1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫৬ পূর্বাহ্ন

জীবন অপরিমেয় নাকি?

  • সময় শুক্রবার, ১২ নভেম্বর, ২০২১
  • ৪০৭ বার দেখা হয়েছে

সেদিন এক ভদ্রলোক রীতিমতো বিজ্ঞান দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন—৪০-র মধ্যে কোটিপতি হতে না পারলে আসলে কোনো লাভ নেই। মানে বুঝলেন তো? ৪৫ বা ৫০ বছর-এ গিয়ে কোটিপতি হয়ে কিছু হবে না! অবশ্য তার যুক্তিটা বেশ মানানসই: বাঁচবোই যখন বাড়িয়ে-টারিয়ে ৬০ বছর, তখন ৫০ মানে তো একেবারে বুড়োবেলা। তখন টাকা কামালেও ভোগ করার সামর্থ্য কী আর থাকবে? ঐ বয়স তো আর রঙিন জামা গায়ে দামি গাড়িতে ঘুরবার নয়, সেটা হলো ধর্ম-কর্ম করার বয়স। এখন তার কথায় যতই যুক্তি থাক, আমার কিন্তু মোটেই পছন্দ হয় নি। কারণ আমি হলাম বেশ ‘ইয়ং ম্যান’–সবেমাত্র জীবন নিয়ে ‘সিরিয়াস’ হতে যাচ্ছি। এ অবস্থায় যদি শুনি টাকা কামানোর ‘ডেডলাইন’ আর মাত্র ২০ বছর তাহলে কেমনটা লাগে, বলুন তো? এটা তো ঐরকম হলো যে-রাত্রে শুনলাম পরদিন সকালে ফাইনাল পরীক্ষা—প্রস্তুতির জন্য হাতে আছে কেবল ১০ ঘন্টা!

যাই হোক, খুশির খবর হলো ঐ লোকটাকে পেলে বেশ ক’টা কথা শুনিয়ে দিতে পারতাম এখন। কারণ তার পুরো ব্যাখ্যাটাই দাঁড়িয়ে আছে একটা ভুল তথ্যের উপর; যে আয়ু শেষ মাত্র ৬০ বছরেই। যদি এই সীমাটাকে বাড়িয়ে দেয়া যায় অন্তত ২০/২৫ বছর তাহলে তো ৫০ বছর নিতান্তই মধ্যবয়স। আর এমনটা আমার কথা না।

বাঘা-বাঘা বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত না হলে আমাদের প্রত্যেকেরই ১১৫ থেকে ১২০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার জৈবিক যোগ্যতা রয়েছে। অর্থাৎ বার্ধক্যের প্রক্রিয়ায় কেউ মারা যায় না, বরং এর সাথে জড়িত জরা-ব্যাধিই মৃত্যুর কারণ। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, জিন-বৈশিষ্ট্য দ্বারা আয়ু নিয়ন্ত্রিত হয় খুব কমই। যদি বাবা-মা দীর্ঘায়ু হন তাহলে এই জিন আপনার আয়ুর সাথে গড়ে মাত্র তিনটি বছর যুক্ত করতে পারে। আর আপনার জীবনাচার, খাওয়া-দাওয়া ও মানসিকতা আপনার আয়ুকে ৫০ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত প্রলম্বিত করতে পারে।

অতএব বার্ধক্যের প্রক্রিয়া ‘অপরিবর্তনীয়’ নয়। বয়সের চিহ্ন, যেমন: হাড়ের ঘনত্ব, শরীরে চর্বির পরিমাণ, রক্তচাপ, পেশীশক্তি, মেটাবলিক রেট—এসব নিয়ন্ত্রণ করা যায় খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, পরিবেশ এবং মেডিটেশন দ্বারা। সেই সাথে মেজাজ বর্জন, হাসিখুশি থাকা এবং কোনো লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ করে যাওয়া—এগুলোও আপনার তারুণ্যকে ধরে রাখবে দীর্ঘদিন।

কাজেই বন্ধুগণ, লম্বা একটা সময় হাতে পাওয়া গেল। একে অর্থবহ করে তুলুন। জীবন যেন কেবল অর্থ-বিত্ত আর খ্যাতির চক্রে বন্দি হয়ে না যায়। হাঁ, এ সবেরও প্রয়োজন আছে, কিন্তু গুরুত্বটা বেশি নিজে ভালো থাকার, সেই সাথে অন্যকে ভালো রাখার। যত জীবনকে শান্ত ও মহিমান্বিত করতে পারবেন, প্রকৃতির নেপথ্য ছন্দে নিজেকে মেলাতে পারবেন দেখবেন বয়স বাড়লেও তারুণ্য আপনাকে ঘিরে রাখবে। আর ঐ বয়সে রঙিন জামা গায়ে না চড়ালেও মনের রঙে ঠিকই আলো ছড়াবেন, গুনগুন করে গাইবেন–“হে নাবিক, হে নাবিক! জীবন অপরিমেয় নাকি?”

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com