এই অলীক জগতের আসক্তি থেকে বাঁচানোর এবং পোস্ট কোভিড ট্রমা থেকে সমাজের প্রতিটি মানুষকে বিশেষভাবে তরুণ সমাজকে রক্ষার জন্যেই আমরা ২০২২ সাল কোয়ান্টাম বর্ষ ৩০-কে তারুণ্যের প্রতি সমমর্মিতার বছর হিসেবে ঘোষণা করছি।
কোয়ান্টাম করোনাকালে যেভাবে মৃতের কাফন-দাফন সৎকারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে যেভাবে প্রত্যেকের স্বাস্থ্যের যত্নের জন্যে প্রথম দিন থেকেই করণীয়গুলো ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে সেই একই আন্তরিকতা নিয়ে একই মনোযোগ নিয়ে কোয়ান্টাম তরুণ প্রজন্মকে অলীক জীবনে নয়, আলোকিত জীবনে নিয়ে আসার জন্যে বলিষ্ঠভাবে সমাজের পাশে পরিবারের পাশে তরুণের পাশে সর্বাত্মকভাবে কাজ করবে।
কারণ যে-কোনো জাতির উত্থানে তরুণরাই সবচেয়ে বলিষ্ঠ নির্ভীক ভূমিকা রাখে। আমরা যে এখন উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি এর পেছনে মূল ভূমিকা তরুণদের।
এবং করোনাকালে কোনো অর্থনৈতিক মন্দা যে আমাদের ওপরে কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারে নি তার কারণ হচ্ছে আমাদের সক্রিয় জনশক্তি।
আমাদের মানুষ তারা কর্মকে ভালবাসে কাজকে ভালবাসে। এবং করোনাকালেও নিজের কাজটা সুন্দরভাবে করার জন্যে তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। যে কারণে আমাদের অর্থনীতির ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব তো পড়েই নাই, বরং প্রবৃদ্ধি ঘটেছে।
আসলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি কতদিন সচল থাকবে, অর্জনের চাকা কতদিন সামনের দিকে অগ্রসর হবে তা সবসময় নির্ভর করে পরবর্তী প্রজন্মের তরুণদের ওপর। তাদের উদ্দীপ্ত উজ্জীবিত রাখার ওপর। তাদের কতটা আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারা যাচ্ছে তার ওপর।
স্বাভাবিকভাবেই যারা অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তির দিক থেকে যারা ডুবন্ত সূর্য তারা উদীয়মান শক্তিকে নানানভাবে বিনাশ করার চেষ্টা করবে।
এবং তারা যে-কারণে নিমজ্জমান, সে কারণটিও তাদের কাছে পরিষ্কার। অতএব তাদের অভিজ্ঞতা থেকেই তারা চেষ্টা করবে আমাদের তরুণদেরকেও সেইভাবে হতোদ্যম করে দেয়া হতবল করে দেয়া।
আসলে গত ১০০ বছর ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্র তারা অর্থনৈতিক দিক থেকে সামরিক শক্তির দিক থেকে পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে।
কিন্তু তারা আজ নিমজ্জমান। কেন? তাদের দেশে পরিবারে তরুণরা সন্তানরা শিশুরা বহুক্ষেত্রে কুকুরের চেয়েও কম গুরুত্ব পাচ্ছে।
ব্রিটেনের একটি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে যে, ৩৩ শতাংশ ব্রিটিশ তারা একমত হয়েছেন যে ইংরেজরা তাদের সন্তানের চেয়ে কুকুরদের বেশি ভালবাসে।
তারুণ্যের প্রতি সমমর্মিতা অর্থটা আমাদের কাছে পরিষ্কার হতে হবে।
