সাধারণত বাইরে কোনো বন্ধুর জন্মদিন থাকলে বন্ধুরা বাইরে থেকে কেক কিনে সেটা কেটে জন্মদিন পালন করে থাকে। আর আমরা কোয়ান্টামে যারা ছিলাম তারা এক ভিন্ন পদ্ধতিতে জন্মদিন উদযাপন করতাম। কারো জন্মদিন থাকলে আমরা ক্যাম্পাসে হালকা নাস্তা হিসেবে আমাদের যে বাদাম, খেজুর বা টোস্ট বিস্কুট দিত, সেগুলো জমিয়ে রাখতাম। এসব খাবার একসাথে মিক্সড করে একটা মণ্ড তৈরি করতাম। এটাই ছিল আমাদের জন্মদিনের কেক। এভাবেই আরো অনেক মজা করতাম।
এসএসসি-তে বিজ্ঞান নিয়ে পড়লেও কলেজে আমি মানবিক শাখাতে ভর্তি হই। কোয়ান্টাম কসমো কলেজে আর আবাসিকে রুটিন অনুসারে সবকিছু করা হয়। আমিও সবকিছু মেনে চলার চেষ্টা করতাম। রুটিন অনুসারে খাওয়াদাওয়া, কলেজে যাওয়া এবং সময়মতো যে যার সহশিক্ষাক্রমিক কাজে যাওয়া। এই রুটিন অনুসারে তখন চলতে শিখেছিলাম বলে আজ তা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
রাঙ্গামাটি জেলায় কাউখালী উপজেলায় এক গহীন গ্রামে আমার বাড়ি। যদিও এখন গ্রামে আধুনিকতার কিছু ছোঁয়া পাচ্ছে, সে-সময়ে আমাদের গ্রামে তেমন কিছুই ছিল না। গ্রামে তো দূরের কথা, তখন ঐ উপজেলায় ভালো কোনো কলেজ না থাকায় আমার মা ঐ সময়ে কম খরচে ভালো মানের কলেজ খুঁজছিলেন আমাকে পড়ানোর জন্যে। যেহেতু আমার বাবা ছিলেন না, তাই মা আমাদের সবকিছু সামলাতেন। এসময় মা কোয়ান্টামের কথা জানতে পারেন যে, সেখানে সবকিছু ফ্রি-তে পড়ানো হয়।
আরেকটি বিষয় শুনে যে-কেউ অবাক হতেই পারে যে, আমি স্কুলে থাকাকালে কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম শুনি নি। যখন আমি প্রথম কোয়ান্টামে এলাম তখন জানলাম বিশ্ববিদ্যালয় কী? আমি প্রথমে একটু অবাকই হয়েছিলাম কারণ এতদিন আমি চিন্তাই করি নি—আমার লক্ষ্য কী? বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানার পর দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছে জাগল।
কোয়ান্টাম মেথড কোর্স করার পর আমি মনছবি ঠিক করলাম। সে-সময়ই আমার মেডিটেশনের সাথে একাত্মতা সৃষ্টি হয়। কোর্সের পর থেকে আমার সময়কে মূল্যবান মনে হতো। আগে সময় নিয়ে সচেতন ছিলাম না। একপর্যায়ে এইচএসসি শেষ করলাম ভালোভাবেই। আজ আমার মনছবি দেখা সার্থক। কারণ আমি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াশোনা করছি।
ব্যক্তিগতভাবে আমি অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় ও প্রকৃতিপ্রেমী একজন মানুষ। সুযোগ পেলেই বান্দরবানের বড় বড় পাহাড়ে হেঁটে উঠতে পছন্দ করি। তাই যানবাহনের চেয়ে আমার পায়ে হেঁটে পথ চলতে বেশি ভালো লাগে। স্বল্প দূরত্বে আমি কখনোই যানবাহন ব্যবহার করি না। আমরা যানবাহন বেশি ব্যবহার করছি বলেই পরিবেশ দূষণ বেড়েই চলেছে।
আমার এখন লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে এবং তারপর সারা পৃথিবীর পরিবেশ দূষণমুক্ত করার জন্যে কাজ করা। ময়লা আবর্জনাগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করে দূষণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। মানুষ যেখানে-সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে। আমি এই ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করতে চাই।
[ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন থেকে ২০২৪ সালে প্রকাশিত ‘সব সম্ভব’ বই থেকে ]