গভীর শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার সাথে অনুষ্ঠিত হলো কবিরত্ন এম এ হক এর মৃত্যু বার্ষিকী দোয়া ও স্মরণ-সভা ।
উক্ত দোয়া ও স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন আব্দুর রউফ (সাবেক প্রধান শিক্ষক ,মর্নিং স্টার একাডেমি, চরডাঙ্গা)।
অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক ছিলেন কবির আহমেদ লিনজু , সভাপতি ( নির্বাহী পরিষদ- কেন্দ্রীয় কমিটি ) বঙ্গবন্ধু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিষদ এবং সম্পাদক আর এমজি বিডি নিউজ ২৪.কম। অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনা করেন লিয়াকত মুন্সি (শিক্ষক, মর্নিং স্টার একাডেমি)।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে কবির আহমেদ লিনজু প্রথমেই গভীর শ্রদ্ধার সাথে কবিরত্নের স্মৃতিচারণ করেন।তার সাথে কাটানো মুহূর্ত, কবির কথা বলার ধরন ,একজন প্রতিভাবান কবি হয়েও কিভাবে তিনি অত্যান্ত সাধারণ জীবন-যাপন করতেন তা তার বক্তব্যে তিনি সকলের মাঝে তুলে ধরেন।
তাছাড়া তার বক্তব্যে তিনি বলেন,এই মর্নিং স্টার একাডেমি এর নামকরণ করেছিলেন কবিরত্ন এম এ হক। তাই আজ আমি এই প্রতিষ্ঠানটিকে কবিরত্ন এম এ হক এর নামে নামকরণ এর প্রস্তাব জানাচ্ছি।তখন উপস্থিত সকলেই তার সাথে সহমত প্রশন করেন এবং তার এমন প্রস্তাবের জন্য কবির আহমেদকে সাধুবাদ জানান।
এছাড়াও তিনি আগামী ১লা জানুয়ারী কবিরত্নের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনের পরিকল্পনার কথা জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, কামরুজ্জামান (প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক, অনির্বাণ একাডেমি),জেড আলম (প্রধান শিক্ষক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়)।আজমুল আজিজ( সাবেক সভাপতি, ডুসা) দেবদাস বালা (প্রভাষক মুক্তি যোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজ),মহিনুর রহমান মহিন, নাহিদ (সাধারন সম্পাদক ,ডুসা), জাহিদ হাসান বাহার (কবি পুত্র)এবং কুদরত-ই-গুল(কবি পুত্র)।
এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন,সিরাজুল ইসলাম (সাবেক প্রধান শিক্ষক),কাঞ্চন মিয়া (সাবেক মেম্বর), সার্জেন্ট মাহিদুল,কৃষি কর্মকর্তা ইউসুফ আলী, দেলোয়ার হোসেন (সদস্য,বন্ধন ফাউন্ডেশন), আবু তাহের(জা. বি) এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এলাকার যুব সমাজ ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
এক পলকে কবিরত্নের জীবনী:
এম এ হক ১৯২৯ সালের ১ জানুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার ব্যাংকেরচর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্থানীয় কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমি থেকে ১৯৪৮ সালে মাধ্যমিক এবং ১৯৫০ সালে বি এল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর শিক্ষকতা পেশায় যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন।
এম এ হক মূলত ইসলামি ও লোক সঙ্গীত এবং কবিতা লিখেছেন। এছাড়া, ছড়া, প্রবন্ধ ও গল্পও রচনা করেন। তিনি স্থানীয় ‘যশোর-সাহিত্য-সংঘ’ থেকে ‘কবিরত্ন’ উপাধি পান। তার রচিত ‘কচি মনের খোরাক’ গ্রন্থটি ১৯৭১ সালের পূর্বে পাকিস্তান শাসনামলে যশোর শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্রুত পঠন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিলো। এছাড়া ‘ছন্দ-বন্ধ-বাগধারা’ গ্রন্থে তিনি বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অসংখ্য বাগধারা সংকলন করেন এবং তা ছন্দে রুপ দেন।
“এলাকায় তিনি যুক্তিবাদী, পণ্ডিত, শিক্ষানুরাগী এবং কবি সাহেব নামে পরিচিত। তিনি একাধিক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা। জীবনে বহুবার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক এবং গুণিজন হিসেবে সংবর্ধিত হয়েছিলেন। কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে ‘যশোর-সাহিত্য-সংঘ’ তাকে ‘কবিরত্ন’ উপাধি দেয়।”
এম এ হক ছিলেন একাধারে কবি, গীতিকার, প্রাবন্ধিক, ছড়াকার এবং গল্পকার।
“তিনি লোকজীবনের অন্তরতল যেমন তার সাহিত্যের উপজীব্য করেছিলেন, তেমনি আধুনিকতাও উপলব্ধির আওতায় আনতে পেরেছিলেন। ইসলামি গান, লোকগান, আধুনিক গান ও কবিতার সফল পাশাপাশি অবস্থান তার প্রতিভার বৈচিত্র্য প্রকাশিত করেছে।”
‘যশোরের লোক কবি’ ও ‘ফরিদপুরের কবি পরিচিতি’ গ্রন্থে তার কবিতা ও জীবনী গ্রন্থিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ সম্পাদিত এবং সাবেক বাংলা উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের কবি পরিতিচিতি’ গ্রন্থে কবি হকের নাতিদীর্ঘ জীবনী গ্রন্থিত হয়।
“বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘চরিতাভিধানে’ তার জীবন ও কৃতিত্ব ভুক্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।”
সাহিত্যের ইতিহাসের কম চেনা নায়কদের ভিতরে অন্যতম কবিরত্ন এম,এ,হক।
তিনি ২০০৬ সালের ১৩ই আগস্ট পরলোক গমন করেন।