‘তারুণ্যের প্রতি সমমর্মিতা’ মানে হচ্ছে একজন তরুণকে বিকশিত হতে সাহায্য করা ইন এ ন্যাচারাল ওয়ে।
প্রাকৃতিক উপায়ে যেভাবে একটা কলি ফুল হিসেবে বিকশিত হয়, তারুণ্যের মেধাকে সেইভাবে বিকশিত করতে হবে। তার মেধা এবং সামর্থ্যের সঠিক যত্ন নিতে হবে।
শুধু আহ্লাদ দেয়া এটা সমমর্মিতা নয়। সে যদি ভুল করে সেই ভুল শুধরে নিয়ে সে যেন আবার জীবনকে সুন্দর করতে মনোযোগী হতে পারে সেটার সুযোগ করে দেয়া।
সমমর্মিতা মানে তারুণ্যের যাবতীয় খেয়ালিপনা অযৌক্তিক আবদার প্রত্যাশা এটা পূরণ করা নয়। অযৌক্তিক চাওয়া পূরণ করার নাম সমমর্মিতা নয়।
সমমর্মিতা হচ্ছে তার জন্যে যা যৌক্তিক তার জন্যে যা করণীয় তার জন্যে যা পালনীয় সেটাতে তাকে সহযোগিতা করা। এবং যা তার জন্যে ক্ষতিকর সেখান থেকে দৃঢ়তার সাথে তাকে বিরত রাখার চেষ্টা করা।
সন্তানকে পরিবারের অংশ হিসেবে লালন করুন বড় করুন। মা-বাবা হিসেবে সন্তানের লেখাপড়া ও ক্যারিয়ার এই ব্যাপারে আপনার ভাবার দরকার রয়েছে। কিন্তু মনে রাখবেন সারাক্ষণ পড়ার টেবিলে বসে থাকলেই লেখাপড়া হয় না। অনেক মা-বাবা সন্তানকে ঘরের কোনো কাজ তো দূরের কথা তার নিজের কাজটুকুও করতে শেখান না।
এমনকি আপনজন আত্মীয়-স্বজন বাড়িতে এলেও তাদের সাথে ন্যূনতম মেলামেশা মেলামেশা করাটাকেও সন্তানের মূল্যবান সময় নষ্ট করা বলে মনে করেন।
সন্তান নিজের ঘরে আপনমনে লেখাপড়া করুক- তারা মনে করেন এটাই তাদের জন্যে মঙ্গলজনক।
আসলে বাস্তব সত্যটা কী? এভাবে যারা বিচ্ছিন্নভাবে বড় হয়, ঘরে একা বড় হয় পরিবারের অংশ হিসেবে বেড়ে ওঠে না, তারা আসলে অসামাজিক পরিবারবিচ্ছিন্ন স্বার্থপর হয়ে বেড়ে ওঠে।
মা-বাবা, ভাই-বোনদের প্রতিও যদি থাকে আজকাল তো অনেকের ভাই আছে বোন নাই। বোন থাকলে ভাই নাই ভাই-বোন থাকলেও তাদের প্রতি তার কোনো টান তৈরি হয় না। যেহেতু সে পরিবারের কোনো কাজে অংশ নেয় নি তাই পারিবারিক কোনো বিপদ-আপদ কোনো ঝামেলায় সে শরিক হয় নি!
যেহেতু সে পরিবারের কোনো কাজে অংশ নেয় নি। কোনো বিপদ-আপদ শরিক হয় নি। সে তখন কেবল নিজেরটুকুই ভাবে। অন্যের ব্যাপারে তার ভাবনা কখনো আসে না। এমনকি মা-বাবার ব্যাপারেও নয়।
মা-বাবাকে মনে করে তার সমস্ত প্রয়োজনের সাপ্লাইয়ার হিসেবে। যতদিন সাপ্লাই প্রয়োজন ততদিন সে তাদের কাছ থেকে গ্রহণ করে।
যখন সে নিজে পেশায় ঢোকে তখন এই সাপ্লাইয়ারদের তার আর প্রয়োজন হয় না। সাপ্লাইয়ারদের সে তখন আর কোনো যত্ন বা কেয়ার করতে পারে না।
‘তারুণ্যের প্রতি সমমর্মিতা’ মানে আমাদের কাছে খুব পরিষ্কার। তাকে বিকশিত করতে হবে পরিবারের একজন হিসেবে। এবং সেটা সমমর্মিতা দিয়ে। বুদ্ধি দিয়ে পরামর্শ দিয়ে মমতা দিয়ে।
সেটা তাকে সব ব্যাপারে স্বাস্থ্য লেখাপড়া নিজের যত্ন পরিবারের যত্ন সমাজের যত্ন কীভাবে নিতে হবে এই জ্ঞানে তাকে আলোকিত করা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
তাকে জীবন সম্পর্কে জীবন চলার পথ সম্পর্কে জীবনে করণীয় বর্জনীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেয়া মমতার সাথে।
এবং এই কাজটি যাতে আপনি সহজে করতে পারেন এজন্যে শুদ্ধাচার বইটি আপনার হাতের কাছে রাখুন ঘরে রাখুন। সন্তানের সামনে রাখুন।
এবং নিজের যত্ন কীভাবে নেবে প্রথম সেখান থেকে শুরু করুন। স্বাস্থ্য নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন কীভাবে নেবে সেখান থেকে শুরু করুন। শিক্ষার যত্ন কীভাবে নেবে সেখান থেকে সেটা তাকে দেখান। তারপরে আস্তে আস্তে ঘরের যত্ন পরিবারের অন্যদের যত্ন করণীয়-বর্জনীয়গুলো খুব মমতার সাথে তার সামনে তুলে ধরুন।
এবং তাহলেই আপনার সন্তানও আপনার সাথে পরিবারের সাথে সমাজের সাথে একাত্ম হয়ে আলোকিত মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে।
কোয়ান্টামের ৩০ তম বছরে আসুন পাশ্চাত্য যে ট্রমা কাটাতে মনে করছে ৩০ বছর লাগবে আমরা ৩০ মাসে সেই ট্রমা কাটিয়ে উঠতে চাই। আমরা আমাদের তরুণদের ভার্চুয়াল বা মেটাভার্সের অলীক জগৎ থেকে আলোকিত জীবনে নিয়ে আসতে চাই।
এবং যেহেতু বিশ্বের সবচেয়ে আশাবাদী মানুষের দেশ হচ্ছে এই বাংলাদেশ। তাই আশাবাদী ও প্রত্যয়ী মানুষদের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে আসুন আমরা বলি যে, আমরা আমাদের সন্তানদের সমমর্মিতা দিয়ে আলোকিত প্রজন্ম হিসেবে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলব।
এবং আমাদের অগ্রগতির পতাকা তাদের হাতে তুলে দেবো।
অগণিত আশাবাদী মানুষের সাথে আপনিও দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলুন যে, আসলে তরুণদের অলীক থেকে ফিরিয়ে এনে আলোকিত জীবনে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব!
বলুন- ইনশাল্লাহ সবই সম্ভব।
আপনার এই অটল বিশ্বাস অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও আপাতদৃষ্টিতে অন্যদের দৃষ্টিতে যা অসম্ভব সেই অসম্ভবকেই আমরা আমাদের জাতীয় জীবনে সম্ভব করে তুলব।
বর্ষায়নের এই শুভক্ষণে কোয়ান্টাম পরিবারের সকলের শারীরিক মানসিক পারিবারিক অর্থনৈতিক ও আত্মিক কল্যাণের জন্যে আপনাদের মা-জী আন্তরিক দোয়া জানিয়েছেন।
এবং শুধু আপনাদের নয়, সারাবিশ্বের সকল পরিবারের শান্তি সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন।
পরম করুণাময় আপনাদের মাজীর এই দোয়া কবুল করুন।
আপনারা সবাই ভালো থাকুন। নিজের এবং নিজের পরিবারের জন্যে সমাজের জন্যে দেশের জন্যে সমমর্মিতা সাফল্য সুখ ও সমৃদ্ধির মনছবি করুন।
এবং বিশ্বাস করুন, আমাদের তরুণরা অলীক জীবন থেকে আলোকিত জীবনে ফিরে আসবে।
এবং এ বছরের অটোসাজেশন ইনশাল্লাহ সব সম্ভব।
যখনই সময় পান তখনই মনে মনে বলুন- ইনশাল্লাহ সব সম্ভব।
সবাই ভালো থাকুন। বর্ষায়নের আপনার আনন্দ চারপাশের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিন।
খোদা হাফেজ। আসসালামু আলাইকুম।
সবার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।