ব্রিটিশ ভারতের একজন রাজনীতিবিদ, জমিদার ও শিল্পপতি স্যার আবদুল হালিম গজনবী জন্মগ্রহণ করেন।
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ৩১৫তম (অধিবর্ষে ৩১৬তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৯১৮ : মিত্রশক্তি ও জার্মানির মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে।
১৭৪৩ : কার্ল পিটার থুনবার্গ, সুইডিশ উদ্ভিদবিদ, পতঙ্গবিশারদ ও মনোবৈজ্ঞানিক।
১৮২১ : ফিওদোর দস্তয়েভ্স্কি, বিখ্যাত রুশ সাহিত্যিক।
১৮৭২ : আবদুল করিম খাঁ, ভারতের খ্যাতনামা হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী।
১৮৭৬ : স্যার আবদুল হালীম গজনবী, বাঙালি রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি।
১৮৮৫ : ডি.এইচ লরেন্স, ইংরেজ সাহিত্যিক।
১৯০৮ : গজেন্দ্রকুমার মিত্র, ভারতীয় কথাসাহিত্যিক ও প্রকাশক।
১৯৩২ : অনিতা বসু, ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব।
১৯৩৫ : অর্ঘ্য সেন, বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী, রবীন্দ্র সংগীতে ১৯৯৭ সালে সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার প্রাপ্ত।
১৯৭৩ : নোবেলজয়ী ফিনিশ রসায়নবিদ ও একাডেমিক আর্টটুরি ইলমারি ভিরটানেন।
২০০৪ : নোবেলজয়ী ফিলিস্তিন ইঞ্জিনিয়ার, রাজনীতিবিদ, ফিলিস্তিন জাতীয় কর্তৃপক্ষের ১ম প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত।
স্যার আবদুল হালিম গজনবী ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের একজন রাজনীতিবিদ, জমিদার ও শিল্পপতি। বাংলা এবং ব্রিটিশ ভারতের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তিনি সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি ছিলেন শিক্ষা-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ও সফল শিল্পপতি।
জন্মগ্রহণ করেন ১৮৭৬ সালের ১১ নভেম্বর বর্তমান টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার গ্রামের জমিদার পরিবারে। বাবা ছিলেন জমিদার আবদুল হাকিম খান গজনবী। মা করিমুন নেসা খানম চৌধুরানী। স্যার আবদুল করিম গজনবী ছিলেন তার বড় ভাই। নারীশিক্ষার অগ্রদূত বেগম রোকেয়া তার খালা ছিলেন। আবুল আসাদ মুহম্মদ ইবরাহিম সাবের ও আবু জায়গাম মুহম্মদ খলিল সাবের ভ্রাতৃদ্বয় তার মামা ছিলেন।
শিক্ষা লাভ করেন কলকাতার সিটি কলেজ-স্কুলে ও সেন্ট জেডিয়ার্স কলেজে। কর্মজীবনের শুরু ১৯০০ সালে। কর্মজীবনের প্রারম্ভে তিনি ছিলেন স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার প্রতিনিধি, তদানীন্তন ময়মনসিংহ মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান, লোকাল বোর্ডের সদস্য ও অনারারী ম্যাজিস্ট্রেট।
বঙ্গ বিভাগের শুরুতেই তার রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত। রাজনীতির ক্ষেত্রে তিনি সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের শীর্ষস্থানীয় জননেতা অশ্বিনী কুমার দত্ত, বিপিন চন্দ্র পাল, সুরেন্দ্রনাথ বানার্জী, চিত্তরঞ্জন দাশ, অরবিন্দ ঘোষ প্রমুখ থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করেন। তার ব্যবসার কেন্দ্র ছিল কলকাতায় এবং সেখানে ছিল কংগ্রেসী হিন্দুদের প্রাধান্য, সেহেতু বৈষয়িক স্বার্থে তিনি কংগ্রেসীদের সমস্বরে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন ও স্বদেশী আন্দোলনে কিছুদিন নেতৃত্ব দেন।
১৯০৫ সালে আগস্টে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ প্রাঙ্গণে আনন্দ চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে বঙ্গবিভাগের বিরুদ্ধে এক জনসভায় আবদুল হালীম গজনবী যোগদান করেন এবং তার ভাষণে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে ব্রিটিশ দ্রব্য সামগ্রী বর্জনের আহ্বান জানান।
আবদুল হালিম গজনবী ব্যবসায়ী হিসেবে সফল ছিলেন। তিনি যথাক্রমে কলকাতার মুসলিম চেম্বার অব কমার্স ও ইন্ডিয়া চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ছিলেন। বেশ কয়েকবার তিনি ইন্ডিয়া স্টিমশিপ কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসময় তিনি জলযান নির্মাণশিল্পের উন্নতিতে অবদান রেখেছেন। তিনি জড়িত ছিলেন এমন সংগঠনের মধ্যে রয়েছে কলকাতার এক্সপোর্ট এডভাইজারি কমিটি, ইন্ডিয়ান সেন্ট্রাল জুট কমিটি, রেলওয়ে এডভাইজারি কমিটি, রেলওয়ে স্ট্যান্ডিং ফিনান্স কমিটি, বার্মা সেপারেশন কমিটি, ফ্র্যাঞ্চাইজ কমিটি, ফেডারেল ফিনান্স কমিটি, কনসাল্টেটিভ কমিটি, মাইনরিটিজ কমিটি, পাবলিক একাউন্টস কমিটি ইত্যাদি। ১৯৩৩ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় প্রতিনিধিদলের উপদেষ্টা বোর্ডে তিনি অন্যতম সদস্য ছিলেন।
এছাড়াও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোর্টের সদস্য, আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় কোর্টের সদস্য, বেঙ্গল রয়েল এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য, কলকাতা সিটি কলেজে গভর্নিং বডির সদস্য হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
জাতীয় জাগরণে সংবাদপত্রের গুরুত্ব অনুধাবন করে গজনবী ব্যারিস্টার আবদুল রসুল-এর সঙ্গে একযোগে দি মুসলমান (১৮৮৫) এবং খাজা নাজিমুদ্দীনের সহযোগে The Star of India নামে দুটি পত্রিকা প্রকাশের কাজের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। এ দুটি পত্রিকা বাংলার মুসলিম জাগরণে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আবদুল হালিম গজনভী ১৯৩৫ সালে নাইট উপাধি লাভ করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি তার ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে তহবিল গঠন করেন। এতে সিটি কলেজ-স্কুলের জন্যে বার্ষিক দুটি রৌপ্য পদক প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। দেশবিভাগের পরে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। এরপর আমৃত্যু তিনি দেলদুয়ারের পৈতৃক বাড়িতে কাটান। ১৯৫৩ সালের ১৮ জুন দেলদুয়ার গ্রামের বাড়িতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত