1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
  2. [email protected] : adminbackup :
বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:০১ অপরাহ্ন

প্রতারক ও গ্রামবাসী

  • সময় বুধবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ১১০৮ বার দেখা হয়েছে

এক পাহাড়ি গ্রাম। সেই গ্রামে এক প্রতারক ঢুকল। সে ছোটখাটো প্রতারণা করছে সফলভাবে। কিন্তু ঐ যে, চোরের ১০ দিন, গৃহস্থের একদিন। একদিন প্রতারকের প্রতারণা ফাঁস হয়ে গেল। গ্রামবাসীরা ধরে ফেলল তাকে। কিন্তু সকালবেলা কাজে যাওয়ার সময় হওয়ায় তারা ঠিক করল- আপাতত জঙ্গলে গাছের সাথে তাকে বেঁধে রাখা হোক। সন্ধ্যার সময় এসে পাহাড় থেকে সমুদ্রে ফেলে দেয়া হবে, যাতে এই আপদ থেকে সবসময়ের জন্যে মুক্ত থাকা যায়।

গ্রামবাসীরা প্রতারককে বেঁধে রেখে চলে গেল। এর মধ্যে এক রাখাল মেষ চরাতে চরাতে ওখানে চলে এলো। রাখাল ছিল সহজ-সরল এক যুবক। সে প্রতারককে ঐ অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করল, তোমার এ অবস্থা কেন? প্রতারক তার কথা শুনেই বুঝল যে, এ লোক এই গ্রামের নয়। সে সাথে সাথে ফন্দি বের করে ফেলল। বলল যে, দেখ, আমার অনেক দুঃখ! আমার দুঃখের কথা তুমি শুনে কী করবে? রাখাল বলল, কী দুঃখ?

প্রতারক বলল, আসলে আমি একজন সাধক, নীরবে সাধনা করতে চাই। আল্লাহ ছাড়া আর কোনোকিছু আমি চাই না। টাকাপয়সা চাই না, ঘরসংসার করতে চাই না। কিন্তু এই গ্রামের লোকজন আমাকেই ধরেছে যে, তাদের সর্দারের মেয়েকে বিয়ে করতে হবে। সেই সাথে তার সম্পত্তির অর্ধেকও আমাকে নিতে হবে।

কারণ, এই গ্রামে মেয়েটিকে বিয়ে করার মতো কোনো পুরুষ নেই। আর বিয়েটাও করতে হবে আজ সন্ধ্যার মধ্যেই। নইলে মেয়েটি বাঁচবে না। এখন বল, আমি একজন গৃহত্যাগী সন্ন্যাসী, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো কিছু বুঝি না। আমি কী করে এসবের মধ্যে জড়াই? হায়রে আমার কপাল! শেষ পর্যন্ত আমার ওপর এই জুলুম!

শুনতে শুনতে রাখাল ছেলেটি লোভাতুর হয়ে উঠল। জিজ্ঞেস করলো, আমার সাথে কি বিয়ে দেবে? প্রতারক বলল, অবিবাহিত পুরুষ পেলেই বিয়ে দেবে। এ গ্রামে আমি ছাড়া আর কোনো অবিবাহিত পুরুষ নেই বলেই আমাকে ধরেছে।

রাখাল তখন বলল যে, তোমার ওপর এই জুলুম দেখে আমার খুব মায়া হচ্ছে। তুমি তো সন্ন্যাসী, তোমার বিয়ের দরকার নেই। কিন্তু আমার তো বিয়ের দরকার আছে। এক কাজ করি। তোমার বাঁধন আমি খুলে দিচ্ছি। তুমি আমার এ ভেড়াগুলো নিয়ে চলে যাও। আর আমাকে এখানে বেঁধে রাখো যাতে সন্ধ্যার সময় তারা এখানে এসে আমাকে পায়।

প্রতারক বুঝল যে, শিকারি টোপ গিলে ফেলেছে। তবুও মুখ শুকনো করে বলল, তোমাকে আবার এই বিপদের মধ্যে ফেলব! সর্দারের মেয়ে দেখতে কেমন জানি না, বদমেজাজী কি না তা-ও জানি না। কিন্তু যুবক তো তখন ভীষণ উত্তেজিত। বলল যে, আমি পুরুষ মানুষ, রাগী হয়েছে তাতে কী? রাগ আমি ঠিক করে ফেলব। বলে সে প্রতারকের বাঁধন খুলে দিল। প্রতারক তখন রাখালকে আচ্ছামতো বেঁধে ভেড়াগুলো নিয়ে সটকে পড়ল।

সন্ধ্যার সময় লোকজন মশাল জ্বালিয়ে ঢোল বাজাতে বাজাতে এলো-পাহাড় থেকে প্রতারককে ফেলে দেবে। কিন্তু প্রতারকের জায়গায় এখানে যে অন্য একজনকে বেঁধে রাখা হয়েছে তারা তা খেয়াল করল না। রাখাল নানাভাবে বলতে চাইল। কিন্তু কেউ শুনল না। তারা ভাবল, প্রতারক তো কত কথাই বলে!

পরদিন সকালবেলা গ্রামবাসী তো অবাক! ঐ প্রতারক ভেড়ার বিশাল পাল নিয়ে গ্রামের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে! গ্রামবাসী বলল, এই, তোমাকে না ফেলে দিয়েছিলাম সমুদ্রে! তুমি এখানে এলে কীভাবে? প্রতারক বলল, আর বলো না! তোমরা আমাকে ফেলেছিলে ঠিকই। কিন্তু এ সমুদ্রে আছে এক জ্বিনের বাদশা। সে খুব দয়ালু। ফেলে দেয়ার সাথে সাথে সে আমাকে তুলে নিল। বলল যে, আমাদের এ রাজ্যে কারো মরার নিয়ম নেই। কেউ মরবে না। তুমি যেহেতু এসেই পড়েছো, এ রাজ্যের নিয়ম অনুসারে তোমাকে এই ১০০ ভেড়া দিয়ে দেয়া হলো। তারপর আমি ভেড়া নিয়ে চলে এলাম।

গ্রামবাসী তো হতভম্ব! এরকমও হয় নাকি! জিজ্ঞেস করল, যে পড়বে তাকেই দেবে? সে বলল, হাঁ। ঐ রাজ্যের নিয়মই তাই। ব্যস, গ্রামের পুরুষরা সব বাড়ি-ঘর ক্ষেত-খামার গবাদি পশু ফেলে সন্ধ্যায় একের পর এক পাহাড় থেকে লাফিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে লাগল। গ্রাম হয়ে গেল পুরুষ শূন্য। আর ঐ প্রতারক বনে গেল গ্রামের নারীসহ সমস্ত সম্পত্তির মালিক।

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com