প্রতিপালকের জিকিরকারীর অন্তর প্রাণবন্ত আর জিকিরহীন অন্তর হচ্ছে প্রাণহীন।
—আবু মুসা আশয়ারী (রা); বোখারী
আল্লাহর জিকিরকে ভালবাসাই আল্লাহর প্রতি ভালবাসার মানদণ্ড।
—আনাস ইবনে মালেক (রা); বায়হাকি
আল্লাহর জিকিরের চাইতে ভালো কোনো সাদাকা নেই!
—আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা); তাবারানী
আল্লাহর জিকিরকারীরা সর্বোচ্চ মর্যাদায় সমাসীন হবে।
—আবু দারদা (রা); বায়হাকি
‘মুফাররিদরা’ অন্যদের চেয়ে অগ্রগামী হবে। ‘মুফাররিদ’ হচ্ছে—যারা আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে।
—আবু হুরায়রা (রা); মুসলিম
প্রশান্ত প্রত্যয়ে যে আল্লাহর জিকির করে, তার মর্যাদা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নরতদের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে লড়াই চালিয়ে যাওয়া সৈনিকের সমান।
—আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা); মুসলিম
নিরাসক্তরা অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছে। একজন জিজ্ঞেস করলেন, নিরাসক্ত কারা? নবীজী (স) বললেন, যারা আল্লাহর জিকিরকে গভীরভাবে ভালবাসে। জিকির তাদেরকে সকল কষ্ট-ব্যথা-বেদনা থেকে মুক্তি দেয়। মহাবিচার দিবসে প্রফুল্লচিত্তে তারা আল্লাহর সাথে দেখা করবে।
—আবু হুরায়রা (রা); তিরমিজী
‘হে আল্লাহর রসুল! জিকিরের মজলিসের পুরস্কার কী?’ নবীজী (স) বললেন, ‘জিকিরের মজলিসের পুরস্কার হচ্ছে জান্নাত।’
—আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা); আহমদ
কোন ধরনের যোদ্ধারা সর্বোচ্চ পুরস্কার পাবে? নবীজী (স) বললেন, যারা আল্লাহর জিকির সবচেয়ে বেশি করে। এরপর তাকে নামাজ যাকাত হজ সাদাকা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। প্রতিবারই তিনি একই জবাব দিলেন—যারা সবচেয়ে বেশি আল্লাহর জিকির করে। তখন আবু বকর (রা) ও ওমর (রা) বললেন, জিকিরকারীরাই তো সব কল্যাণ নিয়ে গেল। নবীজী (স) যোগ করলেন, ‘একদম ঠিক’।
—মুয়াজ ইবনে জাবল (রা); আহমদ
আল্লাহর স্মরণে এবং আল্লাহর (বিরাগভাজন হওয়ার) ভয়ে যার চোখে অশ্রুধারা নামে, জাহান্নামের আগুন তাকে স্পর্শ করতে পারে না। আল্লাহর পথে সংগ্রামে উত্থিত ধুলারাশি কখনো জাহান্নামের আগুনের ধোঁয়ার সাথে মেশে না (অর্থাৎ আল্লাহর পথে সংগ্রামরত ধুলায় মলিন মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে)।
—আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম, নাসাঈ
আল্লাহর জিকির হচ্ছে মহাবিচার দিবসের শাস্তি থেকে সুরক্ষার সবচেয়ে কার্যকর বর্ম।
—আবু হুরায়রা (রা), মুয়াজ ইবনে জাবল (রা); আহমদ, সুনানে কুবরা
শয়তান মানুষের হৃদয়কে নিজের দখলে নিয়ে নিতে চায়। যখন বান্দা আল্লাহকে স্মরণ করে (আল্লাহর পছন্দনীয় কাজ করে), তখন সে পালিয়ে যায়। আবার যখন বান্দা আল্লাহর স্মরণে গাফেল হয়ে যায়, শয়তান তখন তার অন্তরের দখল নিয়ে নেয় (শয়তান তার বন্ধু হয়ে যায়)।
—আনাস ইবনে মালেক (রা); হাকেম
যখন কোনো বৈঠক বা মজলিসে বসবে, আল্লাহকে স্মরণ (জিকির) করবে। যদি তা না করো, তাহলে এটা তোমার জন্যে ক্ষতির কারণ হবে। আল্লাহ চাইলে তোমাদের শাস্তিও দিতে পারেন, আবার তিনি মাফও করে দিতে পারেন।
—আবু হুরায়রা (রা); আবু দাউদ, তিরমিজী
যখন কোনো সমাবেশে সমবেতরা আল্লাহকে স্মরণ (জিকির) করতে থাকে, তখন ফেরেশতারা তাদের ঘিরে রাখে, তারা আল্লাহর রহমতের ছায়ায় চলে আসে। তাদের মন ও আত্মা প্রশান্তিতে তৃপ্ত হয়। আল্লাহ তাঁর কাছে সমবেতদের মাঝে এই স্মরণকারীদের প্রশংসা করেন।
—আবু সাঈদ খুদরী (রা); মুসলিম
নবীজী (স) সবসময় আল্লাহকে স্মরণ করতেন।
—আয়েশা (রা); মুসলিম
সর্বোত্তম জিকির হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই)।
—জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা); তিরমিজী
