1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
  2. [email protected] : adminbackup :
রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫৪ পূর্বাহ্ন

করোনার মধ্যেও এসেছে অনেক সুখবর

  • সময় সোমবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ৮০৮ বার দেখা হয়েছে

‘করোনা পরিস্থিতি ভালো না হলে স্কুল খুলবে না’। ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায়, প্রথম কলামে ছাপা হওয়া খবরের শিরোনাম। কী অনিশ্চয়তার মধ্যেই না শুরু হয়েছিল বছরটা! তখনো আমরা জানতাম না, ক্যাম্পাসগুলো খুলতে আরও প্রায় ৮ থেকে ৯ মাস অপেক্ষা করতে হবে। বোর্ড পরীক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাগুলো কবে, কীভাবে হবে—জানত না কেউ।

তবু আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার অঙ্গনে বছরটা শিক্ষার্থীদের মন্দ যায়নি। এসেছে বেশ কয়েকটি পদক। অনলাইনের সুবাদে এমন অনেক প্রতিযোগিতাতেও শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন, যেগুলোতে আগে কখনোই নাম লেখানো হয়নি। বছর শেষে পুরোনো অর্জনগুলোর দিকে একবার ফিরে তাকানো যাক। যেন সামনের দিকে এগোনোর উদ্যম আমরা পাই। প্রথম আলো স্বপ্ন নিয়ে বিভাগে লিখেছেন মো.. সাইফুল্লাহ।

অলিম্পিয়াডের অঙ্গনে

‘প্রতিবছর সাধারণত আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডেই আমরা ঘটা করে অংশ নিই। কিন্তু এ বছর গণিত–সংশ্লিষ্ট আরও বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতায় আমাদের ছেলেমেয়েরা ভালো করেছে। সুতরাং আমাদের পরিধিটা বড় হয়েছে। ছেলেমেয়েরা আরও বেশি চর্চা করার সুযোগ পেয়েছে, আত্মবিশ্বাস পেয়েছে। এটা অবশ্যই এ বছরের ভালো দিক’ বলছিলেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান।

পেছন ফিরে তাকালে আমরা তার কথার প্রমাণ পাই। ইউরোপিয়ান গার্লস ম্যাথ অলিম্পিয়াড, ইরানিয়ান কম্বিনেটরিকস অলিম্পিয়াড, ম্যাথমেটিকস উইদাউট বর্ডার, আন্তর্জাতিক গণিত প্রতিযোগিতার মতো আয়োজনগুলোতে এ বছর বাংলাদেশ অংশ নিয়েছে। এশিয়ান-প্যাসিফিক ম্যাথমেটিক্যাল অলিম্পিয়াডে তো এ বছরই এসেছে প্রথম স্বর্ণপদক। গণিতের সব অলিম্পিয়াড থেকেই কমবেশি পদক এনেছে খুদে গণিতবিদেরা। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে আমরা তিনটি ব্রোঞ্জপদক পেয়েছি। আগের বছরগুলোর বিবেচনায় এটিকে অবশ্য আমাদের সেরা অর্জন বলা যাচ্ছে না। কিন্তু মুনির হাসান জানান, ২০২২ সালে ভালো কিছু করার প্রত্যাশায় এখন থেকেই শিক্ষার্থীরা জোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

গণিত ছাড়া আরও কয়েকটি অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। আন্তর্জাতিক পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে আমরা পেয়েছি একটি রৌপ্য ও তিনটি ব্রোঞ্জ পদক। আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে ব্রোঞ্জ পদক এসেছে দুটি। এ ডিসেম্বরেও সুখবর দিয়েছে স্কুলের শিক্ষার্থীরা। আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড থেকে তারা জিতেছে দুটি রৌপ্য ও চারটি ব্রোঞ্জ পদক। আন্তর্জাতিক ইনফরমেটিকস অলিম্পিয়াডেও এ বছর বাংলাদেশ পেয়েছে দুটি করে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং–সংক্রান্ত এ অলিম্পিয়াডে ২০ বছরের কম বয়সী কিশোর-তরুণেরা অংশ নেন।

মহাকাশের মহাযজ্ঞ

বছর কয়েক আগেও দেশে মহাকাশসংক্রান্ত গবেষণা কিংবা উদ্ভাবনে আগ্রহী শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। এখন রীতিমতো একাধিক দল দাঁড়িয়ে গেছে। কৃতিত্ব দিতে হয় জাতীয়–আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতাকে।

যেমন-ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ (আইআরসি)। কয়েক বছর ধরে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দল। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার অধীন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘দ্য মার্স সোসাইটি’ এ প্রতিযোগিতার আয়োজক। গত জুনে বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়কে পেছনে ফেলে ভার্চ্যুয়াল ইউআরসিতে সেরা হয়েছে ঢাকার মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) শিক্ষার্থীদের দল মঙ্গলবার্তা। এবারের প্রতিযোগিতার চ্যালেঞ্জ কিন্তু সহজ ছিল না। শিক্ষার্থীদের এমন একটি রোভারের নকশা করতে হয়েছে, ভবিষ্যতে যা মানুষের সহায়ক হিসেবে মঙ্গলগ্রহে মাঠপর্যায়ে কাজ করবে। জানিয়ে রাখি, প্রতিযোগিতায় চতুর্থ হওয়া দলটিও কিন্তু বাংলাদেশের। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের দল-ব্র্যাকইউ মঙ্গলতরি।

নাসা আয়োজিত আরও একটি সম্মানজনক প্রতিযোগিতা—নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ। এ প্রতিযোগিতাতেও একাধিকবার অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। এ বছর ‘বেস্ট মিশন কনসেপ্ট’ ক্যাটাগরিতে এসেছে চ্যাম্পিয়নের স্বীকৃতি। নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ—বাংলাদেশের অন্যতম উপদেষ্টা আরিফুল হাসান মুঠোফোনে জানান, ২০২২ সালের জন্যে বড় পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন তারা। আঞ্চলিক পর্যায় থেকে উঠে আসা ৫০টি দলকে নিয়ে আগামী বছর থেকেই শুরু হবে ‘এক্সিলারেশন প্রোগ্রাম’। অতএব যারা অংশ নেওয়ার কথা ভাবছেন, তৈরি হয়ে যান।

ও হ্যাঁ, মে মাসেও এসেছিল সুখবর। মার্স সোসাইটি সাউথ এশিয়া আয়োজিত আইপিএএস চ্যালেঞ্জে উদ্ভাবনে সেরার স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ‘টিম ইন্টারপ্ল্যানেটার’। ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যানেটারি অ্যারিয়াল সিস্টেম (আইপিএএস) চ্যালেঞ্জ মূলত বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্যে মহাকাশ গবেষণায় ব্যবহৃত ড্রোন তৈরির প্রতিযোগিতা।

রোবটিকস

২০৩০ সালের মধ্যে ২ কোটি চাকরি চলে যাবে রোবটের দখলে। কেবল চীনেই রোবটকর্মীর সংখ্যা হবে প্রায় দেড় কোটি। অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের গবেষণালব্ধ এ তথ্য যেমন আমাদের চোখ রাঙানি দেয়, তেমনি আশার আলো দেখান বাংলাদেশের কিশোর-তরুণ রোবট গবেষকেরা।

এ ডিসেম্বরই আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে ৪টি স্বর্ণসহ মোট ১৫টি পদক জিতেছে দেশের স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের একটি দল। এ সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি ও আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লাফিফা জামাল। তিনি বলেন, ‘এ বছর বাংলাদেশ থেকে যে ১৬ জন ছেলেমেয়ে অংশ নিয়েছে, তাদের মধ্যে কিন্তু সারা দেশের প্রতিনিধিত্ব আছে। শুধু ঢাকা নয়, পাবনা, সিলেট, চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইলের স্কুলের শিক্ষার্থীরাও আছে এই দলে। আগামী বছর আমরা আমাদের প্রচারণা ৬৪ জেলায় ছড়িয়ে দিতে চাই। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা চলছে।’

এ বছর রোবটিকসে আরও একটি বিজয় এসেছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের হাত ধরে। কিবো রোবট প্রোগ্রামিং চ্যালেঞ্জে দ্বিতীয় হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের দল—এনিগমা সিস্টেমস। জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি (জাক্সা) এ প্রতিযোগিতা আয়োজন করে। ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে থাকা রোবটের জন্য প্রোগ্রাম তৈরি করতে হয় এ প্রতিযোগিতায়। যেখানে বিশেষ স্বীকৃতি হিসেবে ক্রু অ্যাওয়ার্ডও জিতে নিয়েছেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা।

প্রোগ্রামিং

কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়োজন এসিএম আন্তর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা (আইসিপিসি)। এ বছর এই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে পশ্চিম এশিয়ায় সেরা হয়েছে ‘বুয়েট হেলবেন্ট’ দল। ১ অক্টোবর রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৫টি দল অংশগ্রহণ করেছিল।

তবে আপাতত আমাদের জন্যে এ অর্জনের চেয়েও বড় খবর হলো—সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর এসিএম আইসিপির আয়োজক হবে বাংলাদেশ। ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে (ইউএপি) প্রতিযোগিতার আসর বসার কথা রয়েছে। ইউএপির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘আয়োজক হিসেবে এখন থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগামী বছরের নভেম্বরে প্রতিযোগিতাটি হওয়ার কথা রয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীরাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যেহেতু এবার আমরা হোস্ট কান্ট্রি, শিক্ষার্থীদের ওপর দায়িত্বটা আরও বেশি। আশা করি, ২০২২ সালে আমরা এ বছরের চেয়েও ভালো ফল পাব।’

আরও কিছু বিজয়

# গত মার্চে এসিআই স্প্রিং কনভেনশন ২০২১ আয়োজন করেছিল আমেরিকান কংক্রিট ইনস্টিটিউট। সেখানে এসিআই কংক্রিট সলিউশনস নামের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় বিশ্বের ২৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়। তৃতীয় স্থান অর্জন করে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের দল—চুয়েটএক্স। সিমেন্টের পরিবর্তে কীভাবে নির্মাণ ও শিল্পকারখানার বর্জ্য ব্যবহার করে কংক্রিট ব্লক বানানো যায়, প্রতিযোগিতায় সেটিই উপস্থাপন করেছিলেন তারা।

# আর্কিটেক্টস রিজিওনাল কাউন্সিল এশিয়া (আর্কএশিয়া) আয়োজিত প্রতিযোগিতায় স্টুডেন্ট ট্র্যাকে প্রথম ও তৃতীয়—দুটি পুরস্কারই পেয়েছেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা।

# ফেরি দুর্ঘটনা রোধের উপায় খোঁজার জন্যে একটি প্রতিযোগিতা আয়োজন করে অলাভজনক সংস্থা—ওয়ার্ল্ডওয়াইড ফেরি সেফটি অ্যাসোসিয়েশন। আগস্টে ‘ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট ডিজাইন কমপিটিশন ফর আ সেফ অ্যান্ড অ্যাফোর্ডেবল ফেরি’ নামের এ প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হয় বুয়েটের শিক্ষার্থীদের একটি দল।

# সেপ্টেম্বরে অর্থনীতির বিশ্বকাপ হিসেবে পরিচিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিকস কাপ’-এ একটি সোনা, একটি রৌপ্য, চারটি ব্রোঞ্জসহ মোট ছয়টি পদক পেয়েছেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা।

# নভেম্বরে কেমব্রিজ ইউনিয়ন আয়োজিত কেমব্রিজ ইন্টারভার্সিটি ২০২১-এ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির একটি বিতার্কিক দল। এ বিতর্ক প্রতিযোগিতাকে পৃথিবীর অন্যতম প্রতিযোগিতামূলক ও মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশের কোনো বিতর্ক দলের এই প্রতিযোগিতায় এটাই প্রথম অর্জন।

 

সূত্র: প্রথম আলো (২৬ ডিসেম্বর, ২০২১)

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com