আসসালামু আলাইকুম।
আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।
শুভ বর্ষায়ন।
প্রিয় সুহৃদ! কোয়ান্টাম ২৯ বছর পেরিয়ে ৩০ তম বছরে প্রবেশ করেছে। ৩০ তম বছরের প্রবেশ লগ্নে পরম করুণাময়ের কাছে আমরা গভীর গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যে, তিনি আমাদের টানা ২৯ বছর মানুষের কল্যাণে দুর্যোগে দুর্বিপাকে মানুষের পাশে থাকার সৌভাগ্য দিয়েছেন। এটি তাঁর দয়া তাঁর করুণা।
কোয়ান্টামের হাজার হাজার কর্মী এবং লাখ লাখ সদস্য ও শুভানুধ্যায়ী তাদের নিরলস কাজ তাদের আন্তরিক শুভ কামনায় কোয়ান্টাম আজ মানুষের ভরসার স্থানে পরিণত হয়েছে।
সাধারণ মানুষ শিক্ষিত মানুষ যে-কোনো বিষয়ে যে-কোনো ক্ষেত্রে তারা জানতে চায়, কোয়ান্টাম কী বলে! তারা শুনতে চায় কোয়ান্টামের কথা।
কারণ সবসময় কোয়ান্টাম যা সত্য, যা মানুষের জন্যে কল্যাণকর, যা প্রশান্তি সুস্থতা এবং সাফল্যের জন্যে প্রয়োজনীয় সে কথাগুলোই নিঃসংকোচে বলে এসছে। এবং এই বলার ক্ষেত্রে কোনো প্রশংসা বা নিন্দা দ্বারা কখনো কোয়ান্টাম প্রভাবিত হয় নি।
সবসময় যা সত্য জেনেছে যা সত্য বলে অনুভব করেছে যা কল্যাণকর বলে ভেবেছে সেই ভাবনা সেই জানা সেই জ্ঞান সেই সত্য নিঃসংকোচে বিনীতভাবে সমাজের সামনে মানুষের সামনে উপস্থাপন করেছে। যাতে মানুষ যে-কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বিষয়টিকে আরো গভীরভাবে ভাবার সুযোগ পায়।
এবং কোনো দুর্যোগ বা দুর্বিপাক সে ঝড় হোক প্লাবন হোক বন্যা হোক ভূমিকম্প হোক অগ্নিকাণ্ড হোক ভবন ধ্বস হোক বা ভাইরাসজনিত মহামারি হোক বা ভার্চুয়াল ভাইরাসজনিত মহা মহামারি, প্রতিটি ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম যা সত্য জেনেছে সেই জ্ঞান নিয়ে নির্ভীকভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। যেখানে সহযোগিতা দরকার সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছে।
যেখানে সুস্পষ্ট বক্তব্য বলা দরকার সেখানে সুস্পষ্টভাবে তথ্য এবং তত্ত্ব উপস্থাপন করেছে।
সর্বশেষ গত দু-বছর করোনা আতঙ্কে যখন সারা পৃথিবী দিশেহারা অবস্থা কোয়ান্টাম নিঃসংকোচে প্রথম দিনই বলেছে যে, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই, সতর্কতার প্রয়োজন আছে। মানুষে মানুষে সামাজিক দূরত্বের কোনো প্রয়োজন নাই। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে মানুষে মানুষে সামাজিক নৈকট্য সামাজিক একাত্মতার প্রয়োজন বেশি।
কোয়ান্টাম নিঃসংকোচে সত্য উপস্থাপন করেছে যে, আমরা পরম করুণাময়ের বিশেষ অনুগ্রহভাজন জাতি। এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অসাধারণ। এবং আমাদের এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে এবং পরম করুণাময়ের বিশেষ অনুগ্রহের কারণে আমাদের দেশে করোনা কোনোভাবেই কোনো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি বা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।
আসলেও দু-বছরে আমাদের করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে মৃত্যুর ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কোনো ভূমিকা রাখতে পারে নাই।
আমরা যে-কথাটি দু-বছর আগে নির্ভয়ে বলেছিলাম সাহস করে বলেছিলাম জোরালোভাবে বলেছিলাম যে, করোনা আমাদের দেশে সুবিধা করতে পারবে না।
এবং করোনার সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার যে আশঙ্কা করা হচ্ছে আমরা অনায়াসে সেটাকে কাটিয়ে উঠতে পারব। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও করোনা তেমন কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। এবং দু-বছর পর বাস্তবতা তাই বলছে। এবং এই বাস্তবতার কারণেই মানুষের আস্থার জায়গা হয়েছে কোয়ান্টাম।
এবং আমাদের প্রতি কোয়ান্টামের প্রতি স্রষ্টার এই বিশেষ অনুগ্রহের জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আমরা নিঃসংকোচে বলব যে, আমরা সবসময় মানুষের পাশে ছিলাম। মানুষের পাশে আছি। ইনশাল্লাহ সবসময় মানুষের পাশে থাকব।
প্রিয় সুহৃদ! কোয়ান্টাম বর্ষ ৩০-এ এসে আমরা পরম করুণাময়ের ওপর নির্ভর করে নিঃসংকোচে বলতে পারি যে, কোভিড-১৯-র নামে যে আতঙ্ক প্রচার করা হয়েছিল কোভিড-১৯-এ সারা পৃথিবীর মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে রাখার যে প্রয়াস আতঙ্কের ব্যাপারীরা করেছিল তার প্রভাব ধাপে ধাপে ক্ষীয়মান হয়ে যাবে। তার প্রভাব উবে যাবে।
আমরা ইতিমধ্যেই দেখছি করোনার কোভিড-১৯ যে ভ্যারিয়েন্ট এটারও মিউটেশন ঘটছে। এবং সর্বশেষ যে মিউটেশন ওমিক্রন ওমিক্রন সম্পর্কে এর মহামারি অতিমারি বিশেষজ্ঞরাই বলছেন, এটার সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি হলেও এর প্রাণহনন ক্ষমতা খুবই কম।
যার ফলে প্রথমদিকে মৃত্যুর হার যেরকম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল ওমিক্রনের আতঙ্ক প্রচার করা হলেও ওমিক্রন তার প্রাণহনন ক্ষমতা যে অনেকখানি হারিয়ে ফেলেছে তা বিশেষজ্ঞরাই বলছেন।
এবং কোভিড-১৯-র ভাইরাসের যত মিউটেশন ঘটতে থাকবে পরম করুণাময়ের অনুগ্রহে তার প্রাণহনন ক্ষমতা ততই কমতে থাকবে। এবং একটা সময় হবে কোভিড-১৯ ও সাধারণ ঠান্ডা জ্বরে বা সর্দি কাশিতে রূপান্তরিত হবে।
তবে কোভিড-১৯ তার প্রাণহনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেললেও আতঙ্কের ব্যাপারীরা কোভিড নিয়ে যে আতঙ্ক প্রচার করে কোটি কোটি মানুষকে গৃহবন্দি করে ফেলেছিল। এবং বিভিন্ন দেশে কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক স্বার্থান্বেষীদের চাপে ইচ্ছে না থাকলেও লকডাউন দিতে হয়েছিল।
গৃহবন্দিত্বকালে প্রবীণ তরুণ নির্বিশেষে সবাই নতুন ভাইরাসে নতুন মহামারিতে নতুন অতিমারিতে আক্রান্ত হয়েছেন সেটা হলো ভার্চুয়াল বা মেটা জগৎ।
মেটা মানে তো জানেন? অলীক জগৎ ভার্চুয়াল বা মেটা সবই হচ্ছে অলীক জগৎ। মেটা শব্দের অর্থও হচ্ছে বাস্তব নয় পরাবাস্তব অলীক জগৎ। যে-রকম মেটা ফিজিক্স।
মেটা ফিজিক্সের সাথে কিন্তু ফিজিক্সের কোনো সম্পর্ক নাই। মেটা ফিজিক্স বলা হয় দর্শনকে।
তো একইভাবে ভার্চুয়াল জগৎ বা মেটাভার্স হচ্ছে অলীক জগৎ।
অলীক জগতের প্রতি আসক্তি মানুষকে লকডাউন উঠে যাওয়ার পরেও অস্থির নিঃসঙ্গ অশান্ত অসহিষ্ণু রুড অর্থাৎ অভব্য করে তুলেছে।
অসহিষ্ণুতা অস্থিরতা ও রুডনেসের প্রকাশ ঘটছে তাদের অজ্ঞাতসারেই। এটা অলীক জগতের বা মেটা জগৎ মেটাভার্স বা ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডের প্রভাব।
এবং প্রবীণদের চেয়ে যুবকদের-তরুণদের ওপর এই প্রভাব দৃশ্যমানভাবে বেশি। এবং বিভিন্ন পরিসংখ্যান বর্তমানে তা-ই বলছে।
একটি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, শহরের ৬০ শতাংশের বেশি কিশোর-কিশোরী মানসিক চাপে ভুগছে। এবং এই স্ট্রেস বা মানসিক চাপ তাদের শারীরিক বা মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এই কিশোর-কিশোরীদের একটি বড় অংশ স্থূলতা এবং বিষণ্নতা বা অবসাদে ভুগছে।
এছাড়া যারা আসলে শহরে বড় হয়েছে এই কিশোর-কিশোরীদের অধিকাংশই নিয়মিত খেলাধুলা বা কায়িক পরিশ্রমের কাজ করা থেকে বঞ্চিত। এবং এই চাপমুক্তির জন্যে পরিবার বা স্কুলের সহায়তা তারা খুব কম পায়।
এবং এই কিশোর-কিশোরীদের ফাস্টফুড বা জাঙ্কফুড যা আসলে মূলত আবর্জনা আবর্জনা খাওয়ার প্রবণতাই তাদের বেশি। খেলাধুলার সুযোগও কম। ফলে স্থূলতা প্রকটভাবে তাদের ওপর বাসা বেঁধেছে।
তাছাড়া মা-বাবার সাথে মানসিক দূরত্ব নাগরিক জীবনে একক পরিবার কাঠামোর কারণে একাকীত্ব, স্কুলে বা অবসর সময়ে সমবয়সীদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, বুলিং এই মানসিক চাপকে আরো বাড়িয়েছে।
এবং একে বিশেষজ্ঞরা বলছেন পোস্ট কোভিড ট্রমা। এবং শুধু আমাদের দেশে নয় সারা পৃথিবীতে তরুণদের ওপরে এই পোস্ট কোভিড ট্রমার প্রভাব সবচেয়ে বেশি।
কারণ তারা অনিশ্চয়তায় ভুগছে সবচেয়ে বেশি। পড়াশোনা নিয়ে, ক্যারিয়ার নিয়ে ভুল তথ্য নিয়ে এবং মেটাভার্স বা অলীক জগতের আসক্তির ফলে।
এই অলীক জগতের আসক্তি থেকে বাঁচানোর এবং পোস্ট কোভিড ট্রমা থেকে সমাজের প্রতিটি মানুষকে বিশেষভাবে তরুণ সমাজকে রক্ষার জন্যেই আমরা ২০২২ সাল কোয়ান্টাম বর্ষ ৩০-কে তারুণ্যের প্রতি সমমর্মিতার বছর হিসেবে ঘোষণা করছি।
কোয়ান্টাম করোনাকালে যেভাবে মৃতের কাফন-দাফন সৎকারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে যেভাবে প্রত্যেকের স্বাস্থ্যের যত্নের জন্যে প্রথম দিন থেকেই করণীয়গুলো ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে সেই একই আন্তরিকতা নিয়ে একই মনোযোগ নিয়ে কোয়ান্টাম তরুণ প্রজন্মকে অলীক জীবনে নয়, আলোকিত জীবনে নিয়ে আসার জন্যে বলিষ্ঠভাবে সমাজের পাশে পরিবারের পাশে তরুণের পাশে সর্বাত্মকভাবে কাজ করবে।
কারণ যে-কোনো জাতির উত্থানে তরুণরাই সবচেয়ে বলিষ্ঠ নির্ভীক ভূমিকা রাখে। আমরা যে এখন উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি এর পেছনে মূল ভূমিকা তরুণদের।
এবং করোনাকালে কোনো অর্থনৈতিক মন্দা যে আমাদের ওপরে কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারে নি তার কারণ হচ্ছে আমাদের সক্রিয় জনশক্তি।
আমাদের মানুষ তারা কর্মকে ভালবাসে কাজকে ভালবাসে। এবং করোনাকালেও নিজের কাজটা সুন্দরভাবে করার জন্যে তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। যে কারণে আমাদের অর্থনীতির ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব তো পড়েই নাই, বরং প্রবৃদ্ধি ঘটেছে।
আসলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি কতদিন সচল থাকবে, অর্জনের চাকা কতদিন সামনের দিকে অগ্রসর হবে তা সবসময় নির্ভর করে পরবর্তী প্রজন্মের তরুণদের ওপর। তাদের উদ্দীপ্ত উজ্জীবিত রাখার ওপর। তাদের কতটা আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারা যাচ্ছে তার ওপর।
স্বাভাবিকভাবেই যারা অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তির দিক থেকে যারা ডুবন্ত সূর্য তারা উদীয়মান শক্তিকে নানানভাবে বিনাশ করার চেষ্টা করবে।
এবং তারা যে-কারণে নিমজ্জমান, সে কারণটিও তাদের কাছে পরিষ্কার। অতএব তাদের অভিজ্ঞতা থেকেই তারা চেষ্টা করবে আমাদের তরুণদেরকেও সেইভাবে হতোদ্যম করে দেয়া হতবল করে দেয়া।
আসলে গত ১০০ বছর ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্র তারা অর্থনৈতিক দিক থেকে সামরিক শক্তির দিক থেকে পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে।
কিন্তু তারা আজ নিমজ্জমান। কেন? তাদের দেশে পরিবারে তরুণরা সন্তানরা শিশুরা বহুক্ষেত্রে কুকুরের চেয়েও কম গুরুত্ব পাচ্ছে।
ব্রিটেনের একটি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে যে, ৩৩ শতাংশ ব্রিটিশ তারা একমত হয়েছেন যে ইংরেজরা তাদের সন্তানের চেয়ে কুকুরদের বেশি ভালবাসে।
The English love their dogs more than their children.
আমেরিকার অবস্থা! আমেরিকার নিউইয়র্ক পোস্টের সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৯ সালের রিপোর্ট হচ্ছে যে, ৩৪ শতাংশ পিতামাতা তাদের নিজের সন্তানের চেয়ে কুকুরকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।
কুকুর-বেড়ালের খাবার খেলনা পোশাক চিকিৎসাক্ষেত্রে ২০২০ সালে আমেরিকান পরিবারগুলোর খরচের পরিমাণ হচ্ছে ১০৪ বিলিয়ন ডলার।
৪৫ শতাংশ আমেরিকান কুকুর বেড়াল পালকরা তাদের নিজেদের চিকিৎসার জন্যে যে পরিমাণ অর্থ খরচ করে সমপরিমাণ অর্থ খরচ করে এই কুকুর বেড়ালের চিকিৎসার জন্যে।
এবং আরো দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, এসব দেশে ছেলেমেয়ের বয়স ১৮ বছর হলেই তাদেরকে ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়। কিক আউট করা হয়। এবার যাও তোমরা নিজেরা উপার্জন করো এবং চলো।
এবং সেই অর্থ যে অর্থ সন্তানের পেছনে ব্যয় করা হতো সেই অর্থ ব্যয় করে কুকুর বেড়ালের পেছনে।
এবং তরুণ আমেরিকান যাদের বয়স ৩০-র কোঠায় তারা সন্তান গ্রহণের পরিবর্তে কুকুর পালাটাকে অগ্রাধিকার দিতে শুরু করেছে।
কারণ হয়তো বা তারা দেখেছে তাদের মা-বাবা তাদেরকে ১৮ বছর বয়সে বাড়ি থেকে কিক আউট করেছে। বের করে দিয়েছে। নিজেরা উপার্জন করে চলার জন্যে। হয়তো ভেবেছে আমাদের সন্তান হলেও তো ১৮ বছর বয়সে বাড়ি থেকে কিক আউট করে দিতে হবে। তার চেয়ে সন্তানের পরিবর্তে কুকুর বেড়াল পালাটাই শ্রেয়। আমাদের দেশেও এই হাওয়া।
আসলে যে মানুষগুলো স্বভাবেই মধ্যেই সুপ্ত আছে বিদেশী প্রভুর দাসত্ব করার, আমাদের দেশেও হয়তো তাদের মধ্যেই এই কুকুর বেড়াল পালার রোগ সঞ্চারিত হয়েছে।
কারণ এরা হয়তো মনে করে যা কিছু বিলাতি সেটা শ্রেয়। যা কিছু দেশি এটা নিম্নস্তরের বিষয়। এবং স্বদেশি ঠাকুরের চেয়ে বিদেশি কুকুর এদের কাছে অনেক প্রিয়।
তো আসলে যে রোগ ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতন সুপার পাওয়ারকে এখন নিমজ্জমান করে দিয়েছে অর্থাৎ তরুণ প্রজন্ম মমতা না পেয়ে সন্তানবিমুখ কর্মবিমুখ মানুষ বিমুখ হয়েছে, যে রোগ তাদেরকে অধঃপতিত করেছে অর্থনৈতিক প্রতিপত্তি এবং শক্তির প্রতিপত্তি থেকে।
তারা স্বাভাবিকভাবেই চাইবে আমাদের মধ্যেও আমরা যেহেতু উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি আমাদের মধ্যেও এই রোগ সংক্রমিত হোক এবং আমরা যেন আমাদের সন্তানদের প্রতি সমমর্মী না হয়ে মানুষের প্রতি সমমর্মী না হয়ে হয় অলীক জগৎ অথবা পশুর জগতে ডুবে যাই।
তো আমরা সেখান থেকে আমাদেরকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। এবং পাশ্চাত্যে যুদ্ধের কারণে হোক মহামারির কারণে হোক যে ট্রমা কাটতে তাদের ৩০ বছর প্রয়োজন তা আমরা আমাদের বিশ্বাস এবং আশাবাদ দিয়ে ৩০ মাসেই কাটিয়ে উঠতে পারি।
প্রিয় সুহৃদ! তারুণ্যের প্রতি সমমর্মিতা অর্থটা আমাদের কাছে পরিষ্কার হতে হবে।
‘তারুণ্যের প্রতি সমমর্মিতা’ মানে হচ্ছে একজন তরুণকে বিকশিত হতে সাহায্য করা ইন এ ন্যাচারাল ওয়ে।
প্রাকৃতিক উপায়ে যেভাবে একটা কলি ফুল হিসেবে বিকশিত হয়, তারুণ্যের মেধাকে সেইভাবে বিকশিত করতে হবে। তার মেধা এবং সামর্থ্যের সঠিক যত্ন নিতে হবে।
শুধু আহ্লাদ দেয়া এটা সমমর্মিতা নয়। সে যদি ভুল করে সেই ভুল শুধরে নিয়ে সে যেন আবার জীবনকে সুন্দর করতে মনোযোগী হতে পারে সেটার সুযোগ করে দেয়া।