আলী (রা) জানতে চাইলেন—আল্লাহর পথে এগোনোর সংক্ষিপ্ত উপায় কী, যা বান্দার জন্যে সহজ আর মহামহান আল্লাহর কাছে মর্যাদাপূর্ণ? জবাবে নবীজী (স) বললেন, হে আলী! তোমাকে তাহলে ক্রমাগত জিকির করতে হবে—কখনো নীরবে, কখনো সরবে। আলী (রা) জিজ্ঞেস করলেন, কীভাবে জিকির করব? নবীজী (স) বললেন, চোখ বন্ধ করো। আমার কথা শোনো। তিন বার বলো, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’ সূত্রটি তিন বার বলো যাতে আমি শুনতে পাই।
—আলী ইবনে আবু তালিব (রা); তাবারানী
বার বার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ জিকির করে বিশ্বাসকে পুনরুজ্জীবিত ও সুদৃঢ় করো।
—আবু হুরায়রা (রা); হাকেম
জান্নাতের গুপ্তধন হচ্ছে—‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ (আল্লাহ ছাড়া কারো না আছে কোনো শক্তি, না আছে কোনো ক্ষমতা)।
—আবু মুসা আশয়ারী (রা); বোখারী, মুসলিম
আমি তোমাদের বলছি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ জিকির চর্চা করতে। শত্রুতাড়িত একজন সৈনিক যেমন নিজ দুর্গে প্রবেশ না করা পর্যন্ত নিরাপদ নয়, তেমনি শয়তান তাড়িত একজন বান্দাও অরক্ষিত থাকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ জিকির ছাড়া।
—হারেস আল আশয়ারী (রা); তিরমিজী
দুটি বাক্য উচ্চারণ করা খুব সহজ কিন্তু নেকির দিক থেকে ওজনদার আর দয়াময়ের কাছে প্রিয়। (বাক্য দুটি হচ্ছে—) ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আযিম।’ (মহাপবিত্র আল্লাহ! সকল প্রশংসা শুধুই তাঁর; মহাপবিত্র আল্লাহ! তিনি সর্বোচ্চ সুমহান।)
—আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম
কেউ যদি প্রতিদিন একশত বার বলে, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ (মহাপবিত্র আল্লাহ! সকল প্রশংসা শুধুই তাঁর), তাহলে তার সকল গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।
—আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম
প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর যে ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ!’ (আল্লাহ মহাপবিত্র!), ৩৩ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ!’ (সকল প্রশংসা আল্লাহর!) এবং ৩৪ বার ‘আল্লাহু আকবর!’ (আল্লাহ মহান!) পাঠ করবে, সে কখনো ব্যর্থ হবে না।
—কাব ইবনে উজরাহ (রা); মুসলিম
‘সুবহানাল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর!’ (আল্লাহ মহাপবিত্র! সকল প্রশংসা আল্লাহর! আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই! আল্লাহ মহান!) বার বার বলা আমার কাছে পৃথিবীর সব সম্পদের চেয়ে প্রিয়।
—আবু হুরায়রা (রা); মুসলিম
যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে একশত বার বলবে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর’ (আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই! তিনি একক, অদ্বিতীয়। তাঁর কোনো শরিক নেই। সকল রাজত্ব তাঁর। সকল প্রশংসা তাঁর। সবকিছুর ওপর তিনিই ক্ষমতাবান।), সে ১০ জন বন্দি মুক্ত করার সওয়াব পাবে। তার নামে ১০০টি নেকি লেখা হবে। তার ১০০টি গুনাহ মাফ করা হবে। আর সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সে শয়তানের কুপ্ররোচনা থেকে সুরক্ষিত থাকবে।
—আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম
একদিন একজন প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রসুল! শরীয়তের বিধিবিধান আমার কাছে অনেক বিশাল মনে হয়। আমাকে এমন কিছু শিক্ষা দিন যা আমি দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে থাকতে পারব। নবীজী (স) বললেন, ‘খুব সহজ! তোমার জিহ্বাকে ব্যস্ত রাখো আল্লাহর জিকিরে!’
—আবদুল্লাহ ইবনে বুসর (রা); তিরমিজী
জেহাদ ও সোনাদানা দানের চেয়েও উত্তম আমল হলো জিকির।
—আবু দারদা (রা); তিরমিজী