২০০৬ সালে যৌথভাবে একটি গবেষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর র্যাচেল পিফেরি এবং টেনেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ক্যাথলিন লওলার। তারা দেখেন—যারা নিয়মিত দান করেন, তাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে এবং তারা তুলনামূলক বেশি সুস্থ। কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এলিজাবেথ ডান গবেষণায় দেখেন, যখন কেউ দান করে তার রক্তচাপ হ্রাস পায় উল্লেখযোগ্য হারে। অথচ যখন সে নিজের জন্যে ব্যয় করে, রক্তচাপে কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না।
দানের পরিমাণ যা-ই হোক, তা দাতার ভালো থাকার মাত্রা বাড়াতে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আর্তের সেবায় যিনি দান করেন, তার দৃষ্টি শুধু নিজের সমস্যাগুলোর মধ্যে ঘুরপাক খায় না। আত্মকেন্দ্রিক নন বলেই তার জগতটা বড় এবং সমস্যা তুলনামূলক কম।
যুক্তরাষ্ট্রের জার্নাল অব হেলথ সাইকোলজি-র রিপোর্ট অনুসারে, দাতারা দীর্ঘায়ু হন। নিয়মিত অন্যের উপকার করতে পেরে যে ভালোলাগা সৃষ্টি হয় তা ছড়িয়ে পড়ে দেহ-মনে। রক্তে ‘হ্যাপিনেস কেমিক্যাল’ যেমন : ডোপামিন, এন্ডোরফিন, অক্সিটোসিনের প্রবাহ বাড়ে। স্বাভাবিকভাবেই দাতার মনে দুশ্চিন্তা হতাশা ভয়-আতঙ্ক খুব একটা সুবিধা করতে পারে না।
দানের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ হলো, দানের অর্থ কোথায় কীভাবে ব্যয় হচ্ছে তা জানা। এ নিয়েও দীর্ঘ গবেষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মাইকেল নরটন। তার মতে, দানের অর্থে কীভাবে মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন হচ্ছে, এ বিষয়ে দাতার সুস্পষ্ট ধারণা থাকলে দানের তৃপ্তি বহুগুণে বেড়ে যায়।
হ্যাপি মানি : দ্য সায়েন্স অব হ্যাপিয়ার স্পেন্ডিং বইয়ের লেখক মাইকেল নরটনের মতে, ‘নতুন জুতো, জামা, গাড়ি, বাড়ি কেনার আনন্দ যতই অতুলনীয় হোক তা বড্ড তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায়।’ নিজের জন্যে ব্যয় করাটা সুখের, তবে এ সুখ স্থায়ী হয় না। অন্যদিকে একই অর্থ যখন আমরা অন্যের প্রয়োজনে ব্যয় করি বা দান করি, তখন যে সুখের সৃষ্টি হয় তার স্থায়িত্ব অনেক বেশি। যত বার নিঃস্বার্থ সেই ব্যয়ের কথা আমরা স্মরণ করি—একটা ভালোলাগা কাজ করে।
তথ্যসূত্র : মেডিকেল নিউজ টুডে, ১৬ জুলাই ২০১৭
টাইম ম্যাগাজিন, ১৪ জুলাই ২০১৭
রয়টার্স, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