আগে আমার রান্না নিয়ে আমার স্বামী কোনো মন্তব্য করতেন না। গত দুমাস থেকে রান্না নিয়ে মন্তব্য করেন। রাগ করেন যে, রান্না ভালো হয় নি। মাঝে মাঝে সকালে নাশতা না করেই চলে যান।
এতে আমি ভীষণ কষ্ট পাই, তার প্রতি আমার মনে প্রচুর ক্ষোভ জমে। কারণ চাকরি, রান্না, তিন বছরের বাচ্চা দেখাশোনা—একা করা কষ্ট হয়ে যায়। তারপর এমন কথা শুনলে ভীষণ কষ্ট পাই। এখানে আমার কী করণীয়?
রান্নার ব্যাপারে স্বামীকে অংশীদার করে নিন। তাকে বলুন, আমার রান্না ভালো হয় না এটা যখন তুমি ধরতে পেরেছ, তখন রেসিপিও আমার চেয়ে তুমি ভালো জানো। অতএব চলো একসাথে রান্না করি।
প্রত্যেকদিন সকালে উঠেই তাকে রান্নাঘরে ডেকে নেবেন। খুব বিনয়ের সাথে বলবেন যে, তুমি যদি সহযোগিতা না করো, আমি ভালো রান্না শিখব কোত্থেকে।
আর শরীয়ার দৃষ্টিতে আপনাকে রান্না করে খাওয়ানো অথবা রান্নার লোক রেখে খাওয়ানোর দায়িত্ব হচ্ছে আপনার স্বামীর। স্ত্রী যদি শরীয়ার দৃষ্টিতে দেখেন, তাহলে স্বামী কিন্তু বিপদে পড়ে যাবেন।
অতএব স্ত্রী যা রান্না করেন, স্বামীর বলা উচিত শোকর আলহামদুলিল্লাহ! স্ত্রীর রান্নায় ভালো ছাড়া কখনো কোনো মন্দ কথা বলবেন না। কখনো না। রান্না ভালো বা খারাপ এই মন্তব্য থেকে একজন স্বামী যত দূরে থাকেন তত ভালো।
আসলে এ ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী হওয়া উচিত তা ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের একটি ঘটনা থেকে বুঝতে পারি। তিনি তার একটি বইতে লিখেছেন যখন আমি ছোট ছিলাম, আমার মা আমাদের জন্যে খাবার রান্না করতেন।
এক রাতের ঘটনা। সারাদিন খাটুনির পর মা রান্না করলেন। আব্বার সামনে রাখলেন এক প্লেট সবজি আর অনেকখানি পুড়ে যাওয়া রুটি।
রুটি পুড়ে গেছে সেটা কেউ খেয়াল করেছে কি না তা দেখার জন্যে আমি অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু আব্বা চুপচাপ রুটি খেতে থাকলেন। আর আমার কাছে জানতে চাইলেন স্কুলে সারাদিন কী কী করেছি।
আব্বাকে সেদিন কী বলেছিলাম এখন আর তা মনে নেই। তবে এটা মনে আছে যে, মা পোড়া রুটির জন্যে আব্বার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন।
আব্বার জবাব আমি কখনো ভুলব না। তিনি মাকে বললেন, ওগো, আমি তো পোড়া রুটি খেতেই পছন্দ করি। রাতে ঘুমুতে যাবার আগে আব্বাকে জিজ্ঞেস করলাম, আব্বা, আপনি কি সত্যিই পোড়া রুটি খেতে পছন্দ করেন?
আব্বা বললেন, তোমার মা সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তিনি আসলেই বেশ ক্লান্ত ছিলেন। তাছাড়া পোড়া রুটি কখনো মানুষকে কষ্ট দেয় না কিন্তু কটু কথা মানুষকে কষ্ট দেয়।
এই যে স্ত্রীকে কষ্ট দিয়ে খাবার না খেয়ে স্বামী উঠে যাচ্ছেন, এই স্বামী কিন্তু নিজের রিজিক কমিয়ে ফেলছেন।
আরেকটি ঘটনা আমরা স্মরণ করতে পারি—এক ভদ্রমহিলা, মা-বাবার খুব আদরের। অনেক ছেলের মধ্যে এক মেয়ে হলে যেমন হয়। বেশ আহ্লাদী। খাবার পছন্দ না হলে প্রায়ই প্লেট ছুঁড়ে ফেলে দিতেন।
পরবর্তী জীবনে এমন একটা সময় এলো, তিনি কিছু খেতে চাইলে সে খাবার পাওয়া যেত না। অথচ সেই সময় তা না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। হয়তো সন্ধ্যাবেলা তার খুব ইচ্ছা করছে কাবাব খেতে।
ঢাকা শহরে এত কাবাবের দোকান। কিন্তু তার সন্তানেরা তার জন্যে কাবাব খুঁজতে গিয়ে কাবাব পেত না। যেখানে যায় কাবাব শেষ, কাবাব নেই। অতএব খাবার নিয়ে কখনো এরকম করবেন না।
শুধু স্বামী-স্ত্রী নয়, সবার জন্যে বলছি, কখনো খাবার রেখে উঠে যাবেন না। খাবারের ব্যাপারে কখনো না-শোকর হবেন না। খাবার যা-ই আসুক, যদি এটা পচা-বাসি না হয় এবং স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর না হয়, শোকর আলহামদুলিল্লাহ বলে খেয়ে নেবেন।
আপনার রিজিক বাড়তে থাকবে। আপনার খাবারের কোনো অভাব কখনো হবে না।