রোদ-বৃষ্টিতে বাড়ছে জ্বর

টানা পাঁচদিন জ্বর থাকায় ভৈরব পৌরসভার একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন দীপক খান। তিনদিন সেবা নেয়ার পরও কোনো উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসক তাকে ঢাকায় রেফার করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে এ তরুণের। পরে গতকাল সকালে তাকে মেডিসিন বিভাগের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

ঢামেক হাসপাতালে দীপকের সঙ্গে আছেন তার মা রানু বেগম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‌আমার ছেলের গত সপ্তাহে হঠাৎ করে মাথা ও শরীর ব্যথা শুরু হয়। কিছুক্ষণ পর শুরু হয় জ্বর। ওষুধ খাওয়ানোর পরও ভালো না হওয়ায় স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনদিন থাকার পর জ্বর না কমায় ডাক্তার ঢাকায় পাঠিয়ে দেন। এখানে টেস্ট করে বলল ডেঙ্গু হয়েছে।’ ভর্তির পর হাসপাতাল থেকে স্যালাইনসহ অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করা হলেও তাদের ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে বলে জানান রানু বেগম।

বর্ষা শুরুর পর থেকেই সারা দেশে বেড়েছে জ্বরের প্রকোপ। সঙ্গে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও কভিড-১৯-এর নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের হারও বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া গতকালের তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৩১৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তিনজনের দেহে পাওয়া গেছে কভিডের ভাইরাস। এছাড়া সারা দেশে বেড়েছে সর্দি-কাশি-জ্বর। তবে জ্বরে আক্রান্ত হলেই ডেঙ্গু আতঙ্কে রক্ত পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে ভিড় করছেন অনেকেই।

ঢামেক হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, এ হাসপাতালে প্রতিদিনই ২০০-৩০০ জন ডেঙ্গু পরীক্ষা করাচ্ছে। তবে ২০ দিন ধরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডেঙ্গু ছাড়াও জ্বর নিয়ে অনেকে পরীক্ষা করছেন। ভর্তি জরুরি না হলে ওষুধ ও নিয়মাবলি দিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। তবে ডেঙ্গু বা কভিডে আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করে আনা হচ্ছে চিকিৎসার আওতায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের চলমান আবহাওয়া এডিস মশার প্রজননের জন্য খুবই উপযোগী। বাসাবাড়ির আঙিনায় জমে থাকা পানি, পানিযুক্ত আবর্জনায় এডিস মশা ডিম দেয় ও প্রজনন সৃষ্টি হয়। আর এডিস মশা সকাল ও বিকালে বেশি কামড়ায়। অন্যান্য সময়ও কামড়াতে পারে।

এ বিষয়ে কীটতত্ত্ববিদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘‌এখন থেকে প্রতিনিয়ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকবে। বলতে পারেন জ্যামিতিক হারে বাড়বে। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে এ সংখ্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। বিশেষ করে বরগুনা, বরিশাল, পটুয়াখালী অঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা দেবে। প্রথমত পরিবেশ, দ্বিতীয়ত কারো মাধ্যমে ভাইরাস জ্বর ও তৃতীয়ত মশা থেকে ডেঙ্গু ছড়ায়। এজন্য আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি। বিশেষ করে যেসব স্থান মশার প্রজননের জন্য উপযোগী সেগুলো ধ্বংস করতে হবে। শহর বা পৌরসভা এলাকায় আইজিআর ট্যাবলেট ব্যবহার করা যেতে পারে।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *