1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২২ পূর্বাহ্ন

এই সুন্দর পৃথিবীতে মা-বাবা এত অসহায় কেন?

  • সময় সোমবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ১০২৬ বার দেখা হয়েছে

এই সুন্দর পৃথিবীতে মা-বাবা এত অসহায় কেন? কী অপরাধ তাদের যে, জন্মের পর থেকে তাদের অতি আদরের সন্তানদেরকে মানুষের মতো মানুষ করার জন্যে জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়েও চেষ্টার কোনো ত্রুটি করে নাই। অথচ পরবর্তীতে সেই সন্তানেরাই মা-বাবার অবাধ্য হয়ে বউসহ শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ওঠে। যেন মা-বাবা তাদের কোনোদিন ছিলই না। সেই সন্তানদের প্রতি মা-বাবার কী করা উচিত?

সেই সন্তানদের প্রতি মা-বাবার আরো দোয়া করা উচিত যে, বাবা, তুমি সুখে থাকো। এটা নিয়ে একটা গল্প আছে—এক মা। ছেলেকে খুব আদর করত। ছেলে এক মেয়ের প্রেমে পড়ে মজনুর চেয়েও দিওয়ানা। মেয়ে বলল, একটাই শর্ত—তোমার মায়ের হৃৎপিণ্ড যদি নিয়ে আসতে পারো তাহলে আমি তোমাকে বিয়ে করব। সে মাকে গিয়ে বলল, মা, আমি তো তাকে বিয়ে করতে পারি কিন্তু শর্ত একটাই। সে মেয়ে তোমার হৃৎপিণ্ড চেয়েছে। মা বললেন, ঠিক আছে, নিয়ে যা। ছেলেও নিয়ে নিল। যাওয়ার পথে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল। তখন হৃৎপিণ্ডটা বলে উঠল, বাবা, ব্যথা পাস নাই তো?

এই হচ্ছে মা। শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হৃৎপিণ্ডটাও বলছে—বাবা, ব্যথা পাস নাই তো? আসল সত্যটা কী? আপনি আপনার সন্তানকে আদর দিয়েছেন, আহ্লাদ দিয়েছেন। মায়া-মমতা সব দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ করেন নি। তাকে সঠিক জীবনদৃষ্টি দেন নি। সঠিক জীবনদৃষ্টি যদি দিতেন, তাহলে সে বুঝত মা-বাবার প্রতি তার করণীয় কী? কর্তব্য কী?

আপনি সন্তানকে স্কুলে পড়াচ্ছেন। কোচিংয়ে দিচ্ছেন। টিচার দিচ্ছেন। আদর দিচ্ছেন। আহ্লাদ দিচ্ছেন। কম্পিউটার দিচ্ছেন। সবকিছু দিচ্ছেন। কিন্তু সঠিক জীবনদৃষ্টি কি তাকে দিতে পারছেন? সঠিক জীবনদৃষ্টি পেতে হলে তো মহাপুরুষদের জীবনী পড়তে হবে। ধর্মগ্রন্থ পড়তে হবে। সে-তো শিখছে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে মানে টাকা উপার্জন করতে হবে। তারপর বিয়ে করতে হবে।

বিয়ে করার পরে আপনার চেয়ে তার বউ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তার জীবনদৃষ্টি তা-ই বলে। হাম দো হামারা দো, মাম্মি ড্যাডি গো গো। আমরা শুধু দুজন। যেহেতু আপনি তাকে সঠিক জীবনদৃষ্টি দেন নাই, এখন তার জন্যে দোয়া করা ছাড়া আপনার আর কিচ্ছু করার নাই। সঠিক জীবনদৃষ্টি যদি দিতেন তাহলে সে কখনোই বউয়ের সাথে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে উঠত না

আবার এমন ঘটনাও আছে—ছেলের কাছে মায়ের একটাই আবদার ছিল যে, বাবা, আমাকে তোমার বাবার কবরের পাশে কবর দেবে। ঢাকা শহরে তার বাসায় তার মা মারা গেছে। তখন তার ছেলে স্কুলে ছিল। প্রতিবেশীকে বলে গেছে, ছেলে বাসায় এলে তোমাদের বাসায় রেখো তাকে।

তখনকার দিনে তো এত যানবাহনের সুবিধা ছিল না। বুড়িগঙ্গা থেকে নৌকায় যেতে হবে। মাঝি বলল, লাশ নিয়ে আমি তো এতদূর নৌকা বাইতে পারব না। সে বলল, তুমি বসে থাকো। আমি নৌকা বেয়ে নিয়ে যাব। এবং সে ১০ ঘণ্টা নৌকা বেয়ে মায়ের লাশ নিয়ে গেছে। তারপরে তার বাবার কবরের পাশে মাকে কবর দিয়েছে। কেন? মা-বাবা তাকে সঠিক জীবনদৃষ্টি দিতে পেরেছিল। সে তার একমাত্র বাচ্চা ছেলেকে প্রতিবেশীর কাছে রেখে যেতেও কোনো ভয় পায় নি, অসুবিধা মনে করে নি।

অর্থাৎ সন্তানকে তো জীবনদৃষ্টি দিতে হবে। শুধু পুতুল দিলে, খেলনা দিলে তো হবে না। সময় দেবেন, মমতা দেবেন। তার সাথে জীবনের গল্প করবেন। আপনার কষ্টের কথা তাকে বলবেন। আমাদের মা-বাবারা তো তার কষ্টের কথা সন্তানদেরকে বলে না। সন্তান চাইল আর আপনি তাকে জিনিস দিয়ে দিচ্ছেন। সে-তো আপনার কষ্ট বোঝে না। তাকে তো বলতে হবে, এই টাকাটা আনতে আপনার কত কষ্ট হয়েছে।

আমাদের সমাজে দুই শ্রেণির লোক আছে। এক শ্রেণির মানুষ খুব কষ্ট করে উপার্জন করে। আরেক শ্রেণির মানুষের কোনো কষ্ট করতে হয় না। টাকার পাহাড়ের মধ্যে থাকে। তাদের সন্তানদের যে জীবনদৃষ্টি দেয়া দরকার, যে মনোযোগ দেয়া দরকার তা তারা দিতে পারে না।

আমাদের সামাজিক পরিবেশটাই এখন এমন। এই পরিবেশ এখন বদলাতে হবে। যে কারণে চারপাশের ৪০ ঘরে প্রশান্তির বাণী পৌঁছে দিতে হবে। সন্তানকে লালনের কথা, ইতিবাচক জীবনদৃষ্টির কথা পৌঁছে দিতে পারলে এবং জীবনদৃষ্টি বদলালে এই দুঃখ থাকবে না। সেই বাচ্চা ছেলেটির মা-বাবা ঘর বাড়ি কিছুই করে যান নি। কিন্তু ছেলে তো তাদেরকে ছাড়ে নি। কারণ সে ছোটবেলায় দেখেছে, তার বাবা তার দাদিকে কবর দেয়ার জন্যে নিজে নৌকা বেয়ে নিয়ে গেছে।

অতএব তার কাছে বাবা তো মডেল। আমাকে তো আমার বাবার জন্যে আমার মায়ের জন্যে এরকমই করতে হবে। অর্থাৎ বাবা-মাকে সন্তানের কাছে মডেল হতে হবে। শুধু আদর-আহ্লাদ দিলে হবে না। আর সন্তান আপনার সম্পত্তি না। বরং আল্লাহর আমানত। আমরা ভাবি, সন্তান আমাকে দেখবে। সন্তান আপনাকে দেখবে কিনা, এটা সন্তানের দায়িত্ব। আপনি কেন প্রত্যাশা করবেন? আপনি দোয়া করবেন, সন্তান ভালো থাকুক। আপনাকে দেখার জন্যে তো আল্লাহ আছেন।

সন্তানকে যদি সঠিক জীবনদৃষ্টি দিতে পারেন তাহলে সন্তান কখনোই এই চোরাবালিতে পড়বে না। কারণ মা-বাবার সাথে অসদাচরণের পরিণতি সে বুঝবে। আমার মা এবং বাবার প্রতি আমার কী করণীয়, আমার মা-বাবা আমার জন্যে কত কষ্ট করেছেন এটা সে বোঝে না বলেই এত অসুবিধা। অতএব আমাদের জীবনদৃষ্টিটা ঠিক করতে হবে এবং সন্তানকে জীবনদৃষ্টি দিতে হবে ছোটবেলা থেকেই।

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com