খুলনার ডুমুরিয়াতে শিকড়, বাকল ও ডাল রোদে শুকিয়ে ব্লেন্ডার মেশিনে পিষে চুই ঝালের গুঁড়া মসলা তৈরি করছেন নবদ্বীপ ও নিউটন। নবদ্বীপ জানান, ২০১৭ সালে কৃষি অফিসের সহায়তায় চুই ঝালের বাণিজ্যিক রূপ দেওয়ার কাজ শুরু করেন তারা। ২০১৮ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানের কৃষকদের কাছে চুই ঝালের চারা বিক্রির পাশাপাশি এর চাষাবাদে উৎসাহিত করতে থাকেন। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের।
চুই ঝালের শিকড়, কাণ্ড, লতা বিক্রির মাধ্যমে তাদের ভাগ্য পাল্টে যায়। কিন্তু মুশকিল হলো, চুই লতা কাটার পর এর শিকড়, বাকল, ডাল বেশি দিন রাখা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলে এটিকে আর মসলা হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। চুইয়ের কাঁচা ডাল, শিকড় ও লতা কুরিয়ার করে পাঠাতে গেলে অনেক সময় দু-তিন দিন লেগে যায়। তখন চুই ঝাল নষ্ট হয়ে যায়। এর পরপরই তাদের মাথায় গুঁড়া চুই ঝালের ভাবনা আসে।
নবদ্বীপ জানান, চুই ঝাল চিবিয়ে খেয়ে যে স্বাদ পাওয়া যায়, গুঁড়া মসলায় তা পাওয়া যাবে না। কিন্তু গুঁড়া মসলায়ও দারুণ একটা স্বাদ রয়েছে। এখন তাদের উদ্ভাবিত এই চুইয়ের গুঁড়া নিয়ে শিগগিরই প্রথমবারের মতো থাইল্যান্ড যাবেন সাতক্ষীরার সাঈদ। বিদেশের বাজার ধরতে পারলে চুই ঝালের কদর বহুগুণে বেড়ে যাবে।
নবদ্বীপ মল্লিকের বাবা সুভাষ মল্লিক বলেন, দেড় বছর থেকে পাঁচ বছর বয়সী চুই ঝাল খেতে সুস্বাদু। চুই ঝালের গাছ দুই রকমের। একটি ঝুটো চুই, যা মাটিতে হয়; আরেকটি গাছ চুই, যা অন্য গাছের সঙ্গে লতার মতো উঠে যায়। দুই চুই ঝালের দুই রকম স্বাদ। তবে ঝুটো চুই ঝালে স্বাদ বেশি।
নবদ্বীপ মল্লিকের স্ত্রী মুক্তা মল্লিক বলেন, মূলত চুই ঝালের মসলা মুড়োঘণ্ট ও মাংসে ব্যবহার করা হয়। খিচুড়ি ও মুড়ি মাখতেও ব্যবহার করা যায়। বিভিন্ন তরকারিতেও দেওয়া যায় চুই ঝাল।
নিউটন মণ্ডল বলেন, চুই গাছের শিকড় ও ডাল বিক্রি করে অনেক সময় উপযুক্ত মূল্য পাওয়া যায় না। তাই কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে চুই ঝালের পাউডার তৈরির কাজ শুরু করি আমরা। এবার এক কেজি চুই ঝালের গুঁড়া থাইল্যন্ডে পাঠাচ্ছি। সাড়া পাওয়া গেলে সেখানে এটি বাজারজাত করা হবে।
তিনি জানান, ১২ কেজি চুইয়ের শিকড় ও ডাল শুকিয়ে এক কেজি পাউডার তৈরি হয়। ফলে এর দাম অনেক বেশি পড়ে যায়। আমরা পাউডারের মান ও প্রকারভেদে দাম নির্ধারণ করেছি। কেজিপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা দামে মানভেদে চুই ঝালের পাউডার বিক্রি করা হবে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, কৃষি বিভাগের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে নবদ্বীপ ও নিউটন সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকভাবে প্রদর্শনী আকারে মাতৃগাছ তৈরি করেন। এর পর থেকে চারাগাছ তৈরি করে বিক্রি করছেন। চলতি বছর এ পর্যন্ত তারা ৩০-৪০ লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছেন। নবদ্বীপ মল্লিক ও নিউটন মণ্ডল স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে চুই ঝালের গুঁড়া তৈরি করে বিদেশে পাঠাচ্ছেন। প্রথম চালান তারা পাঠাচ্ছেন থাইল্যান্ডে।
তিনি বলেন, চুই ঝাল যাতে সবখানে ছড়িয়ে পড়ে, সে জন্যে আমাদের একটি প্রকল্প রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট ও পিরোজপুর জেলার প্রতিটি উপজেলায় ৪-৫টি চুই গ্রাম হবে। এই গ্রামের প্রত্যেক সদস্যের বাড়িতে অন্তত দুটি চুই ঝালের গাছ লাগানো হবে।
সূত্র : সমকাল (১৪ নভেম্বর, ২০২১)