সমমর্মিতা মানে তারুণ্যের যাবতীয় খেয়ালিপনা অযৌক্তিক আবদার প্রত্যাশা এটা পূরণ করা নয়। অযৌক্তিক চাওয়া পূরণ করার নাম সমমর্মিতা নয়।
সমমর্মিতা হচ্ছে তার জন্যে যা যৌক্তিক তার জন্যে যা করণীয় তার জন্যে যা পালনীয় সেটাতে তাকে সহযোগিতা করা। এবং যা তার জন্যে ক্ষতিকর সেখান থেকে দৃঢ়তার সাথে তাকে বিরত রাখার চেষ্টা করা।
প্রিয় সুহৃদ! সন্তানকে পরিবারের অংশ হিসেবে লালন করুন বড় করুন। মা-বাবা হিসেবে সন্তানের লেখাপড়া ও ক্যারিয়ার এই ব্যাপারে আপনার ভাবার দরকার রয়েছে। কিন্তু মনে রাখবেন সারাক্ষণ পড়ার টেবিলে বসে থাকলেই লেখাপড়া হয় না। অনেক মা-বাবা সন্তানকে ঘরের কোনো কাজ তো দূরের কথা তার নিজের কাজটুকুও করতে শেখান না।
এমনকি আপনজন আত্মীয়-স্বজন বাড়িতে এলেও তাদের সাথে ন্যূনতম মেলামেশা মেলামেশা করাটাকেও সন্তানের মূল্যবান সময় নষ্ট করা বলে মনে করেন।
সন্তান নিজের ঘরে আপনমনে লেখাপড়া করুক- তারা মনে করেন এটাই তাদের জন্যে মঙ্গলজনক।
আসলে বাস্তব সত্যটা কী? এভাবে যারা বিচ্ছিন্নভাবে বড় হয়, ঘরে একা বড় হয় পরিবারের অংশ হিসেবে বেড়ে ওঠে না, তারা আসলে অসামাজিক পরিবারবিচ্ছিন্ন স্বার্থপর হয়ে বেড়ে ওঠে।
মা-বাবা, ভাই-বোনদের প্রতিও যদি থাকে আজকাল তো অনেকের ভাই আছে বোন নাই। বোন থাকলে ভাই নাই ভাই-বোন থাকলেও তাদের প্রতি তার কোনো টান তৈরি হয় না। যেহেতু সে পরিবারের কোনো কাজে অংশ নেয় নি তাই পারিবারিক কোনো বিপদ-আপদ কোনো ঝামেলায় সে শরিক হয় নি!
যেহেতু সে পরিবারের কোনো কাজে অংশ নেয় নি। কোনো বিপদ-আপদ শরিক হয় নি। সে তখন কেবল নিজেরটুকুই ভাবে। অন্যের ব্যাপারে তার ভাবনা কখনো আসে না। এমনকি মা-বাবার ব্যাপারেও নয়।
মা-বাবাকে মনে করে তার সমস্ত প্রয়োজনের সাপ্লাইয়ার হিসেবে। যতদিন সাপ্লাই প্রয়োজন ততদিন সে তাদের কাছ থেকে গ্রহণ করে।
যখন সে নিজে পেশায় ঢোকে তখন এই সাপ্লাইয়ারদের তার আর প্রয়োজন হয় না। সাপ্লাইয়ারদের সে তখন আর কোনো যত্ন বা কেয়ার করতে পারে না।
প্রিয় সুহৃদ! ‘তারুণ্যের প্রতি সমমর্মিতা’ মানে আমাদের কাছে খুব পরিষ্কার। তাকে বিকশিত করতে হবে পরিবারের একজন হিসেবে। এবং সেটা সমমর্মিতা দিয়ে। বুদ্ধি দিয়ে পরামর্শ দিয়ে মমতা দিয়ে।
সেটা তাকে সব ব্যাপারে স্বাস্থ্য লেখাপড়া নিজের যত্ন পরিবারের যত্ন সমাজের যত্ন কীভাবে নিতে হবে এই জ্ঞানে তাকে আলোকিত করা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
তাকে জীবন সম্পর্কে জীবন চলার পথ সম্পর্কে জীবনে করণীয় বর্জনীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেয়া মমতার সাথে।
এবং এই কাজটি যাতে আপনি সহজে করতে পারেন এজন্যে শুদ্ধাচার বইটি আপনার হাতের কাছে রাখুন ঘরে রাখুন। সন্তানের সামনে রাখুন।
