ঘটনাবলি
১৭৫৯ : দর্শনার্থীদের জন্যে ব্রিটিশ মিউজিয়াম উদ্বোধন।
১৭৮৪ : স্যার উইলিয়াম জোন্সের উদ্যোগে কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
জন্ম
১৬২২ : মলিয়ের, প্রখ্যাত ফরাসি নাট্যকার।
১৮৩২ : গুস্তাভ আইফেল, আইফেল টাওয়ারের স্থপতি।
১৯০৯ : কাজী কাদের নেওয়াজ, বিশিষ্ট কবি ও শিক্ষাবিদ।
১৯১২ : রণেশ দাশগুপ্ত, বাঙালি সাহিত্যিক।
১৯১৮ : জামাল আবদেল নাসের, আরব ঐক্যের প্রতীক, মিশর প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম প্রেসিডেন্ট।
১৯২৯ : মার্টিন লুথার কিং, নোবেল বিজয়ী কৃষাঙ্গ নেতা।
১৯৬৮ : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আন্তর্জাতিক খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশি আইনজীবী ও পরিবেশকর্মী।
মৃত্যু
১৯৮৮ : নোবেলজয়ী আইরিশ মানবহিতৈষী সিন ম্যাক ব্রিজ।
২০০৪ : বাংলাদেশের খুলনা জেলার প্রখ্যাত সাংবাদিক মানিক সাহা।
২০০৯ : দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারজয়ী ভারতীয় চলচ্চিত্রের বিখ্যাত বাঙালি পরিচালক তপন সিংহ।
২০১২ : ইতালীয় প্রখ্যাত সাংবাদিক কার্লো ফ্রুটোরো।
২০১৬ : আমেরিকান কবি ও শিক্ষাবিদ ফ্রান্সিসকো এক্স এলার্কন।
২০১৮ : ভারতীয় বাঙালি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী পণ্ডিত বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত।
কাজী কাদের নেওয়াজ
কাজী কাদের নেওয়াজ ছিলেন একজন বিশিষ্ট কবি। প্রেম, প্রকৃতি আর স্বদেশ তাঁর কবিতায় মনোজ্ঞভাবে প্রকাশিত হয়। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ‘তমঘা-ই-ইমতিয়াজ’খ্যাত এই কবি শিশুতোষ সাহিত্যে খ্যাতিমান ছিলেন। তাঁর রচিত ছড়া ‘মা কথাটি ছোট্ট অতি’ কিংবা ‘শিক্ষকের মর্যাদা’ কবিতা ব্যাপক জনপ্রিয়। ছান্দসিক কবি হিসেবে তিনি অধিক পরিচিত ছিলেন।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি অবিভক্ত বাংলার মুর্শিদাবাদ জেলার তালিবপুর গ্রামে মাতুলালয়ে। বাবা কাজী আল্লাহ নওয়াজ, মায়ের নাম ফাতেমাতুন্নেছা। বাবা ছিলেন মঙ্গলকোর্টের সম্ভ্রান্ত ও বনেদি জমিদার পরিবারের সন্তান এবং মা ছিলেন মুর্শিদাবাদের জমিদার পরিবারের মেয়ে। বাবা-মায়ের এগারো সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সকলের বড়। নিঃসন্তান এ কবির স্ত্রীর নাম নাসেরা বিবি।
শিক্ষানুরাগী ও শিক্ষাবিদ কাজী কাদের নেওয়াজ বর্ধমান জেলার মাথরুন উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। প্রবেশিকা পাসের পর সালে বহরমপুর কলেজ থেকে আইএসসি এবং ১৯২৯ সালে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ অনার্স এবং ১৯৩২ সালে তিনি বিটি পাস করেন। কাজী কাদের নেওয়াজ ১৯৩৩ সালে স্কুল সাব-ইন্সপেক্টর পদে যোগদান করেন। কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় ইংরেজির শিক্ষকও ছিলেন।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন। নবকুমার ইন্সটিটিউশন, নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। এরপর ময়মনসিংহ জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর দীর্ঘ ১৫ বছর তিনি দিনাজপুর জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। সরকারি স্কুল থেকে অবসরের পর তিনি কয়েক বছর মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মহেশচন্দ্র পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মুজদিয়া গ্রামে আমৃত্যু স্থায়ীভাবে বসবাস করেন।
কাজী কাদের অল্প বয়সেই সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট হন। সাহিত্যের সব শাখায়ই তাঁর বিচরণ ছিল, তবে কবিতাই ছিল তাঁর প্রধান চর্চার ক্ষেত্র। বাংলা, ইংরেজি, আরবি, ফারসি, উর্দু, সংস্কৃতি ইত্যাদি ভাষার সুপণ্ডিত ছিলেন। লিখেছেন অনর্গল। তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর। প্রায় দশ হাজার কবিতা তৎকালীন সময়ের মাসিক মোহাম্মদী, মাসিক শিশুসাথী, মাসিক খেলাঘর, মাসিক নবারুণ, মাসিক সবুজ পাতা, মৌচাক, সপ্তডিঙ্গা, আলাপনী, দৈনিক আজাদ, দৈনিক সংবাদ, পাকিস্তানী খবর, শিশু সওগাতসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
কবি কাজী কাদের নেওয়াজের কবিতায় মাতৃভক্তি, গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা, শিশুদের প্রতি অকৃত্রিম স্নেহ, দেশপ্রেম ও প্রকৃতির নিঃসর্গের প্রতি ভালোবাসা সাবলীলভাবে ফুটে উঠেছে। ছাত্রজীবনে ‘শিশুসাথী’ পত্রিকার প্রকাশিত তার ‘মা’ কবিতায় মায়ের প্রতি গভীর ভক্তির পরিচয় পাওয়া যায়।
জীবনানন্দ দাশ, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে, অমিয় চক্রবর্তী, প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রমুখ কবিগণ যখন সার্থকভাবে বাংলা কবিতায় এক নবতর আবহ সৃষ্টি করেছেন ঠিক সেসময়েই কাজী কাদের নেওয়াজ সগৌরবে নিজেকে বাংলা কবিতায় সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন।
সাহিত্যকর্মের সম্মাননা ও স্বীকৃতিস্বরূপ ‘তমঘা-ই-ইমতিয়াজ’ পদক ছাড়াও তিনি শিশু সাহিত্যে ‘বাংলা একাডেমী পুরস্কার’, মাদার বকস্ পুরস্কার, ১৯৬৬ সালে রাষ্ট্রীয় ‘প্রেসিডেন্ট পুরস্কার’ লাভ করেন।
কবি কাদের নেওয়াজ একজন আদর্শবান ও অনুকরণীয় শিক্ষক ছিলেন। তিনি শিক্ষাকেই জীবনে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। ১৯৮৩ সালের ৩ জানুয়ারি মহৎ এ কবি মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত