মদিনাতে যখন নবীজী আছেন, হযরত আয়েশা বলেন যে, এমনও দিন গিয়েছে যে, পর পর তিন রাত কোনো খাবার নাই।
তো এবং যখন তিনি ক্ষমতার তুঙ্গে, রুটি এসছে। বাড়িতে জিজ্ঞেস করছেন যে, কোনো সালুন নাই? ওখানে তখনকার সালুন তো ছিল স্যুপ জাতীয় জিনিস। সুরুয়া।
তো ঘরে কিছু নাই? বলে যে, সিরকা আছে।
তো উনি সে রুটি সিরকাতে ভিজিয়ে খাচ্ছেন খুব তৃপ্তির সাথে যে, সিরকা খুব ভালো সুরুয়া ভালো স্যুপ ভালো খাবার।
এটা হচ্ছে তার ওফাতের কিছুদিন আগের ঘটনা, যখন মদিনার অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক ভালো।
আসছে সবকিছু, সব বিতরণ করে দিয়েছেন তার চেয়েও যার প্রয়োজন বেশি তার কাছে।
ক্ষমতার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় সাধারণ মানুষের প্রতি এর চেয়ে বড় সমমর্মিতা আর কী হতে পারে!
সম্মানের অধিকার। তিনি প্রত্যেকটা মানুষের সম্মানকে নিশ্চিত করেছেন তার জাতপাত নির্বিশেষে।
এবং তিনি আশরাফ-আতরাফ ভেদাভেদকে শেষ করে দিয়েছেন।
আপনি দেখেন, বেলাল ক্রীতদাস ছিল। হাবসি। যখন মক্কা মুক্ত করলেন।
আমরা মক্কা বিজয় বলি। মক্কা তো বিজয় না, এটাকে লিবারেশন অব মক্কা বলা যেতে পারে। যে মক্কাকে তিনি মুক্ত করলেন জুলুম এবং শোষণের হাত থেকে।
মক্কা মুক্ত করে যখন কা’বাতে গেলেন, কা’বার ওপরে কাকে উঠিয়েছিলেন?
উনি তো আবুবকরকে বলতে পারতেন। উনি ওমরকে বলতে পারতেন যে, যাও কা’বার ওপর উঠে আজান দাও।
না, উনি আভিজাত্যের মানে আভিজাত্যকে বিনাশ করার জন্যে কী করলেন? বেলালকে বললেন, বেলাল তুমি ওঠ। কেউ বলল, কালো মানুষ।
তিনি বললেন, কালো মানুষ তুমি, তাতে কী? ওপরে ওঠ। বেলাল বলল যে, আমি?
নবীজী বললেন, হাঁ, তুমি। ওপরে ওঠ। ওখান থেকে আজান দাও।
এবং তখন কোরাইশদের এক নেতার ছেলে, যার বাবা মারা গেছে সে-ও দূরে সমবেত হয়েছে, শুনছে। এবং শুনে সে বলে যে, আমার বাবা মারা গেছে খুব ভালো হয়েছে। সে যদি এই দৃশ্য দেখত, এই দৃশ্য দেখেই মারা যেত যে, কাবার ওপরে বেলাল উঠেছে।
অর্থাৎ মানুষকে তিনি কতটা সম্মান করতেন!
ওনার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু আবু বকরকেও বললেন না। বললেন বেলালকে, বেলাল, তুমি ওপরে ওঠ।
আমি এই আভিজাত্যের বিনাশ, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ এই ভেদাভেদের বিনাশ করতে চাই। মানুষের অধিকারকে আমি সমুন্নত রাখতে চাই যে না, মানুষ, তার পরিচয় হচ্ছে মানুষ।
এবং প্রত্যেকটা মানুষ সমান। কালোর ওপরে সাদার কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নাই। সাদার ওপরে কালোর কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নাই।