এবং নিজের যত্ন কীভাবে নেবে প্রথম সেখান থেকে শুরু করুন। স্বাস্থ্য নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন কীভাবে নেবে সেখান থেকে শুরু করুন। শিক্ষার যত্ন কীভাবে নেবে সেখান থেকে সেটা তাকে দেখান। তারপরে আস্তে আস্তে ঘরের যত্ন পরিবারের অন্যদের যত্ন করণীয়-বর্জনীয়গুলো খুব মমতার সাথে তার সামনে তুলে ধরুন।
এবং তাহলেই আপনার সন্তানও আপনার সাথে পরিবারের সাথে সমাজের সাথে একাত্ম হয়ে আলোকিত মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে।
কোয়ান্টামের ৩০ তম বছরে আসুন পাশ্চাত্য যে ট্রমা কাটাতে মনে করছে ৩০ বছর লাগবে আমরা ৩০ মাসে সেই ট্রমা কাটিয়ে উঠতে চাই। আমরা আমাদের তরুণদের ভার্চুয়াল বা মেটাভার্সের অলীক জগৎ থেকে আলোকিত জীবনে নিয়ে আসতে চাই।
এবং যেহেতু বিশ্বের সবচেয়ে আশাবাদী মানুষের দেশ হচ্ছে এই বাংলাদেশ। তাই আশাবাদী ও প্রত্যয়ী মানুষদের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে আসুন আমরা বলি যে, আমরা আমাদের সন্তানদের সমমর্মিতা দিয়ে আলোকিত প্রজন্ম হিসেবে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলব।
এবং আমাদের অগ্রগতির পতাকা তাদের হাতে তুলে দেবো।
অগণিত আশাবাদী মানুষের সাথে আপনিও দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলুন যে, আসলে তরুণদের অলীক থেকে ফিরিয়ে এনে আলোকিত জীবনে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব!
বলুন- ইনশাল্লাহ সবই সম্ভব।
আপনার এই অটল বিশ্বাস অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও আপাতদৃষ্টিতে অন্যদের দৃষ্টিতে যা অসম্ভব সেই অসম্ভবকেই আমরা আমাদের জাতীয় জীবনে সম্ভব করে তুলব।
প্রিয় সুহৃদ! বর্ষায়নের এই শুভক্ষণে কোয়ান্টাম পরিবারের সকলের শারীরিক মানসিক পারিবারিক অর্থনৈতিক ও আত্মিক কল্যাণের জন্যে আপনাদের মা-জী আন্তরিক দোয়া জানিয়েছেন।
এবং শুধু আপনাদের নয়, সারাবিশ্বের সকল পরিবারের শান্তি সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন।
পরম করুণাময় আপনাদের মাজীর এই দোয়া কবুল করুন।
আপনারা সবাই ভালো থাকুন। নিজের এবং নিজের পরিবারের জন্যে সমাজের জন্যে দেশের জন্যে সমমর্মিতা সাফল্য সুখ ও সমৃদ্ধির মনছবি করুন।
এবং বিশ্বাস করুন, আমাদের তরুণরা অলীক জীবন থেকে আলোকিত জীবনে ফিরে আসবে।
এবং এ বছরের অটোসাজেশন ইনশাল্লাহ সব সম্ভব।
যখনই সময় পান তখনই মনে মনে বলুন- ইনশাল্লাহ সব সম্ভব।
সবাই ভালো থাকুন। বর্ষায়নের আপনার আনন্দ চারপাশের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিন।
খোদা হাফেজ। আসসালামু আলাইকুম।
সবার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।
[০৭ জানুয়ারি ২০২২ বর্ষায়ন সাদাকায়নের জন্যে ০৩ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে গুরুজীর প্রদত্ত বক্তব্য]