1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
  2. [email protected] : adminbackup :
রবিবার, ২৫ মে ২০২৫, ০৪:১৬ পূর্বাহ্ন

হৃদয়ভরা টান হোক এখন আমাদের জাতিসত্তার নতুন মনছবি

  • সময় শনিবার, ২৭ মার্চ, ২০২১
  • ১১৪৫ বার দেখা হয়েছে

আসসালামু আলাইকুম। সবার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।

আজকের এই বিশেষ দিনেআমাদের স্বাধীনতার জন্যে যারা আত্মত্যাগ করেছেন, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজকে স্বাধীন জাতিসত্তার পরিচয় লাভ করেছি; যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা মায়ের ভাষায় আমরা কথা বলতে পারছি; যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আমাদের বাঁচার এবং ভালো থাকার ভালো হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারছি যুগে যুগের সেই সকল সংগ্রামী মানুষের প্রতি প্রতিও আমরা আমাদের গভীর গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

বাংলার সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল – হৃদয়ভরা টান

আসলে আমাদের জাতিসত্তার সবচেয়ে বড় শক্তি কী ছিল?

আমাদের যে বাংলা আবহমান বাংলা এই বাংলার সবচেয়ে বড় শক্তি কী ছিল? শুধু গোলাভরা ধান না, শুধু পুকুরভরা মাছ না। শুধু গলাভরা গান না, সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল হৃদয়ভরা টান।

এবং এই শক্তিটা যখন জাগ্রত হয়- হৃদয়ভরা টান, সমমর্মিতা সমব্যথিতা এই শক্তি যখন জাগ্রত হয় তখন সমস্ত অপশক্তিকে ছাপিয়ে সেই লক্ষ্যে মানুষ পৌঁছায়।

বহুযুগ পরে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা সে হৃদয়ভরা টানটাকে জাগ্রত করতে পেরেছিলাম

হৃদয়ভরা টান মানে কী? সমমর্মিতা।

আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধের সময় দেখি আমরা বহুকাল পরে বহুযুগ পরে সে হৃদয়ভরা টানটাকে আমরা সৃষ্টি করতে পেরেছিলাম।

সেই সময় বাংলার প্রতিটি প্রান্তর প্রতিটি ঘর প্রতিটি মানুষের জন্যে নিরাপদ ছিল।

রাস্তায় সে নারী কোনো নিরাপত্তাহীনতা বোধ করে নাই। প্রতিটি ঘর ছিল তার ঘর।

ঢাকা থেকে সেই রংপুরের ডোমার পর্যন্ত এক মা এক নারী তার ১৫ বছরের মেয়েকে নিয়ে চলে গেছে। রাস্তায় সে কোনো নিরাপত্তাহীনতা বোধ করে নাই। প্রতিটি ঘর ছিল তার ঘর। প্রতিটি ঘরে সে ছিল নিরাপদ।

এই যে হৃদয়ভরা টান এবং সেই সময়ের যে সমমর্মিতা পারস্পরিক যে সমমর্মিতা মুক্তিযুদ্ধের সময়ের মানুষের প্রতি মানুষের সমব্যথিতা… নিজের খাবার আরেকজনকে ভাগ করে খাওয়ানো বা তাকে খেতে দিয়ে নিজে কম খাওয়া যে, আহারে! খায় নি। কোনো হোটেল ছিল নাতো।

ঢাকা থেকে মানুষজন চারদিকে ছড়ি পড়েছে। রাস্তায় রাস্তায় হোটেল ছিল না। থাকার কোনো জায়গা ছিল না। প্রত্যেকটা বাড়ি ছিল হোটেল। হোটেল মানে মুসাফিরখানা, মুসাফির এসছে। প্রত্যেকটা বাড়ি ছিল অতিথিশালা। যা আছে সামর্থ্য, আচ্ছা ঠিক আছে খান।

সমমর্মিতা ছিল তখনকার সবচেয়ে বড় শক্তি

তো এই হৃদয়ভরা টান ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। আমাদের শ্বাশত বাংলার চিরায়ত বাংলার সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল এই হৃদয়ভরা টান!

যেটা আমরা বলি যে আমাদের বাংলা কী ছিল!

গোলাভরা ধান পুকুরভরা মাছ গলাভরা গান মানে আনন্দ আর হৃদয়ভরা টান।

তো আসলে এই হৃদয়ভরা টান এই সমমর্মিতা এই সমমর্মিতা ছিল তখনকার সবচেয়ে বড় শক্তি।

লক্ষ্যের সাথে আমাদের একাত্মতা ছিল। লক্ষ্যের বিপরীত কোনোকিছুর মধ্যে আমরা জড়াই নি…

এবং লক্ষ্য কী ছিল? সোনার বাংলা। এবং আমরা রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নৃশংস নিষ্ঠুর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদেরকে পরাস্ত করে সবচেয়ে কম সময়ে আমরা স্বাধীন হয়েছি।

কেন? লক্ষ্যটা পরিষ্কার ছিল। এবং লক্ষ্যের সাথে আমাদের একাত্মতা ছিল। লক্ষ্যের বিপরীত কোনোকিছুর মধ্যে আমরা তখন জড়াই নি।

যে কারণে এত অল্প সময়ে আমরা স্বাধীন হতে পেরেছিলাম –

আসলে জীবনে লক্ষ্যটা হচ্ছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে লক্ষ্যটা কী? লক্ষ্য যদি সুস্পষ্ট থাকে এবং লক্ষ্যের জন্যে আপনি যদি সবকিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকেন এবং লক্ষ্যের বিপরীত কোনোকিছুকে যদি প্রশ্রয় না দেন লক্ষ্য অর্জিত হয় কি হয় না আমাদের দেশটাই তো তার প্রমাণ!

অনেকরকম প্রলোভন ছিল। কিন্তু লক্ষ্যের বিপরীত কোনোকিছুর সাথে আমরা জড়াই নি। এবং যে কারণে এত অল্প সময়ে আমরা স্বাধীন হতে পেরেছিলাম!

কাজ ওঠানোর চেয়ে গোছানোটা হচ্ছে আরো গুরুত্বপূর্ণ

তো আসলে যে-কোনো কাজ ওঠানো এবং যে-কোনো কাজ গোছানো- ওঠানো এবং গোছানো এই দুটো জিনিসই ইম্পর্ট্যান্ট।

এবং ওঠানোর চেয়ে গোছানোটা হচ্ছে আরো গুরুত্বপূর্ণ।

৭০’র দশকের শেষ এবং ৮০’র দশকের শুরুতে এক চরম হতাশা নেতিবাচকতায় আমরা নিমজ্জিত হয়েছিলাম

আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। লক্ষ্য ছিল ‘সোনার বাংলা’। আমাদের স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা। মনছবি ছিল ‘সোনার বাংলা’।

কিন্তু অশুভ শক্তি অপশক্তি নেতিবাচক শক্তি এরা সবসময়ই সক্রিয় থাকে। তাদের অপপ্রচার এবং তাদের অপতৎপরতা এর ফলে ৭০’র দশকের শেষ এবং ৮০’র দশকের শুরুতে এক চরম হতাশা নেতিবাচকতায় আমরা নিমজ্জিত হয়েছিলাম।

আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছি। এবং কোয়ান্টামের যে অভ্যুদয় এটা সেই সময় থেকেই…

এবং এই দেশে যে কিছু সম্ভব এই দেশে যে কিছু হবে এটা তখন বলাতো কারো পক্ষে বলা তো দূরের কথা বিশ্বাস করাও কঠিন ব্যাপার ছিল। এবং ৭০’র শেষে ৮০’র প্রথম হিড়িক পড়ে যায় যে বিদেশে যাব ডিশিং ওয়াশিং করব। এই দেশে কিছু হবে না।

কিন্তু আমরা সবসময় বিশ্বাস করতাম। আমাদের জাতিসত্তার ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতার ওপরে। সবসময় বিশ্বাস করতাম।

এবং আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছি। এবং কোয়ান্টামের যে অভ্যুদয় এটা সেই সময় থেকেই।

অর্থনীতিতে যে সমৃদ্ধ হতে পারব এই স্বপ্ন আমরা সৃষ্টি করেছিলাম এখন থেকে ২৫ বছর আগে

আজকে আমরা যে অর্থনীতিতে যে সমৃদ্ধ হতে পারব এই ব্যাপারে এখন আর দ্বিমত করার কেউ নাই। কোনো দ্বিতীয় ব্যক্তি পাওয়া যাবে না যে অমুকে দ্বিমত করবে যে না এদের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নাই।

এবং এই যে স্বপ্ন এই স্বপ্নটা আমরা সৃষ্টি করেছিলাম এখন থেকে ২৫ বছর আগে। পরিষ্কারভাবে যে আমরা কী দেখি নাইন্টিন নাইটি ফাইভ বিশাল বিশাল ফ্লাইওভার।

তখন ফ্লাইওভারের কোনো চিহ্ন আমাদের দেশে ছিল না।

পঞ্চায়েত প্রধানের সামনে কম্পিউটার।

আরে পঞ্চায়েত প্রধান কি? এখন তো প্রত্যেকের হাতে হাতে কম্পিউটার, স্মার্টফোন। সে অ্যাপসে সবকিছুই দেখতে পারছে। বরং আমাদের চেয়ে এডভান্স হয়ে গেছে পুরো বিষয়টা।

রেল লাইন কক্সবাজার থেকে দিনাজপুর এটাতো ১০ বছর আগেও কেউ কল্পনা করে নি। কিন্তু উই হেভ দ্যা ড্রিম। আমরা বিশ্বাস করতাম যে, আমাদের জাতিসত্তার ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতার।

আমাদের ইতিহাস হচ্ছে, সবচেয়ে সফলভাবে যে-কোনো দুর্যোগ মোকাবেলা করার ইতিহাস

এবং যে বিশ্বাস নিয়ে ১৮ই মার্চ গত বছর আমরা প্রথম বলেছিলাম যে, আমরা যে জাতি এই জাতির ইতিহাস হচ্ছে, সবচেয়ে সফলভাবে যে-কোনো দুর্যোগ মোকাবেলা করার ইতিহাস।

কারণ আমরা সেই জাতি যে জাতি ইংরেজদের সুপরিকল্পিত দুর্ভিক্ষ যেটা ছিয়াত্তরের মন্বন্তর বলে কুখ্যাত যে দুর্ভিক্ষে বাংলার তিন কোটি মানুষের এক কোটি মানুষ মারা যায়… অর্থাৎ বাংলার প্রতি তিনজন মানুষের মধ্যে একজন মারা গেল।

বাংলায়ও সাম্রাজ্যবাদীদেড় লক্ষ্য ছিল যে সমস্ত মানুষ মেরে নির্মূল করে দাও

কারণ সাম্রাজ্যবাদীরা সবসময়ই চাইত, তাদের চিন্তা ছিল তাদের পরিকল্পনা হচ্ছে যে মানুষ মেরে সাফ করে দাও, জায়গা দখল করো।

আপনি দেখেন ইউরোপিয়ানরা যেখানে গিয়েছে যেখানে তারা সুযোগ পেয়েছে তাদের প্রথম অপারেশনই ছিল মানুষ নির্মূল করা। আর যেগুলো বাঁচবে এগুলোকে দাস বানাও। ওগুলো ক্রীতদাস হয়ে থাকবে।

আপনি দেখেন আমেরিকাতে গেল তারা। রেড ইন্ডিয়ানদের অরিজিনাল আদিবাসী যারা আমেরিকার আদিবাসীদের নিশ্চিহ্ন করে দিল।

এবং এখনো ওয়াইল্ড ওয়েস্ট এটা হচ্ছে মানে হলিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় সিরিজ। অর্থাৎ কীভাবে তাদের ডাকাতরা সেই জায়গাগুলোতে লুট করেছে। সাধারণ মানুষ সেখানকার আদিবাসীদের তারা হত্যা করেছে। এবং নির্মূল করেছে, লুট করেছে।

তো বাংলায়ও তাদের লক্ষ্য ছিল যে সমস্ত মানুষ মেরে নির্মূল আপনি দেখেন অস্ট্রেলিয়ায় আদিবাসী নাই কোনো। শুধু ওরিজিনালদের জাস্ট হচ্ছে যে যেরকমভাবে পাখি শিকার করা হয় সেরকমভাবে তাদেরকে ধরে ধরে মারা হয়েছে। সরল মানুষগুলোকে মারা হয়েছে।

এবং মধ্য আমেরিকাতে ইনকাদের মারা হয়েছে নির্মূল করা হয়েছে।

তো একইভাবে বাংলার মানুষকে নির্মূল করার তারা চেষ্টার কোনো ত্রুটি করে নি। যার ফলে এক তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যায় আরকি।

এবংসেই দুর্ভিক্ষ কাটিয়ে আমরা উঠেছি। এবং সেই সেই যে নির্মূল করার যে তাদের অভিযান সেটাকে আমরা ব্যর্থ করে দিয়েছি। আমাদের পূর্ব পুরুষরা ব্যর্থ করে দিয়েছে।

দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের চেয়ে দক্ষ জাতি কেউ নাই

কারণ আমাদের দেশ ছিল জলাভূমির দেশ। জলাভূমিতে খুঁজে পাওয়া খুব ডিফিকাল্ট খুব মুশকিল। আর তারা তো আর জলাভূমিতে অভ্যস্ত নয়। তারাতো শক্ত ভূমিতে অভ্যস্ত। আক্রমণকারী যারা লুটপাট করে যারা তারা শক্ত ভূমিতে অভ্যস্ত নৌকায় অভ্যস্ত।

এই যে ধরেন পূর্ব তিমুরে তিমুরে যত লোকজন সবতো মেঘনা পাড়ের লোকজন আরকি তারা নামত গ্রাম ঘেরাও করত; লোকজন যাদেরকে মারার মারত। যাদেরকে নেয়ার নিয়ে সে পূর্ব তিমুরে ইন্দোনেশিয়াতে তারা দাস হিসেবে ব্যবহার করছে কাজে লাগিয়েছে।

তো আমরা সেটাকেও মোকাবেলা করেছি। এবং আমরা বলেছিলাম যে আমাদের ইতিহাস হচ্ছে দুর্যোগ মোকাবেলার ইতিহাস। আমাদের চেয়ে দক্ষ জাতি কেউ নাই দুর্যোগ মোকাবেলায়।

এবং করোনার যে দুর্যোগ সেটাও আমরা সেইভাবেই আমরা মোকাবেলা করেছি।

কিন্তু সোনার বাংলা কী হবে সেই জিনিসটা আসলে পরিষ্কার হওয়া উচিৎ

আমাদের যে লক্ষ্য সোনার বাংলার আমাদের স্বপ্ন ছিল কিন্তু সোনার বাংলা কী হবে সেই জিনিসটা আসলে পরিষ্কার হওয়া উচিৎ।

আমরা একটা মনছবি করেছি ২৫ বছর আগে।

এখন আমাদের মনছবি – হৃদয় ভরা টান

আর আজকে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমাদের কী করতে হবে? মনছবিকে আরো ব্যাপক করতে হবে। আরো বড় করতে হবে যে আমরা কী চাই!

আসলে আমাদের লক্ষ্যটাকে পরিষ্কার করতে চাই। যে আমাদের লক্ষ্যটা কী?

একটা অংশ তো অর্জনের পথে। এখন দ্বিতীয় অংশটাকে আমরা আরো পরিষ্কার করতে চাই যে গোলাভরা ধান পুকুরভরা মাছ!

এখন কিন্তু আমাদের গোলাভরা ধান আছে।

আমাদের ধানের কোনো অভাব নাই। খাদ্যের কোনো অভাব নাই। মাছের কোনো অভাব নাই। বরং ঐ ইলিশ ওয়ালারা রাস্তায় রাস্তায় বিপদে পড়ে ইলিশ নিয়ে আরকি কমদামেও কেনার অনেক সময় লোক পাওয়া যায় না।

এবং মিঠা পানির মাছ উৎপাদনেও আমাদের অবস্থান এখন সম্ভবত চতুর্থে। অতএব এটা আছে।

যখন এই হৃদয় ভরা টানটা আসবে তখনই সোনার বাংলার স্বপ্ন সফল হবে

এখন গলা ভরা গান আর হৃদয় ভরা টান… এই হৃদয় ভরা টানটাকে সৃষ্টি করতে হবে।

এবং যখন এই হৃদয় ভরা টানটা আসবে তখনই সোনার বাংলার যে স্বপ্ন এই স্বপ্নটা সফল হবে।

[বিশেষ জালালি, ১৭ মার্চ, ২০২১]

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com