২১ মার্চ, ২০১৩, বিকেল সাড়ে ৪টায় কাকরাইলস্থ কোয়ান্টাম মেডিটেশন হলে শিক্ষার্থী মাসিক কার্যক্রমের ২৫ তম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এবারের বিষয় ছিলো ‘শিক্ষার্থী জীবনে টার্গেট থাকার গুরুত্ব’। মডারেটর শাফিয়া নাজরীন তার স্বাগত বক্তব্যে এ প্রসঙ্গে উদাহরণ দেন মনীষী লিও টলস্তয়ের সেই বিখ্যাত গল্পের যে, ‘আমার কতটুকু জমি দরকার?’ আসলে টার্গেট জীবনের যাত্রাপথে এ প্রশ্নগুলোর উত্তর বলে দেয় যে, ‘কোথায়, কতটুকু যেতে হবে আমাকে’। কারণ, আমার লক্ষ্য বা গন্তব্য কোথায়-এটা না জানলে জীবন হবে মরীচিকার পেছনে অযথাই ঘুরে মরা। এরপর মূল আলোচনা পর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপিকা মুরশীদা খানম শিক্ষার্থী জীবনে টার্গেট থাকার গুরুত্বের ওপর চমৎকার আলোচনা উপস্থাপন করেন। তার আলোচনার সারসংক্ষেপ- টার্গেট থাকার গুরুত্ব এখানেই যে টার্গেট থাকলে কী করতে হবে কোনদিকে যেতে হবে এ ব্যাপারে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়তে হয় না, টার্গেট অনুযায়ী প্রস্ত্ততি নেয়া যায়। স্রষ্টার কাছে কী চাইবেন, সেটাও পরিষ্কার থাকে। মনছবি হয়ে ওঠে গাইডেড মিসাইল-লক্ষ্যে সে পৌঁছাবেই। আমাদের জীবনে টার্গেট সংক্রান্ত তিনটি দৃশ্যপট হতে পারে এরকম। এক, টার্গেট ঠিক ছিলো না কখনোই। একেক সময় একেক স্বপ্ন দেখেছে। তার জন্যে ‘বেটার লেট দেন নেভার’-হতাশ না হয়ে এখনই টার্গেট ঠিক করা উচিত। দুই, টার্গেট আছে, কিন্তু পূর্ণ হয় নি। হতে চেয়েছিলেন ডাক্তার, কিন্তু চান্স পেলেন কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। এক্ষেত্রে আবার চেষ্টা করা যেতে পারে। কিংবা যেখানে আছে সেখানেই শীর্ষে ওঠার টার্গেট নেয়া যেতে পারে। তিন, টার্গেট আছে এবং পূরণও হয়েছে। তার তো সোনায় সোহাগা। তার এগিয়ে যাওয়া হয় আনন্দিতচিত্তে, মেধাকে সেবায় রূপান্তর করা হয় সহজ। টার্গেট যেন আংশিক বা সংকীর্ণ না হয়। এটা যেন শুধু টাকা-পয়সা বা শুধু ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বা মাল্টিনেশনালে চাকরির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। লক্ষ্য হবে অনেক বড়, মহৎ। বৃহত্তর স্বার্থ, স্রষ্টা অর্পিত দায়িত্বের চেতনা বর্জিত টার্গেট জীবনকে কখনোই পরিপূর্ণ করতে পারে না। সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে টার্গেট ঠিক করা প্রয়োজন। দৃষ্টিভঙ্গি হতে হবে-আমি আমার মেধাকে শতধারায় বিকশিত করবো, মেধাকে সেবায় রূপান্তর করবো। লক্ষ্য অর্জন, অবিচল থাকা, এমনকি লক্ষ্য নির্ধারণের জন্যে চাই নিয়মিত মেডিটেশন। সফল যারা, দেখা যায় তারা কোনো না কোনোভাবে আত্মনিমগ্ন হয়েছেন। আর সৎসঙ্ঘে একাত্মতা এনে দেবে স্রষ্টার অফুরন্ত রহমত। সফল জীবন গড়তে, বড় কিছু করতে সৎসঙ্ঘের কোনো বিকল্প নেই। প্রোগ্রামের দ্বিতীয় ভাগে ছিলো কিংবদন্তি স্যার রজার ব্যানিস্টারের একটি অডিও সাক্ষাতকার। ১০ মিনিট বন্ধ চোখে সবাই দেখলেন তিন মিনিট ৫৯ দশমিক চার সেকেন্ডে ফিনিশিং লাইনে তার নিজেকে সঁপে দেয়ার সেই ইতিহাস। স্যার ব্যানিস্টার ফ্ল্যাশব্যাকে দেখালেন এই ইতিহাস কীভাবে সৃষ্টি হলো। তারপর অনুষ্ঠানের মডারেটর এই কিংবদন্তির সাফল্যের নেপথ্যে পাঁচটি রহস্য উন্মোচন করেন- সাফল্য রহস্য-১ : তিনি জানতেন দৌড়েই সাফল্যকে ধরতে পারবেন। হেলসিঙ্কিতে ব্যর্থতা অন্তরে গেঁথেছিলো সাফল্যের বীজ হয়ে। লক্ষ্যে অবিচল থেকে মাত্র দু বছরের মাথায় ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে নাম লেখালেন। সাফল্য রহস্য-২ : ছোট্ট বয়স থেকে পাহাড় বেয়ে স্কুলে যেতে হতো। সেই থেকে শুরু। নিয়মিত ছোট ছোট পদক্ষেপই তাকে নিয়ে গেছে অলিম্পিকের মাঠে। এরপর অক্সফোর্ডে ২৫ বছর বয়সে অর্জন করলেন সেই গৌরব। সাফল্য রহস্য-৩ : ব্যানিস্টার আর তার দুই বন্ধু ক্রিস ব্রেশার ও ক্রিস চ্যাটাওয়ে-এই ত্রিরত্ন পারস্পরিক সহযোগিতা আর সুস্থ প্রতিযোগিতার উপযুক্ত মূল্য পেয়েছিলেন সময়ের কাছ থেকে। ব্যানিস্টারের সাফল্যের অনুঘটক হিসেবে দুই বন্ধুর নাম আজো সময়ের কালিতে লেখা রয়েছে। সাফল্য রহস্য-৪ : ব্যানিস্টার ১৯৫২ সালে হেলসিঙ্কের ব্যর্থতা থেকে শিখলেন পরিস্থিতি যেকোনো সময়ে বদলে যেতে পারে। এজন্যে এডাপটিবল হতে শিখলেন। কোচ মন্ত্র দিলেন- মাঠে নামার আগেই নিজে নিজেকে হারাতে হয় না। নেতিবাচকতা ফেলে প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে মাত্র ২০ মিনিট আগে সিদ্ধান্ত নিয়ে দৌড়ালেন। সাফল্য রহস্য-৫ : তার লক্ষ্যই ছিলো সময়ের মধ্যে সেই ফিতায় নিজেকে সঁপে দেয়া। পূর্ণ সমর্পণ। সে ফিতাই যেন তখন তার দিকে এগিয়ে এলো। এরপর আমার প্রিয় মেডিটেশনে পড়াশুনার চমৎকার আনন্দময় জগতে বিচরণ শেষে পরবর্তী প্রোগ্রামের ঘোষণা, আমন্ত্রণ এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে সন্ধ্যা ৬টায় প্রোগ্রাম শেষ হয়। (পরবর্তী প্রোগ্রামের বিষয়- শিক্ষার্থীর কথা। অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৮ এপ্রিল, ২০১৩, বিকেল ৫টা-মাগরিব পর্যন্ত।)