বাঙালি নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ফিরোজা বেগম এর জন্মদিন
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ২০৯তম (অধিবর্ষে ২১০তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৮২১ : স্পেনের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হয়ে পেরু স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
১১৬৫ : মহিউদ্দিন ইবনে আরাবি, একজন আরব সুফি সাধক লেখক ও দার্শনিক।
১৬৩৫ : রবার্ট হুক, ইংরেজ চিকিৎসাবিদ ও রসায়নবিদ।
১৮০৪ : লুডউইগ ফয়েরবাক, জার্মানির একজন বস্তুবাদী দার্শনিক।
১৯০১ : কমরেড মনি সিং।
১৯০৪ : পাভেল আ. চেরেনকভ, নোবেলজয়ী সোভিয়েত পদার্থবিদ।
১৯১২ : কমল দাশগুপ্ত, আধুনিক সহজ সরল মেলোডি প্রধান বাংলা গানের সেরা সুরকার।
১৯৩০ : ফিরোজা বেগম, বাঙালি নজরুল সঙ্গীত শিল্পী।
১৯৭২ : বাঙালি মার্কসবাদী বিপ্লবী চারু মজুমদার।
১৯৮০ : ইরানের রাজ সিংহাসনের শেষ শাহ বা রাজা মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভি।
২০০১ : বাংলাদেশি লেখক, কবি ও সমালোচক আহমদ ছফা।
২০১০ : আধুনিক বাংলা রোমান্টিক গানের গীতিকার শ্যামল গুপ্ত।
২০১৬ : ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক ও মানবাধিকার আন্দোলনকর্মী মহাশ্বেতা দেবী।
২০১৭ : নয় নম্বর সাব-সেক্টর কমান্ডার বীরউত্তম মেজর জিয়াউদ্দিন আহমেদ।
বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস
ফিরোজা বেগম ছিলেন বাংলাদেশের প্রথিতযশা নজরুলসঙ্গীত শিল্পী। নজরুল সঙ্গীতের জন্যে তিনি সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে বিখ্যাত হয়ে আছেন। ভারতীয় উপমহাদেশে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তাকে বাংলা সঙ্গীতের প্রতীকী রূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ‘নূরজাহান’, ‘চাঁদ সুলতানা’, ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী’, ‘নয়ন ভরা জল গো তোমার’, ‘তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি’, ‘আমি চিরতরে দূরে সরে যাব’—নজরুলের এমন অনেক কালজয়ী গানের মাঝে অমর হয়ে আছেন তিনি।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩০ সালের ২৮ জুলাই বাংলাদেশের ফরিদপুরে। বাবা খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসমাইল ছিলেন প্রখ্যাত আইনজীবী। মা কওকাবুন্নেসা বেগমও ছিলেন সঙ্গীতানুরাগী ও সুমিষ্ট কণ্ঠের অধিকারিণী। তাহসীন, হামিন ও শাফিন—তিন সুযোগ্য পুত্র তার। হামিন আহমেদ ও শাফিন আহমেদ দুই ভাই দেশের ব্যান্ড সঙ্গীত জগতের উজ্জ্বলতম দুই তারকা।
নয় বা দশ বছর বয়সে কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ। কবির দুর্লভ সান্নিধ্য পেয়েছেন তিনি। স্বয়ং জাতীয় কবির কাছ থেকে গানের তালিমও নেন। অল ইন্ডিয়া রেডিওর সুনীল বোস একটি অনুষ্ঠানে ফিরোজা বেগমের গান শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তার আগ্রহেই ছোট্ট ফিরোজাকে এইচএমভিতে অডিশন দেওয়ার জন্যে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই পাজামা-পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি, চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমার প্রধান প্রশিক্ষককে দেখলেন তিনি। নিতান্ত অনিচ্ছার সঙ্গেই গান ধরলেন, ‘যদি পরানে না জাগে আকুল পিয়াসা…’।
প্রধান প্রশিক্ষক বললেন, ‘এতটুকু মেয়ে। এই গান তুমি কোথায় শিখলে!’ ফিরোজা বেগম তখনো জানেন না, এই মানুষটিই কাজী নজরুল ইসলাম। সেদিন কমল দাশগুপ্তের সঙ্গেও প্রথম দেখা হয় তার। কমল তখন ২৫-২৬ বছরের তরুণ। পরে এই মানুষটিরই সহধর্মিণী হন ফিরোজা বেগম। কমল পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং নাম রাখেন কামালউদ্দীন আহমেদ।
১৯৪২ সালে এইচএমভি থেকে ফিরোজা বেগমের প্রথম গানের রেকর্ড বের হয়। কলকাতার খবরের কাগজগুলোতে ফলাও করে প্রকাশিত হয় ফিরোজা বেগমের গানের খবর। তার সঙ্গীত জীবনের প্রথম বড় সাফল্য এনে দেয় ‘দূর দ্বীপবাসিনী’ ও ‘মোমের পুতুল’ গান দুটি।
বিদ্রোহী কবির গানকে ‘নজরুল সঙ্গীত’ নামে পরিচিত করানোর পেছনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন ফিরোজা বেগম। গ্রামোফোন কোম্পানি এইচএমভি ফিরোজা বেগমের গান দিয়েই প্রথম নজরুল সঙ্গীতের একক লং প্লে প্রকাশ শুরু করে। কবি নজরুল অসুস্থ হওয়ার পর ফিরোজা বেগমই নজরুল সঙ্গীতের প্রথম স্বরলিপিকার। নজরুল সঙ্গীতের শুদ্ধ স্বরলিপি ও সুর সংরক্ষণের জন্যে তাকে কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে।
নজরুল সঙ্গীত ছাড়াও তিনি গেয়েছেন আধুনিক গান, গীত, গজল, কাওয়ালি, ভজন, হামদ ও নাত। প্রায় ১২টি এলপি, চারটি ইপি, ছয়টি সিডি ও ২০টির বেশি অডিও ক্যাসেট বেরিয়েছে তার। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ পর্যন্ত ৩৮০টির বেশি একক অনুষ্ঠানে গান করেছেন তিনি।
নজরুল সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশে-বিদেশে পেয়েছেন নানা পুরস্কার। এর মধ্যে রয়েছে— স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র পুরস্কার, সত্যজিৎ রায় পুরস্কার, নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী স্বর্ণপদক, সেরা নজরুল সঙ্গীতশিল্পী পুরস্কার (টানা কয়েকবার), নজরুল আকাদেমি পদক, চুরুলিয়া স্বর্ণপদক, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিলিট, মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার, সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস ইত্যাদি। এছাড়াও জাপানের অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিবিএস থেকে গোল্ড ডিস্ক, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছ থেকে ‘বঙ্গ সম্মান’সহ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেন।
২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত