পলাশীর যুদ্ধের ট্রাজেডির পর বাঙালি মুসলমানরা ইংরেজি শিক্ষার প্রতি বিরূপ হয়ে ওঠে ; যার ফলে ক্রমশ তারা পিছিয়ে পড়ে। এই ধারা উনবিংশ শতকে-ও বহাল ছিল। তবে কতিপয় সচেতন ব্যক্তি বিষয়টি উপলব্ধি করে নিজেদের সহ পরিবারের সদস্যদের ইংরেজি শেখার ব্যাপারে উদ্যোগী হন। এমনই একজন ব্যক্তিত্ব মুন্সী ফয়েজউদ্দিন আহমদ। তিনি তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র আহমদ কে ইংরেজি শিক্ষা দানের ব্যাপারে উদ্যোগী হন।
বর্তমানে মৌলভী আহমদ-এর নাম অনেকের কাছেই হয়তো অজানা। গুণের কদর না থাকলে
সে দেশে গুণীজন জন্মগ্রহণ করেন না- এটাই যেন সঠিক কথা; তা না হলে তাঁর মতো ব্যক্তিত্বের নাম
প্রায় হারিয়ে যাবে কেন ? জানামতে মৌলভী আহমদ সাহেব গোপালগঞ্জ জেলার প্রথম ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে যাঁরা প্রথম ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সসহ মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেছেন, মৌলভী আহমদ তাঁদের অন্যতম। এখানে উল্লেখ্য, হুগলীর দেলোয়ার হোসেন সাহেব সম্ভবত উপমহাদেশের প্রথম মুসলমান গ্রাজুয়েট।
মৌলভী আহমদ ১৮৬২ সালে ফরিদপুর ( বর্তমান গোপালগঞ্জ )জেলার মুকসুদপুর থানার (বর্তমানে উপজেলা ) বাঁশবাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গ্রামের মক্তবে মৌলভী সাহেবের নিকট আরবি, ফারসি ও উর্দু শিক্ষা গ্রহণ করেন; অতঃপর তাঁর পিতা মুন্সি ফয়েজ উদ্দিন পুত্রকে ফরিদপুর জেলা স্কুলে ভর্তি করে দেন। কিন্তু আহমদকে তাঁর কর্মস্থল কলকাতায় নিয়ে যান এবং কলকাতা মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন। মুন্সি সাহেব ছিলেন ইংরেজি কর্মকর্তাদের ফারসি ভাষার প্রশিক্ষক ;সেজন্যেই তাঁকে বলা হত মুন্সি। মৌলভী আহমদ উক্ত প্রতিষ্ঠান হতে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স পরীক্ষায় ১৮৮৬ সালে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম এবং ১৮৮৭ সালে দ্বিতীয় শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন ।
তাঁর এই অসাধারণ মেধা এবং প্রবল জ্ঞানাকাংখার স্বাক্ষর দেখে প্রেসিডেন্সি কলেজের ইংরেজ অধ্যক্ষ মিঃ চার্লস এইচ. টাউনি তাঁকে “Distinguished student of Calcutta University of wide reading and culture” বলে অভিহিত করেন ।মৌলভী আহমদ এরপর কলকাতা মাদ্রাসার ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৮৮৯ সালে সহকারি স্কুল ইন্সপেক্টর পদে নিযুক্ত হন ।তৎকালীন সময়ে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস ( আই সি এস ) পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হলে সুদুর বিলাত ( লন্ডন ) যেতে হতো ।মৌলভী আহমদ ভুপালের নবাবের আনুকুল্যেসে সুযোগ-ও পেয়েছিলেন; কিন্তু তাঁর মা এমন মর্যাদাপূর্ণ বৃত্তির কথা জেনেও ছেলেকে অত দূরে যেতে দিতে রাজি হননি তারপরও প্রতিযোগিতামূলক “ প্রভিন্সিয়াল এক্সিকিউটিভ সার্ভিস অফ বেঙ্গল” পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৮৯৫ সালে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োগ লাভ করেন মৌলভী আহমদ।
আমৃত্যু এই সার্ভিসে বহাল ছিলেন তিনি ।মৌলভী আহমদ ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলায় অবস্থিত গেরদা’র সম্ভ্রান্ত খন্দকার বাড়িতে বিবাহ করেন। তাঁর শ্বশুর খন্দকার আবদুল মহি আনসারী ছিলেন সাব-রেজিস্ট্রার ।তার নানা শ্বশুর ছিলেন ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার শিরগ্রাম নিবাসী মুন্সি আবদুল জব্বার ( মৃত্যু – ১৮৮৩ সাল ); তিনি ছিলেন বড়লাট লর্ড ডালহৌসির মুন্সি ।তাঁর এক পুত্র আব্দুস সালাম ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এবং খান বাহাদুর ।
সালাম সাহেব গোলাম হোসাইন সলিম বিরচিত ’রিয়াজুস সালাতিন’ গ্রন্থখানা ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেন। জব্বার সাহেবের অন্যান্য পুত্রদের মধ্যে তিনজন ছিলেন সাব-রেজিস্ট্রার এবং একজন ছিলেন পাকিস্তানের বাহওয়ালপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ।
মুন্সি সাহেবের এক ভ্রাতুষ্পুত্র বজলুল করিম-ও ছিলেন খান বাহাদুর এবং একাধিক উচ্চ পদমর্যাদায় আসীন। অপর ভ্রাতুষ্পুত্র ফজলুল করিম ছিলেন খান সাহেব উপাধিধারী।
ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মৌলভী আহমদের স্ত্রীর নাম সরফুন্নেসা। তাঁদের তিন পুত্র এবং একমাত্র কন্যা (নূরমহল বেগম) জন্মগ্রহণ করেন ।জ্যেষ্ঠপুত্র আবু আহমদ ফয়জল মহি ( ডাকনাম খোদাদাদ ) ছিলেন মহকুমা প্রশাসক ( এস ডি ও )।তিনি ১৯৪৭ সালে খুলনা জেলার সাব-ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও সাব-ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন।
মহি সাহেবের শ্বশুর ছিলেন খুলনার পয়গ্রাম কসবা নিবাসী খান বাহাদুর সৈয়দ আজিজুল হক ;যিনি হস্তরেখার মাধ্যমে অপরাধী শনাক্তকরণের পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য খ্যাতনামা হয়েছেন ।মহি সাহেবের সন্তানদের মধ্যে জাতীয় অধ্যাপক ইতিহাসবিদ মরহুম এ এফ সালাহউদ্দিন আহমদ এবং সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা মরহুম ফখরুদ্দীন আহমদ- এর নাম সর্বাগ্রে বলতে হয়। আহমদ সাহেবের দ্বিতীয় পুত্র ফরিদপুর জেলা স্কুলের সাবেক ছাত্র ( ম্যাট্রিকুলেশন পাস – ১৯১৮ সালে ) আবু আহমদ আবদুল জলিল ( ডাক নাম এলাদাদ ) প্রথমে দিল্লী এবং পরে আমৃত্যু বোম্বে ( বর্তমান মুম্বাই ) নগরীতে অবস্থান করেন। তিনি খান বাহাদুর উপাধি প্রাপ্ত হন।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল; জিন্নাহ তাঁকে অস্ট্রেলিয়ায় পাকিস্তানের অ্যাম্বাসেডর হিসেবে মনোনীত করেন ।
কিন্তু জিন্নাহ সাহেব আকস্মিক মৃত্যুবরণ করায় আবদুল জলিলের নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম আর আলোর মুখ দেখেনি । তদুপরি ইতালি গিয়ে তিনি খাদ্যে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বোম্বে প্রত্যাবর্তন করেন এবং অল্প দিন পরই ইহলোক ত্যাগ করেন।
