সময়ের সেরা ফুটবলারের ছোট্ট তালিকায় আছেন দুজনই। তবে, কিংবদন্তির প্রশ্নে একজন বেশ পিছিয়েই আছেন। চোটে জর্জরিত হয়ে ব্রাজিলিয়ান পোষ্টারবয় নেইমার এখনও প্রত্যাশার ছিটেফোঁটা দিতে না পারলেও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো হার না মানা মানসিকতা দিয়ে নিজেকে কিংবদন্তির কাতারে নিয়ে গেছেন। শুধু, কিংবদন্তি-ই নয়; বর্নাঢ্য ক্যারিয়ারে অবিশ্বাস্য সব অর্জনে পর্তুগিজ মহাতারকা নিজেকে সর্বকালের সেরার কাতারে নিয়ে গেছেন।
দুজনই একসময় খেলেছেন স্প্যানিশ লিগে। বিশ্ব ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে বড় দ্বৈরথও মাতিয়েছেন তারা। চার বছর আগে স্পেন ছেড়ে প্যারিসে পাড়ি জমান নেইমার। এরপর রোনালদোও খুব বেশিদিন স্পেনে ছিলেন না। আকস্মিক স্পেন ছেড়ে তিন বছর ইতালি ঘুরে পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলার ফিরে যান আবারো ইংল্যান্ডে। যেখানে খেলে আজকের রোনালদো হয়েছিলেন সেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকেই বেছে নেন আবারো।
দেশ, ক্লাব, খেলার ধরণে এই দুইজনের মধ্যে মিল খুজে না পেলেও একটা জায়গায় দারুন মিল খুজে পাওয়া যায়। সেটা দুজনের জন্মদিনকে ঘিরেই। কেননা, আজ ৫ ফেব্রুয়ারি দু’জনেরই জন্মদিন! সময়ের অন্যতম সেরা দুই তারকা একই তারিখে এই পৃথিবীতে এসেছিলেন। বয়সের হিসেবে আজ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ৩৭তম জন্মদিন, আর নেইমার পা দিয়েছেন ৩০-এ।
১৯৮৫ সালে পর্তুগালের মাদেইরাতে জন্মগ্রহণ করেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। মা-বাবা নাম রেখেছিলেন ততকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের সঙ্গে মিল রেখে। ছোটবেলায় ছিলেন অত্যন্ত গোবেচারা, নিরীহ প্রকৃতির। শৈশবে সমবয়সী নয়, খেলতে পছন্দ করতেন বড়দের সঙ্গে। বড়দের সঙ্গে খেলার সময় অনেক বেশ লাথি খেতে হতো। তবুও হতোদ্যম হতেন না। ছোটবেলা থেকেই অনুভব করতেন ফুটবলার হতে হবে। ফুটবলার হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়েই মাত্র ১২ বছর বয়সে খেলা শুরু করেন পর্তুগালের স্পোর্টিং দ্য লিসবোয়াতে। মাদেইরাই রাস্তায় খেলা করতে রোনালদো, অনুশীলনের পর খাবারের নেশায় মগ্ন থাকলেও ঠিক মত খাবারটাও পেতেননা রোনালদো। তবে নিজের জেদকে কাজে লাগিয়ে হার না মানা মানসিকতার জন্ম দেন এই পর্তুগিজ সুপার স্টার।
২০০৩-এ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের নজরে পড়ে যোগ দিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। ইংলিশ ক্লাবটির হয়ে আলো ছড়িয়ে নজর কেরেছিলেন পুরো বিশ্বের। সেখানে ছয় বছর কাটিয়ে ২০০৯-এ গায়ে চাপালেন রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি। স্প্যানিশ ক্লাবটির হয়েও তার অর্জনের কমতি নেই। ক্লাবটিকেও জিতিয়েছেন একের পর এক শিরোপা। এরই মধ্যে পাঁচটি ব্যালন ডি’অরের শিরোপা নিজের করে নিয়েছেন, চ্যাম্পিয়নস লিগে রেকর্ডের বন্যা বইয়ে দিয়ে পাঁচবার ইউরোপের সেরা হয়েছেন। শুধু ক্লাব নয়, নিজ দেশকেও এনে দিয়েছেন সাফল্য। পর্তুগালকে এনে দিয়েছেন নিজেদের ইতিহাসের সব চেয়ে বড় শিরোপা ইউরো চ্যাম্পিয়নসশিপ। হয়েছেন পর্তুগালের সর্বোচ্চ গোলদাতা।
অন্যদিকে, ব্রাজিলের সব কিংবদন্তীদের সবকিছুর প্যাকেজ যার মধ্যে, তিনি নেইমার ডা সিলভা সান্তোস জুনিয়র। মাত্র ৯ বছর বয়সে পেলের স্মৃতি বিজড়িত ক্লাব সান্তোসে নাম লেখান। ২০১৩ সালে সান্তোসের সঙ্গে গাঁটছড়া ছিন্ন করে যোগ দেন স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনায়। স্পেনে এসে লিওনেল মেসি ও লুইস সুয়ারেসের সঙ্গে জুটি বেধে নিজেকে আলাদাভাবে চিনিয়েছেন এই ব্রাজিলিয়ান। কাতালান ক্লাবটিকে মর্যাদার ট্রেবল জেতাতে বড় অবদান রেখেছিলেন তিনি।
একসময় ব্যালন ডি’অরের সেরা তিনেও ছিলেন। কিন্তু, ২০১৭ সালে দলবদলের রেকর্ড গড়ে ফরাসি ক্লাব পিএসজিতে গিয়েই ছন্দপতন শুরু হয় ব্রাজিলিয়ান তারকার। তার উপর একের পর ইনজুরি তাকে রেখেছিলো মাঠের বাইরে। যেকারণে নিজের স্বাভাবিক খেলাটাও খেলতে পারেননি এই ব্রাজিলিয়ান পোস্টারবয়। এখন নিজের সাথেই যুদ্ধ করছেন ৩০ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। বলা হচ্ছে, নেইমারের শুরুটা যতটা ঝলকানিতে হয়েছে; বর্তমান সময়টা যেন ঠিক তার বিপরীতেই আছেন। প্যারিসে এখনও নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন ব্রাজিলিয়ান পোষ্টারবয়।
ক্লাব ফুটবলের পাশাপাশি ব্রাজিলকে এখনো বিশ্বকাপ এনে দিতে পারেননি নেইমার। বলা হয়ে থাকে ব্রাজিলের খেলোয়াড় হিসেবে কিংবদন্তি নাম পেতে হলে বিশ্বকাপ এনে দেওয়াটা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সেই কাজটা এখনো সারতে পারলেন না এই ফরোয়ার্ড। তবে দেশকে জিতিয়েছেন কনফেডারেশন কাপ, সেটাও ক্যারিয়ারের সূচনালগ্নে। বয়স এখন ৩০, এ বছরই কাতারে মাঠে গড়াবে বিশ্বকাপ। নেইমার কি পারবে ব্রাজিলের ২০ বছরের অপেক্ষা ফুরাতে?