1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
  2. [email protected] : adminbackup :
রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫, ০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন

ইতিহাসের পাতায় ১৮ ফেব্রুয়ারি

  • সময় মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
  • ৬৭ বার দেখা হয়েছে

গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ৪৯তম দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।

ঘটনাবলি
১৯৩০ : প্লুটো গ্রহ আবিষ্কৃত হয়।
১৯৬৫ : গাম্বিয়া স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৭৬ : বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের নাগিরকত্বে ভূষিত করা হয়।

জন্ম
১৮৩০ : হ্যালহেড, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব।
১৮৩৬ : শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, মানবতাবাদী সাধক, দার্শনিক ও ধর্মগুরু।
১৯৩৭ : ড. আনিসুজ্জামান, বাংলাদেশি শিক্ষাবিদ ও জাতীয় অধ্যাপক।

মৃত্যু
১৯৬৯ : মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা, বাঙালি শিক্ষাবিদ এবং অধ্যাপক।
১৯৭৪ : মুক্তিসংগ্রামী, চারণকবি ও সাংবাদিক বিজয়লাল চট্টোপাধ্যায়।

রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব
রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ছিলেন হিন্দু সংস্কারক ও আধ্যাত্মিক মানবতাবাদী সাধক। জন্মগ্রহণ করেন ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে ১৮ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কামারপুকুর গ্রামে। বাবা ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় এবং মা চন্দ্রমণিদেবী। বাবা-মা ছেলের নাম রাখেন গদাধর। এই গদাধরই পরবর্তীকালের শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস। যা তার আশ্রমী নাম।

বাল্যকাল থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভের প্রতি তার মনোযোগ ছিল কম। অন্যদিকে শৈশবেই তার মধ্যে প্রকাশ পায় দিব্যভাব। অসাধারণ স্মৃতিশক্তি ছিল তার। কথিত আছে, রামায়ণ-মহাভারতের পালা একবার শুনেই তিনি মুখস্থ আওড়াতে পারতেন। বাবার কাছ থেকে তিনি ধর্মীয় শ্লোক শিখেছিলেন; গ্রামের কথকদের নিকট থেকে শেখেন রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণের কাহিনী এবং পুরীগামী তীর্থযাত্রীদের কাছ থেকে শেখেন ধর্মগীতি।

বারো বছরের তপস্যা জীবনে তিনি দুজন গুরুর দীক্ষা লাভ করেন। তারা হলেন ভৈরবী ব্রাহ্মণী ও তোতাপুরী। ভৈরবী তাকে তান্ত্রিক সাধনা সম্পর্কে শিক্ষা দেন এবং তোতাপুরী শিক্ষা দেন বৈদান্তিক সাধনা সম্পর্কে। দীক্ষা লাভের পর তার নাম হয় শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস। একই সঙ্গে রামকৃষ্ণ বৈষ্ণব সাধনায়ও সিদ্ধিলাভ করেন।

রামকৃষ্ণ শুধু হিন্দু ধর্মমতভিত্তিক সাধনায়ই আবদ্ধ থাকেননি, তিনি ইসলাম ও খ্রিষ্টধর্মের আরাধনা পদ্ধতিকেও জানার চেষ্টা করেন। একই সঙ্গে তিনি হযরত মুহম্মদ (স.) ও যিশুখ্রিস্ট প্রবর্তিত ধর্মীয় ধারা পর্যবেক্ষণ করেন। এভাবে সমুদয় ধর্মসাধনার মাধ্যমে রামকৃষ্ণ ঈশ্বরকে উপলব্ধি করেন। তার মতে, সকল ধর্মেই জীবনের উদ্দেশ্য ঈশ্বর উপলব্ধি। ধর্মসমূহের পথ ভিন্ন হলেও সকলেরই উদ্দিষ্ট এক ও অভিন্ন ঈশ্বরের নৈকট্য লাভ। তার ভাষায়, ‘সকল ধর্মই সত্য, যত মত তত পথ’, অর্থাৎ ধর্মীয় মত ও পথ ভিন্ন হলেও উদ্দেশ্য ও গন্তব্য এক। তিনি প্রথাগত সন্ন্যাসীদের মতের সঙ্গে একমত ছিলেন না বা তাদের মতো পোশাকও পরতেন না।

শ্রীরামকৃষ্ণ ছিলেন লোকগুরু। ধর্মের কঠিন তত্ত্বকে সহজ করে বোঝাতেন তিনি। ঈশ্বর রয়েছেন সকল জীবের মধ্যে, তাই জীবসেবাই ঈশ্বরসেবা-এই ছিল তার দর্শন। ধর্মীয় সম্প্রীতিতে গভীর বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। তার প্রধান শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ তারই ধর্মীয় আদর্শ জগদ্বাসীকে শুনিয়ে গেছেন, যার ফলে রামকৃষ্ণের এই জীবসেবার আদর্শ অর্থাৎ মানবধর্ম আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।

রামকৃষ্ণের উদার ধর্মীয় নীতির প্রভাবে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও ভাবাদর্শে মোহগ্রস্ত অনেক শিক্ষিত যুবক ভারতীয় আদর্শে ফিরে আসেন। তিনি যেমন বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায়ের মানুষের কাছে যেতেন, তেমনি ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের ব্যক্তিবর্গও তার কাছে আসতেন। শিবনাথ শাস্ত্রী, কেশবচন্দ্র সেন, মহেন্দ্রনাথ সরকার, গিরিশচন্দ্র ঘোষসহ আরও অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তি তার সংস্পর্শে এসেছিলেন।

রামকৃষ্ণের সাধনাস্থান দক্ষিণেশ্বর এখন অন্যতম তীর্থস্থান। তার মতে, ঈশ্বরলাভ জীবনের পরম উদ্দেশ্য। আর এজন্যে গভীর নিষ্ঠা নিয়ে সাধনা করতে হয়। ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত’ নামক গ্রন্থে তার উপদেশাবলি বিধৃত হয়েছে। স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে আলোচনা করে ফরাসি মনীষী রমাঁরলাঁ রামকৃষ্ণ সম্পর্কে এক বৃহদাকার জীবনীগ্রন্থ রচনা করেন। সাহিত্যিক অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের ‘পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ’ সাহিত্যসমাজে বিশেষভাবে সমাদৃত। ‘শ্রীরামকৃষ্ণলীলাপ্রসঙ্গ’ শ্রীরামকৃষ্ণের ওপর অপর একটি প্রামাণ্য জীবনীগ্রন্থ।

রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের কয়েকটি বাণী:
১. ভগবান সর্বত্র আছেন এবং প্রত্যেক কণায় আছেন। কিন্তু তিনি একটি মানুষের মধ্যে সবচেয়ে অধিক থাকেন। তাই এজন্যেই ভগবানরূপী মানুষের সেবা করাই ভগবানের আসল সেবা।
২. ভগবানের অনেক নাম আছে এবং তাকে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রাপ্ত করা যেতে পারে। তুমি তাঁকে কি নাম ডাকো এবং কীভাবে তাঁর পূজো করো এটা কোনো বড় বিষয় নয়, গুরুত্বপূর্ণ এটাই যে, তুমি তাঁকে নিজের ভেতর কতটা অনুভব করো।
৩. তুমি রাত্রে আকাশে অনেক তারা দেখতে পাও কিন্তু যখন সূর্য ওঠে তখন সেই তারাদের আর দেখা যায় না। ঠিক এভাবেই, অজ্ঞানতার কারণে যদি তুমি ভগবানকে প্রাপ্ত করতে না পারো, তাহলে এর মানে এটা মোটেই নয় যে ভগবান নেই।
৪. শুদ্ধ জ্ঞান এবং শুদ্ধ প্রেম একই জিনিস। জ্ঞান আর প্রেমের মাধ্যমেই লক্ষ্যকে পূরণ করা যেতে পারে, আর এখানে প্রেম নামক রাস্তাটি বেশি সহজ।
৫. যেভাবে ধুলোপূর্ণ আয়নার উপর সূর্যের আলোর প্রতিবিম্ব পড়ে না, ঠিক সেভাবেই মলিন মনে ঈশ্বরের প্রকাশের প্রতিবিম্বও পড়া সম্ভব নয়।
৬. যে ব্যক্তি আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জন করে ফেলেছেন,তার উপর কাম এবং লোভের বিষ কখনই চড়ে না।
৭. যদি তুমি পূর্বদিকে যেতে চাও, তাহলে কখনই পশ্চিম দিকে যেও না।
৮. নিজের অতীতের মোকাবিলা বিনা আফসোসে করো, নিজের বর্তমানকে আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে সামলাও আর নিজের ভবিষ্যতের প্রস্তুতি বিনা ভয়ে নাও।
৯. যতদিন জীবন আছে আর তুমি জীবিত রয়েছো, শিখে যাও।
১০. ঈশ্বরের প্রতি বিশুদ্ধ ভালোবাসাই হলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। আর অন্য সবকিছুই মিথ্যা এবং কাল্পনিক।

মৃত্যুর আগে রামকৃষ্ণ একদল নিবেদিত তরুণ সন্ন্যাসী রেখে যান, যারা পরবর্তীকালে ‘রামকৃষ্ণ মতবাদ’ গড়ে তোলেন। স্বামী বিবেকানন্দ নিজে তাদের নেতৃত্বে ছিলেন। রামকৃষ্ণ পরমহংস ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

সূত্র: সংগৃহীত

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com