাচাই না করে তথ্য বিশ্বাস করা হচ্ছে মূর্খতা।
আমরা কোন পর্যায়ের মূর্খ হয়ে গেছি!
এটা নবাবপুর রোডের ঘটনা।
অনেক আগের কথা। ৬০-এর দশকে উর্দু পত্রিকা আসত এখানে জং বলে এটাকে।
যারা প্রবীণ আছেন তারা জানেন জং। এটা করাচির পত্রিকা ছিল।
এটা উর্দু। উর্দুতো দেখতে আরবির মতোই।
তো সেই সময়ে পাকিস্তানি নায়িকা ছিল একজন নিলো। এখন জং পত্রিকার একটা ছিঁড়া পৃষ্ঠা উল্টোদিকে হচ্ছে নিলোর ছবি আরকি।
তো এক গ্রাম থেকে আসা এক মানুষ! সে যাচ্ছে সে দেখে যে আরবি লেখা।
আরবি বলতে তো তখন গ্রামের মানুষ কোরআন শরীফ পড়ে আছে। তো সে তো খুব শঙ্কিত; সে ওটাকে তুলে চুমু দিচ্ছে আরকি।
এই পৃষ্ঠায় চুমু দিচ্ছে অপর পৃষ্ঠায় হচ্ছে নিলোর ছবি। নিলোর ছবি তখনো দেখে নাই। চুমু দিচ্ছে চুমু দিয়ে মানে সে হয়তো আসলেই খুব সরল ছিল সে জন্যে আল্লাহতায়ালা তার মানসম্মান বাঁচিয়েছেন। এটাকে এখন সে কী করবে? সে পাশে পানি ছিল পানিতে ফেলে দিল।
যার ফলে সে ঐ পৃষ্ঠার যে নিলোর ছবি সে আর দেখে নাই। সে যদি দেখত এই পৃষ্ঠায় নিলোর ছবি আর সে অন্য পৃষ্ঠাতে চুমু দিচ্ছে তার কী অবস্থা হতো! সে তো আবার তওবা আস্তাগফিরুল্লাহ তওবা আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ত।
তো আসলে ইউটিউবে কিছু ছাপা হলে আপনি আগে যাচাই করবেন। যে-কেউ যে-কোনোকিছু ছেড়ে দিতে পারে।
আপনাকে তো খোঁজ নিতে হবে কার জন্যে এটা? কে করেছে এটা? এটার পেছনে কী আছে? কী উদ্দেশ্য কাজ করছে?
খোঁজ নেবেন তারপরে ফিট হবেন। খোঁজ নেয়ার আগে যদি ফিট হয়ে যান তাহলে হবে?
এই যে ভেগান। ভেগানটা খুব জনপ্রিয় হয়েছে। ভেগান নিয়ে ২০১৯ সালে নেটফ্লিক্সের যে ডকুমেন্টারি- এটা না কি ব্লকব্লাস্টার হিট ছিল! বেশ প্রশংসিত হলো।
এবং কয়েক মাস পরে জানা গেল যে ডকুমেন্টারির যারা প্রডিউসার ছিলেন তাদের ভেগান ফুড কোম্পানি আছে।
মাচ অব দি এভিডেন্স প্রেজেন্টেড ইন দি ফিল্ম ইজ সিলেক্টিভ, লো কোয়ালিটি এন্ড এনেকডোটাল। যে সিলেক্টিভ, অংশবিশেষ পরিবেশন করা হয়েছে।
আসলে আমরা অনেক কিছু মনে করি যে সায়েন্টিফিক এভিডেন্স। সায়েন্টিফিক পরীক্ষা!
সায়েন্টিফিক পরীক্ষাগুলোর একটা বড় অংশ হচ্ছে এই ব্যবসায়ীদের ব্যবসা।
চিনি ব্যবসায়ীদের পরীক্ষা একরকম। তেল ব্যবসায়ীদের সায়েন্টিফিক রেজাল্ট একরকম। ওষুধ ব্যবসায়ীদের সায়েন্টিফিক রিসার্চের ধরন একরকম।
কারণ রিসার্চগুলো প্রভাবিত হয় ফান্ডের দ্বারা।
যারা ফান্ডিং করে রিসার্চের রিপোর্ট যদি তাদের অ্যাগেন্সটে চলে যায় সেই রিসার্চ কোনোদিন প্রকাশিত হয় না! ততটুকুই প্রকাশিত হবে এবং তারা ফান্ডেড করবে যতক্ষণ পর্যন্ত সেটা তাদের অনুকূলে থাকবে।
ওজন সংক্রান্ত যে-কোনো সমস্যা থাকুক, খবরদার! ইউটিউব! ইউটিউবের বক্তব্য দেখে কোনোকিছু করবেন না আরকি! কোনোকিছু করবেন না! আপনার সমস্যা আছে, আমরা তো আছি।
কারণ একটা খাদ্যাভ্যাসে আপনি বড় হয়েছেন।
আপনি যখন সেটাকে কন্ট্রোলও করতে চাইবেন, আপনাকে স্টেপ বাই স্টেপ, স্টেপ বাই স্টেপ কোয়ান্টাম নিয়মে যখন আপনি করবেন, আপনার চেঞ্জটা হবে পারমানেন্ট! কারণ একদিনে আপনার ওজন বাড়ে নাই। ধৈর্য হারালে চলবে না। আপনার ওজন একদিনে কমবে না, একমাসে কমবে না, ছয় মাসে কমবে না।
এটার জন্যে আপনাকে একবছর, দু’বছর, তিন বছর মেয়াদী প্রোগ্রাম নিতে হবে। তাহলে গিয়ে আপনি কী করবেন? আপনি যখন এক্সপার্ট তত্ত্বাবধানে করবেন তখন এটা ঠিক হবে।
যে-কোনো কিছু করেন, আপনি জিজ্ঞেস করবেন। আমাদের এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ রয়েছেন ড. মনিরুজ্জামান।
এবং আমাদের যোগে আহমেদ শরিফ এবং তারপরে মেয়েদের ফেরদৌসী দেখছেন। আলাপ করবেন, যে আচ্ছা আমার এই সমস্যা আছে, আমি এটা করতে চাই, আমার কী করা উচিৎ!
সবসময় মনে রাখবেন, যে ওষুধ কখনো নিজের ইচ্ছায় খাওয়া যায় না। মানে এগুলো হচ্ছে থেরাপি, ওষুধ।
এই যে কিটো বললেন- এটা একধরনের। ভেগান আরেক ধরনের। ধরতে পারেন এটা একটা প্রতিকার।
কীসের প্রতিকার?
আপনি যে জুলুম করেছেন নিজের ওপরে এক্সট্রিম.. প্রচুর খাওয়াদাওয়া করেছেন অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে শরীরের ১২টা বাজিয়েছেন। এটার এক্সট্রিম হচ্ছে থেরাপি।
থেরাপিটা কিন্তু নরমাল জিনিস না।
ওষুধ কি নরমাল জিনিস? নরমাল জিনিস না।
যখনই একটা এক্সট্রিমের ওপরে আরেকটা এক্সট্রিম আসবে- দেশে যখন চোর ডাকাত বেড়ে যায় তখন আসে মার্শাল ল’। অর্থাৎ অরাজকতা বেড়ে গেলে মার্শাল ল’।
মার্শাল ল’টা আরেকটা এক্সট্রিম। মার্শাল ল’ কী অরাজকতার প্রতিষেধক? প্রতিষেধক তো না। তাহলে তো সারাজীবন মার্শাল ল’ই থাকত। ওটা হচ্ছে এক্সট্রিম।
এই এক্সট্রিম অবস্থাটা হচ্ছে সবসময় যদি বিশেষজ্ঞ ভালো হয় তাহলে ভালো। আর যিনি এক্সট্রিম অবস্থা করছেন, তিনি যদি ভালো না হন, তিনি যদি বিশেষজ্ঞ না হন যথাযথ তাহলে কী হবে?
রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। যে সেটা ফলো করবে তার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।
আসলে এই যে ফিটনেস ইন্ডাস্ট্রি ১০০ বিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রি আমেরিকাতে একশ বিলিয়ন ডলার।
ওয়েট লস্ট ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে সেভেনটি থ্রি বিলিয়ন ডলার। আর ভেগান হচ্ছে ২৪ বিলিয়ন ডলার! ব্যবসা।
তো ভেগানের অসুবিধাটা কী হচ্ছে? ভেগানের মূল অসুবিধা হচ্ছে ভিটামিন বি-১২ ডেফিসিয়েন্সি। মূল অসুবিধাটা হচ্ছে ঐখানে। ভেগান ফুড কিন্তু ঠিক আছে। খাবারের মধ্যে ক্ষতিকর খাবার নাই।
কিন্তু মূল অসুবিধাটা হচ্ছে ভিটামিন বি-টুয়েলভ ডেফিসিয়েন্সি। এবং বি-টুয়েলভতে বেশি ডেফিসিয়েন্সি হয়ে যায় তাহলে ব্রেন বয়স হলে ব্রেনটা শ্রিঙ্ক করবে শেকিং হবে। ভিটামিন বি-১২ ডেফিশিয়েন্সি বেশি হলে যা যা হয় সবকিছু হবে।
দুই নম্বর হচ্ছে যে বোনটা দুর্বল হয়ে যায়।
তাহলে কী করতে হবে?
এই থেরাপি আপনার জন্যে প্রযোজ্য কিনা। আপনার ফিজিকেল কন্ডিশনের উপযুক্ত কিনা? এটা আপনার মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে কিনা? এটা কিন্তু খুব ইম্পর্টেন্ট।
মনে রাখবেন আপনার শরীর কিন্তু একবার যদি ভেঙে যায় যে-কোনোভাবে হোক নিজে ভাঙেন বা আরেকজনে ভাঙুক এটাকে জোড়া লাগানো এটাকে আগের অবস্থায় নিয়ে আসা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনতম ব্যাপার।
এইজন্যে যে-কোনো থেরাপি ধরেন ভেগান বলেন, কিটো বলেন তারপরে আরো যা যা আছে অনেক কিছু আছে আরকি এগুলো ইউটিউব দেখে ঐটা দেখে সেটা দেখে কিছু করবেন না।
আপনাদের কী থেরাপি দরকার? ওয়েট কমাতে চাচ্ছেন। কী থেরাপি দরকার? কোনটা আপনার ক্ষেত্রে কতটুকু কাজ করবে? যদি স্পেশালি করতে চান আমাদের ডা. মনিরুজ্জামান আছেন।
কারণ ভেগানটা মূলত হচ্ছে হার্ট ডিজিজের ক্ষেত্রে। এই থেরাপিটার উদ্ভবই হচ্ছে যাদের হার্ট ডিজিজ আছে তাদের জন্যে।
আপনার হার্ট ডিজিজ নাই সুস্থ মানুষ, আপনি করবেন কিনা এটা সবসময় যেহেতু উই আর লাকি আমাদের এক্সপার্ট আছে এই ব্যাপারে। ডা. মনিরুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে থেকে করবেন। যাতে করে আপনি ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
অর্থাৎ যে-কোনোকিছু করেন থেরাপি ব্যবহার করতে গেলে ইউটিউব দেখে করবেন না। ইউটিউবের বক্তব্য শুনে করবেন না।
আপনি জানেন না তো তার পেছনে মতলবটা কী। হতে পারে তার নামের সাথে ডাক্তার আছে। কিন্তু তার মতলব তো আপনি জানেন না।
আর ইউটিউব তার বক্তব্যের কোনো দায়-দায়িত্ব নিচ্ছে না। আপনি অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে ধরার জন্যে কি পাবেন? আপনি তো পাবেন না।
অতএব সবসময় মনে রাখবেন যে, আপনার স্বাস্থ্য আপনাকে রক্ষা করতে হবে। এবং অকারণে নিজের ওপরে এক্সপেরিমেন্ট করতে যাবেন না।
এনিথিং যে-কোনো জিনিস করেন এই ইউটিউব দেখে, ইন্টারনেট দেখে নিজের রোগ সম্পর্কে, খাবার সম্পর্কে কোনো ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত কখনো নেবেন না। আপনার যে-কোনো প্রবলেম হোক উই আর এ ফ্যামিলি।
ধরেন আমি যদি খবর পাই যে আপনি দুর্বলতায় ভুগছেন, আমার কী আনন্দ লাগে তখন! তখন তো কষ্ট লাগে! তখন তো মনে হয় যে এর কী ব্যাপার? তার অসুবিধা আছে এটা আমরা জানব না? আমরা যেখানে সহযোগিতা করতে পারি। কিছু আছে যেখানে দোয়া করা ছাড়া কিছু করার থাকে না।
কিন্তু কিছু আছে যেখানে বাস্তব এবং কার্যকরী পরামর্শ দেয়া যায় সেখানে আমরা দেবো না?
অতএব কেউ এটা করবেন না। এবং এটা যদি করেন, আপনাকে সামলানো মুশকিল হবে তখন।
[প্রজ্ঞা জালালি, ০৪ মার্চ, ২০২০]