মনছবিকে দুর্বল করে দিতে পারে এমন বিষয়গুলো কী কী হতে পারে? এই বিষয়গুলো থেকে বের হয়ে আসার উপায় কী?
এটা দিয়ে আপনার দরকারটা কি? এখনি খোঁজার দরকারটা কি, কী কী জিনিস আমার মনছবিকে দুর্বল করে দিতে পারে।
তাহলে তো কী হবে? ঐ জিনিসগুলোই আপনার মনের মধ্যে আসতে থাকবে।
যেরকম যারা ডক্টর তাদের সবচেয়ে বড় বিপদ কী? রোগ হলেই যেটা হয় যে মানে ওষুধের সাইড ইফেক্ট তার সবচেয়ে বেশি হয়। কারণ তিনি জানেন যে এই ঔষধের এই এই সাইড ইফেক্ট আছে।
এখন মনছবির দুর্বল দিক কী?
কী কী দুর্বলতা আসতে পারে এটা যদি জানেন তো ঐ পয়েন্টসগুলোই বার বার আপনার মাথার মধ্যে বার বার আসতে থাকবে।
একবার হলো যে এক গলফ খেলোয়াড়। গলফের একটা হোল আছে। যে হোলে বল পৌঁছানোর জন্যে মাঝখানে একটা রথ থাকে একটা লেক। কত নম্বর হোল এটা কে বলতে পারবেন?
গলফ গলফ শুনেছেন তো! এই ছোট্ট একটা বল এত বড় লাঠি দিয়ে বারি দেয়! চিন্তা করেন। এত ছোট্ট একটা বল এত লম্বা লাঠি!
এবং তাও হচ্ছে একেক হোলের জন্যে একেক রকম লাঠি। এক লাঠি দিয়ে হবে না।
মানে ফুটানি কত রকম! অপচয় কাকে বলে!
প্রত্যেকটা হোলের জন্যে এত দূরত্বের জন্যে এই রকম লাঠি অত দূরত্বের জন্যে ঐ রকম লাঠি আবার লাঠি বহন করার জন্যে একজন লাগে, স্টিকবয় আরকি। তিনি ওটা ট্রলিতে করে নিয়ে যান। উনি আবার এরকম দেখে ঐ বয়ই আবার ঐটা বের করে দেয় ওটা বের করেন উনি তাকান। উনি বের করে বয় বের করে দিচ্ছে। এটা দিয়ে আবার তিনি মারছেন আর কি। ঐ একটা বারি মারলেন আবার ঐটা দিয়ে দিলেন আরকি। ঐটা আবার আরেকটা ব্যাগে রাখা হয়।
তো এখন বড় বড় ট্রেনাররা সব ফেল। তার মানে সব হোল জিন্দাবাদ।
ঐ হোলে গেলেই তার বল গিয়ে পড়ে ঐ লেকের মধ্যে। পানিতে গিয়ে পড়ে। তো এখন ট্রেনাররা তো ফেল তারপর সাইকোলজিস্ট। সাইকোলজিস্টের কাছে যাওয়া হলো।
সাইকোলজিস্ট কয়েকদিন কয়েকবার সিটিং দিলেন। দিয়ে মূল কারণটা বের করলেন যে কারণটা কী?
যখন সে বল মারে তার ব্রেনের মধ্যে ঐ লেকের যে পানি ঐ পানিটাই ভাসে। সে ঐ পানিটাই দেখে এবং বল গিয়ে ঐ পানিতেই পড়ে।
অর্জুনের গুরুর নাম কী ছিল? দ্রোনাচার্য।
দ্রোনাচার্য আরও কার গুরু ছিলেন? একলব্য।
একলব্যকে শেখান নি তিনি, একলব্য শিখেছিলেন তাকে গুরু মেনে। দ্রোনাচার্য কিন্তু কিছুই শেখান নি তাকে।
একলব্য যখন গেলেন দ্রোনাচার্যের কাছে শিখতে, একলব্য যেহেতু নিম্নবর্ণের ছিল, তো নিম্নবর্ণের লোকদের তখনকার দিনে উচ্চবর্ণের লোকরা মানুষই মনে করত না!
“এহ তুমি কি শিখবে? এটা ক্ষত্রিয়ের কাজ!” তো দ্রোনাচার্যের শিষ্য হলেন অর্জুন।
তো অর্জুন কিন্তু একলব্যের কাছে হেরে গিয়েছিলেন।
একলব্যের কাছে যখন হেরে গেলেন, তখন দ্রোনাচার্য বিস্মিত হলেন। যে আমার শিষ্যকে হারিয়ে দিল! এ কোন গুরুর শিষ্য?
একলব্য এতদিনে সুযোগ পেলো! সে দ্রোনাচার্যকে নিয়ে গেল তার জায়গায়, তার প্রশিক্ষণাগারে।
বলে যে আমার গুরুর ছবি ভেতরে আছে, আপনি ভেতরে প্রবেশ করুন। তো দ্রোনাচার্য ভেতরে ঢুকে দেখেন তার ছবি।
যখন তার ছবি দেখছেন, তো বলে যে তোমাকে তো আমি শিখাইনি কখনো।
বলে যে না আপনাকে ‘গুরু’ মেনে, আপনার ধ্যান করে আমি শিখেছি।
দেখেন! বর্ণবাদ কত খারাপ জিনিস।
ও আচ্ছা! তুমি আমাকে গুরু মেনেছ।
বলে যে, আপনিই আমার গুরু।
বলে যে, তাহলে গুরুদক্ষিণা তো দাও নি!
বলে যে, গুরুদক্ষিণা আমি দিতে চাই এখন।
বলে যে, ঠিকাছে তুমি যখন গুরুদক্ষিণা দিতে চাও, তোমার বুড়ো আঙুলটা কেটে দাও। যাতে একলব্য কোনোদিনই আর তীর মারতে না পারে!
এবং একলব্য তা-ই করলেন।
কে বড় হলেন? একলব্য না দ্রোনাচার্য?
একলব্য। শিষ্য হিসেবে তিনি তার সবটুকু দিয়ে দিলেন।
কিন্তু গুরু হিসেবে He was a failure. তারপরেও তিনি খুব দক্ষ ছিলেন।
অর্জুনের গুরু। তো অর্জুনকে যখন এরপরে শেখাচ্ছেন – গাছের পাখি এই পাখি। ঐ যে বাজ পাখিটা আছে, এর চোখে তীর মারতে হবে।
শেখাচ্ছেন যে-তুমি কি দেখছ?
বলে যে পাখি দেখ… গাছ দেখছি, গাছের মধ্যে পাখি দেখছি।
বলে যে এখন কী দেখছ?
এখন পাখি দেখছি।
আরও গভীরে যাও, এখন কী দেখছ? মাথা দেখছি।
আরও গভীরে যাও, এখন কী দেখছ? চোখ দেখছি।
আর? আর কিছু নাই, শুধু চোখ।
এবার তীর মার। তীর মারল এবং পাখির চোখে গিয়ে তীরটা লাগল।
অর্থাৎ লক্ষ্যের আশপাশ দেখলে হবে না। আশপাশ দেখার প্রয়োজন নাই!
বাধা কী আসবে দেখার প্রয়োজন নাই, বাধা দিয়ে কী হবে? বাধা তো আসবেই।
আপনার কাজ হচ্ছে এগিয়ে যাওয়া। বাধা আবার কিসের?
আর বাধা না থাকলে ঐ কাজ করে আনন্দ কী?
