ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল হামিদ মিয়ার পদত্যাগপত্র কার্যকর না করার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে তাঁর পদত্যাগসংক্রান্ত কোনো স্মারক পর্ষদ সভায় উত্থাপনের ব্যাপারেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এমন স্মারক উত্থাপনের আগে প্রতিষ্ঠানটিতে নিযুক্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রশাসকের অনুমোদন নিতে বলা হয়েছে।
ফলে আব্দুল হামিদ মিয়া চাইলেও এখনই প্রিমিয়ার লিজিং ছাড়তে পারছেন না। তিনি ২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে প্রতিষ্ঠানটির এমডির দায়িত্বে। এর আগে তিনি ন্যাশনাল ব্যাংকের অতিরিক্ত এমডি ছিলেন। এখন আবার ন্যাশনাল ব্যাংকে ফিরে যেতে চান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, গত কয়েক বছরে প্রিমিয়ার লিজিংয়ের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিও গ্রাহকদের টাকা ঠিকমতো ফেরত দিতে পারছে না। প্রতিষ্ঠানটির ঋণের ৩০ শতাংশের বেশি খেলাপি হয়ে গেছে। এ সময়ে এমডি পদে ছিলেন আব্দুল হামিদ মিয়া। তাই তাঁকে এর দায় নিতে হবে। এ জন্য এখনই এই প্রতিষ্ঠান ছাড়ার সুযোগ নেই।
জানা গেছে, আব্দুল হামিদ মিয়া ২০১৬ সালের এপ্রিলে এমডি হিসেবে প্রিমিয়ার লিজিংয়ে যোগ দেন। গত নভেম্বের তিন মাসের নোটিশ দিয়ে এমডি পদ থেকে পদত্যাগ করেন। নোটিশের মেয়াদ গত রোববার শেষ হয়েছে।
একই দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, এমডি পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যাবে না। এ ছাড়া নতুন করে তাঁর পদত্যাগের বিষয়ে স্মারক উপস্থাপনের বিষয়ে প্রশাসকের অনুমোদন নিতে বলা হয়েছে। আব্দুল হামিদ মিয়া বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে ভালো করেছি। অন্য অনেক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে প্রিমিয়ার লিজিং ভালো আছে। তিন মাসের নোটিশ দিয়ে পদত্যাগ করেছি। গত রোববার তার মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তি মেলেনি। আমি আবার ন্যাশনাল ব্যাংকে ফিরে যেতে চাই। আগেও সেই ব্যাংকে ছিলাম। আমার কারণে প্রিমিয়ার লিজিংয়ের কোনো ক্ষতি হয়নি।’
একজন আমানতকারীর টাকা ফেরত দিতে না পারায় গত ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রশাসক বসানোর নির্দেশ দেন আদালত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন আজাদ প্রতিষ্ঠানটিতে প্রশাসকের দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি এখনো প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক চিত্র বের করতে পারেননি। এ কারণে এখনই আব্দুল হামিদ মিয়াকে ছাড়তে চায় না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে তিনি এমডি পদ ছেড়ে ন্যাশনাল ব্যাংকে অতিরিক্ত এমডি হিসেবে যেতে চান।
জানতে চাইলে ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্বে) এ এস এম বুলবুল বলেন, ‘ওনাকে অতিরিক্ত এমডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। উনি ছাড় পেলেই যোগ দেবেন।’
দেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রায় ১০টি সমস্যার মধ্যে পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে পারছে না।