1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫১ পূর্বাহ্ন

কেন রোজা রাখবেন

  • সময় বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৩
  • ৩৯৯ বার দেখা হয়েছে

ওজন কমাতে পারবেন সহজে

ওজন কমাতে চাইলেও রোজা বা উপবাস আপনার জন্যে খুব কার্যকরী। ড. এরিক রভুসিনের এক গবেষণা থেকে দেখা গেছে ওজন কমাতে গিয়ে প্রতিদিন কঠোরভাবে খাবার নিয়ন্ত্রণের চেয়ে একদিন স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া এবং তার পরদিন কিছুই না খাওয়া –এরকম ‘সবিরাম উপবাস’ অনেক ভালো ফল দিতে পারে। তিনি বলেন, ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্যে দিনের পর দিন না খেয়ে থাকার চেয়ে সবিরাম উপবাস একটি ভালো বিকল্প।

আপনি সহজে বুড়ো হবেন না

আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এজিংয়ের নিউরো সায়েন্স ল্যাবরেটরির প্রধান ড. মার্ক পি ম্যাটসন ও তার সহকর্মীরা দেখান যে, নিয়মিত ডায়েটিং করলে একজন মানুষের দেহে যে প্রভাবগুলো পড়ে রোজা বা উপবাসও সেই একই প্রভাব ফেলে। ইঁদুরের উপর এবং পরে মানুষের ওপর ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বা একদিন পর পর উপবাসের প্রভাব নিয়ে এই গবেষণাটি তারা পরিচালনা করেন। তারা বলেন, উপবাসের ফলে দেহে এমন কিছু প্রোটিন উৎসারিত হয় যেটা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে অক্সিডেশনজনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং স্নায়ুকোষের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে বয়সজনিত রোগ যেমন, অ্যালঝেইমার, হান্টিংটন বা পার্কিনসন্সের ঝুঁকি অনেকখানি কমে যায়। তারা দেখেন, কয়েক ঘণ্টা পর পর নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ রক্তে শর্করার মান সবসময় উঁচু রাখে। শক্তি উৎপাদনের জন্য এই শর্করাকে বিপাক হতে হয়। এই বিপাকের একটি উপজাত হলো জারণ। এই জারণের ফলে দেহে সৃষ্টি হয় অস্থিতিশীল অক্সিজেন অণু, যার সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক পরিণতি হলো বুড়িয়ে যাওয়াকে ত্বরান্বিত করা। কিন্তু রোজা বা উপবাস এ প্রক্রিয়াকেই পাল্টে দেয়। অনাহারের ফলে দেহে যে সাময়িক শক্তি সংকট হয় তা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে প্রোটিন উৎপাদনে উৎসাহ দেয়, এমনকি নতুন ব্রেন সেলও জন্মায়।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমবে

বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় দেখতে পেয়েছেন উপবাস করে এবং একটি নির্দিষ্ট ডায়েট বা খাদ্যতালিকা অনুসরণ করে অগ্ন্যাশয়ের সক্ষমতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় এই গবেষণার ফলকে খুবই আশাপ্রদ বলে মনে করছেন তারা। মূলত ইঁদুরের ওপর এই ‘ফাস্টিং ডায়েট’ এর পরীক্ষা চালান বিজ্ঞানীরা।

এতে দেখা যায়, ইঁদুরকে উপবাসে রেখে যখন তাকে খাবার দেয়া হয়, তখন তা ইঁদুরের অগ্ন্যাশয়ে একধরণের ‘বেটা সেল’ পুনরুৎপাদনে সাহায্য করে। রক্তপ্রবাহে যখন চিনি বেড়ে যায়, তখন অগ্ন্যাশয়ের এই ‘বেটা সেল’ তা সনাক্ত করতে পারে এবং ইনসুলিন নির্গত করার মাধ্যমে তা প্রশমিত করে।

গবেষক দলের একজন ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার ড: ভ্যাল্টের লোঙ্গো বলেন, “গবেষণা থেকে আমরা যে উপসংহারে পৌঁছেছি, তা হলো, ইঁদুরকে যখন উপবাসে রেখে কাহিল করে ফেলা হচ্ছে এবং তারপর আবার খাবার দেয়া হচ্ছে, সেটি তাদের অগ্ন্যাশয়কে পুনরায় কর্মক্ষম করে তুলছে। অগ্ন্যাশয়ের সেলগুলো এর ফলে এই অঙ্গের অকেজো অংশকে আবার সচল করে তুলছে।”

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘টাইপ-ওয়ান’ এবং ‘টাইপ টু’ ডায়াবেটিসে যারা ভুগছেন, তাদের উভয়ের জন্য এই পরীক্ষা সুফল বয়ে আনতে পারে। ইঁদুরের ওপর যে পরীক্ষাটি চালানো হয়েছে সেটি মূলত ভেগান বা কট্টর নিরামিষাশীদের অনুসরণ করা এক ডায়েট থেকে।

ভেগানরা এই ডায়েট অনুসরণ করে প্রতিদিন আটশো থেকে এগারোশো ক্যালরির বেশি খাবার খান না। তাদের খাবার তালিকায় থাকে মূলত নানা ধরণের বাদাম এবং স্যুপ। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর আবার ২৫ দিন ধরে যত খুশি খেতে পারেন। এটা অনেকটা লম্বা সময় প্রায় অর্ধাহারে থেকে আবার একটা সময়ে বেশ ভুরিভোজ করার মতো ব্যাপার।

ড: লোঙ্গো বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই গবেষণার ফলের বিরাট তাৎপর্য আছে। বিরাট সম্ভাবনা আছে। কারণ আমরা ইঁদুরের ওপর এই গবেষণায় দেখাতে পেরেছি যে ডায়েট করে ডায়াবেটিসের লক্ষণ সারিয়ে তোলা সম্ভব। এই একই ডায়েট মানুষের ওপর পরীক্ষা করেও ব্লাড সুগার লেভেল কমিয়ে আনা যায় বলে প্রমাণিত হয়েছে।

কোলেস্টেরল কমায়

সংযুক্ত আরব আমিরাতের কয়েকজন কার্ডিওলজিস্ট একদল স্বেচ্ছাসেবীর ওপর একটি গবেষণা চালান। ৩০ দিন রোজা রাখার পর দেখা গেল দেহের ওজন বা সুস্থতাবোধের ওপর কোনো প্রভাব না পড়লেও তাদের রক্তের লিপিড প্রোফাইলের ওপর চমৎকার প্রভাব পড়েছে। অর্থাৎ তাদের রক্তে এলডিএল বা ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমেছে। শুধু মুসলমানরাই নন, অর্থডক্স খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় উপবাসকালীন সময়েও একই প্রভাব দেখা গেছে তাদের দেহে।

ক্যান্সার ঝুঁকি কমায়

ক্যান্সার নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা করেছেন এমন একজন বিজ্ঞানী টমাস সেফ্রেইড। প্রাকৃতিকভাবে ক্যান্সার প্রতিরোধ নিয়েই তার গবেষণা। তিনি দেখেন, বছরে কেউ যদি অন্তত একবারও সাত দিন একটানা উপবাসে থাকতে পারে (পানি ছাড়া অন্যকিছু না খেয়ে), দেহ পরিচ্ছন্ন হবার জন্যে তার আর কিছুই লাগে না। ভবিষ্যতে ক্যান্সার ঘটাতে পারে এমন সেলগুলো এ প্রক্রিয়ায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। এমনকি এটা সাত দিন না হয়ে চারদিনও হতে পারে। সেক্ষেত্রে বছরে কয়েকবার উপবাস করতে হবে।

স্ট্রেস কমায়

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স এর গবেষণায় দেখা গেছে উপবাস স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে, সুস্থতার অনুভূতিকে বাড়ায় এবং দীর্ঘজীবন এনে দেয়।

রক্তচাপ কমায়

গবেষণায় আরো দেখা গেছে রোজা বা উপবাস ব্যায়ামের চেয়েও কার্যকরভাবে হার্টবিট ও ব্লাড প্রেশার কমাতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

কথাটা শুনে প্রথম একটু ধাক্কাই লাগতে পারে। কিন্তু নিয়মিত উপবাস বা রোজার এটাও একটা উপকারি দিক বলে মনে করা হচ্ছে। কেমোথেরাপি দিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেলা হয়েছে এমন একদল ইঁদুরকে বিরতি দিয়ে দিয়ে খাইয়ে দেখা গেছে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আবার ফিরে এসেছে।

দেখবেন জ্বরে বা অন্যান্য অসুখের সময় আমাদের ক্ষিধে কমে যায়। বলা হয়- এসময় শরীরকে খেতে দিলে যেহেতু সেসব জীবাণুও পুষ্টি পাবে যারা অসুখটি ঘটিয়েছে, কাজেই না খেতে দেয়াটাই উত্তম হবে। যাতে দেহের ভেতরে মিউটেশন ঘটিয়ে সে আরো বিস্তৃত হওয়ার সুযোগ না পায়।

যদিও এসব ধারণার সপক্ষে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ তেমন জোরালো নয়, তবে ভারসাম্যপূর্ণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর নিয়মিত উপবাসের একটা কার্যকরী প্রভাব আছে- এটা অনেক বিশেষজ্ঞেরই মত।

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com