ফেসবুকের বদৌলতে অন্যকে দমিয়ে রাখার জন্যে ফুটানি, বাহবা পেতে চাওয়া, কখনো প্রেমের সম্পর্কের নামে ঠগবাজি-এসব থেকেই ঘটছে কখনো মেধানাশ, কখনো সম্মাননাশ, কখনো প্রাণনাশ। সব মিলিয়ে মানসিক স্বাস্থ্যের ঘটছে মারাত্মক অবনতি। জীবন থেকে চলে যাচ্ছে প্রশান্তি, কমছে আনন্দ। যেমন ধরুন-
ক) লাইক পাওয়ার জন্যে খ্যাপাটে ও উসকানিমূলক মন্তব্য বা ছবি পোস্ট করার ঘটনা কম নয়।
খ) ফেসবুক যেহেতু নিরবচ্ছিন্ন মনোযোগের বারোটা বাজায়, তাই কোনো বিষয়ে মনোনিবেশ করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যক্তির চিন্তাশক্তি ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা। এমনকি আইকিউ লেভেলও কমতে থাকে ধীরে ধীরে।
একই আশঙ্কাই ব্যক্ত করেছেন আমাদের দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল- ‘গত কয়েক বছর থেকে ছাত্রছাত্রীদের মনোযোগ দেয়ার ক্ষমতা কমে আসছে। আমার মনে হয়, এটি ফেসবুক জাতীয় সামাজিক নেটওয়ার্কে বাড়াবাড়ি আসক্তির ফল। এটি নিশ্চয়ই শুধু আমাদের দেশের সমস্যা নয়, সারা পৃথিবীর সমস্যা।
আমি একাধিক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে দেখেছি, মাদকে আসক্তি এবং ফেসবুকে আসক্তির মাঝে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই।’ (দৈনিক কালের কণ্ঠ, ২০ অক্টোবর ২০১৭)
গ) দাম্পত্য সম্পর্ক ভাঙতেও ইদানীং দারুণ (!) ভূমিকা রাখছে ফেসবুক। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি পাঁচটি ডিভোর্সের অন্তত একটির জন্যে ফেসবুক দায়ী।
ঘ) Attention Deficit Hyperactivity Disorder রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পেছনেও আছে ফেসবুকের ভূমিকা।
১. রাতে ঘুম, দিনে কাজ :
রাত ১১টার পর মোবাইল, ট্যাব, কম্পিউটার জাতীয় সকল গ্যাজেট বন্ধ রাখুন। সন্তান যদি রাত জাগতে চায় এবং আপনি বুঝতে পারেন যে মোবাইল নিয়ে সময় কাটানোই তার আসল উদ্দেশ্য, তাহলে তাকে বলুন, আমি ঘুমাবো, আর তুমি জেগে থাকবে! তা কী করে হয় বাবা/ মা? ছোট থাকতে তুমি যেন ঘুমাতে পারো সেজন্যে আমি জেগে থেকেছি। চলো, আমরা দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ি। সব কাজ কাল ভোরে উঠে করব। অর্থাৎ তাকে মমতার স্পর্শে জড়িয়ে ফেললে দেখবেন যে বায়বীয় স্পর্শ উবে যাবেই।
২. বিকল্প পথে হাঁটুন :
পেশাগত বা শিক্ষাগত কাজে যদি ব্যবহার করতেই হয় ফেসবুক তাহলে তা করুন ডেস্কটপ বা ল্যাপটপে। স্মার্টফোনে নয়।
৩. ফিচার ফোন ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দিন :
বিশেষ প্রয়োজনে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করলেও সোশাল মিডিয়ার অ্যাপগুলো ডিলিট করে দিন।
৪. ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের সাহায্য নিন :
এক বাবা অতিষ্ঠ হয়ে বলেছেন- হয় ইন্টারনেট কানেকশন থাকবে, না হয় আমি থাকব। সন্তানরা বাবাকে বলেছে, তুমি চলে যাও। বাবা বুঝলেন, এভাবে হবে না। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের সাথে কথা বলে স্পিড কমিয়ে নিলেন। সন্তানেরা ব্যবহার করতে গিয়ে পড়ল বিপাকে। দুমাসের অনিয়মিত ব্যবহারের ফলে তাদের আগ্রহ কমতে লাগল।
৫. কোয়ান্টামের সূত্র দারুণ কাজে আসবে :
কোয়ান্টাম মেথড কোর্সের শিক্ষা এ কালের সবচেয়ে বড় অভিশাপ ভার্চুয়াল ভাইরাসের এন্টিভাইরাস হিসেবে কাজ করবে এবং করছেও। গত দুই বছরে কোর্সের আলোচনায় এই প্রসঙ্গটি অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকে আমরা দেখছি অসংখ্য তরুণ-তরুণী তাদের ভুল বুঝতে পারছে। জীবনের নতুন আনন্দ তারা খুঁজে পেয়েছেন কোর্সে এসে।
তবে মাদক যেমন মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে, তেমনি ফেসবুকও নিয়ন্ত্রণ করে আমাদেরকে। তাই ফেসবুক বন্ধ করার পরে আরো সতর্কতা প্রয়োজন। প্রয়োজন দৃঢ়তা।
১. শিশুকে খেলাধুলা, দৈহিক পরিশ্রম ও ঘরের কাজে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করুন।
২. শিশুকে কখনোই উপহার হিসেবে স্মার্টফোন দেবেন না। বই কিনে দিন। লাইব্রেরিতে নিয়ে যান। যত বই পড়বে তত তার কল্পনাশক্তি বাড়বে। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ নিজে পাঠ করুন, তাকেও তার বোঝার মতো করে সেখান থেকে পড়ে শোনান বা একটু বড় যারা তাদেরকে পড়তে উদ্বুদ্ধ করুন।
৩. সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে তাকে অবশ্যই সঙ্গে নিন। পেশাগত ও বিশেষ সাংগঠনিক কার্যক্রম ছাড়া যে যে অনুষ্ঠানে শিশুরা আমিন্ত্রত নয়, সেখানে বড়রাও আমরা যাব না। শিশুকে সেবামূলক কাজে অংশ নিতে দিন। সাদাকায়নে তাকে সাথে নিয়ে আসুন। এতে তার হৃদয়ের মমতা যেমন বাড়বে, তেমনি তার মেধা বিকশিত হতে থাকবে।