1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
  2. [email protected] : adminbackup :
শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ০৩:২৬ পূর্বাহ্ন

কোকা-কোলার পৌষ মাস, আমাদের সাড়ে সর্বনাশ!

  • সময় সোমবার, ৩ মে, ২০২১
  • ১৫৯৪ বার দেখা হয়েছে
রোদে ঘুরে তেষ্টা পেয়েছে কিংবা ফুটবল খেলার পর গলা শুকিয়ে কাঠ। জিরিয়ে নিতে, ক্লান্ত দেহে সজীবতা ফেরাতে খুলে ফেললেন কোমল পানীয়-এর বোতল। আপনার স্বাস্থ্যের জন্যে কাজটা কি ভালো হলো?
আধুনিককালের স্বাস্থ্য-সচেতন বুদ্ধিমান মানুষ পারতপক্ষে সফট ড্রিংকস থেকে নিজেকে শতহস্ত দূরে রাখেন। তাই কোকা কোলা বা পেপসি-র ‘জন্মভূমি‘ খোদ আমেরিকাসহ পুরো পাশ্চাত্যেই কমে গেছে এসব-এর বিক্রি। অধিকাংশ কোমল পানীয় উৎপাদনকারী কোম্পানি ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এবার তাই থাবা বাড়িয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাজারে।
অসচেতন ক্রেতারা মহানন্দে গলাধঃকরণ করছে সফট ড্রিংকস। টেরও পাচ্ছে না কী ভয়াবহ এক বিপর্যয় নেমে আসছে তাদের জীবনে। কোমল পানীয়-র প্রভাবে এমনকি বিধ্বস্ত হয়ে যেতে পারে একটি দেশের সামগ্রিক নাগরিক স্বাস্থ্য। যেমনটা ঘটেছে মধ্য আমেরিকার দেশ এল-সালভেদর-এ। রিডার্স ডাইজেস্ট-এর সাম্প্রতিক সংখ্যায় (সেপ্টেম্বর ২০১৬) উঠে এসেছে তার বিশদ বিবরণ।
এল-সালভেদর-এ বিশুদ্ধ পানি পানের সুযোগ পায় না অধিকাংশ মানুষ। আর সেখানে বোতলজাত পানির চেয়ে সস্তায় মেলে কোমল পানীয়। এক বোতল পানির দাম যেখানে ৪০ সেন্ট, সেখানে এক বোতল কোকা কোলা-র দাম ৩৫ সেন্ট। আহারে বিহারে মানুষের ভরসা তাই কোমল পানীয়। কিন্তু ক্রমাগত কোমল পানীয় পান নষ্ট করে দিচ্ছে এল-সালভেদরিয়ানদের দাঁত। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেদেশের শিশু-কিশোররা।
ওয়ার্ল্ড ডেন্টাল ফাউন্ডেশন-এর তথ্য অনুযায়ী, মধ্য আমেরিকা-র ছয় থেকে ১৯ বছর বয়সী শিশুদের ৮০ শতাংশই ভুগছে দাঁতের পীড়ায়। অনেকের ব্যথা এত তীব্র যে, তারা কোনো খাবারই খেতে পারে না। যার পরিণতি অপুষ্টি ও ধীরগতিতে শারীরিক বৃদ্ধি। এর সাথে ডেন্টাল ক্যারিজ, অকালে দাঁত পড়ে যাওয়া ও ইনফেকশনজনিত সমস্যা তো আছেই।
কী আছে কোমল পানীয়-তে যে এতসব অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ?
৩৫৫ মিলিমিটারের এক বোতল কোক-এ আছে ৩৯ গ্রাম বা আট চা চামচ পরিমাণ চিনি। পেপসি-তে এর পরিমাণ আরো বেশি (৪১ গ্রাম)। কোমল পানীয় বানাতে ব্যবহার করা হয় কার্বনিক এসিড, ফসফরিক এসিড। ঝাঁঝালো স্বাদ তৈরিতে এক ধরনের প্রিজারভেটিভ-ও যোগ করা হয় এতে। আর উল্লিখিত উপাদানগুলোর প্রত্যেকটিই দাঁতের জন্যে খারাপ। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর হলো চিনি।
আসলে চিনি ও দাতেঁর মধ্যে বিরাজ করে অনেকটা দা-নেউলে সম্পর্ক। দাঁতে হরহামেশা পাওয়া যায় যে ব্যাকটেরিয়া তার নাম–স্ট্রেপটোকোকাস মিউট্যানস। এই ব্যাকটেরিয়া চিনি-কে এসিডে রূপান্তরিত করে। যা খেয়ে ফেলে দাঁতের এনামেল। ২০১৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাই পরামর্শ দিয়েছে–একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দিনে সর্বোচ্চ ২৫ গ্রাম চিনি খেতে পারে। অথচ, এক বোতল কোলা-তে আছে এর দেড়গুণ চিনি!
চিনিযুক্ত খাবার ঘন ঘন খেলে শুধু দাঁতক্ষয় নয়, একজন মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন টাইপ-২ ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও হৃদরোগে। সালভেদর-এর ১০ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিস ও ২৬ শতাংশ মানুষ স্থূলতাজনিত রোগে ভুগছেন।
এসব পরিসংখ্যান দেখে জনস্বার্থে সমাজবিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও তাই সোচ্চার হয়েছেন। অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক পেনি কোলেনেট বলেছেন, ‘বেশি পরিমাণে কোমল পানীয় পান করার স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি সম্পর্কে ভোক্তাদের সতর্ক করে দেয়া কোকা কোলা ও পেপসি-র আবশ্যিক নৈতিক দায়িত্ব’।
প্রিয় পাঠক, জেনেশুনে বিষ করেছি পান–এটাই কি আপনার জীবনের মূলমন্ত্র? নাকি কোমল পানীয় ছাড়া পূর্ণ হয় না আপনার উৎসব উদযাপন?
আসন্ন ঈদুল ফিতর , ঈদুল আজহা কিংবা দূর্গাপূজা উপলক্ষে কোমল পানীয়-র বিজ্ঞাপনে যতই ছেয়ে যাক শহরের মুখ ও আপনার টিভির পর্দা, নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সতর্ক হোন। কোমল পানীয় বাড়ায় না উৎসবের আনন্দ। বরং আপনার অসতর্কতা অসচেতনতার সুযোগে নীরবে জন্ম দেয় বিভিন্ন রোগের। যত দ্রুত কোমল পানীয় বর্জন করবেন ততই মঙ্গল। শুভস্য শীঘ্রম!

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com