তবে জলিল সাহেব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে জাপানে ব্রিটিশ ভারতের ট্রেড কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। উল্লেখ্য তাঁর এক কন্যা জাবিন জলিল বোম্বে ( বর্তমান মুম্বাই ) চিত্র জগতের অভিনেত্রী ছিলেন।মৌলভী আহমদের তৃতীয় তথা সর্ব কনিষ্ঠ পুত্র আবু আহমদ আবদুল আলী ( ডাক নাম খোকা ) ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। পল্লীকবি জসীমউদ্দীন ছিলেন তাঁর ফরিদপুর জেলা স্কুলের সহপাঠী। পিতার মৃত্যুর পর এ সময় তাঁরা নিজেদের বাসভবন ‘আহমদ লজ’-এ থাকতেন। আবদুল আলী সাহেবেরসন্তানদের মধ্যে ফজলে রাব্বী ছিলেন বাংলা একাডেমি এবং জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক। আর এক পুত্র এ. এ. বজলে রাব্বী ছিলেন প্রথিতযশা ব্যাংকার। তাঁর এক পৌত্র খ্যাতনামা শিশু সাহিত্যিক সাংবাদিক প্রাবন্ধিক অনুবাদক আসজাদুল কিবরিয়া। শিক্ষাবিদ, কবি, জাতীয় অধ্যাপক মরহুম সৈয়দ আলী আহসান আলী সাহেবের শ্যালকদের মধ্যে অন্যতম।
খ্যাতনামা সাহিত্যিক, মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জায়া বেগম মুশতারী শফী ডেপুটি পরিবারের ঘনিষ্ঠজন। এ ছাড়াও ফরিদপুরের বিখ্যাত ’কবির পরিবার’ ( কবি হুমায়ুন কবিরের পরিবার )-এর সাথে তারা আত্মীয়তার সূত্রে আবদ্ধ। মাদারীপুরের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ খান বাহাদুর আব্দুর রহমান খাঁ তাঁদের আত্মীয়। শের-ই- বাংলা এ কে ফজলুল হকের পরিবারের সঙ্গেও তাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে।
মৌলভী আহমদ বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, ঘাটাইল, ফেনী ইত্যাদি স্থানে প্রশংসনীয় দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন ।ফেনীর এস ডি ও থাকা কালে তিনি ফেনী হাইস্কুলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি পড়াশোনার পেছনে সময় ব্যয় করতেন ।
প্রতি মাসে বিলাত থেকে তাঁর নিকট এক বাক্স বইপত্র আসতো। এ ছাড়া তিনি লেখালেখি করতেন। কলকাতার ইংরেজি পত্রিকা ‘মুসলিম ক্রনিকল’-এ কলাম লিখতেন ডেপুটি আহমদ।
মৌলভী আহমদ সাহেবের সহপাঠীদের মধ্যে নবাব স্যার সলিমুল্লাহ এবং স্যার আবদুর রহিম ’নাইট’ উপাধি প্রাপ্ত হন ;কিন্তু অকালপ্রয়াত হওয়ার কারণে ডেপুটি সাহেব আর সে সৌভাগ্যের অধিকারী হতে পারেননি ।
মাত্র ৫০ বছর পার হওয়ার অল্পকাল পরেই ১৯১৩ সালের ১৩ ই আগস্ট তারিখে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৌলভী আহমদ ইহলোক ত্যাগ করেন ।
তখন তিনি ছিলেন ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। মৃত্যুর সময় তাঁর চাচাতো ভাই শামসুদ্দিন তাঁর নিকটে অবস্থান করছিলেন। আহমদ সাহেবের স্ত্রী তখন সন্তানদের নিয়ে ফরিদপুরে পিত্রালয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন ।
শামসুদ্দিন সাহেব তাঁর মরদেহ নৌ- যোগে বাঁশবাড়িয়া পিতৃভিটায় আনয়ন করেন। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে অনেকটা নিভৃতে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন প্রতিভাবান প্রশাসক আহমদ সাহেব।
