অভিবাসী প্রেরণে বাংলাদেশ বিশ্বে ষষ্ঠ

করোনা মাহামারীর মধ্যেও ২০২০ সালে অভিবাসী প্রেরণে বাংলাদেশ বিশ্বে ষষ্ঠ এবং রেমিট্যান্স গ্রহণে অষ্টম বৃহত্তম দেশ হয়েছে। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ প্রায় তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৩২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বেড়েছে।

২০১৯ সালে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ ছিল প্রায় ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১ লাখ ৫৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর ২০২০ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হওয়ায় রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২১ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ১ লাখ ৮৯ হাজার ৩১২ কোটি টাকা।

২ ডিসেম্বর প্রকাশিত আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা আইওএম এর ‘বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদন ২২’ -এ এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আকাশপথে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ৬০ শতাংশ যাত্রী কমেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিশ্বব্যাপী চলাচলে নিয়ন্ত্রণ এবং ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বিপর্যয়, সংঘাত এবং সহিংসতার কারণে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অভিবাসীর সংখ্যা ১৯৭০ সালে বিশ্বব্যাপী ৮৪ মিলিয়ন (৮ কোটি ৪০ লাখ থেকে ২০২০ সালে ২৮১ মিলিয়নে (২৮ কোটি ১০ লাখ) উন্নীত হয়েছে; যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ মানুষই (৯৬.৪ শতাংশ) যে দেশে জন্মগ্রহণ করেছেন, সে দেশেই বসবাস করছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে দুর্যোগ, সংঘাত এবং সহিংসতার ফলে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪ কোটি ৫ লাখ। ২০১৯ সালে আভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ১৫ লাখ। বিশ্বব্যাপী আকাশপথে যাত্রী সংখ্যা ৬০ শতাংশ কমেছে। ২০১৯ সালে যাত্রী সংখ্যা ছিল ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা যা ২০২০ সালে ১ দশমিক ৮ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে বলা হয়, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী বসবাস করা বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ৭০ লাখ ৪০ হাজার। বাংলাদেশের বাইরে বসবাস করেও প্রবাসীরা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশি অভিবাসীরা ২০১৯ সালে ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি দেশে পাঠিয়েছে, যার মধ্যে ৭৩ শতাংশ প্রবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকে এসেছে।

যারা গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) দেশগুলোতে প্রধানত নিম্ন দক্ষ শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। আর ২০২০ সালে ২১ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে। এখানেও জিসিসি দেশগুলোর নিম্ন দক্ষ শ্রমিকদের সংখ্যাই বেশি।

বাংলাদেশের অভিবাসন খাতের মূল্যায়ন করে আইওএম বাংলাদেশ-এর অফিসার ইন চার্জ ফাতিমা নুসরাত গাজ্জালি এক বিবৃতিতে বলেন, রেমিট্যান্সের প্রবাহের ওপর কোভিড-১৯ অতিমারির নেতিবাচক প্রভাব সত্ত্বেও ২০২০ সালেও বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে, যেটা প্রমাণ করে অভিবাসন বাংলাদেশের উন্নতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। অভিবাসীরা গন্তব্যদেশে উন্নত অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্যে অভিবাসন করে এবং তারপরে নিজ দেশে জীবনযাত্রার মান বাড়াতে সহায়তা করে।

প্রতিবেদন সম্পর্কে আইওএম’র মহাপরিচালক অ্যান্টোনিও ভিটোরিনো বলেন, এ বছর প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে একটি বৈপরীত্য লক্ষ্য করা গেছে যা মানব ইতিহাসে আগে দেখা যায়নি। সেটি হচ্ছে, কোভিড-১৯ এর কারণে শত কোটি মানুষ আটকা পড়েছে। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারনে ভ্রমণ কমেছে। কিন্তু তার পরেও লাখ লাখ বাস্তুচ্যুতির ঘটনায় বিপুল সংখ্যক মানুষ গৃহহীন হতে বাধ্য হয়েছেন।

প্রতিবেদনটির সম্পাদক ম্যারি ম্যাকঅলিফ বলেছেন, বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদন সিরিজের ১১তম সংস্করণটিতে অভিবাসন বিষয়ে সাম্প্রতিক তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে অভিবাসন প্রবণতা তুলে ধরা হয়েছে এবং ব্যাখ্যা করা হয়েছে অভিবাসন নীতির নতুন নতুন দিক।

সূত্র : সমকাল (২ ডিসেম্বর, ২০২১)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *