আমাদের কোয়ান্টাম সূত্র কিন্তু খুব সহজ। ‘প্রতারণা করা নিঃসন্দেহে অপরাধ। কিন্তু প্রতারিত হওয়া অসম্মানের’।
যখনই আপনি প্রতারিত হচ্ছেন তখনই বোঝা যাচ্ছে যে আপনি আপনার সহজাত বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করেন নাই। আপনি প্রলুব্ধ হয়েছেন এবং লোভে প্রলুব্ধ হয়ে দ্রুত বড়লোক হওয়ার জন্যে হওয়ার জন্যে দৌড় দিয়েছেন। এবং দ্রুত পাওয়ার আশায় প্রলুব্ধ হয়ে যারা দৌড় দেয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চিৎপটাং হওয়াটাই তাদের ভাগ্যে জোটে।
আসলে কতরকম ঘটনা যে বেরিয়ে এসছে ইভ্যালি নিয়ে বা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিয়ে বা ই-অরেঞ্জ নিয়ে।
সরকারের একজন অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা পেনশনের টাকা থেকে ২৫,০০০০০ লাখ টাকা তুলে ইভ্যালির সাইক্লোন অফারে ২০টি বাইক অর্ডার করেছিলেন। গত জুলাইয়ে এই অফারটি বন্ধ হয়ে যাবার পর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো বাইকগুলো বুঝে পান নি এই কর্মকর্তা।
এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তার ইনভয়েসের কাগজ পত্র দিয়ে অনুরোধ করেছেন বাইকের দরকার নেই। তাকে যেন আসল টাকাটা তুলে দেয়া হয়।
আসলে এই কর্মকর্তা ব্যবসা বোঝেন না। মায়া লাগে আহারে বেচারা! কর্মজীবনে হয়তো তিনি ফাইল চালাচালিতেই অভ্যস্ত ছিলেন। কিন্তু এখন চাকরি নাই কোনো মন্ত্রণালয়ে ইনভয়েসের কাগজ পত্র দিয়ে যে আসল টাকাটা তুলে আনা সম্ভব নয় এটা তিনি বোঝেন না।
যখন ইভ্যালির সাইক্লোন অফার চলছিল যেখানে একটি বাইকের ৪০/৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয়া হচ্ছিল কর্মকর্তার ভাবনা ছিল অফারের বাইকগুলো নিয়ে বাইরে বিক্রি করে কিছু বাড়তি আয় করবেন।
আসলে সরকারি কর্মকর্তা সবসময় মাস শেষে বেতন পেয়ে অভ্যস্ত। ব্যবসার রহস্য বোঝাটা তার হয়তো বুদ্ধির বাইরে।
কিন্তু একজন ব্যবসায়ী কীভাবে এই ভুল করতে পারেন! একজন পুরোনো ঢাকার ব্যবসায়ী তিনি বড় ছাড়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পণ্য কিনে আবার বিক্রি করতেন। এই রি-সেলিং বা পুনর্বিক্রি ব্যবসায় সর্বশেষ বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছিল দুই কোটি টাকা। যা এখন আর ফেরত পাচ্ছেন না তিনি।
তিনি পাঁচটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে পণ্য কিনতে টাকা জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে দুটির মালিক প্রতারণার মামলায় কারাগারে। একটির মালিক বিদেশে পালিয়ে গেছেন। দুটি টাকা ফেরত দিচ্ছে না।
তিনি এক সাংবাদিককে বলেন যে, আমি এখন নিঃস্ব। টাকা ফেরত না পেলে আমার পরিবারের কী হবে সেই দুশ্চিন্তায় দুই মাস ধরে রাতে ঘুমাতে পারি না।
এই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো যাদের কাছ থেকে পণ্য কেনে তাদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা পণ্য কেনেন। কিনে তারা বিক্রি বিক্রি করেন। প্রত্যেক ব্যবসায়ী জানেন যে কোন পণ্য কতটা কিনলে কত পার্সেন্টেজ পাওয়া যায়।
তো ব্যবসায়ী হওয়ার পরে একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কীভাবে বড় ছাড়ে ঐ পণ্য বিক্রি করে এই চিন্তা তার মাথায় যদি না আসে তো এই দোষ কি কপালের? এই দোষ কি ভাগ্যের? না এই দোষ হচ্ছে নিজের ব্যবসায়িক বুদ্ধিটা ব্যবহার না করার কারণে?