মৌলভী আহমদ তার কৃতিত্বপূর্ণ শিক্ষাজীবন এবং কর্মজীবনে তাঁর বয়জ্যেষ্ঠ বা সমসাময়িকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাঁদের মধ্যে অনেক গুণীজন ছিলেন; যেমন- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, খান বাহাদুর আবদুল লতিফ, স্যার প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সাংবাদিক- সাহিত্যিক জলধর সেন, মহাকবি নবীন চন্দ্র সেন ,রমেশচন্দ্র দত্ত ,নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রমূখ ।উল্লেখ্য, শেষোক্ত তিনজন ছিলেন তাঁরই মত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। তবে নাট্যকার, গীতিকার ডি. এল. রায়ের সঙ্গেই তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল সবচেয়ে বেশি। তাঁর আমন্ত্রণেমৌলভী আহমদ খুলনা সফরে যেমন গিয়েছেন, বিপরীতে ডি. এল. রায় ফরিদপুর সফর করেছেন।
এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য। তাঁর ছাত্র জীবনে একবার নড়াইলের তৎকালীন জমিদার
গোপালগঞ্জ অঞ্চলে এসেছিলেন তাঁর জমিদারি পরিদর্শনে। একপর্যায়ে তিনি মৌলভী আহমদের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের বাড়িতে বজরা নৌকাযোগে আগমন করেন এবং তাঁকে ”জ্যোতিষ্কের মত উজ্জ্বল ছেলে” বলে অভিহিত করেন। জমিদার তাঁর কোন ইচ্ছা আছে কিনা জানতে চাইলে আহমদ সবিনয়ে পার্শ্ববর্তী বালিয়াকান্দি গ্রামে যে ভিটার ওপর হাট বসে, সেটা তার পরিবারকে লিখে দিতে অনুরোধ করেন এবং জমিদার তা মঞ্জুর করেন। এখন সেটা ” হাট ভিটা” নামে পরিচিত; যেখানে তাঁর বংশধরদের অনেকে বাস করেন।
ডেপুটি সাহেব ছুটিতে এলে যাতায়াতের দুর্গমতার কারণে গ্রামের বাড়ি কম যেতেন। তবে যখন যেতেন, নিকট দুরের অনেককে সাহায্য সহযোগিতা করতেন। তিনি ছিলেন মাতৃভক্ত সন্তান। তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর পিতা পুনরায় দারপরিগ্রহ করলে যে ভাইটি জন্মগ্রহণ করেন; তাঁর নাম ছিল ইব্রাহিম। বয়সে অনেক ছোট এই ভাইটিকে আহমদ সাহেব অনেক ভালোবাসতেন। আর নিজের স্ত্রী পুত্র কন্যার প্রতি তাঁর স্নেহ প্রীতির কথা তো বলাই বাহুল্য। নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এলাকার উন্নয়ন নিয়ে ভাবতেন তিনি। ডেপুটি সাহেব এ. ডি. এম হওয়ার পর মুকসুদপুর থানা সদর পুরনো মুকসুদপুর হতে বর্তমান স্থান ( টেংরাখোলা )-এ স্থানান্তরিত হয়; এ ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল বলে শোনা যায়। তা ছাড়া তিনি মুকসুদপুর সদরে একটি উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা তাঁর নিকটজনদের কাছে ব্যক্ত করেছিলেন; তবে তাঁর অকালমৃত্যুতে সে পরিকল্পনা আর বাস্তবতার মুখ দেখেনি।
ডেপুটি সাহেব ফরিদপুর এলে তাঁর বাসভবন হয়ে উঠত গুণীজনদের মেলা। তবে প্রশাসনের ইংরেজ কর্মকর্তাদের তিনি খুব প্রয়োজন না হলে নিমন্ত্রণ করতেন না; এজন্যে তাঁরা বেশ ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি ফরিদপুর এলেই আইনজীবী ও কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি অম্বিকাচরণ মজুমদার- এর সঙ্গে দেখা করতেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতেন।
