ইসলাম হচ্ছে সদুপদেশ সংযম সমর্পণ ও কল্যাণ কামনা। উত্তম ঈমানের প্রকাশ হচ্ছে সদাচরণ। উত্তম হিজরত হচ্ছে—আল্লাহ যা অপছন্দ করেন তা পরিত্যাগ করা।
—আমর ইবনে আবাসা (রা); আহমদ, মেশকাত
ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি—১. সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (স) আল্লাহর রসুল। ২. নামাজ কায়েম করা। ৩. যাকাত আদায় করা। ৪. রমজান মাসে রোজা রাখা। ৫. সামর্থ্য থাকলে হজ করা।
—আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা); বোখারী, মুসলিম
দ্বীনের ভিত্তি হচ্ছে আন্তরিকতা। এ আন্তরিকতা আল্লাহর প্রতি, তাঁর কিতাবের প্রতি, তাঁর রসুলের প্রতি, মুসলমানদের নেতা ও সাধারণের প্রতি।
—আবু রুকাইয়া তামিম ইবনে আউস আদ-দারী (রা); মুসলিম
সহজ সাবলীল বোধগম্য ভাষায় ইসলামের জ্ঞান শিক্ষা দাও। আর ভেতরে ক্রোধ সঞ্চারিত হলে পুরোপুরি মৌন থাকো।
—আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা); মুফরাদ (বোখারী)
শাশ্বত ধর্মের কথা বলতে গিয়ে নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় কোরো না। যা সত্য তা-ই বলো, যদি তা তিক্ত সত্যও হয়।
—আবু যর গিফারী (রা); মেশকাত, বায়হাকি
আসলে আল্লাহ-সচেতনতা বা ধর্মানুরাগের অবস্থান হচ্ছে অন্তর। আবারো বলছি, আল্লাহ-সচেতনতা বা ধর্মানুরাগের অবস্থান হচ্ছে অন্তর।
—আবু হুরায়রা (রা); মুসলিম
আমি মানুষের অন্তর দেখা বা তাদের পেট কেটে উন্মুক্ত করার জন্যে আদিষ্ট হয়ে প্রেরিত হই নি।
—আবু সাঈদ খুদরী (রা); বোখারী
দৃশ্যমানভাবে দূষণীয় নয়—এমন বিষয় থেকে বেঁচে থাকতে পারলেই তুমি ক্ষতিকর দূষণীয় বিষয় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে। এটাই ধর্মপরায়ণতার সুউচ্চ স্তর।
—আতিয়া ইবনে উরওয়াহ (রা); তিরমিজী
ধর্মকে কঠিন ও কষ্টদায়ক করার জন্যে আমাকে প্রেরণ করা হয় নি। ধর্ম শিক্ষা দেয়া ও ধর্মকে সহজ করার জন্যে আমি প্রেরিত হয়েছি।
—আয়েশা (রা); মুসলিম
ধর্মপালনকে মানুষের জন্যে সহজ করো। একে মানুষের জন্যে কঠিন কোরো না। তাদের সুসংবাদ দাও। ভীতসন্ত্রস্ত করে ধর্ম থেকে তাদের দূরে সরে যাওয়ার কারণ হয়ো না।
—আনাস ইবনে মালেক (রা); বোখারী
একদিন এক বেদুইন মসজিদে নববীতে এসে পেশাব করে দিল। উপস্থিত অনেকেই তাকে শায়েস্তা করার জন্যে উঠে দাঁড়াল ও ঘিরে ফেলল। নবীজী (স) তখন বললেন, ‘ওকে ছেড়ে দাও। আর জায়গাটা পরিষ্কার করে ফেলো। (মনে রেখো) প্রতিটি বিষয় সহজ সমাধানের জন্যে তোমাদের পাঠানো হয়েছে, বিষয়টিকে কঠিন ও জটিল করার জন্যে নয়।’
—আবু হুরায়রা (রা); বোখারী
আল্লাহর দ্বীন (ধর্ম) খুব সহজ। কেউ এই দ্বীনকে কঠিন করে তুললে তা তার ওপরই চেপে বসবে। তাই সবসময় মধ্যপন্থা অবলম্বন করো।
—আবু হুরায়রা (রা); বোখারী
(তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি কোরো না।) ‘অতীতে ধর্মচর্চা নিয়ে যারা বাড়াবাড়ি করেছে, তারা নিহত ও ধ্বংস হয়েছে।’ নবীজী (স) তিন বার একথার পুনরাবৃত্তি করেন।
—আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা); মুসলিম
‘তোমরা ধর্মীয় নিগূঢ় বিষয় নিয়ে (আলোচনা করতে পারো, কিন্তু) কখনো তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হবে না। সাবধান! অতীতে এই তর্ক-বিতর্ক/ বাহাস করতে গিয়েই বহু জাতি ধ্বংস হয়েছে।’ মসজিদে নববীতে একদিন কয়েকজন সাহাবীকে তকদির (অর্থাৎ প্রতিটি সৃষ্টির বিকাশ ধারা ও পরিণতির প্রাকৃতিক আইন) নিয়ে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত অবস্থায় দেখে নবীজী (স) একথা বলেন।
—আবু হুরায়রা (রা); তিরমিজী
সাধারণ মানুষকে (ধর্মের নামে) অন্যের বিরুদ্ধে অন্যায় করতে সহযোগিতা করাই হচ্ছে ধর্মান্ধতা।
—ওয়াসিলা ইবনে আল আসকা (রা); আবু দাউদ, মেশকাত
দ্বীনের (ধর্মবিশ্বাস ও নৈতিক বিধিবিধানের) মধ্যে বেদাত অর্থাৎ চেতনাবিরুদ্ধ নতুন কিছু সংযোজনের যে-কোনো প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করবে।
—আয়েশা (রা); বোখারী, মুসলিম
যারা ধর্মে চেতনাবিরুদ্ধ নতুন কিছু সংযোজন করে, তাদের ওপর আল্লাহর লানত।
—আলী ইবনে আবু তালিব (রা); মুসলিম, নাসাঈ
যে ব্যক্তি ইসলামে কোনো ভালো ও কল্যাণকর প্রক্রিয়া বা নিয়মের প্রচলন করবে, সে তার পুরস্কার পাবে। সে নিয়ম অনুযায়ী যারা কাজ করবে, তাদের পুরস্কারও অতিরিক্ত হিসেবে ধারাবাহিকভাবে তার সাথে যুক্ত হতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি কোনো ক্ষতিকর বা ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়া বা নিয়মের প্রচলন করবে, তাকে তার শাস্তি ভোগ করতে হবে। এই প্রক্রিয়া বা নিয়ম যারা অনুসরণ করবে তাদের সমুদয় শাস্তিও উদ্ভাবনকারী ভোগ করবে আর বদ নিয়মের অনুসরণকারীরাও যথাযথ শাস্তি ভোগ করবে।
—জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা); মুসলিম
ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে নামাজ। এর চূড়া হচ্ছে জেহাদ। আর চূড়ায় পৌঁছার পথ হচ্ছে জিহ্বাকে সংযত রাখা।
—মুয়াজ ইবনে জাবল (রা); তিরমিজী, আহমদ, তাবারানী
সর্বোত্তম জীবন হচ্ছে সংগ্রামী জীবন। আল্লাহর পথে যে চলে অবিরাম। ন্যায়ের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে মুহূর্তে। বিপদ বা শত্রুর মোকাবেলায় থাকে অগ্রভাগে। কামনা করে শহিদী মৃত্যু (যাতে সহযোদ্ধারা বেঁচে গিয়ে লাভ করতে পারে বিজয়ীর জীবন)। অথবা তার জীবন, যে চলে যায় কোনো পাহাড় চূড়ায় বা কোনো উপত্যকায়। কায়েম করে নামাজ, আদায় করে যাকাত, সদাচরণ করে মানুষের সাথে, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না কোনোভাবেই। আর আমৃত্যু নিবেদিত থাকে আল্লাহর ইবাদতে।
—আবু সাঈদ খুদরী (রা), আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম
নবীজী (স) সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বলেন : তোমরা এমন এক যুগে বাস করছ যখন বিধিবিধানের এক-দশমাংশ অবহেলা করলেও তোমরা ধ্বংস হবে। আবার এমন যুগ আসবে যখন এই বিধিবিধানের এক-দশমাংশ পালন করলেও তারা পরিত্রাণ পাবে।
—আবু হুরায়রা (রা); তিরমিজী