বাধা নাই…কী মানে পুডিং খেতে বাধা নাই। বা নরম খাবার গিলতে বাধা নাই। কারণ ওটা চাবাতে হয় না, কিচ্ছু করতে হয় না। দাঁত থাকলেও গিলা যায়, না থাকলেও গিলা যায়। তো সেটা তো কোনো কাজ হলো না। কাজ তো হলো যেখানে বাধা আছে।
এবং বাধা আবার নরমাল বাধা হলে হবে না। শক্তিশালী বাধা হতে হবে। ঐ যে বলে না বাঘে-মহিষে লড়াই আর কি।
মহিষের সাথে লড়াই করতে হবে। বেড়ালের সাথে যদি বাঘ লড়াই করতে যায় তো বাঘের তো মানসম্মানই থাকে না।
তো যেখানে বলছিলাম, গলফ!
তো যখন ঐ সাইকোলজিস্ট…. তাকে বললেন দ্যাখ, এই যে সামনে লেক আছে, যে পানি, যে জলাধার, এটার দিকে তাকাবে না।
যখন তাকাবে তখন দৃষ্টি থাকবে ঐ যে হোল, ঐ যে গর্ত, এই জলাধার পার হয়ে। ঐ যে ঘাস, ঘাসও দেখবে না।
ঘাসের মাঝখানে ঐ যে গর্ত দেখা যাচ্ছে গর্তের সাথে আবার কিন্তু কী থাকে একটা? একটা চিহ্ন থাকে। ঐটা দেখবা।
সামনে আর আর কিচ্ছু দেখবা না। তুমি শুধু দেখ ঐ… ঐ গর্ত হোল এবং এরপরে মারো।
মারল এবং ঠিক হোলে গিয়ে পড়ল।
তো মনছবি হচ্ছে কি? আর কিচ্ছু দেখা যাবে না। শুধু মনছবি।
যদি প্রেসিডেন্ট এর চেয়ারটা মনছবি হয়, শুধু প্রেসিডেন্টের চেয়ারটা দেখবেন। এবং ফিল করবেন যে বসে আছেন আহ কি আরাম!
অনেক কাঁটা আছে ওখানে, আরাম আছে…. কিন্তু কাঁটার ওপরেও আবার কি থাকে? আরাম না থাকলে কি ওনারা বসে থাকতে পারেন?
কাঁটার ওপরেও আরাম আছে আর কি। উনারা জানেন যে কাঁটার ওপর কিভাবে বসে থাকতে হয়!
চেয়ারে কাঁটা।
চেয়ারে কিন্তু পেরেক থাকে। প্রত্যেকটা চেয়ারের সাথে পেরেক থাকে। এটা যে বসে সে টের পায় যে কত পেরেক আছে এটার মধ্যে!
কিন্তু ঐ পেরেকের খোঁচা খাওয়ারও আনন্দ থাকে! তা না হলে কেউ ঐ চেয়ারে বসত না।
তো অর্জুন কখন লক্ষ্য ভেদ করতে পারলেন? যখন পাখি না, মুখ না, মাথা না, শুধু চোখ একটা চোখ।
এই যে আমাদের বাচ্চারা কেন তীরে নিশানা ভেদ করতে পারে? তার দৃষ্টিতে ঐ বাইরের রাউন্ড থাকে না। ঐ মাঝখানের চোখটা থাকে শুধু।
তো মনছবি হচ্ছে তা-ই।
আমরা আসলে কী করতে পারি না?
আ….হলে ভালো! আচ্ছা হয় নি! বাদ থাক! কি আছে আরকি, থাক! আল্লাহর দুনিয়া অনেক বড় বলে ব্যস। আল্লাহর দুনিয়া অনেক বড়। তো আল্লাহর দুনিয়া তো বড়ই আর কি।
এটার পিছনে লেগে থাকার দরকারটা কি, যে কারণে আমরা পারি না।
কী করবেন? লেগে থাকতে হবে। মনছবি, যে আমি হয় ওখানে যাব অর্জন করব অথবা ফিনিশ। অর্জন করার জন্যে আমি প্রাণান্ত প্রয়াস চালাব। যতক্ষণ দম আছে, ততক্ষণ!
[শিক্ষার্থী অন্বেষায়ন, কোয়ান্টামম, ০৩ জানুয়ারি ২০২০ থেকে ০৬ জানুয়ারি ২০২০]