আসলে এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। ছেলের পরিবার ছেলের দোষ দেখবে না। তারা তাদের ছেলেকেই সমর্থন করবে, আপনাকে নয়। কারণ আমাদের পরিবারগুলোতে আদর্শিক চেতনার চেয়ে রক্তের চেতনাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
২০০৪ সালে সাভারে রাহেলা নামে এক গার্মেন্টস কর্মীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। এরপর তাকে মেরে ফেলার জন্যে গলায় ছুরিকাঘাত ও গায়ে এসিড ঢেলে নির্জন এক বাগানে রেখে পালিয়ে যায় নরপশুরা। তারা ভেবেছিল মেয়েটি মারা গেছে। কিন্তু ঐ অবস্থাতেও রাহেলা তিনদিন বেঁচেছিল। মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ যখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়, তখন জবাই করা গলা দিয়েই রাহেলা জবানবন্দি দিয়েছিল যে কারা ছিল তার ধর্ষক।
কিন্তু আজ এত বছর হয়ে গেল। এখন পর্যন্ত শাস্তি হয়েছে কোনো ধর্ষকের? না কাউকে ধরা হয়েছে? কেন?
এক তো বিচারহীনতার সংস্কৃতি!
দ্বিতীয়ত, পরিবারের সমর্থন।
এই ধর্ষককে হয়তো তার মা-ই প্রথম আশ্রয়টি দিয়েছে! লুকিয়ে রেখেছে। খাবার খাইয়েছে! কেন? কারণ চেতনার চেয়ে রক্তের সম্পর্ককেই আমরা বেশি গুরুত্ব দিই।
কিন্তু যদি চেতনা শক্তিশালী হতো, অপরাধী ছেলেকে মা নিজে শাস্তি দিতেন। মা আর তাকে ছেলে মনে করতেন না। একটা অপরাধী মনে করতেন। অন্যের ছেলে হলেই আমরা শাস্তি দিতে পারি। কিন্তু নিজের ছেলেকে আমরা শাস্তি দিতে পারি না। কারণ আমাদের আদর্শিক চেতনার অভাব।
আবার হযরত ওমরকে দেখুন, তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো এবং অভিযোগে শাস্তি ছিল ৮০ দোররা। অর্ধেক দোররা মারার পর ছেলে মারা গেল। ওমর (রা)-এর নির্দেশে কবরের ওপরে বাকি দোররা মারা হলো।
রাতের বেলা কবরে গিয়ে কেঁদেছেন তিনি ছেলের জন্যে। কিন্তু শাস্তি থেকে রেহাই দেন নি। এটা হচ্ছে আদর্শিক চেতনা। আইন শুধু অন্যের জন্যে, আমার পরিজন অন্যায় করলে আইন নেই, তা নয়।
কিন্তু বর্তমান সমাজ বাস্তবতা হচ্ছে অন্যরকম। যে সমাজে শত বছরের ছড়া হচ্ছে ‘পুত্রের কালি, গঙ্গাজলের বালি’ মানে গঙ্গার বালি যেমন ধুয়ে যায়, ছেলেদের কলঙ্কও তেমনি লেগে থাকে না, মুছে যায়। এখানে ছেলে যাই করুক, মা-বাবা ছেলের পক্ষেই থাকবে। আর বিয়ের ১৫ বছর পর আজ আর আপনার করার কিছু নেই।
অতএব যত ভুলে যেতে পারেন তত ভালো। যেহেতু আপনার সন্তান আছে। কে কী করল না করল সেটা আর দেখবেন না। সন্তানদের মানুষ করার চেষ্টা করুন। ওর মধ্যেই আপনার কল্যাণ।