আমরা অনেক ভাইবোন। বড় বোন শিশুকালে ছোট ভাইবোনদের কাঁথাকাপড় কেচে দিতেন।
কিন্তু এখন বুদ্ধি হওয়ার পর ছোট ভাইবোনকে সবসময় ঐ খোঁটা শুনতে হয়। মা-বাবা বেঁচে নাই। বড় ভাইবোন সর্বদা বলে, আমাদের ঋণ শোধ করতে পারবে না কেউ। আসলে এটা ঋণ কিনা এবং সেটা কীভাবে শোধ করব?
উত্তর : আসলে তো এটা ঋণ। আপনার বড় ভাইবোনরা যদি আপনাদের সেইভাবে যত্ন না নিতেন তাহলে আজকে এখানে এসে আমাকে চিঠি লিখতে পারতেন কি পারতেন না এটা আল্লাহ ভালো জানেন।
আসলে ছোটবেলায় আমরা যে সাপোর্টটা পাই–সেটা মা হতে পারে, বাবা হতে পারে, ভাই হতে, বোন হতে পারে, যে-কোনো অভিভাবক হতে পারে। একজন পালকও হতে পারে, অনাত্মীয়ও হতে পারে।
তো তার যে সেবা আপনি গ্রহণ করেছেন সেটা তো ঋণ। তিনি খোঁটা দিচ্ছেন, তিনি ভুল করছেন। খোঁটা দেয়া উচিত না। কারো কোনো উপকার করে কখনো খোঁটা দেয়া উচিত না।
এতে হয় যে তিনি যে কাজটা করলেন, সেই কাজের বরকতটা থেকে তিনি বঞ্চিত থাকলেন।
কারণ কারো উপকার করে খোঁটা দিলে উপকারের আর কোনো বরকত থাকে না। আল্লাহর কাছে এটার মূল্য থাকে না।
সেটা তো আল্লাহর কাছের ব্যাপার।
উনি যতই খোঁটা দেন, যা কিছু করেন, আপনার কাজ হচ্ছে অম্লান বদনে… খুব অম্লান বদনে বলবেন যে, আপা আপনার ঋণ আমি কীভাবে শোধ করব!
আপনার ঋণ তো শোধ করার নয়। আপনি যতকিছুই বলেন, আপনার ঋণ তো শোধ করার নয়।
তার যতটুকু পারবেন উপকার করবেন, যদি আপনার উপকার তার লাগে।
তিনি যদি কখনো অসুস্থ হয়ে পড়েন আপনি সেবা-যত্ন করে আপনার দিক থেকে চেষ্টা করবেন তাকে আপনার ঋণের কিছু অংশ শোধ করার।
আসলে এই ঋণ কখনো শোধ হয় না। মায়ের ঋণ কে শোধ করতে পারবে! বাবার ঋণ কে শোধ করতে পারবে!
শোধ করতে পারবে না, শোধ হয় না, হবে না।
কিন্তু আমরা কী করতে পারি?
কৃতজ্ঞ থাকতে পারি। আল্লাহতায়ালার কাছে কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে যেন আমরা হাজির হই।
খোঁটা দিয়েছেন এটা ওনার দোষ। উনি ভুল করলেন, ওনার ভুলটাকে আপনি নিজের ভুলের জাস্টিফিকেশন হিসেবে প্লেস করতে পারেন না। যে উনি খোঁটা দিচ্ছেন আমিও বিরক্ত হবো।
আপনি বিরক্ত হবেন না, কখনো হবেন না।
আপনি বরং তার জন্যে দোয়া করবেন–যে আল্লাহ, সে তো অনেক উপকার করেছে। তুমি তাকে এ তৌফিক দাও তুমি তার এই উপকারের যে পুরস্কার, এই পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করো না খোঁটা দেয়ার কারণে। আমি কিছুই মনে করি নাই খোঁটা দেয়াতে।
আল্লাহর কাছে আপনার মর্যাদা আরো বেড়ে যাবে তখন।
সবসময় মনে রাখবেন, কেউ যখন খোঁটা দেয় এটা আপনার জন্যে একটা পরীক্ষা।
আপনি প্রোঅ্যাকটিভ থাকেন, আপনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গেলেন।
আপনি তার জন্যে দোয়া করেন আল্লাহর কাছে, আপনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গেলেন। আপনার সম্মান বেড়ে যাবে।
আর আমাদের শিক্ষাটাই তো তা-ই। নবী-রসুলরা এই শিক্ষাই দিয়েছেন যে কখনো রিঅ্যাক্ট করবে না।
[সজ্ঞা জালালি, ১৭ জুলাই, ২০১৯]