বাঙালি শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক এবং সমাজসেবক পণ্ডিত দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ এর মৃত্যুদিন
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ২৩৫তম (অধিবর্ষে ২৩৬তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৬১৭ : লন্ডনে প্রথম ওয়ানওয়ে রাস্তা চালু হয়।
১৮৫২ : রাধাগোবিন্দ কর, ব্রিটিশ ভারতের একজন খ্যাতনামা চিকিৎসক।
১৯২৩ : এডগার কড, ইংরেজ কম্পিউটার বিজ্ঞানী।
১৯৩১ : হ্যামিলটন ও স্মিথ, নোবেলজয়ী মার্কিন অণুজীববিজ্ঞানী।
১৮৮৬ : বাঙালি শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক এবং সমাজসেবক পণ্ডিত দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ।
১৯৭৫ : বাঙালি সাংবাদিক এবং সাহিত্যিক অমল হোম।
১৯৮৭ : সমর সেন, ভারতীয় বাঙালি কবি ও সাংবাদিক।
দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক এবং সমাজসেবক। জন্মগ্রহণ করেন পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার চাংড়িপোতা (বর্তমানে সুভাষগ্রাম) গ্রামে। বাবা হরচন্দ্র ন্যায়রত্ন ভট্টাচার্য।
দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বারকানাথ ছিলেন জ্যেষ্ঠ। কনিষ্ঠ শ্রীনাথ চক্রবর্তী। হরচন্দ্র ন্যায়রত্ন ছিলেন দাক্ষিণাত্য বৈদিক সমাজে একজন বিশিষ্ট স্মৃতিশাস্ত্রজ্ঞ ও বৈয়াকরণিক পণ্ডিত।
দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ বাল্যকালে বাবার কাছেই ব্যাকরণ শাস্ত্রে শিক্ষা নেন। বাবা হরচন্দ্র ন্যায়রত্ন কলকাতায় টোল চতুষ্পাঠি করে অধ্যাপনা করতেন। এটাই ছিল তার মূল জীবিকা।
হরচন্দ্র ন্যায়রত্নের বহু কৃতী ছাত্রদের মধ্যে রামতনু লাহিড়ী ও ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত অন্যতম। ১৮৩১ সালে সংবাদ প্রভাকর পত্রিকা সম্পাদনার কাজে হরচন্দ্র ন্যায়রত্ন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তকে সাহায্য করতেন।
দ্বারকানাথ কলকাতায় সংস্কৃত কলেজে ন্যায়, স্মৃতি, বেদান্ত, দর্শন, সাহিত্য অলংকার, কাব্য ও জ্যোতিষ শিক্ষা গ্রহণ করেন। কলেজে ছাত্রবৃত্তি চালু হলে তিনি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে প্রধান বৃত্তি লাভ করেন।
১৮৪৫ সালে তাকে বিদ্যাভূষণ উপাধি দেওয়া হয়। এই সময় থেকে কলেজে ইংরেজি শিক্ষা ক্রমশঃ পাঠ্য হয়ে ওঠে। দ্বারকানাথ পাশাপাশি ইংরেজি শিক্ষাও শুরু করেন। নিজের কঠোর অধ্যবসায় তিনি বেশি বয়সেও ইংরেজি ভাষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠেন।
ফোর্ট উইলিয়ম কলেজে কিছুদিন শিক্ষকতার পর সংস্কৃত কলেজের গ্রন্থাগারিক ও পরে অধ্যাপক এবং কিছুদিন অধ্যক্ষ বিদ্যাসাগরের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। ১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দে বাবার সহায়তায় একটি মুদ্রাযন্ত্র স্থাপন করে স্বরচিত রোমের ইতিহাস ও গ্রিসের ইতিহাস প্ৰকাশ করেন।
তার জীবনের প্রধান কীর্তি সাপ্তাহিক ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকা সম্পাদনা। ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে পত্রিকাটি প্রথম প্ৰকাশিত হয়। মার্জিত রুচি, প্ৰাঞ্জল ভাষা ও নির্ভীক সমালোচনার জন্যে পত্রিকাটি বিশুদ্ধ রাজনীতি ও সুস্থ সাহিত্যের প্রসারে দীর্ঘদিন বাংলা সংবাদপত্র জগতে শীর্ষ স্থান অধিকার করেছিল।
১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে তদানীন্তন বড়লাট লর্ড লিটন বঙ্গীয় মুদ্রাযন্ত্র-বিষয়ক আইন বিধিবদ্ধ করলে তিনি মুচলেকা দিতে অস্বীকার করে ‘সোমপ্রকাশের’ প্রচার বন্ধ করে দেন। পরে ওই আইন রদ হলে পত্রিকাটি পুনঃপ্রকাশিত হয়।
এছাড়াও তিনি ‘কল্পদ্রুম’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তার রচিত ছাত্রপাঠ্য পুস্তক : ‘নীতিসার’, ‘পাঠামৃত’, ‘ছাত্ৰবোধ’, ‘ভূষণসার ব্যাকরণ’; কাব্যগ্রন্থ : ‘প্ৰকৃত প্রেম’, ‘প্রকৃত সুখ’, ‘বিশ্বেশ্বর বিলাপ পদ্য’ প্রভৃতি। নিজ খরচে তিনি একটি স্কুল স্থাপন করেন।
১৮৮৬ সালের ২৩ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত