1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৭ পূর্বাহ্ন

হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা)- নবীজীর (স) ছায়াসঙ্গী

  • সময় বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট, ২০২২
  • ৪৯৯ বার দেখা হয়েছে

আজকে আমরা এমন একজনকে স্মরণ করব যার জন্ম অক্টোবর মাসের ২৭ তারিখে।

হযরত আবু বকর সিদ্দিক। যিনি তার জীবন নীতির প্রশ্নে, বিশ্বাসের প্রশ্নে কখনো কোনো আপস করেন নি। এক অনড় অটল পাহাড়ের জীবন!

নবীজীর ধর্মগ্রহণকারী প্রথম প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ!

আবু বকর প্রথম খলিফা হিসেবে পৃথিবী ত্যাগ করেন।

আমরা জানি, রসুলুল্লাহর (স) থেকে দু-বছর কম ছিল তার বয়স।

আমরা যদি আল্লাহর রসুলের ছায়াসঙ্গী হিসেবে কাউকে চিন্তা করি তিনি হচ্ছেন, আবু বকর। এবং নবীজীর ধর্মগ্রহণকারী প্রথম প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ছিলেন তিনি। তার আগে শুধুমাত্র একজন প্রাপ্ত বয়স্কা নারী মানে নবীজীর স্ত্রী ধর্মগ্রহণ করেছেন।

আর দুজন ছিলেন, আলী এবং জায়েদ। তারা দুজনই বালক ছিলেন।

৩৮ বছর বয়সের একজন তরতাজা যুবক তখন আবু বকর। নবীজীর কৈশোরের বন্ধু। নবীজী প্রথম তাকেই দাওয়াত দেন।

এবং প্রত্যেকটি ব্যাপারে প্রত্যেকটি কাজে তিনি সবসময় ছায়াসঙ্গী হিসেবেই নবীজীর পাশে ছিলেন।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এরকম ছায়াসঙ্গী আমরা পাই আরো অনেক পরে।

যেমন ঊনবিংশ শতাব্দীতে কার্ল মার্কস আর ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস এক হলেন। মার্কসের সাথে এঙ্গেলস যুক্ত না হলে শুধু মার্কস অসম্পূর্ণ। মার্কসের নিজস্ব কিছু নাই।

তো আবু বকরের সেই কিশোরকাল থেকেই রসুলুল্লাহর (স) সাথে যে সম্পর্ক যে ঘনিষ্ঠতা এটা একটা বিশাল ব্যাপার এবং সেই ঘনিষ্ঠতা সেই একাত্মতা ছিল আমৃত্যু।

রসুলুল্লাহ (স) যে বছর নবুয়ত পেলেন, প্রচার শুরু করলেন সে বছরই তিনি তার অনুসারী হলেন এবং সরাসরি প্রথম কথাবার্তা হলো।

ধর্মবাণী পৌঁছানোর মূল উদ্যোক্তা ছিলেন- আবুবকর!

এবং প্রথমদিকে যখন খুব নীরবে শুধু বেছে বেছে লোকদেরকে নবীজীর ধর্মের বাণী পৌঁছানো হচ্ছিল, এই পৌঁছানোর মূল উদ্যোক্তা ছিলেন আবুবকর।

আবু বকর সৎ ব্যবসায়ী ছিলেন এবং খুব সাকসেসফুল ব্যবসায়ী ছিলেন। এবং যখন তিনি নবীজীর ধর্মগ্রহণ করলেন তখন ব্যবসায়ী হিসেবে তার যে অ্যাসেটের পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার দেরহাম। এবং ৪০ হাজার দেরহাম তখনকার দিনে একটা বড় অর্থ।

এবং তখন আরবে ইতিহাসের চর্চা সেভাবে ছিল না। কিন্তু গোত্রীয় ঐতিহ্যের চর্চা ছিল। যেটাকে জিনিওলজি বলা হয়, যে পরম্পরা। কার ছেলে কে, কার ছেলে কে, কার ছেলে কে, কার ছেলে কে? মানে এটা ২০-৩০-৪০ প্রজন্ম পর্যন্ত এই ইতিহাস মুখে মুখে।

আবু বকরের স্মৃতি ছিল এমন যে, তিনি আরবের এই জিনিওলজি এই ইতিহাস এই বংশপরম্পরার প্রত্যেকটা গোত্র এবং গোত্রপতিদের ইতিহাস, যত বেদুইন কোরাইশ গোত্র ছিল সব গোত্রের ব্যাপারে ছিলেন নম্বর ওয়ান এক্সপার্ট। এবং এই ইতিহাস জ্ঞান তার ধর্মপ্রচারে খুব কাজে লেগেছে এবং তার কর্মকৌশল নির্ধারণেও কাজে লেগেছে।

বাণী কীভাবে উপস্থাপন করতে হবে এটা তিনি জানতেন!

এবং যে-কোনো গোত্রের ইতিহাস যেহেতু জানেন তার ধারাপরম্পরা যখন জানেন যখন কারো সাথে কথা হয়- আচ্ছা! তুমি অমুক গোত্রের? তাহলে অমুক হচ্ছে তোমার নেতা, অমুক আচ্ছা তার বাবা, অমুক ছিল তার বাবা। তোমরা তো এরকম।

অর্থাৎ তার যে চরিত্র বৈশিষ্ট্য সেই গোত্রের এটাও তার মুখস্থ। যার ফলে তার কাছে কীভাবে দাওয়াত দিতে হবে, বাণী উপস্থাপন করতে হবে এটা তিনি খুব চমৎকারভাবে করতেন।

এবং প্রথমদিকে যারাই নবীজীর ধর্মগ্রহণ করেছে তার মূল ব্যক্তি ছিলেন মূল মানুষটি ছিলেন আবু বকর। তিনি আগে কনভিন্স করতেন তারপরে তাকে নিয়ে আসতেন নবীজীর কাছে। নবীজীর কাছে এসে তিনি বায়াত হতেন।

বিশ্বাসের জন্যে যে-কোনো অত্যাচার সইতে তার কোনো অনাগ্রহ ছিল না!

আমরা তো শুধু বেলালের নির্যাতনের কথা জানি বা আমাদের একটা ধারণা হচ্ছে যে, ঐ সময় যারা দাস ছিল বা নিম্নবর্ণের ছিল তাদের ওপর অত্যাচারটা বেশি হয়েছে।

অথচ আবুবকর কোরাইশদের তায়েম গোত্রের সফল ব্যবসায়ী এবং অভিজাত গোত্র। তারপরেও তার ওপরেও অত্যাচার কম হয় নি। অবশ্য তিনি সবসময় সাহসী ছিলেন এবং নিজের বিশ্বাসের জন্যে যে-কোনো অত্যাচার সইতে তার কোনো অনাগ্রহ ছিল না।

যখন নবীজীর ওপর হুকুম হলো যে, না এবার তুমি প্রকাশ্যে তোমার ধর্মের কথা বলতে পারো। কারণ প্রথম তিন বছর তো তিনি শুধু গোপনে গোপনে নিজের ধর্মের কথা বলেছেন।

তখন আবু বকর বললেন যে, তাহলে তো এবার আমাদের কা’বা শরীফে গিয়ে ওখানে সবার সামনে ঘোষণা করা দরকার। আবু বকর তিন বার প্রস্তাব যখন দিলেন। তৃতীয়বারে নবীজী রাজি হলেন। তারা কৌশল নির্ধারণ করলেন যে, সবাই নিজ নিজ গোত্রের মধ্যে বসবে মুসলমান যারা হয়েছে। এবং তারপরে আবু বকর বক্তৃতা করবেন মানে দাওয়াত দেবেন।

আসরে বসছে সবাই নিজ নিজ গোত্রের মধ্যে।

তো আবুবরক যখন উঠে দাঁড়িয়ে বললেন যে, ‘আল্লাহ বাণী পাঠিয়েছেন আমাদের মধ্যে নবী পাঠিয়েছেন। এক আল্লাহ ছাড়া কারো উপাসনা করবে না, কারো ইবাদত করবে না আর মুহাম্মদ হচ্ছেন আল্লাহর রসুল’।

এই বলা শেষ হতেই যারাই ছিল আসরে সবাইকে আচ্ছামতো পিটানো হলো।

এবং সে পিটানোটা কী পর্যায় ছিল যে, নবীজী আহত হলেন মূর্ছিত গেলেন। এবং আবুবকর যেহেতু দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করছিলেন কথা বলছিলেন কোরাইশরা ঝাপিয়ে পড়ল তার ওপরে।

এর মধ্যে ওতবা ইবনে রাবিয়া তার শক্ত স্যান্ডেল জুতা মানে আঘাত করল তার পুরো মুখে। এবং পুরো মুখ ছুলে যায় কেটে যায়। তারপরে তো পেটা আছেই। মারতে মারতে অজ্ঞান হয়ে যান তিনি।

এবং তার গোত্রের লোকরা অনেক কসরত করে তাকে ওখান থেকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে যায়।

‘আল্লাহর রসুল কেমন আছেন’- নিশ্চিত না হয়ে আমি খেতে পারব না!

দিনের বেলার ঘটনা। তার জ্ঞান ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। যখন তার জ্ঞান ফিরে এলো তার প্রথম বাক্য ছিল যে, আল্লাহর রসুল কেমন আছেন?

তো এতক্ষণ তো তার গোত্রের লোকেরা তার সেবা শুশ্রুষা করে জ্ঞান ফিরিয়েছে। যখন জিজ্ঞেস করেছেন যে, আল্লাহর রসুল কেমন আছেন?

তখন শুরু করল তারাও বকা যে, তোমার মতন নির্বোধ! তুমি গিয়েছ ওখানে বক্তৃতা করতে! ঐ বকাটকা দিয়ে সব গোত্রের লোকজন চলে গেল।

তার মাকে বলল যে, এই আহাম্মক! মানে অর্থাৎ যা-যা বলা যায় বলল।

যা-হোক মা তো খাবার নিয়ে আসছে, আচ্ছা খা!

তো উনি বললেন যে, না। আল্লাহর রসুলের খবর না পাওয়া পর্যন্ত এবং উনি যে ভালো আছেন এটা নিশ্চিত না হয়ে আমি খেতে পারি না।

সন্ধ্যা হয়ে গেল। যখন রাত নেমেছে রাস্তায় লোকজন নাই। তখন তার মা এবং আরেকজন মহিলা দুই নারীর কাঁধে মানে হাঁটতে পারেন না। ঐ কাঁধে ভর রেখে উনি গিয়েছেন যেখানে নবীজীকে গেলে দেখতে পাবেন সেখানে।

এবং দেখার পরে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন যে, না ঠিক আছে, আল্লাহর রসুল ভালো আছেন।

এবং তারপরে তিনি খাবার গ্রহণ করেছেন। যে সময় খাবার পানি গ্রহণ করা তার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, এরকম মারের পর এরকম আহত হওয়া অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকার পরে, সে-সময় তিনি আল্লাহর রসুল কেমন আছেন এটা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত খাবার গ্রহণ করেন নাই।

আসলে নবীপ্রেম, নেতার প্রতি প্রেমের পর্যায়টা কী ছিল আমরা এটা থেকে বুঝতে পারি।

৪০ হাজার দিরহামের মধ্যে সাড়ে ৩৭ হাজার দিরহাম তিনি ব্যয় করেন ধর্মের জন্যে!

নবীজীর ধর্মপ্রচারে তিনি তার যত অর্থ ছিল সমস্ত অর্থ ব্যয় করেছেন। এবং বিশেষভাবে যারা তখন ইসলাম গ্রহণ করেছে বেলাল থেকে শুরু করে আরো দাস শ্রেণিভুক্ত যারা ক্রীতদাস তাদেরকে কিনে মুক্ত করেছেন।

এবং এই কিনে মুক্ত করতে করতে তার ৪০ হাজার দিরহামের মধ্যে সাড়ে ৩৭ হাজার দিরহাম তিনি ব্যয় করেন এই ধর্মের জন্যে।

যখন তিনি মক্কা ত্যাগ করেন তখন তার কাছে দিরহাম ছিল মাত্র আড়াই হাজার।

এবং সবসময় তিনি নবীজীর সুখ-দুঃখের সঙ্গী ছিলেন, বিপদের সঙ্গী ছিলেন শুধু তায়েফ ছাড়া।

কারণ তায়েফে নবীজী কাউকে না জানিয়ে শুধু জায়েদ ইবনে হারিসা (মুক্ত গোলাম মুক্ত দাস) যাকে তিনি সন্তানের মতো স্নেহ করতেন, ছেলের মতো স্নেহ করতেন শুধু তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন।

ঐ একটি ঘটনা ছাড়া সবসময়ই।

এবং ওনার সবচেয়ে সুবিধা ছিল যেহেতু ব্যবসায়ী ছিলেন সফর করতেন প্রচুর, ব্যবসায়িক যাত্রা। আর ইতিহাস বিশেষজ্ঞ ছিলেন গোত্রগুলোর সমস্ত পরিচিতি জানতেন। গোত্রগুলোর বৈশিষ্ট্যগুলো তার নখদর্পণে ছিল।

তিন বছরের অবরোধ শেষে যখন অবরোধ মুক্ত হলো, যখন নবীজী দেখলেন যে, কোরাইশদের মধ্যে ধর্মপ্রচার করা যাবে না, মক্কার বাইরে কোথাও নিরাপদ জায়গা আমাদের প্রয়োজন। তখন হজের মৌসুমে যত কাফেলা আসত যারাই আসত বা তীর্থযাত্রার জন্যে যারাই আসত যে গোত্র থেকে যে উপজাতি থেকে লোক আসত সেখানে আবুবকর চলে যেতেন প্রথম।

আবুবকর গিয়ে তাদের সাথে কথাবার্তা বলে পরিস্থিতি সৃষ্টি করতেন। তারপরে নবীজী ওখানে যেতেন।

অর্থাৎ নবীজীর বাণী প্রচারের ক্ষেত্রে আবুবকর বহুভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন বার বার। কিন্তু কখনো তিনি তার কাজে তার কোনো ক্লান্তি ছিল না।

বিচলিত কণ্ঠে বলে উঠলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! এখন কী হবে? আমরা তো মাত্র দুজন!

যখন নবীজী হিজরত করলেন মক্কা থেকে, মক্কায় যখন তাকে হত্যা করার সমস্ত চক্রান্ত ঠিক হয়ে গেল তার আগেই তিনিও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি বুঝতে পারছিলেন।

এবং আবুবকরও দুটো উটকে ভালোভাবে যত্ন নিচ্ছিলেন যাতে মরুভূমির দীর্ঘপথ তারা যেতে পারে।

এবং এক গভীর রাতে নবীজী তার ঘর থেকে বেরিয়ে আবুবকরের বাসায় গেলেন। ওখান থেকে উট নিয়ে আবুবকরকে নিয়ে রওয়ানা করলেন।

এবং মদিনার উল্টো পথে জাবলে সুর গুহায় আত্মগোপন করলেন আবুবকর এবং রসুলুল্লাহ (স)।

এবং ওখানে এমন একটা সময় এলো যখন গুহামুখে শত্রুর দল অনুসন্ধান করতে করতে এসে উপস্থিত।

এবং আবুবকর গুহার ভেতর থেকে দেখছেন তাদের পা। আবুবকরও শঙ্কিত হয়ে গেলেন নিজের জীবনের জন্যে না রসুলুল্লাহর (স) জীবনের জন্যে।

তিনি বিচলিত কণ্ঠে বলে উঠলেন যে, ইয়া রসুলুল্লাহ! এখন কী হবে? আমরা তো মাত্র দুজন।

আসলে বিশ্বাস কত প্রবল হলে সে-সময়ও আল্লাহর রসুল আবুবকরকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। এবং বাক্যটা খুব বিখ্যাত বাক্য।

‘লা তাহযান’ দুশ্চিন্তা করো না। ইন্নাল্লাহা মায়া না। আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।

অর্থাৎ মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও যখন কেউ প্রশান্ত থাকতে পারেন বিশ্বাসে অটল থাকতে পারেন মৃত্যু তখন তাকে স্যালুট করতে শুরু করে।

এবং ঘাতক দল চলে গেল এখানে কিছু নাই ভেবে। অর্থাৎ সে-সময় আবুবকর তার সাথি।

কোনোকিছু নিয়ে নবীজীর সাথে কখনো দ্বিমত করেন নি!

আবুবকর তার সারাজীবনে কোনোকিছু নিয়ে নবীজীর সাথে কখনো দ্বিমত করেন নাই। আল্লাহর রসুল বলেছেন? ব্যস! ঠিক আছে। দ্যটস এনাফ। যথেষ্ট।

অন্যান্য সাহাবীরা অনেকেই আছেন দ্বিমত করেছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আবুবকর কখনো না।

আমরা যদি দেখি যে, মিরাজের ঘটনা।

নবীজী যখন বললেন কাবাতে, তখন আবু জাহেল সে-সময় ওখানেই ছিলেন।

আর মিরাজের ঘটনা আবু জাহেল প্রচার করল সবচেয়ে বেশি সব জায়গায় যে, শোনো! এ তো এরকম এতদিন বলছে এ তো এরকম।

তো আবুবকরকে পেয়ে গেল। আবুবকরকে পেয়ে আবু জাহেল বলল যে, তুমি শুনেছ- তোমার সঙ্গী নাকি সাত আসমান ঘুরে আসছে? বেহেশত দোজখ সব দেখে আসছে? আল্লাহর সাথে কথা বলে আসছে?

তো আবুবকর আবু জাহেলকে একটি প্রশ্ন করলেন যে, কে বলেছে এটা?

বলে যে, তোমার সঙ্গী নিজে বলেছে। আমি নিজ কানে শুনেছি।

বলে যে, তাহলে আমি বিশ্বাস করলাম।

বলে যে, তুমি এরকম উদ্ভট কথাও বিশ্বাস করবে?

তো আবুবকর হেসে বললেন যে, এটার মধ্যে উদ্ভট কথা কী হলো? তোমার ভাষায় এর চেয়েও উদ্ভট কথা আমি বিশ্বাস করি যে, ওনার কাছে আল্লাহতায়ালা মেসেঞ্জার পাঠান ফেরেশতা পাঠিয়ে বাণী পাঠান। এটাওতো আমি বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ যার কাছে বাণী পাঠান, যে বাণীতে আমি বিশ্বাস করি তিনি কোথায় সাত আসমান ১৫ আসমান যাবেন এটার মধ্যে তো সন্দেহের কিছু নাই।

শুধু আমাকে বলো, উনি বলেছেন কিনা?

এবং এই ঘটনা যখন নবীজীর কাছে পৌঁছে তখন নবীজী তাকে সিদ্দিক উপাধি দিলেন। এবং এই সিদ্দিক উপাধিটা তার এত প্রিয় ছিল যে, এরপরে তিনি সিদ্দিক নাম বলাটাকেই খুব পছন্দ করতেন।

মেয়ে আয়েশার পক্ষ নিয়েও তিনি কোনো কথা বলেন নি…

এবং যখন মা খাদিজা আল্লাহর কাছে চলে গেলেন। তখন তাকে কত ভালবাসতেন যে নিজের মেয়ে আয়েশা তার সাথে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন।

এবং হযরত আয়েশার ঘটনাতো আমরা জানি যে, যখন তার নামে অপবাদ দিলো তখন আসলে একজন মানুষ তার নেতার প্রতি তার মুর্শিদের প্রতি কতটা নিবেদিত!

হযরত আয়েশা তো অসুস্থ হলেন। এবং যখন বাসায় গেলেন আবুবকরের ওখানে তখন তিনি আসল ঘটনাটা বুঝতে পারলেন যে, ঘটনা কী!

তো এর মধ্যে নবীজী আসছেন আবুবকরের বাসায়। এবং যখন মক্কাতে ছিলেন এমন কোনোদিন ছিল না যেদিন তিনি আবুবকরের বাসায় না যেতেন সকালে বা বিকেলে এমন কোনোদিন ছিল না। তাকে নিয়ে বের হতেন এবং মদিনাতেও নবীজী যেখানে যেতেন আবুবকর এবং ওমর দুজন তার সঙ্গী হতেন। দুজন সঙ্গী হন নাই এমন ঘটনা খুব কম।

তো যখন মা আয়েশা তার বাবাকে আবুবকরকে বললেন যে, আপনি আমার পক্ষে বলেন। আবুবকর নিশ্চুপ ছিলেন। মেয়ের পক্ষেও তিনি কোনো কথা বলেন নাই।

ধরুন যে-কোনো বাবার কাছে মেয়ে একটা খুব দুর্বল জায়গা।

কিন্তু মেয়ে বলছে তারপরও তিনি চুপ। যা করার রসুল সিদ্ধান্ত নেবেন।

এরপরে আয়াত নাজিল হলো যে, ‘কোনো নারীর বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অপবাদ দিয়ে চারজন সাক্ষী উপস্থিত যদি করতে না পারে তাহলে তাকে ব্যভিচারের যে শাস্তি সেই শাস্তি ৮০ বেত’।

আপাত দৃষ্টিতে পরাজয় দেখেও নবীজীর সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থায় ছিলেন অনড়!

হুদায়বিয়ার সন্ধি। এটা নবীজী তার প্রজ্ঞা দিয়ে বুঝতে পেরেছেন যে, কত বড় বিজয়। কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে সবটাই ছিল পরাজয়। এমনকি হযরত ওমরের মতন সাহাবী তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করলেন।

এবং ক্ষোভ প্রকাশ করে যখন আবুবকরের কাছে গেলেন, আবুবকর ওমরের হাত ধরে ফেললেন। তাকে বললেন যে, তুমি কী ভাবছ? কার নির্দেশে রসুল কাজ করছেন? এটা কী তুমি বুঝতে পারো না? তুমি কী ভাবছ যে, কোত্থেকে তিনি নির্দেশ পাচ্ছেন এবং এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন?

তুমি কী স্মরণ করতে পারো না যে, তিনি কে? তিনি আল্লাহর রসুল। আবুবকর সে-সময়ও নবীজীর যে সিদ্ধান্ত সেই সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থায় অনড় ছিলেন অটল ছিলেন।

‘যারা মুহাম্মদের উপাসনা করো তারা জানো যে, মুহাম্মদ মারা গেছেন’!

আবার কত বাস্তববাদী ছিলেন। হযরত ওমরের আবেগ খুব বেশি ছিল। যখন যে দিকে… মানে আবেগ মানে তো আবেগ!

যখন রসুলুল্লাহর (স) মৃত্যুর সংবাদ এলো, ওমর নাঙা তলোয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন! যে বলবে যে, উনি মারা গেছেন তাকে তিনি হত্যা করবেন।

তো ওমরের গলা অনেক বড় গলা ছিল। আবুবকরের গলা কিন্তু অত বড় ছিল না। অত লাউড ভয়েস না।

আবুবকর গিয়ে দাঁড়ালেন। দেখলেন যে, বিশৃঙ্খলা হয়ে যাবে। দাঁড়িয়ে বললেন, যারা মুহাম্মদের উপাসনা করো তারা জানো যে, মুহাম্মদ মারা গেছেন। আর যারা আল্লাহর উপাসনা করো তারা জেনে রাখো আল্লাহ শ্বাশত চিরঞ্জীব তাঁর মৃত্যু নাই।

এবং তারপরে কোরআনের আয়াত পড়ে শোনালেন। তখন গিয়ে ওমরের খেয়াল হলো যে, না কোরআনে এই আয়াত আছে এবং তিনি শান্ত হলেন।

অর্থাৎ একজন নেতার বাস্তব অনুসারী এবং অনড় অটল অনুসারী আবুবকর। এবং যে কারণে তিনি তার উত্তরসূরি হতে পেরেছেন।

বলতেন- আমি রসুলের খলিফা!

নবীজী কিন্তু কোনো উত্তরসূরি মনোনীত করে যান নি। সিচুয়েশন/পরিস্থিতি আবুবকরকে উত্তরসূরি বানিয়েছেন।

এবং খলিফা কিন্তু তিনি একাই ছিলেন। এটা একটা মজার ব্যাপার। তিনি নিজেকে রসুলের খলিফা বলতেন। আমি রসুলের খলিফা।

এবং এরপরে বাকি তিনজন তাদেরকে আমরা খলিফা বলি। কিন্তু তাদের পদবী ছিল আমিরুল মোমেনিন।

হযরত ওমরের সময় থেকে পদবী হলো- আমিরুল মোমেনিন।

নবীজীর অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করেন আবুবকর!

তো দেখা গেল যে, বাস্তবে আবু বকর নবীজীর প্রথম খলিফা। এবং নবীজীর যে কাজগুলো হাত দিয়েছিলেন শেষ করতে পারেন নাই সে অসমাপ্ত কাজগুলো আবুবকর সমাপ্ত করেছেন।

এবং আবু বকর সেই দৃঢ়তা যদি না থাকত তাহলে ইতিহাস কীভাবে লেখা হতো এটা ইতিহাসই বলতে পারবে এবং আল্লাহ ভালো জানবেন।

তো যখন আবু বকর খলিফা হলেন, খলিফা হওয়ার পরের ছোট্ট দু-তিনটে ঘটনার উল্লেখ করব।

যে সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে- তিনি নবীজীর খলিফা!

নবীজী ওসামা বিন জায়েদ নেতৃত্ব সামরিক অভিযানের নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন।

এবং ওসামা যাত্রা শুরু করার পরেই নবীজী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এবং তারা মদিনার উপকণ্ঠে অপেক্ষা করছিল।

এবং তার আগেই ভণ্ডনবীদের আবির্ভাব ঘটল। জায়েদ ক্রীতদাস ছিলেন। জায়েদের সন্তান ওসামা।

তো নবীজীর ওফাতের পরে অভিজাত যারা ছিলেন কোরাইশ এবং ওখানকার আনসারদেরও তারা পরামর্শ দিলেন দুটো।

এক হচ্ছে এখন চারদিকে যেহেতু বিশৃঙ্খল অবস্থা শুরু হয়ে গেছে নবীজীর ওফাতের সাথে সাথে। তো এখন এই সিরিয়া অভিযানে ওসামা বাহিনীকে পাঠানোর কোনো দরকার নাই। মদিনাতে থাকাটাই তাদের জন্যে উত্তম।

আবুবকর বললেন যে, যে অভিযানের নির্দেশ আল্লাহর রসুল দিয়ে গিয়েছেন তার খলিফা হয়ে সেটা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে আমার দায়িত্ব সেটা বাতিল করা নয়।

তারপরে তারা পরামর্শ দিল যে, তাহলে অন্তত কোনো অভিজ্ঞ জেনারেলকে এই অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া হোক। ওসামার বয়স তখন মাত্র ২০ বছর।

কিন্তু দেখেন আসলে নেতার প্রতি যে আনুগত্য যে, না। নবীজী যাকে সেনাপতি মনোনীত করে গেছেন তার নেতৃত্বেই অভিযান যাবে।

অর্থাৎ তিনি সবচেয়ে বড় প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছিলেন, এই সিদ্ধান্তটাতে অটল থেকে। এবং এই সিদ্ধান্তে অটল থেকে নবীজীর যে তিনি খলিফা এটা তিনি প্রমাণ করলেন।

এবং ওসামা সে-সময় সমবেত বাহিনীকে নিয়ে সিরিয়া যাত্রা করলেন এবং উত্তর সীমান্তটা নিরাপদ হলো এবং যে উদ্দেশ্যে তারা যাত্রা করেছিলেন উদ্দেশ্য সফল করে ফিরে এলেন।

ভণ্ডনবীদের পুরো বিদ্রোহ দমন করে আবু বকরের বাহিনী!

এদিকে তো মহারণ অবস্থা। ভণ্ডনবীদের নেতৃত্বে বিভিন্ন জায়গায় বিদ্রোহ। আবার কিছু কিছু লোক বিদ্রোহ করল যে, না ঠিক আছে আল্লাহ মানি রসুল মানি নামাজ মানি। কিন্তু যাকাত দেবো না।

তো যখন বিভিন্ন গোত্র যাকাত দিতে অস্বীকার করল তখন আবুবকর আসলে বিশ্বাস নীতির প্রশ্নে তখন। ওমর পর্যন্ত বললেন যে এরা যেহেতু আল্লাহ মানে কলমা পড়ে এবং নামাজ পড়ে তাদের বিরুদ্ধে আপনি কীভাবে যুদ্ধ করবেন?

তিনি বলেছিলেন যে, না। নামাজ থেকে যারা যাকাতকে আলাদা করে, তারা যাকাতের একটা উটের রশি পর্যন্ত যদি না দেয় সেটা আদায় করার জন্যে আমি যুদ্ধ করব।

কারণ নামাজ যেরকম ফরজ যাকাতও একইরকম ফরজ। নামাজ থেকে যাকাতকে আলাদা করা যাবে না। এবং তিনি বাধ্য করলেন সেই গোত্রগুলোকে আল্লাহর বিধান অনুসারে যাকাত দিতে।

এবং মাত্র দুবছর তিন মাস সময় পেয়েছিলেন। ২৭ মাস তিনি খলিফা ছিলেন। ভণ্ডনবীদের পুরো বিদ্রোহ দমন করে তার বাহিনী।

পারস্য এবং রোমান সেখানকার শোষিত বঞ্চিত মানুষকে মুক্ত করার জন্যে দুই সীমান্তে গিয়ে তারা অবস্থান নিলো। পুরো আরবকে তিনি সমস্ত রকম ফেতনা থেকে অশান্তি থেকে বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্ত করে সমস্ত আরবে ইসলামের চেতনাকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করলেন।

বাইতুল মাল থেকে সেই পরিমাণই নিয়েছেন যেটুকু প্রয়োজন!

এবং একজন মানুষ আসলে যে কত সৎ হতে পারেন খলিফাদের জীবন দেখলে বোঝা যায়।

এবং এই রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের পাশাপাশি মানুষেরও যে সেবা করা যায় যদি বলা যায় যে প্রথম ছয় মাস তিনি পার্টটাইম খলিফা ছিলেন। মানে একবেলা নিজের উপার্জনের জন্যে ব্যবসা করতেন। আরেক বেলা রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।

কিন্তু করতে গিয়ে দেখা গেল যে, রাষ্ট্রীয় কাজের চাপ এত বেশি যে আর নিজের জন্যে কোনো সময় বের করা যাচ্ছে না।

শেষে সাহাবীরা তাকে বাধ্য করল যে, না ঠিক আছে বাইতুল মাল থেকে আপনি নেন। পুরো সময় যদি আপনি না দেন তাহলে তো আপনি আপনার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। তিনি বাইতুল মাল থেকে সেই পরিমাণই নিয়েছেন যেটুকু ন্যূনতম যা প্রয়োজন।

খলিফা হওয়ার পর সম্পত্তিতে অতিরিক্ত যা যুক্ত হয়েছে এটা দ্বিতীয় খলিফাকে দিবা!

এবং তার মৃত্যুর সময় তিনি মা আয়েশাকে বললেন যে, তোমার কাজ হচ্ছে যে, আমি খলিফা হওয়ার পরে আমার সম্পত্তিতে যা যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত এটা হিসেব করে বের করবা এবং এটা দ্বিতীয় খলিফা তাকে দিবা।

তো মা আয়েশা সব মিলে হিসাব করে দেখলেন যে, আড়াই বছরে সংযুক্ত হয়েছে একটা উট এবং একজন দাস। এবং হযরত ওমর খলিফা হওয়ার পরে ঐ উট এবং দাসকে আয়েশা গিয়ে হযরত ওমরের কাছে দিলেন।

এবং তখন হযরত ওমর কেঁদে ফেললেন। এবং বললেন যে, আবুবকর তার উত্তরসূরিকে কঠিন জবাবদিহিতার মুখে রেখে গেলেন। কারণ আগেরজন যেভাবে জবাবদিহিতা করেছেন পরের জনকেও তো একইভাবে জবাবদিহিতা করতে হবে।

এক নেককার মানুষ এসে সমস্ত কাজকর্ম করে দিয়ে গেছেন!

এবং এই খেলাফতের দায়িত্ব পালন করলেও আসলে মানুষের প্রতি যে উপকার করা নিজে সরাসরি উপকার করা এটাও তিনি সবসময় করতেন।

একবার হলো এমন যে, এক বৃদ্ধার কাজকর্ম হযরত ওমর সকালবেলা গিয়ে করে আসতেন। বৃদ্ধার কেউ ছিল না।

একদিন তিনি গিয়েছেন। তো বৃদ্ধা বলছে যে, না আজকে আর কোনো কাজ নাই।

বলেন যে, আজকে কোনো কাজ নাই? তো কে করে গেল?

বলে যে, এক নেককার মানুষ এসছিলেন সকালবেলা। তিনি আমার আজকের যা কাজকর্ম এগুলো করে দিয়ে গেছেন।

খোঁজ খোঁজ খোঁজ ঘটনা কী? হযরত ওমর তো আবার এই সমস্ত ব্যাপারে সজাগ ছিলেন। খুঁজতে খুঁজতে দেখলেন যে, আবুবকর সকালবেলা গিয়ে ঐ কাজগুলো করে দিয়ে আসছেন।

আসলে অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের এভাবে খলিফারাও যত্ন করতেন।

আবুবকরের সবচেয়ে বড় অর্জন- পবিত্র কোরআনকে গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করা!

হযরত আবু বকরের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে পবিত্র কোরআনকে গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করা।

এর আগেও কোরআন লিপিবদ্ধ ছিল কিন্তু গ্রন্থের আকারে ছিল না। বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে সূরাগুলো ছিল আয়াতগুলো ছিল।

কারণ ভণ্ডনবীদের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ সে যুদ্ধ এত তীব্র ছিল যে, এক যুদ্ধেই পাঁচশতাধিক হাফেজ তারা শহিদ হয়ছিলেন।

তো তখন দেখা গেল যে, এভাবে আরো শহিদ হয়ে গেলে তো কোরআন যারা স্মৃতিতে ধারণ করছেন তাদের সংখ্যা তো বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।

তখন সিদ্ধান্ত হলো যে, না এটাকে গ্রন্থাকারে রাখতে হবে। এবং এজন্যে যত সতর্কতা নেয়া যায়, সতর্কতা নেয়া হয়েছে।

কোরআনের মর্মবাণীতে আমরা উল্লেখ করেছি যে, কীভাবে সতর্ক ছিলেন তারা। এবং যে মাসহাব তৈরি হলো এই মাসহাবের প্রথম কপি পরিচিতি হয় ‘মাসহাবে সিদ্দিকী’ নামে।

হযরত আবুবকরের মৃত্যুর পরে হযরত ওমর এটা সংরক্ষণ করেন। ওমরের মৃত্যুর পরে ওমরের কন্যা উম্মুল মোমেনিন হাফসার কাছে এটা সংরক্ষিত থাকে। উম্মুল মোমেনিন হাফসা থেকে হযরত ওসমান কপিটাকে সংগ্রহ করে এটাকে অনেকগুলো কপি করেন এবং সম্রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এটা প্রেরণ করেন। হযরত ওসমান যেহেতু কপি করে প্রেরণ করেছেন এজন্যে এটাকে বলা হয় মাসহাবে ওসমানী।

এবং এখন ১৪শ বছর ধরে যে কোরআন চলে আসছে এটা আসলে মাসহাবে সিদ্দিকী মাসহাবে ওসমানীরই সেইম কপি।

‘মৃত্যুর যখন হতচেতন অবস্থায় তুমি পৌঁছবে, তখন তোমার সামনে আসল সত্যকে উন্মোচন করবে’!

মৃত্যুর সময় জ্বর হয়েছিল তার। প্রচণ্ড জ্বর এবং বেশ কয়েকদিন অসুস্থ ছিলেন। এবং তিনি বুঝতে পারছিলেন যে, মৃত্যু আসন্ন। তো যখন মৃত্যু আসন্ন তখন তিনি চাদরে মুখ ঢেকেছিলেন।

এবং তখন মা আয়েশা পাশে ছিলেন। মা আয়েশা কবিতার একটা পঙক্তি বলছেন।

তো পঙক্তি বলার পরে হযরত আবুবকর বললেন যে, না এভাবে না এভাবে বলো।

এটার বাংলা করলে এরকম দাঁড়ায় যে, ‘মৃত্যুর যখন হতচেতন অবস্থায় তুমি পৌঁছবে, তখন তোমার সামনে আসল সত্যকে উন্মোচন করবে, যার মুখোমুখি হওয়া তোমরা এড়িয়ে চলতে চাও। তোমরা ঐ বাস্তবতার মুখোমুখি হতে চাও না’।

এবং এরপরেই তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

সমাহিত হন নবীজীর রওজা মোবারকের পাশে!

এবং তার ইচ্ছানুসারে হযরত আলী তাকে গোসল করান এবং তাকে নবীজীর রওজা মোবারকের পাশে সমাহিত করা হয়।

একজন মানুষ কত নীতিবান হতে পারলে কত ন্যায়নিষ্ঠ হতে পারলে এবং কত সত্যবাদী হতে পারলে কত বিশ্বাসী হতে পারলে নবীজীর ছায়াসঙ্গী এবং তার উত্তরসূরি হতে পারেন এটা আমরা খুব সহজে বুঝতে পারি।

এবং আমরা তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি।

[সজ্ঞা জালালি, ১৬ অক্টোবর, ২০১৯]

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com