মৌলভী আহমদ ছিলেন সংস্কৃতিমনা; গুণের কদর জানতেন তিনি। ফলে তিনি গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিতেন; ভালো রেজাল্ট করলে শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিতেন।একবার ফরিদপুর জেলা স্কুল প্রাঙ্গণে এক চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন আহমদ সাহেব। এ উপলক্ষে তিনি বিশেষভাবে নিমন্ত্রণ করে এনেছিলেন শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী এবং তাঁর ভ্রাতা ( ঢাকা কলেজের সাবেক ছাত্র ) সারদারঞ্জন রায় -কে; যাঁকে বর্তমান বাংলাদেশ ভূখন্ডেরপ্রথম ক্রিকেট খেলোয়াড় হিসেবে মনে করা হয়।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো মৌলভী আহমদ এর মত এমন প্রতিভাধর ব্যক্তিত্বের তেমনভাবে প্রচারণা নেই । ফরিদপুর মিউজিয়ামে জনৈক চিত্রশিল্পীর আঁকা ডেপুটি সাহেবের একটি প্রতিকৃতি প্রদর্শিত হয়, যদিও তার নিচে তাঁর জন্ম ও মৃত্যু তারিখ কিছু লেখা নেই ।বৃহত্তর ফরিদপুর বা গোপালগঞ্জ জেলা সম্পর্কিত কোন বইপত্রে-ও মৌলভী আহমদের কোন প্রকার উল্লেখ দেখা যায় না । জাতির ঐতিহ্যের ধারক বাংলা একাডেমি প্রকাশিত “বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান “ বা এ ধরনের কোন গ্রন্থে তাঁর নাম উল্লেখ আছে বলে মনে হয় না।
তবে বর্তমান নিবন্ধকারের ব্যক্তিগত উদ্যোগে মৌলভী আহমদ সাহেবের মৃত্যু শতবর্ষ অর্থাৎ ২০১৩ সালে বেশ কিছু ব্যক্তির নিকট তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী ই-মেইলযোগে প্রেরণ করা হয়। আবার পাক্ষিক ’মুকসুদপুর সংবাদ’ পত্রিকায় সম্ভবত প্রথমবারের মতো তাঁর প্রায় অস্পষ্ট ছবি সহ ছোট আকারের একটি লেখা প্রকাশিত হয়। বলা যায় উভয় ক্ষেত্রেই বেশ উৎসাহ ব্যঞ্জক সাড়া মেলে ।
আশার কথা হলো ২০১৪ সালে ডেপুটি সাহেবের ১০১ – তম মৃত্যুবার্ষিকীতে মিলাদ মাহফিলের পাশাপাশি বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত “আহমদ স্মৃতি পাঠাগার” প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় ও জাতীয় কয়েকটি সংবাদপত্রে সংক্ষিপ্ত আকারে সংবাদটি প্রকাশ পায় ।
তবে এমন একজন প্রতিভাধর ব্যক্তিত্বের বিষয়ে সকলের আরো ব্যাপকভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন; তাহলে স্থানীয়ভাবে ’ডিপটি বাড়ি’র “ডিপটি সাব” বলে অভিহিত বাঁশবাড়িয়ার মৌলভী আহমদ সাহেবের প্রতি সম্মান কিছুটা হলেও দেখানো হবে ।
তথ্যসূত্র ঃ-
১) আবু আহমদ আবদুল আলী শতবর্ষের স্মরণপটে
সম্পাদক – আসজাদুল কিবরিয়া
প্রকাশনায়- আহমদ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন
( মৌলভী আহমদ সাহেবের চাচাতো ভাই শামসুদ্দীন সাহেবের ছেলে )
৩) “ফিরে দেখা “ – সালাহ্উদ্দীন আহমদ, অ্যাডর্ন পাবলিকেশন,ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ’২০১৫
৪) জনাব ফজলে রাব্বী ( ডেপুটি সাহেবের পৌত্র )
৫) The Calcutta Gazette, July 3,1918, Page – 411
৬) The Calcutta Gazette,( 01.06.1947 – 26.06.1947 ), Page – 629
( নিবন্ধকার শেখ শাহাদাৎ হোসেন পেশায় ব্যাংকার। রচনাকাল – ১৪ই মার্চ’২০২০; ছবি – সংগৃহীত )।