দাম অন্যান্য ফলের তুলনায় কম হওয়াতে গরিবদের জন্যেও কাঁঠাল সহজলভ্য। এ-কারণে একে বলা হয় ‘গরিবের ফল!’
কথায় আছে ‘গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না!’ কথাটা কাঁঠালের ক্ষেত্রে শতভাগ প্রযোজ্য। বেশি দামে যত আগ্রহ নিয়ে আমরা আপেল-আঙুর কিনি ততটা আগ্রহ কাঁঠালের ক্ষেত্রে আমাদের অনেকেরই নেই। যে-কারণে ভরা মৌসুমে কয়েকদিন কাঁঠাল খেয়েই হাঁপিয়ে ওঠেন অনেকে।
ধারণামতে, ভরা মৌসুমে প্রায় ৭০ ভাগ কাঁঠালই নষ্ট হয়, যার অন্যতম কারণে পর্যাপ্ত কাঁঠাল না খাওয়া।
আবার কারো কারো বিচারে এটিই বিশ্বের সবচেয়ে পুষ্টিকর ফল। কাঁঠাল বলকারক এবং রোগ প্রতিষেধক। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন, মিনারেল, কার্বহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট। আরো আছে থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিঙ্ক এবং নায়াসিনসহ বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদান।
প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে খাদ্য-আঁশ (ডায়েটারি ফাইবার) থাকে ২ গ্রাম, শর্করা ২৪ গ্রাম, চর্বি ০.৩ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৪ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ৩৭ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩০৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-এ ২৯৭ আইইউ ও ভিটামিন-সি ৬.৭০ মিলিগ্রাম।
এ-ছাড়াও কাঁঠালে এমন কিছু ভিটামিন ও মিনারেল আছে যা আপেল, এপ্রিকট, কলা বা অ্যাভোকেডোর মত পুষ্টিকর ফলেও নেই।
যেমন- ভিটামিন-বি। কাঁঠালের মতো বেশি ভিটামিন-বি খুব কম ফলেই আছে।
কাঁঠালের পুষ্টি উপাদানগুলো একদিকে শরীর গড়ে, অন্যদিকে বাড়ায় দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। আর এর অনুঘটক হলো কাঁঠালে থাকা ভিটামিন-সি।
মৌসুমে যদি আপনি পর্যাপ্ত কাঁঠাল খান তাহলে বছরজুড়ে চাঙা থাকবে আপনার ইমিউন সিস্টেম। অনেক ধরণের অসুখ-বিসুখ থেকে আপনি মুক্ত থাকবেন। সারাবছর ইনশাল্লাহ ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না।
ফর্সা হওয়ার মরিয়া প্রয়াস চালাতে দেখা যায় অনেককেই। ফলে চটকদার বিজ্ঞাপনের পাল্লায় পড়ে ফেয়ারনেস ক্রিম ব্যবহার করেন নারীদের পাশাপাশি অনেক পুরুষও। এসব ক্রিমে ব্লিচ থাকে, যা নষ্ট করে ত্বকের স্বাভাবিক কমনীয়তা।
তাহলে সমাধান? সহজ সমাধান হলো পর্যাপ্ত কাঁঠাল খাওয়া। বাজারে বৈশাখ থেকে আষাঢ় পর্যন্ত কাঁঠাল পাওয়া যায়। এই তিন মাস প্রতিদিন কাঁঠাল খান। ত্বক ফর্সা হবে কোনো ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই।
কাঁচা কাঁঠাল দেশের অনেক অঞ্চলেই খুব জনপ্রিয় একটি সবজি। খেতেও বেশ সুস্বাদু।
অনেকেরই প্রিয় একটি পদ হলো এঁচোর। ছোট অবস্থায়, অর্থাৎ কোষ ও আঁটি পরিপক্ব হয়নি এমন ধরনের কাঁঠালের ত্বক বা চামড়া ও মজ্জা বাদে বাকিটা দিয়ে এঁচোর রান্না করা হয়। ভালোভাবে মসলা দিয়ে রান্না করলে খেতে মুরগির মাংসের মতোই লাগে। তাই এই খাবারটি অনেক নিরামিষভোজীর কাছে মাংসের উত্তম বিকল্প হিসেবে গ্রাহ্য।
বসন্তকাল থেকে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত কাঁচা কাঁঠালের তরকারি খাওয়া যায়। আবার কেটে ডিপ ফ্রিজে রেখে খাওয়া যায় সারাবছর।
কাঁঠালের বিচি হাই-প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ। অত্যন্ত শক্তিশালী একটি প্রোটিন এতে পাওয়া গেছে, বিশেষজ্ঞরা যাকে এইডসের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে বলে মনে করছেন।
কাঁঠালের বিচি খেতেও খুব উপাদেয়। আঁটি রোদে শুকিয়ে নিয়ে ভেজে বা পুড়িয়ে বাদামের মতো খাওয়া যায়। আবার মিক্সড ভেজিটেবল কিংবা ভর্তা করেও খাওয়া যায়।
এ-ছাড়াও, পানি ও তেল শোষণ করার ক্ষমতা থাকায় কাঁঠালের আঁটি থেকে তৈরি আটা গমের আটার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
বলবেন, কাঁঠাল খেতে তো চাই, কিন্তু গুরুপাক; হজম হতে চায় না! সমাধান কিন্তু খুব সহজ।
কাঁঠালের হজমি হচ্ছে এর বিচির রস। প্রতিদিন দুইবেলা আট-দশ কোষ করে খান। খাওয়া শেষে একটা বিচি চিবিয়ে শুধু রসটুকু খান। ব্যস, যা খেলেন সব হজম!