আমাদের দেশের শুধু নয় সারা বিশ্বের যে মা-রা জন্মের প্রথম ঘণ্টায়ই শিশুকে বুকের দুধ দিয়েছেন এবং ছ’মাস বুকের দুধ ছাড়া আর কিছু খাওয়ান নি, কোনো ফর্মুলাফুডের দিকে যান নি, তাদের অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি যারা চার সন্তানের মা এবং বাবা তাদেরও বিশেষভাবে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
আমরা ৬০ বছর ধরে শুনে এসছি একটা কথা- দুই সন্তানের বেশি নয়, একটা হলে ভালো হয়।
অবশ্য গত ১০ বছর ধরে আমাদের দেশে ‘একটি হলে ভালো হয়’ পরিবর্তে বলা হচ্ছে ‘ছেলে হোক মেয়ে হোক দুই সন্তানই যথেষ্ট’।
এই যে ‘একটি হলে ভালো হয়’ এখান থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পেরেছি এই গজব থেকে যে আমরা বেরিয়ে আসতে পেরেছি এইজন্যে আমরা আবারো কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
আসলে আমরা কিন্তু ৩০ বছর ধরে বলে আসছি- ‘চারের কম নয়, বেশি হলে ভালো হয়’।
বাস্তবতা কী বলে?
আমাদের দেশে যারা এক সন্তান নীতি চালু করার চেষ্টা করেছিল এবং এইজন্যে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছিল তাদের কী অবস্থা? তাদের নেতাদের কী অবস্থা?
আমরা যদি তা দেখি তো দেখব যে, এ ক্ষেত্রেও তারা আমাদেরকে যা বলছে তারা কিন্তু তা অনুসরণ করে নি।
বরং আমরা যা বলেছি ৩০ বছর ধরে তা-ই তারা অনুসরণ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন- দুই ছেলে দুই মেয়ে, চার সন্তান।
এশিয়া ও আফ্রিকায় জনসংখ্যা কমানোর জন্যে যার শাসনামলে সবচেয়ে জোরালো কর্মসূচি চালু হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের সেই প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার তার চার সন্তান।
ইংল্যান্ডের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন স্পষ্ট করে জানান নি যে তার কয়টা সন্তান! তবে এখন পর্যন্ত ছয় সন্তানের খোঁজ পাওয়া গেছে।
তার পূর্বসূরি দুই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এবং ডেভিড ক্যামেরন প্রত্যেকের চার সন্তান।
ফ্রান্সের বর্তমান প্রেসিডেন্টের আগে প্রেসিডেন্ট ছিলেন François Hollande। তার আগে ছিলেন Nicolas Sarkozy।
François Hollande এবং Nicolas Sarkozy দুজনেরই চারটি করে সন্তান।
তাদের বেলায় চারটা আর আমাদের বেলায় একটা। কী সুন্দর নিয়ম!
আর সবচেয়ে মজা হচ্ছে ফ্রান্সের বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিয়ে।
Emmanuel Macron গেটস ফাউন্ডেশনের যারা তৃতীয় বিশ্বের জনসংখ্যা কমানোর ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছেন সেই গেটস ফাউন্ডেশন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এক সভায় ইমানুয়েল ম্যাক্রো বক্তব্য দিয়েছিলেন যে, ‘প্লিজ এমন একজন শিক্ষিতা মহিলাকে উপস্থাপন করুন যিনি চাইবেন সাত আট নয় সন্তান’।
মজার ব্যাপার হচ্ছে এই বক্তব্যের পরপরই ইউরোপিয়ান কমিশনের যিনি প্রেসিডেন্ট মনোনীত হন তিনি জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন।
মহিলা প্রতিরক্ষামন্ত্রী। বোঝাই যায় যে ডাকসাইটে মহিলা। নাম তার উরসুলা ভন ডার লিয়েন। তিনি নিজে চিকিৎসক এবং মেডিকেলে পড়াতেন। জনস্বাস্থ্যে তার উচ্চতর ডিগ্রি আছে। তার স্বামী স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। উরসুলা লিয়েনের সংখ্যা মাত্র সাত জন।
সাত সন্তানের মা হয়ে যদি উনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হতে পারেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন তাহলে কী বুঝতে হবে?
সন্তান আপনি নেবেন কী নেবেন না, কয়টা নেবেন এটা আপনার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু সন্তান আপনার সাফল্যের পথে অর্জনের পথে কখনো অন্তরায় নয়।
বিল গেটস- যিনি জনসংখ্যা কমানোর এত উদ্যোগী পুরুষ তার কয় সন্তান? তিন সন্তান।
ওয়ারেন বাফেট কয় সন্তান? তিন সন্তান।
বেজোস কয় সন্তান? চার সন্তান।
আসলে আমরা ৩০ বছর ধরে বলছি ‘চারের কম নয় বেশি হলে ভালো হয়’।
আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্যে উদ্যোগী হতে হবে। কারণ আমাদের জনসংখ্যা আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে এই কর্মক্ষম তরুণ জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বড় শক্তি।
কিন্তু গত অর্ধ শতাব্দির যে প্রচারণা জনসংখ্যা হ্রাসের তাতে দেখা যাচ্ছে যে আমাদের দেশেও মধ্যবিত্ত উচ্চ মধ্যবিত্তের জনসংখ্যা যে হারে বাড়া উচিৎ ছিল সে হারে বাড়ছে না।
অতএব মধ্যবিত্তকে উদ্যোগী হতে হবে। নিম্নবিত্তের সংখ্যা কিন্তু মোটামুটি ঠিকই আছে। কিন্তু মধ্যবিত্তের সংখ্যা বাড়া উচিৎ।
অর্থাৎ এখন যেহেতু আমরা অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে এগুচ্ছি তরুণ জনশক্তির যোগান দেয়ার জন্যে আমাদের জনসংখ্যার হার বৃদ্ধির জন্যে আরো কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার সময় এখন এসছে।